www.machinnamasta.in

ওঁ শ্রীং হ্রীং ক্লী গং গণপতয়ে বর বরদ সর্বজনস্ময়ী বশমানয় ঠঃ ঠঃ

May 14, 2024 7:42 am

১৮৩৬ সালে একটি সাধারণ বাঙালি গ্রামীণ পরিবারে জন্মগ্রহণকারী রামকৃষ্ণ ছিলেন একজন সাধারণ যোগসাধক, দার্শনিক ও ধর্মগুরু। তিনি উনিশ শতকের এমন এক ব্যক্তিত্ব যিনি বাঙালি নবজাগরণে এক পঞ্চমুখ ভূমিকা রেখেছিলেন। একটি শিশু উজ্জীবিত, তার গর্ভে থাকাকালীন তার বাবা-মা আধ্যাত্মিক দৃষ্টিভঙ্গি অনুভব করেছিলেন এবং যেমনটি প্রত্যাশা করা হয়েছিল, তিনি শৈশবকালেই তিনি রহস্যময় ও অলৌকিক শক্তির অভিজ্ঞতা অর্জন শুরু করেছিলেন। তিনি বাংলায় হিন্দু ধর্মের পুনর্জাগরণের ক্ষেত্রে প্রধান ব্যক্তি ছিলেন।

রামকৃষ্ণ পরমহংস (১৮ই ফেব্রুয়ারি, ১৮৩৬ – ১৬ই আগস্ট, ১৮৮৬; পূর্বাশ্রমের নাম গদাধর চট্টোপাধ্যায়) ঊনবিংশ শতকের এক প্রখ্যাত ভারতীয় বাঙালি যোগসাধক, দার্শনিক ও ধর্মগুরু। তার প্রচারিত ধর্মীয় চিন্তাধারায় রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠা করেন তার প্রধান শিষ্য স্বামী বিবেকানন্দ। তারা উভয়েই বঙ্গীয় নবজাগরণের এবং ঊনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীর বাংলা তথা ভারতীয় নবজাগরণের অন্যতম পুরোধাব্যক্তিত্ব। তার শিষ্যসমাজে, এমনকি তার আধুনিক ভক্তসমাজেও তিনি ঈশ্বরের অবতাররূপে পূজিত হন।

রামকৃষ্ণ পরমহংস (Ramkrishna Paramahansa) গ্রামীণ পশ্চিমবঙ্গের (West Bengal) এক দরিদ্র বৈষ্ণব ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। রাণী রাসমণি প্রতিষ্ঠিত দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়িতে পৌরোহিত্য গ্রহণের পর বঙ্গীয় তথা ভারতীয় শক্তিবাদের প্রভাবে তিনি কালীর আরাধনা শুরু করেন। তার প্রথম গুরু তন্ত্র ও বৈষ্ণবীয় ভক্তিতত্ত্বজ্ঞা এক সাধিকা। পরবর্তীকালে অদ্বৈত বেদান্ত মতে সাধনা করে নির্বিকল্প সমাধি লাভ করেন রামকৃষ্ণ। অন্যান্য ধর্মীয় মতে, বিশেষত ইসলাম ও খ্রিস্টীয় মতে সাধনা তাকে “যত মত, তত পথ” উপলব্ধির জগতে উন্নীত করে। পশ্চিমবঙ্গের আঞ্চলিক গ্রামীণ উপভাষায় ছোটো ছোটো গল্পের মাধ্যমে প্রদত্ত তার ধর্মীয় শিক্ষা সাধারণ জনমানসে বিরাট প্রভাব বিস্তার করে। প্রথাগত দৃষ্টিভঙ্গিতে অশিক্ষিত হলেও রামকৃষ্ণ বাঙালি বিদ্বজ্জন সমাজ ও শিক্ষিত মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়ের সম্ভ্রম অর্জনে সক্ষম হয়েছিলেন। ১৮৭০-এর দশকের মধ্যভাগ থেকে পাশ্চাত্যশিক্ষায় শিক্ষিত বুদ্ধিজীবীদের নিকট তিনি হয়ে ওঠেন হিন্দু পুনর্জাগরণের কেন্দ্রীয় চরিত্র। তৎসঙ্গে সংগঠিত করেন একদল অনুগামী, যাঁরা ১৮৮৬ সালে রামকৃষ্ণের প্রয়াণের পর সন্ন্যাস গ্রহণ করে তার কাজ চালিয়ে যান। এঁদেরই মধ্যে প্রধান ছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ (Swami Vivekananda) ।

জন্ম
১৮ ফেব্রুয়ারি ১৮৩৬
কামারপুকুর, হুগলি
মৃত্যু১৬ আগস্ট ১৮৮৬ (বয়স ৫০)
কাশীপুর উদ্যানবাটী, কলকাতা
জাতীয়তাভারতীয়দাম্পত্যসারদা দেবী
বিদ্যালয়বেদান্তমন্দিরদক্ষিণেশ্বর কালীমন্দির
প্রতিষ্ঠাতারামকৃষ্ণ সংঘধর্মহিন্দুধর্ম

