শাশ্বতী চ্যাটার্জি:: রবি কবি লিখেছিলেন, “দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া/ঘর হতে দু’পা ফেলিয়া/একটি ধানের শীষের উপরে/এজটি শিশির বিন্দু।”
সত্যি আমাদের চারপাশে এমন অনেক জায়গা আছে, যেখানে প্রকৃতি ও ইতিহাস নিজেকে উজাড় করে মেলে ধরেছে। অথচ আমরা ঘরের পাশের সেই অনুপম জায়গাকে বাদ দিয়ে অনেক ব্যয় করে হয়তো অনেক দূরে ঘুরতে যাই।
আজ আমরা কোলকাতা থেকে মাত্র ১৪৮ কিমি ও বর্ধমান স্টেশন থেকে মাত্র ৪৬ কিমি দূরের ভালকি মাচান ভ্রমণের কথা বলবো।
পূর্ব বর্ধমান জেলার আউশগ্রাম থানার অন্তর্গত একটি প্রাচীন বর্ধিষ্ণু গ্রামের নাম ভালকিমাচান।
শাল, পিয়াল, কৃষ্ণচূড়া, পলাশ, মহুয়া, কিছু সেগুন ও বেশ কিছু বাঁশ ঝড়ের মধ্যে দিয়ে ঘুরতে ঘুরতে দেখা পাবেন অজস্র নাম না জানা পাখি, বিক্ষিপ্ত ভাবে ঘুরছে বন মোরগ, খরগোশ, শিয়াল, ছোট প্রজাতির হায়েনা ও অনেক ছোট বন্য প্রাণী ও পাখি। বসন্তে ও গরমে গেলে পথ চলতে চলতে একটা মিষ্টি গন্ধে যখন আপনি এদিক ওদিক তাকাবেন, ঠিক তখনই হয়তো আপনার মাথায় ঝরে পড়বে ঈষৎ হলদে সাদা রঙের মহুয়া ফুল। হয়তো এই মহুয়ার আকর্ষণে এক সময় এখানে আসতো ভালুকের দল।
না না এখন আর ভালুক নেই। তবে মহুয়া কৃষ্ণচূড়া আছে। ছড়িয়ে আছে বেশ কিছু পলাশ গাছ। দু’পাশে জঙ্গলের মধ্য দিয়ে একেবারে মসৃণ পিচের রাস্তা ছুটে গেছে দূরে।
এই জঙ্গল ছাড়াও ওর পাশেই আছে রাজ্য সরকারের মৎস্য দপ্তরের যমুনা দীঘি। প্রাকৃতিকভাবে বেশ কয়েক একর জমি নিয়ে গড়ে উঠেছিল এই দীঘি। এর নাম যমুনা দীঘি। এই দীঘি মৎস্য দপ্তর অধিগ্রহণ করে সেই বিশাল দীঘির মধ্য দিয়ে আল তুলে তুলে বেশ কিছু ভেরি তৈরি করে মাছ চাষের জন্য। সেই আলের উপর অজস্র গাছ দিয়ে সাজানো হয়েছে।একেবারে ভোরে এখানে মাছ ধরা দেখতে অনেকেই উপস্থিত থাকে।
কোলকাতা থেকে সোজা গাড়ি নিয়ে গেলে শক্তিগড়ের ল্যাংচার স্বাদ নিয়ে ঘন্টা চারেকের মধ্যে পৌঁছানো যায় ভালকি মাচান। আসানসোলগামী যে কোনো ট্রেনে গুষকরা বা মানকর স্টেশনে নেমে ভাড়া গাড়ি করে বা অটো ভাড়া করে যাওয়া যায় ভালকি মাচান।
ইতিহাস বলে, ভালকি মাচান নামটা আসলে ভালুক মাচান থেকে এসেছে।সামন্ত নির্ভর মধ্য যুগে রাজা ও জমিদারদের শখ ছিল ভালুক শিকার করা। তাই তারা গভীর জঙ্গলের মধ্যে ইটের মাচান তৈরি করে তার উপর বসে ভালুক শিকার করতেন।মতান্তরে ওই মাচায় বসে রাজা ও জমিদাররা ভালুক দেখতেন।
সে যাই হোক। এখনো প্রাচীন ইট ও শুরকির গাঁথনি তিনটি পিলারের উপর খুব উঁচু মাচান দেখতে পাবেন।সেই মাচানের নীচে বিস্তৃত একটি সুড়ঙ্গ উপর থেকে দেখা যায়।তবে মাচার উপরে ওঠার সিঁড়ি ও নিচের সুড়ঙ্গে ঢোকার পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
ভালকি মাচান থাকার জায়গা বলতে আছে “অরণ্য সুন্দরী রিসর্ট’ বা রাজ্য সরকারের মৎস্য দপ্তরের ”যমুনা দীঘি রিসর্ট।’ অরণ্য সুন্দরী বুক করার নম্বর 03452200604/ 9153420133।
আর যমুনা দীঘি রিসর্ট সোজাসুজি অন লাইনে বুক করা যায় বা বিকাশ ভবনের মৎস্য দফতরে গিয়ে বুক করা যায়।