চৈত্র মাসের শুক্ল পক্ষের চতুর্দশী তিথিটি চৈত্র পূর্ণিমা হিসেবে পালিত হবে। চলতি বছর ২৩ এপ্রিল চৈত্র পূর্ণিমা। এই তিথিতে নারায়ণের পুজো ও ব্রত পালন করা হয়ে থাকে। এই তিথিতে রাতে চাঁদকে অর্ঘ্য দেওয়ার পর উপবাস ভঙ্গ করা হয়। পাশাপাশি পবিত্র নদীতে স্নান করে দান করার বিশেষ মাহাত্ম্য রয়েছে। এর দ্বারা পুণ্যফল অর্জন করা যায়। চৈত্র পূর্ণিমার তারিখ, শুভক্ষণ, স্নান-দানের সময় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
পূর্ণিমা বা পূর্ণিমা হিন্দু ধর্মে একটি শুভ দিন হিসাবে বিবেচিত হয় । এই দিনটি ভগবান বিষ্ণুর (BIshnu) উপাসনার জন্য নিবেদিত। লোকেরা এই দিনে উপবাস পালন করে এবং মহান ভক্তি ও উত্সর্গের সাথে ভগবান বিষ্ণুর কাছে প্রার্থনা করে। তারা সত্যনারায়ণ রূপে ভগবান বিষ্ণুর পূজা করে এবং এই দিনে সত্যনারায়ণ পূজা করে। উত্তর ভারতে, পূর্ণিমা দিনটি পূর্ণিমা নামে পরিচিত তবে দক্ষিণ ভারতে পূর্ণিমা দিনটি পূর্ণিমা বা পূর্ণিমা নামে পরিচিত এবং এই দিনে উপবাস করা পূর্ণিমা ব্রতম নামে পরিচিত।
পূর্ণিমা চাঁদের (Moon) নিজস্ব ধর্মীয় এবং আধ্যাত্মিক তাত্পর্য রয়েছে কারণ এই বিশেষভাবে বিবেচিত পবিত্র এবং ঐশ্বরিক চাঁদের রশ্মি। এটা বিশ্বাস করা হয় যে পূর্ণিমার দিনে উপবাস মানুষের মানসিক চাপ, উদ্বেগ এবং হতাশা থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে। জ্যোতিষশাস্ত্র (Astrology) অনুসারে, চন্দ্র গ্রহটি মন, আবেগ, অনুভূতি, জল এবং মায়ের সাথে যুক্ত তাই যাদের চন্দ্রের অবস্থান খারাপ থাকে অর্থাৎ 6, 8 এবং 12 বা চন্দ্র অশুভ গ্রহ যেমন শনি, রাহু এবং কেতুর সাথে স্থাপন করা হয়। এই পূর্ণিমা তিথিতে চাঁদের পূজা করতে হবে এবং চন্দ্রকে অর্ঘ্য দিতে হবে। চন্দ্রের পূজা করলে চন্দ্র সংক্রান্ত যাবতীয় কষ্ট থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
চৈত্র পূর্ণিমা কবে?