জন্ম ও শৈশব

পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার আরামবাগ (Arambag) মহকুমায় অবস্থিত কামারপুকুর গ্রামে ১৮৩৬ সালে এক দরিদ্র ধর্মনিষ্ঠ রক্ষণশীল ব্রাহ্মণ পরিবারে রামকৃষ্ণ পরমহংসের জন্ম হয়। কামারপুকুর শহরের চাকচিক্য দ্বারা আচ্ছন্ন ছিল না এবং এখানে ধানের ক্ষেত, লম্বা-লম্বা তাল গাছ, রাজকীয় বটগাছ, কয়েকটি হ্রদ এবং দুটি শ্মশান ছিল। তিনি ছিলেন পিতা ক্ষুদিরাম চট্টোপাধ্যায় এবং মা চন্দ্রমণি দেবীর চতুর্থ ও শেষ সন্তান। কথিত আছে, শ্রীরামকৃষ্ণের জন্মের পূর্বে তাঁর পিতামাতার সম্মুখে বেশ কয়েকটি অলৌকিক ঘটনা ঘটেছিল। সন্তানসম্ভবা চন্দ্রমণি দেবী দেখেছিলেন শিবলিঙ্গ থেকে নির্গত একটি জ্যোতি তাঁর গর্ভে প্রবেশ করছে। তাঁর জন্মের অব্যবহিত পূর্বে গয়ায় তীর্থভ্রমণে গিয়ে ক্ষুদিরাম গদাধর (SRi Ramkrishna) বিষ্ণুকে স্বপ্নে দর্শন করেন। সেই কারণে তিনি নবজাতকের নাম রাখেন গদাধর।

শৈশবে গদাই নামে পরিচিত গদাধর তাঁর গ্রামবাসীদের অত্যন্ত প্রিয় ছিলেন। অঙ্কন ও মাটির প্রতিমা নির্মাণে তাঁর ছিল সহজাত দক্ষতা। যদিও প্রথাগত শিক্ষায় তাঁর আদৌ মনোযোগ ছিল না। সেযুগে ব্রাহ্মণসমাজে প্রচলিত সংস্কৃত শিক্ষাকে তিনি “চালকলা-বাঁধা বিদ্যা” (অর্থাৎ পুরোহিতের জীবিকা-উপার্জনী শিক্ষা) বলে উপহাস করেন এবং তা গ্রহণে অস্বীকার করেন। তবে পাঠশালার শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি তার ঔদাসিন্য থাকলেও নতুন কিছু শিখতে তার আগ্রহের অন্ত ছিল না। গানবাজনা, কথকতা ও ধর্মীয় উপাখ্যান অবলম্বনে যাত্রাভিনয়ে তিনি অনায়াসে পারদর্শিতা অর্জন করেন। তীর্থযাত্রী, সন্ন্যাসী এবং গ্রাম্য পুরাণকথকদের কথকতা শুনে অতি অল্প বয়সেই পুরাণ, রামায়ণ, মহাভারত ও ভাগবতে ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন গদাধর। মাতৃভাষা বাংলায় তার অক্ষরজ্ঞান ছিল; কিন্তু সংস্কৃত অনুধাবনে সক্ষম হলেও সেই ভাষা তিনি বলতে পারতেন না। পুরীর পথে কামারপুকুরে বিশ্রামরত সন্ন্যাসীদের সেবাযত্ন করার সঙ্গে সঙ্গে তাদের ধর্মীয় বিতর্ক মন দিয়ে শুনতেন গদাধর।

১৮৫৫ সালে কলকাতার মাহিষ্য সমাজের এক ধনী জমিদারপত্নী রানি রাসমণি (Rani Rashmoni) দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়ি (Dakshineswar) প্রতিষ্ঠা করলে রামকুমার সেই মন্দিরে প্রধান পুরোহিতের পদ গ্রহণ করেন। তখনকার ব্রাহ্মণ সমাজে নিম্নবর্ণীয়া গণ্য এক নারীর প্রতিষ্ঠিত মন্দির হওয়া সত্ত্বেও সামান্য অনুরোধেই গদাধর সেই মন্দিরে চলে আসেন। তিনি ও তার ভাগনে হৃদয়রাম রামকুমারের সহকারী হিসাবে প্রতিমার সাজসজ্জার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৮৫৬ সালে রামকুমারের মৃত্যু হলে গদাধর তার স্থলাভিষিক্ত হন। মন্দিরে উত্তর-পশ্চিম আঙিনায় তাকে একটি ছোটো ঘর দেওয়া হয়। এই ঘরেই তিনি অতিবাহিত করেন তার অবশিষ্ট জীবন। অনুমিত হয়, রাণী রাসমণির জামাতা মথুরামোহন বিশ্বাস, যিনি মথুরবাবু নামে পরিচিত ছিলেন, তিনিই গদাধরকে রামকৃষ্ণ নামটি দিয়েছিলেন। অন্য মতে, এই নামটি তার অন্যতম গুরু তোতাপুরীর দেওয়া।

