চায়ে……ঝালমুড়ি…..ঘুগনি…চায়ে….ঝালমুড়ি…..ঘুগনি….
ভাবছেন এটা কীরম। একদমই মাথাটাকে অন্যদিকে তীর্ষক পথে চালিত করবেন না। নিছক রাজ্যে কর্মসংস্থান-আয়ের পথ তৈারির জন্য কারখানা-শিল্প গড়তে টাটা-আম্বানিদের উপর নির্ভরশীলতা নয়। এবার ঝালমুড়ি-চা-ঘুগনি বিক্রি করেই যুব সমাজকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে দিশা দেখালেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী (Chief Minister Mamata Banerjee)।
মনের ভিতর লুকিয়ে থাকা লজ্জা, সমাজের বিদ্ভজনদের কুকথায় কান না দিয়ে আসন্ন পুজোর মরসুমে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চা-ঝালমুড়ি বিক্রি করে আয় করার জন্য উৎসাহিত করলেন মুখ্যমন্ত্রী। ঝালমুড়ি তত্ত্ব অবশ্য নতুন নয়। এর আগেও এই ব্যবসা ও তার লাভের কথা শুনিয়েছেন দিদি। আরও একবার সেই ব্যবসার কথা মনিয়ে করিয়ে দিলেন তিনি।
এদিনই অবশ্য, খড়গপুরে টাটা মেটালিক্সের সম্প্রসারিত ইউনিটের (Tata Metalics) উদ্বোধন করলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে রাজ্যের ছেলেমেয়েদের কর্মসংস্থানের (Employment) আশাও রাখলেন তিনি। বিরোধী দলনেত্রী থাকার সময়ে এই টাটাকে (Tata Group) সিঙ্গুর (Singur) থেকে বিতাড়িত করেছিলেন জমি আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। তবে এখন সময় বদলেছে। এখন তিনি মুখ্যমন্ত্রী আর টাটাও বোঝে বাণিজ্য-মুনাফা।
এই সম্প্রসারণে প্রায় ৬০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ করেছে টাটাগোষ্ঠী। ফলে স্থানীয় শতাধিক ছেলেমেয়ে চাকরি পাবেন বলে আশাপ্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এই প্রথম টাটাগোষ্ঠীর কোনও শিল্পের উদ্বোধন করলেন মুখ্যমন্ত্রী। যা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। প্রসঙ্গত, খড়গপুরে টাটা মেটালিক্সের ইউনিটটি ছিল আগেই। ২০১৯ সাল থেকে ৬০০ কোটি টাকা বিনিয়োগে সেই ইউনিটের সম্প্রসারণ শুরু হয়। এদিন সেই ইউনিটের উদ্বোধন করলেন মুখ্যমন্ত্রী।
কিন্তু ঝালমুড়ি আর টাটাদের কম্বিনেশনের মাঝে বিড়ম্বনায় যুব সমাজ। রাস্তায় চা…ঝালমুড়ি আওয়াজে রাস্তায় বের হলে লোকে নানান কথা বলতে পারে। তেমন বললে, উত্তর কী হবে, সেটাও বলে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। দিদির উত্তর…”লোকে যদি বলে, এসব করছো? বলবেন, হ্যাঁ এসব করেই আমরা কোটিপতি হব। বলবেন, আমরা বিত্তবান হতে চাই না, বিবেকবান হতে চাই।”
উৎসবের মরশুম মানে তো শুধুই আনন্দে গা ভাসানো নয়। কত শত মানুষের রুটিরুজি জড়িয়ে থাকে এই সময়ে। কিছু কিছু পেশাই তো আছে, যেখানে শুধুমাত্র পুজোর সময়েই আয়ের রাস্তা প্রশস্ত হয়। তাই এবারের দুর্গাপুজোর (Durga Puja) সময় ঘরে ঘরে বাড়তি আয়ের পরামর্শ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বললেন, ”চা, ঝালমুড়ি, ঘুগনি নিয়ে বেরিয়ে পড়ুন, বিক্রি তো হবেই, চাহিদাও খুব বাড়বে।” পুজোর ক’টা দিন এভাবে বিক্রিবাটা করার জন্য মনে কোনও গ্লানি না রাখার কথাও বলেন তিনি। জনতার প্রশ্নের মুখোমুখি হলে, বিব্রত না হয়ে যথাযথ উত্তর দেওয়ার পরামর্শ তাঁর।
রাজ্যবাসীকে স্বনির্ভর করতে বরাবরই নানা উদ্যোগ নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee)। ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পের (MSME) উন্নয়নেও একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছেন। সম্প্রতি ক্ষুদ্র-কুটিরশিল্প দপ্তরের উদ্যোগে শহরের জলাশয়ের কচুরিপানা দিয়ে পরিবেশবান্ধব সামগ্রী তৈরি করার কথা বলা হয়েছে। কলকাতা পুরসভার তরফে মাঝারি, হালকা ও ক্ষুদ্র শিল্প দপ্তরকে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। ইতিমধ্যে জেলায় জেলায় কচুরিপানা দিয়ে ঝুড়ি-সহ একাধিক সামগ্রী তৈরি হচ্ছে কারখানাগুলিতে।
বৃহস্পতিবার খড়গপুরের চাকরির নিয়োগপত্র বণ্টন অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী এবার আরও নানা পরামর্শ দিলেন। জনতার উদ্দেশে বললেন, ”চা ভরতি কেটলি নিন, সঙ্গে কয়েকটা কাপ নেবেন। এসব নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ুন। দেখবেন হু হু করে চা বিক্রি হয়ে যাবে। পরেরদিন মাকে বলুন, একটু ঘুগনি বানিয়ে দিতে। সেটাও নিয়ে যান। সব বিক্রি হয়ে যাবে। একটা কৌটোয় ঝালমুড়ি ভরে নিন, অল্প বাদাম-ছোলা ফেলে দিন। দেখবেন একের পর একজন খেতে চাইবে। বিক্রি করে শেষ করতে পারবেন না। একটা শালপাতা নিয়ে মাঝখানে ফুটো করে কাঠি ঢুকিয়ে দিন, ঠোঙা হয়ে যাবে। তাতেই ঘুগনি, ঝালমুড়ি বিক্রি করবেন।”
এই কাজের সঙ্গে কারও কোনওরকম গ্লানি বা লজ্জা থাকুক, তা চান না মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর বক্তব্য, ”লোকে যদি বলে, এসব করছো? বলবেন, হ্যাঁ এসব করেই আমরা কোটিপতি হব। বলবেন, আমরা বিত্তবান হতে চাই না, বিবেকবান হতে চাই।”