তিথি | শুভক্ষণ |
পূর্ণিমা তিথি শুরু | ২৩ এপ্রিল ভোর ৩টে ২৫ মিনিটে |
পূর্ণিমা তিথি সমাপ্ত | ২৪ এপ্রিল সকাল ৫টে ১৮ মিনিটে |
উদয়া তিথি অনুযায়ী ২৩ এপ্রিল পূর্ণিমা তিথির উপবাস, স্নান দান ২৩ এপ্রিল করা হবে | |
অভিজীত মুহূর্ত | বেলা ১১টা ৫৩ মিনিট থেকে দুপুর ১২টা ৪৬ মিনিট পর্যন্ত |
চন্দ্র উদয় | সন্ধ্যা ৬টা ২৫ মিনিটে |
চন্দ্র পুজো | সন্ধ্য়া ৬টা ২৫ মিনিটের পর |
চৈত্র পূর্ণিমার মাহাত্ম্য
চৈত্র মাসের (Chaitra Purnima) পূর্ণিমা তিথিটি নানান কারণে বিশেষ। এই তিথিতে হনুমান জয়ন্তী পালিত হয়। পৌরাণিক ধারণা অনুযায়ী এই তিথিতে কৃষ্ণ ব্রজয়ে রাস উৎসবের আয়োজন করেছিলেন। এটি মহারাস নামেও পরিচিত। এদিন বিষ্ণুর (Vishnu) পুজো করলে জীবনে সুখ ও শান্তির আগমন ঘটে। পূর্ণিমা তিথিতে সত্যনারায়ণ (Sri Sri Satyanarayan) পুজোর বিধান রয়েছে
চৈত্র পূর্ণিমায় পুজোর নিয়ম
এদিন ভোরবেলা পবিত্র নদীতে স্নান করে ব্রতর সংকল্প নিন। আশপাশে কোনও পবিত্র নদী না-থাকলে বাড়িতেই জলে সামান্য গঙ্গাজল মিশিয়ে স্নান করুন। কথিত আছে পূর্ণিমা তিথিতে নদীতে স্নান করলে মোক্ষ লাভ করা যায়। তার পর নিয়ম মেনে বিষ্ণুর পুজো ও তাঁকে পায়েসের ভোগ নিবেদন করুন। মন্ত্র সিদ্ধির জন্য এই সময়টি অত্যন্ত শুভ। এই তিথিতে মানসিক শান্তি লাভ, মানসিক বিকার দূর করার জন্য একাগ্রচিত্তে চাঁদের পুজো করতে পারেন।
চৈত্র পূর্ণিমায় জপ করুন বিষ্ণুর এই মন্ত্র
১. ওম নমো ভগবতে বাসুদেবায়
২. শান্তাকারং ভুজঙ্গশয়নং পদ্মনাভং সুরেশং
বিশ্বাধারং গগনসদৃশং মেঘবর্ণ শুভাঙ্গম
লক্ষ্মীকান্তং কমলনয়নং যোগির্ভিদ্যানগম্যং
বন্দে বিষ্ণু ভবভয়হরং সর্ব লৌকেক নাথং
৩. ওম নমোঃ নারায়ণায়
চৈত্র পূর্ণিমায় দান করুন এই জিনিস
- এই তিথিতে রুপো দান করা শুভ।
- পূর্ণিমা তিথিতে দুধ-দই দান করা শুভ।
- চৈত্র পূর্ণিমায় সাদা ফুল দান করলে চাঁদ প্রসন্ন হয়।
- কোষ্ঠীতে চন্দ্র দোষ থাকলে পূর্ণিমা তিথিতে সাদা বস্ত্র দান করতে পারেন।
- এই তিথিতে অন্ন, বস্ত্র, অর্থ দান করলে সুফল পাওয়া যায়।
- পায়েস দান করলে সুফল পাবেন।
পূর্ণিমার (Purnima) দিনটি হিন্দু ধর্মে একটি উৎসব হিসাবে বিবেচিত হয়। পূর্ণিমা তিথির অধিপতি চন্দ্র, এর সঙ্গে পূর্ণিমাতেই সমুদ্র মন্থন থেকে নেমেছিলেন মা লক্ষ্মী। এই দিনটিকে সম্পদের দেবীকে খুশি করার জন্য খুবই শুভ বলে মনে করা হয়। যারা পূর্ণিমা তিথিতে উপবাস করেন এবং বাড়িতে সত্যনারায়ণের ব্রত কথা পাঠ করেন তাদের সকল কষ্ট দূর হয়। ঘরে আশীর্বাদ বাস আসে মা লক্ষ্মীর এবং নেতিবাচক শক্তি নষ্ট হয়।
এক বছরে মোট ১২টি পূর্ণিমা থাকে। হিন্দু পঞ্জিকা (Hindu Panchang) অনুসারে প্রতি মাসের শুক্লপক্ষের শেষ দিনটিকে পূর্ণিমা বলা হয়। এই দিনে চাঁদ ১৬টি কলায় পূর্ণ হয়। এই দিনে চন্দ্রকে অর্ঘ্য নিবেদন করে এবং রাতে মা লক্ষ্মীর পুজো করলে মানসিক সুখ, সম্পদ এবং লক্ষ্মী লাভ হয়।
(Collected)