ভবতারিণী কালী, দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের রামকৃষ্ণ-পূজিত দেবীমূর্তি
রামকুমারের মৃত্যুর পর রামকৃষ্ণের ভাবতন্ময়তা বৃদ্ধি পায়। কালীকে তিনি মা ও বিশ্বজননীভাবে প্রত্যক্ষ করতে শুরু করেন। এই সময় দেবীর প্রত্যক্ষ রূপ দর্শনের জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠেন তিনি। তার বিশ্বাস পাষাণপ্রতিমা জীবন্ত হয়ে অন্নগ্রহণ করতে শুরু করে। পূজা করতে করতে দেবীর দর্শন না পেয়ে তিনি চিৎকার করে কেঁদে উঠতে থাকেন। রাত্রিকালে নিকটবর্তী জঙ্গলে গিয়ে বস্ত্র ও উপবীত ত্যাগ করে নির্জনে ধ্যান করতেও শুরু করেন। কেউ কেউ বলতে থাকে যে তিনি পাগল হয়ে গেছেন, আবার কেউ বলেন তিনি ঈশ্বরের প্রেমে আকুল হয়েছেন।

বিবাহ

কামারপুকুরে গুজব রটে যায়, দক্ষিণেশ্বরে অতিরিক্ত সাধনার শ্রমে শ্রীরামকৃষ্ণ পাগল হয়ে গেছেন। মা ও মধ্যমাগ্রজ রামেশ্বর তার বিবাহদানের চিন্তাভাবনা করতে থাকেন। তারা ভেবেছিলেন, বিবাহের পর সাংসারিক দায়-দায়িত্বের ভার কাঁধে চাপলে আধ্যাত্ম সাধনার মোহ তার কেটে যাবে – তিনি আবার স্বাভাবিক জীবনের ছন্দে ফিরে আসবেন। শ্রীরামকৃষ্ণ বিবাহে আপত্তি তো করলেনই না, বরং বলে দিলেন কামারপুকুরের তিন মাইল উত্তর-পশ্চিমে জয়রামবাটী গ্রামের রামচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের গৃহে কন্যার সাক্ষাৎ পাওয়া যাবে। ১৮৫৯ সালে পঞ্চমবর্ষীয়া বালিকা সারদার সঙ্গে তার শাস্ত্রমতে বিবাহ সম্পন্ন হয়। শ্রীরামকৃষ্ণের বয়স তখন তেইশ। বয়সের এই পার্থক্য উনিশ শতকীয় গ্রামীণ বঙ্গসমাজে কোনও অপ্রচলিত দৃষ্টান্ত ছিল না। যাই হোক, ১৮৬০ সালের ডিসেম্বরে শ্রীরামকৃষ্ণ সারদা দেবীকে ছেড়ে কলকাতায় ফিরে আসেন। ১৮৬৭ সালের মে মাসের আগে তাদের আর সাক্ষাৎ হয়নি।

সাধনা

বিবাহের পর শ্রীরামকৃষ্ণ (SRi Ramkrishna) কলকাতায় প্রত্যাবর্তন করে পুনরায় মন্দিরের কাজ গ্রহণ করেন। তবে ভাবতন্ময়তা কাটার পরিবর্তে তার অধ্যাত্ম-পিপাসা বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। ব্রাহ্মণের জাত্যভিমান দূর করার জন্য তিনি নিম্নবর্ণীয়দের হাতে খাদ্যগ্রহণ, অন্ত্যজ পারিয়াদের (চাকর ও ঝাড়ুদার) সেবা করতে থাকেন। স্বর্ণ ও রৌপ্যমুদ্রাকে মাটির ঢেলার সঙ্গে মিশিয়ে তিনি বলতে শুরু করেন “টাকা মাটি, মাটি টাকা”। এবং অর্থকে লোষ্ট্রজ্ঞানে গঙ্গায় নিক্ষেপ করেন। লোকে মনে করতে থাকেন, সত্যিই তিনি পাগল হয়ে গেছেন। কথিত আছে, এই অবস্থায় তিনি এতটাই সংবেদনশীল হয়ে উঠেছিলেন, যে ঘুমন্ত অবস্থাতে কেউ মুদ্রা স্পর্শ করালে, তার দেহ সংকুচিত হয়ে আসত। তার শরীরে তীব্র দাহ উপস্থিত হল। তিনি নিদ্রারহিত হলেন। ফলে মন্দিরের কাজকর্ম তার পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ল। চিকিৎসকগণ আহূত হলেন। কিন্তু তাদের একজন বললেন যে রোগীর এই অবস্থার কারণ আধ্যাত্মিক উত্তেজনা। কোনও ঔষধ একে সুস্থ করতে সক্ষম নয়।

১৮৬১ সালে ভৈরবী ব্রাহ্মণী নামে গৈরিক বস্ত্র পরিহিতা এক যোগিনী দক্ষিণেশ্বরে উপস্থিত হন। তার প্রকৃত নাম ছিল যোগেশ্বরী এবং বয়স ছিল চল্লিশের কাছাকাছি। দক্ষিণেশ্বরে আগমনের পূর্বে তার জীবন সম্পর্কে বেশি কিছু জানা যায় না। তবে তিনি ছিলেন শাস্ত্রজ্ঞা ও তন্ত্র ও বৈষ্ণব সাধনে সিদ্ধা।

শ্রীরামকৃষ্ণ ভৈরবীর কাছে তার ভাবতন্ময়তা ও দৈহিক পীড়ার বর্ণনা দিলেন। ভৈরবী তাকে এই বলে আশ্বস্ত করলেন যে তিনি পাগল হয়ে যাননি; বরং আধ্যাত্মিক ‘মহাভাব’ তাকে আশ্রয় করেছে। এই মহাভাবের বশেই তিনি দিব্যপ্রেমে মাতোয়ারা হয়ে উঠেছেন। বিভিন্ন ভক্তিশাস্ত্রের উদাহরণ দিয়ে তিনি দেখালেন রাধা ও চৈতন্য মহাপ্রভুরও একই ভাব উপস্থিত হয়েছিল। ভৈরবী তার দৈহিক পীড়া অবসানের নিদানও দিলেন।

ভৈরবীর পথনির্দেশনায় শ্রীরামকৃষ্ণ তন্ত্রমতে সাধনা শুরু করলেন। এই সাধনায় তার সমস্ত শারীরিক ও মানসিক পীড়ার উপশম হল। ভৈরবীর সহায়তায় তিনি তন্ত্রোল্লেখিত ৬৪ প্রকার প্রধান সাধন অভ্যাস করলেন। জপ ও পুরশ্চরণের মতো মন্ত্রসাধনায় চিত্ত শুদ্ধ করে পূর্ণ আত্মনিয়ন্ত্রণ স্থাপন করলেন। তন্ত্রসাধনায় সাধারণত বামাচারের মতো ধর্মবিরোধী পন্থাও অভ্যাস করতে হয়; যার মধ্যে মাংস ও মৎস্য ভক্ষণ, মদ্যপান ও যৌনাচারও অন্তর্ভুক্ত। শ্রীরামকৃষ্ণ ও তার জীবনীকারগণের কথা থেকে জানা যায়, শেষোক্ত দুটি তিনি অভ্যাস করেননি, শুধুমাত্র সেগুলির চিন্তন করেই কাঙ্ক্ষিত সাধনফল লাভ করেছিলেন। শ্রীরামকৃষ্ণ বামাচারকে একটি জ্ঞানমার্গ বলে উল্লেখ করলেও, অন্যদের এই পথে সাধন করতে নিষেধ করতেন। পরে তার প্রধান শিষ্য স্বামী বিবেকানন্দ যখন তাকে বামাচার সম্পর্কে প্রশ্ন করেন, তিনি বলেন, “(এই পথ) বড় কঠিন, ঠিক রাখা যায় না, পতন হয়।

বৈষ্ণব ভক্তিশাস্ত্রে ঈশ্বরের প্রতি প্রেম নিবেদনে পাঁচটি ভাবের উল্লেখ রয়েছে – শান্ত, দাস্য, সখ্য, বাৎসল্য ও মধুর। শ্রীরামকৃষ্ণ এই ভাবগুলির কয়েকটি অভ্যাস করেন।

কালীদর্শন (Kali) ও বিবাহে মধ্যবর্তী সময়ে কিছুকালের জন্য তিনি দাস্যভাবে সাধনা করেছিলেন। এই সময় তিনি হনুমানভাবে ভাবিত হয়ে রামচন্দ্রের আরাধনা করেন। এইসময় তার হাবভাব সকলই হনুমানের মতো হয়েছিল। তিনি কদলীভক্ষণ করতেন, অধিকাংশ সময় বৃক্ষশাখায় কাটাতেন, এমনকি বানরের মতো অস্থির চোখের দৃষ্টিও লাভ করেছিলেন। শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছিলেন, তার মেরুদণ্ডের নিচে সামান্য অংশও এই সময় লেজের মতো প্রসারিত হয়েছিল। দাস্যভাবে সাধনার সময় তিনি রামের পত্নী সীতাদেবীর দর্শন পান এবং সীতার সেই মূর্তি তার নিজদেহে অন্তর্হিত হতে দেখেন।

১৮৬৪ সালে দেবীপ্রতিমায় মাতৃভাব আরোপ করে শ্রীরামকৃষ্ণ বাৎসল্যভাবের সাধনা করেন। এই সময় তিনি ‘রামলালা’ অর্থাৎ বালক রামচন্দ্রের একটি ধাতুমূর্তি পূজা করতেন। পরে তিনি বলেছিলেন, এই সময় তার হৃদয় মাতৃভাবে পূর্ণ হত। তার মধ্যে নারীর ভাব ফুটে উঠত এমনকি তার কথাবার্তা ও হাবভাবও মেয়েলি আকার নিত। শ্রীরামকৃষ্ণ আরও বলেছেন যে এই সময় তিনি ধাতুমূর্তিতেই জীবন্ত বালক রামচন্দ্রকে চাক্ষুষ করতেন।

১৮৬৪ সালে তোতাপুরী নামক জনৈক পরিব্রাজক বৈদান্তিক সন্ন্যাসীর নিকট শ্রীরামকৃষ্ণ সন্ন্যাস গ্রহণ করেন। তার বর্ণনা অনুযায়ী তোতাপুরী ছিলেন জটাজুটধারী এক বিশালবপু উলঙ্গ নাগা সন্ন্যাসী। গুরুর নাম গ্রহণ করা শাস্ত্রমতে বারণ; তাই শ্রীরামকৃষ্ণ তাকে ‘ল্যাংটা’ বা ‘ন্যাংটা’ বলে উল্লেখ করতেন। তোতাপুরী ‘নেতি নেতি’ দৃষ্টিকোণ থেকে জগৎ দর্শন করতেন। তার মতে সকলই ছিল মায়া। দেব-দেবীর মূর্তিপূজাকেও তিনি উপহাস করতেন। বিশ্বাস করতেন এক ও অদ্বিতীয় ব্রহ্মে।

তোতাপুরী প্রথমে সকল জাগতিক বন্ধন থেকে শ্রীরামকৃষ্ণকে মুক্ত করার উদ্দেশ্যে তাকে সন্ন্যাস প্রদান করেন। অতঃপর তোতা তাকে অদ্বৈত তত্ত্ব শিক্ষা দেন –

“ নিত্যশুদ্ধবুদ্ধমুক্তস্বভাব, দেশকালাদি দ্বারা সর্বদা অপরিচ্ছিন্ন একমাত্র ব্রহ্মবস্তুই নিত্য সত্য। অঘটন-ঘটন-পটীয়সী মায়া নিজপ্রভাবে তাঁহাকে নামরূপের দ্বারা খণ্ডিতবৎ প্রতীত করাইলেও তিনি কখনও বাস্তবিক ঐরূপ নহেন। … নামরূপের দৃঢ় পিঞ্জর সিংহবিক্রমে ভেদ করিয়া নির্গত হও। আপনাতে অবস্থিত আত্মতত্ত্বের অন্বেষণে ডুবিয়া যাও। ”
তোতাপুরীর সহায়তায় শ্রীরামকৃষ্ণ অধ্যাত্মজীবনের চরম অবস্থা নির্বিকল্প সমাধিতে নিমগ্ন হন।

অদ্বৈত বেদান্তের নানা তত্ত্ব শিক্ষা দেওয়ার জন্য তোতা এগারো মাস দক্ষিণেশ্বরে শ্রীরামকৃষ্ণের নিকট রয়ে যান। তিনি বিদায় নিলে আরও ছয় মাস শ্রীরামকৃষ্ণ আধ্যাত্মিক ভাবতন্ময়তার জগতে অবস্থান করেন। শ্রীরামকৃষ্ণের কথা অনুযায়ী, এরপর তিনি দেবী কালীর নিকট থেকে নির্দেশ প্রাপ্ত হন – “তুই ভাবমুখে থাক” (অর্থাৎ, সমাধি ও সাধারণ অবস্থার মুখে অবস্থান করে লোকশিক্ষা দান কর।

সারদা দেবী

সেকালের প্রথা অনুযায়ী সতেরো-আঠারো বছর বয়স হলে সারদা দেবী (Maa Sarada) স্বামীগৃহে যাত্রা করলেন। স্বামী পাগল হয়ে গেছেন – এইরূপ একটি গুজব শুনে তিনি অত্যন্ত দুঃখিত ছিলেন। আবার এও শুনেছিলেন, তার স্বামী একজন বিশিষ্ট সাধকে পরিণত হয়েছেন।

শ্রীরামকৃষ্ণ এই সময় ষোড়শী পূজার আয়োজন করেন। এই পূজায় তিনি সারদা দেবীকে দিব্য মাতৃকাজ্ঞানে পূজা নিবেদন করেছিলেন। তাকে দেবী কালীর (Maa Kali) পীঠে বসিয়ে পুষ্প ও ধূপদানে তার পূজা সম্পাদন করেন শ্রীরামকৃষ্ণ। শ্রীরামকৃষ্ণ বলতেন, তিনি যে নারীমাত্রেই জগজ্জননীর রূপ দর্শন করেন, তার নিজের স্ত্রীও তার ব্যতিক্রম নয়। এমনকি তিনি রূপপোজীবিনী বারবণিতাদেরও মাতৃসম্বোধন করতেন। দাম্পত্যজীবনে সারদা দেবীর মধ্যে মাতৃজ্ঞান করায় তাদের বিবাহ অসাধারণত্বে উন্নীত হয়।

সারদা দেবীর স্মৃতিচারণা থেকে জানা যায়, শ্রীরামকৃষ্ণ কোনও দিন তাকে ‘তুই’ সম্বোধন করেননি। কখনও রূঢ়বাক্য প্রয়োগ বা তিরস্কারও করেননি।

সারদা দেবীকেই শ্রীরামকৃষ্ণের প্রথম অনুগামী মনে করা হয়। তার শিষ্য ও ভক্তসমাজে সারদা দেবী ‘শ্রীমা’ বা ‘মাতাঠাকুরানী’ নামে পরিচিতা হন। শ্রীরামকৃষ্ণের তিরোভাবের পর তিনিই রামকৃষ্ণ আন্দোলনের কেন্দ্রস্বরূপা হয়েছিলেন।

ব্রাহ্ম ও ভদ্রলোক সমাজে প্রভাব

১৮৭৫ সালে প্রভাবশালী ব্রাহ্ম নেতা কেশবচন্দ্র সেনের সহিত শ্রীরামকৃষ্ণের সাক্ষাৎ হয়। কেশব খ্রিস্টধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন এবং আদি ব্রাহ্মসমাজের সহিত তার বিচ্ছেদও ঘটেছিল। তিনি প্রথমে মূর্তিপূজা পরিত্যাগ করেছিলেন। পরে তিনি শ্রীরামকৃষ্ণের বহুদেববাদ গ্রহণ করেন এবং তার সর্বধর্মসমন্বয়, ঈশ্বরে মাতৃভাব আরোপ এবং ব্রাহ্ম ও বহুদেববাদের সম্মিলনের আদর্শে “নববিধান” প্রতিষ্ঠা করেন। নববিধানের পত্রপত্রিকায় কেশব বেশ কয়েকবছর শ্রীরামকৃষ্ণের উপদেশাবলি প্রচারও করেছিলেন। এর ফলে বাঙালি ‘ভদ্রলোক’ শ্রেণী, অর্থাৎ ইংরেজি-শিক্ষিত মধ্যবিত্ত সম্প্রদায় ও ভারতে বসবাসকারী ইউরোপীয়গণ তার প্রতি আকৃষ্ট হন।

কেশবচন্দ্রের পদাঙ্ক অনুসরণ করে বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামীর মতো অন্যান্য ব্রাহ্মগণও শ্রীরামকৃষ্ণের নিকট যাতায়াত শুরু করেন, ও তার মতের অনুগামী হয়ে পড়েন। প্রতাপচন্দ্র মজুমদার, শিবনাথ শাস্ত্রী ও ত্রৈলোক্যনাথ সান্যাল প্রমুখ কলকাতার বহু বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব ১৮৭১ থেকে ১৮৮৫ সালের মধ্যবর্তী সময়ে নিময়িত তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। প্রতাপচন্দ্র মজুমদার প্রথম ইংরেজিতে শ্রীরামকৃষ্ণের জীবনী রচনা করেন। ১৯৭৯ সালে থেইস্টিক কোয়ার্টারলি রিভিউ পত্রিকায় দ্য হিন্দু সেইন্ট নামে প্রকাশিত সেই জীবনী জার্মান ভারতবিদ ম্যাক্স মুলার প্রমুখ পাশ্চাত্য পণ্ডিতের দৃষ্টি শ্রীরামকৃষ্ণের প্রতি আকৃষ্ট করে। এছাড়াও বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত অন্যান্য ব্রাহ্মদের বক্তৃতা ও নিবন্ধ থেকেও বাঙালি ভদ্রলোক শ্রেণী শ্রীরামকৃষ্ণের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন। সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবর অনুসারে শ্রীরামকৃষ্ণের প্রেম ও ভক্তির বাণী বাঙালি সমাজে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে এবং বহু হিন্দুধর্মত্যাগী যুবককে ধর্মের মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনতে সহায়ক হয়।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও স্বামী দয়ানন্দের সঙ্গেও ধর্মবিষয়ে শ্রীরামকৃষ্ণের বাক্যালাপ হয়েছিল। তবে ব্রাহ্মসমাজে তার মত ও ধর্মবিশ্বাসের বিরোধিতাও অনেকে করেছিলেন। তার সমাধি অবস্থাকে তারা স্নায়ুদৌর্বল্য বলে উপহাস করেন। ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায় তার অবতারত্ব অস্বীকার করেছিলেন।

১৮৭৯ থেকে ১৮৮৫ সালের মধ্যবর্তী সময়ে নিজের প্রধান শিষ্যদের সঙ্গে রামকৃষ্ণ পরমহংসের সাক্ষাৎ হয়। এঁদের অনেকেই ছিলেন উচ্চ শিক্ষিত। কেউ আবার ছিলেন একান্তই নাস্তিক; নিছক কৌতূহলের বশেই তারা শ্রীরামকৃষ্ণকে দেখতে এসেছিলেন। কিন্তু শ্রীরামকৃষ্ণের উপদেশ এঁদের সকলের মধ্যেই গভীর প্রভাব বিস্তার করে এবং এঁরা সকলেও তার অনুরাগী ভক্তে পরিণত হন। প্রবল যুক্তিবাদী সুরেন্দ্রনাথ মিত্র তাকে দেখতে গিয়েছিলেন, তার ‘কান মলে’ দেওয়ার জন্য; কিন্তু শেষপর্যন্ত তিনি শ্রীরামকৃষ্ণের একনিষ্ঠ ভক্তে পরিণত হন। তার অননুকরণীয় ধর্মপ্রচারের ভঙ্গি অনেক সংশয়বাদী ব্যক্তির মনেও দৃঢ় প্রত্যয়ের উন্মেষ ঘটাতে সক্ষম হয়েছিল।

তার প্রধান শিষ্যদের মধ্যে উল্লেখনীয়:
  • গৃহস্থ শিষ্য – মহেন্দ্রনাথ গুপ্ত, গিরিশচন্দ্র ঘোষ, অক্ষয়কুমার সেন প্রমুখ;
  • ত্যাগী বা সন্ন্যাসী শিষ্য – নরেন্দ্রনাথ দত্ত (স্বামী বিবেকানন্দ), রাখালচন্দ্র ঘোষ (স্বামী ব্রহ্মানন্দ), কালীপ্রসাদ চন্দ্র (স্বামী অভেদানন্দ), তারকনাথ ঘোষাল (স্বামী শিবানন্দ), শশীভূষণ চক্রবর্তী (স্বামী রামকৃষ্ণানন্দ), শরৎচন্দ্র চক্রবর্তী (স্বামী সারদানন্দ) প্রমুখ।
  • এছাড়া নারী ভক্তদের একটি ছোটো অংশও তার শিষ্যত্ব গ্রহণ করেছিল। এঁদের মধ্যে গৌরী মা ও যোগীন মা উল্লেখযোগ্য। এঁদের কেউ কেউ মন্ত্রদীক্ষার মাধ্যমে তার থেকে সন্ন্যাস গ্রহণ করেছিলেন। তবে তপস্যার বদলে শহরে অবস্থান করে নারীসমাজের সেবাতেই তাদের উৎসাহিত করতেন শ্রীরামকৃষ্ণ।

শেষ জীবন

শেষ দিন

রবিবার ১৫ অগস্ট ১৮৮৬, কাশীপুরে শ্রাবণের শেষ দিনে ঠাকুর শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ ভাতের পায়স খেতে আগ্রহ করেন। কিন্তু ওই দিনেই ঠাকুরের সেই বিখ্যাত উক্তি—‘‘ভিতরে এত ক্ষিধে যে হাঁড়ি হাঁড়ি খিচুড়ি খাই, কিন্তু মহামায়া কিছুই খেতে দিচ্ছেন না।’’

শেষের সেই দিনে খিচুড়ি নিয়েও বিশেষ গোলযোগ। সেবকদের জন্য শ্রীমা যে খিচুড়ি রাঁধছিলেন, তার নিচের অংশ ধরে গেল। বিকেলের দিকে পরিস্থিতির পরিবর্তন হওয়ায় ভক্ত শশী (পরবর্তী কালে স্বামী রামকৃষ্ণানন্দ) কয়েক মাইল দৌড়ে গিয়ে ডা. নবীন পালকে ধরে নিয়ে এলেন।

প্রায় রাত ন’টা , হঠাৎ ঠাকুরের সমাধি। নরেন সবাইকে ‘হরি ওঁ তৎসৎ’ কীর্তন করতে বললেন। সমাধি ভঙ্গ হল রাত প্রায় এগারোটায়। সেবক শশীর ইংরেজিতে রাখা নোট অনুযায়ী, ‘পুরো এক গ্লাস পায়েস পান করেন।’ তার পর ঠাকুর নাকি বলেন, ‘আঃ শান্তি হল। এখন আর কোনও রোগ নেই।’

স্বামী অভেদানন্দ এবং স্বামী রামকৃষ্ণানন্দ ঠাকুরের শেষ মুহূর্তের বিস্তারিত বিবরণ রেখে গিয়েছেন—‘‘একটা বাজিলে অকস্মাৎ তিনি একপাশে গড়াইয়া পড়েন। তাঁহার গলায় ঘড়ঘড় শব্দ হইতে থাকে। নরেন তাড়াতাড়ি তাঁহার পা লেপে ঢাকিয়া ছুটিয়া সিঁড়ি বাহিয়া নিচে নামিয়া যান। এ দৃশ্য তিনি সহিতে পারিতেছিলেন না। নাড়ি বন্ধ হয়ে গিয়েছে, আমরা সকলে ভাবিলাম, উহা সমাধি।’’

সেই রাত্রেই দক্ষিণেশ্বরে ঠাকুরের ভাইপো রামলালকে খবর দেওয়া হল। রামলাল এসে বলল, ‘ব্রহ্মতালু গরম আছে, তোমরা একবার কাপ্তেন উপাধ্যায়কে খবর দাও।’ তিনি তাড়াতা়ড়ি এসে বললেন, মেরুদণ্ডে গব্যঘৃত মালিশ করলে চৈতন্যোদয় হবে। তিন ঘণ্টার বেশি মালিশ করেও কোনও ফল হল না।

১৬ অগস্ট সকালবেলায় ডা. মহেন্দ্রলাল সরকারের কাশীপুরে আবির্ভাব। অভেদানন্দের বর্ণনা অনুযায়ী, ডা. সরকার ‘‘বেলা দশ ঘটিকায় এসে নাড়ি দেখে বলেন, ঠাকুরের প্রাণবায়ু নির্গত হয়েছে।’’

ডাক্তার সরকারের দিনলিপি, ‘‘খাওয়াদাওয়ার পর প্রথমে ডাফ স্ট্রিটে যাই এক রোগিণীকে দেখতে, তারপর পরমহংসের কাছে। তিনি মৃত। গত রাত্রে একটার সময় তাঁর দেহাবসান হয়েছে, He was lying on the left side legs drawn up, eyes open, mouth partly open,…।’’

কাশীপুর মহাশ্মশানের উদ্দেশে তাঁর যাত্রা শুরু হয়েছিল বিকেল ছ’টার পর। [৯৪] কলকাতা কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ তাঁদের শ্মশানঘাটের একটি ঐতিহাসিক রেজিস্টার থেকে রামকৃষ্ণ-দেহাবসানের নথিপত্রের ছবি বেলুড়ের সংগ্রহশালায় দান করতে চলেছেন।

তার গলা থেকে প্রথম রক্তক্ষরণ অগস্ট ১৮৮৫। ডাক্তারি ভাষায় এর নাম ‘ক্লার্জিম্যানস থ্রোট’। প্রখ্যাত ডাক্তার মহেন্দ্রলাল সরকার তাকে দেখেন ২ সেপ্টেম্বর ১৮৮৫ এবং পরের মাসে (১২ অক্টোবর) নিয়মিত চিকিৎসা শুরু করেন। তারই সিদ্ধান্ত, রোগটা ক্যানসার, কবিরাজি ভাষায় রোহিণী রোগ। কলকাতার শ্যামপুকুর অঞ্চলে তাকে নিয়ে আসা হয়। অবস্থা সংকটজনক হলে ১১ ডিসেম্বর, ১৮৮৫ তারিখে তাকে স্থানান্তরিত করা হয় কাশীপুরের এক বিরাট বাগানবাড়িতে। ২৫ মার্চ ১৮৮৬ মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. জে এম কোটস এসেছিলেন তাকে দেখতে। বিখ্যাত ডাক্তার রাজেন্দ্রনাথ দত্ত এলেন ৬ এপ্রিল ১৮৮৬।

এই সময় তার শিষ্যগণ ও সারদা দেবী তার সেবাযত্ন করতেন। চিকিৎসকগণ তাকে কথা না বলার কঠোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই নির্দেশ অমান্য করে তিনি অভ্যাগতদের সঙ্গে ধর্মালাপ চালিয়ে যান। কথিত আছে, মৃত্যুর পূর্বে বিবেকানন্দকে তিনি বলেছিলেন, “আজ তোকে যথাসর্বস্ব দিয়ে ফকির হয়েছি। এই শক্তির সাহায্যে তুই জগতের অশেষ কল্যাণ করতে পারবি। কাজ শেষ হলে আবার স্বস্থানে ফিরে যাবি।” এও কথিত আছে বিবেকানন্দ তার অবতারত্ব সম্পর্কে সন্ধিহান হলে তিনি বলে ওঠেন, “যে রাম, যে কৃষ্ণ, সে-ই রামকৃষ্ণ…” তার শেষের দিনগুলিতে তিনি বিবেকানন্দকে ত্যাগী শিষ্যদের দেখাশোনার ভার অর্পণ করে যান।

(Collected from several sources)

administrator

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *