সনাতন ধর্ম অনুযায়ী গোটা বছরের মধ্যে সবথেকে শুভ দিন হল অক্ষয় তৃতীয়া। এই দিনে যে কোনও শুভ কাজ করা যায়। এছাড়া কেনাকাটা করার জন্যও অক্ষয় তৃতীয়া অত্যন্ত শুভ দিন। মনে করা হয় ধনতেরসের মতো অক্ষয় তৃতীয়াতেও কিছু কেনাকাটা করলে মা লক্ষ্মীর আশীর্বাদ লাভ করা যায়। অক্ষয় তৃতীয়ায় সোনা, রূপো কেনা শুভ। সেই কারণে অনেকেই অক্ষয় তৃতীয়ায় গয়না কিনে থাকেন। অক্ষয় তৃতীয়ায় মা লক্ষ্মীর আরাধনা করার রীতি প্রচলিত আছে। এই দিনে লক্ষ্মী পুজো করলে তাঁর আশীর্বাদ লাভ করা সম্ভব হয়। অক্ষয় তৃতীয়ায় মা লক্ষ্মীর পুজো করলে সংসারে সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি বৃদ্ধি পায়।
পয়লা বৈশাখের কয়েক দিন পরেই পালিত হয় অক্ষয় তৃতীয়া। সনাতন ধর্ম অনুসারে অক্ষয় তৃতীয়া অত্যন্ত শুভ একটি দিন বলে মনে করা হয়। বাংলা পঞ্জিকা অনুসারে বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষের তৃতীয়া তিথিতে অক্ষয় তৃতীয়া পালন করা হয়। প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে এদিন কোনও শুভ কাজ করলে তার অক্ষয় ফল লাভ করা যায় বলে। এদিন বিয়ে, উপনয়ন, অন্নপ্রাশন, গৃহপ্রবেশের মতো যে কোনও শুভ কাজ করা অত্যন্ত শুভ। কেনাকাটা করার জন্যও অক্ষয় তৃতীয়া দিনটি বিশেষ শুভ। এদিন কিছু কেনাকাটা করলে মা লক্ষ্মীর আশীর্বাদ পাওয়া যায় বলে মনে করা হয়। সেই হিসেবে অক্ষয় তৃতীয়া ধনতেরস ও দীপাবলির মতোই একটি শুভ দিন।
অক্ষয় তৃতীয়ার মাহাত্ম্য
অক্ষয় তৃতীয়া (Akshay Tritiya) দিনটির বিশেষ ধর্মীয় মাহাত্ম্য রয়েছে। এই দিনটিতে যুগাধি তিভি-ও বলা হয়। মনে করা হয় অক্ষয় তৃতীয়া (Akshay Tritiya 2024) থেকেই নতুন যুগের সূচনা হয়। পৌরাণিক বিশ্বাস অনুসারে শ্রীবিষ্ণুর অন্যতম অবতার পরশুরাম অক্ষয় তৃতীয় জন্মগ্রহণ করেন। আবার মহাভারতে উল্লেখ আছে যে অক্ষয় তৃতীয়া তিথিতেই যুধিষ্ঠিরকে অক্ষয় পাত্র দান করেছিলেন শ্রীকৃষ্ণ। এই অক্ষয় পাত্রের খাবার কখনও ফুরোয় না। এই পাত্র থেকে দরিদ্র মানুষদের খাবার বিতরণ করতেন যুধিষ্ঠির। সেই কারণে অক্ষয় তৃতীয়ায় দান করলে তার শুভ ফল লাভ করা সম্ভব হয়। অক্ষয় তৃতীয়া থেকেই ত্রেতা যুগের সূচনা হয়। এই শুভ দিনেই মর্ত্যে আগমন হয় দেবী গঙ্গার। এই দিনের এত মাহাত্ম্য রয়েছে বলেই অক্ষয় তৃতীয়ায় যে কোনও শুভ কাজ করলে তার অক্ষয় ফল লাভ করা সম্ভব হয়।
ভবিষ্যপুরাণ অনুসারে অক্ষয় তৃতীয়া থেকে নতুন যুগের শুরু হয়। দ্বাপর যুগের অবসান ঘটে অক্ষয় তৃতীয়াতেই। পুরাণ কাহিনি অনুযায়ী অক্ষয় তৃতীয়াতেই স্বর্গ থেকে মর্ত্যে আসেন দেবী গঙ্গা। রাজা ভগীরথের তপস্যায় খুশি হয়ে মহাদেবের বরে অক্ষয় তৃতীয়া তিথিতেই মর্ত্যে নেমে আসেন গঙ্গা। অক্ষয় তৃতীয়া থেকেই খুলে যায় চারধামের অন্যতম ধাম বদ্রীনাথ মন্দিরের দরজা। তার সঙ্গে এদিনই মথুরায় বাঁকে বিহারীর দর্শন পাওয়া যায়। সারা বছর পোশাকের আড়ালে ঢাকা থাকেন বাঁকে বিহারী। এই একদিনই তাঁর চরণ দর্শন করা সম্ভব হয়। পুরাণ অনুসারে অক্ষয় তৃতীয়ায় অক্ষয় পাত্র লাভ করেছিলেন যুধিষ্ঠির। এই কারণে অক্ষয় তৃতীয়া থেকেই ক্ষেতে বীজ রোপণ করা শুরু করেন কৃষকরা। অক্ষয় তৃতীয়া থেকেই মহর্ষি বেদব্যাস মহাভারত রচনা শুরু করেন। মহাভারতের মধ্যেই রয়েছে শ্রীমদ ভগবত্ গীতা। অক্ষয় তৃতীয়াতেই জন্ম হয় বিষ্ণুর ষষ্ঠ অবতার পরশুরামের। এদিন পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে পুজো পাঠ করলে তাঁদের আশীর্বাদ লাভ করা যায়।
অক্ষয় তৃতীয়ায় কেনাকাটা
যেমন ধনতেরসে সোনা কেনার প্রথা রয়েছে, তেমনই অক্ষয় তৃতীয়াতেও সোনা বা অন্য ধাতুর গয়না কেনার চল রয়েছে বহু বছর ধরেই। কেনাকাটা করার জন্য এই দিনটিকে বছরের সব থেকে শুভ বলে মনে করা হয়। অক্ষয় তৃতীয়ায় কেনাকাটা করলে মা লক্ষ্মীর আশীর্বাদ লাভ করা সম্ভব হয় বলে মনে করা হয়।
অক্ষয় তৃতীয়ার শুভ কাজ
- বিয়ে, উপনয়ন, অন্নপ্রাশন বা গৃহপ্রবেশের মতো শুভ অনুষ্ঠান এদিন করলে প্রচুর সুখ ও সমৃদ্ধি লাভ করা যায়।
- অক্ষয় তৃতীয়ায় বিয়ের পাকা দেখা বা আশীর্বাদের অনুষ্ঠান করলে সেই দম্পতিকে আশীর্বাদ করেন স্বয়ং সৌভাগ্যলক্ষ্মী।
- অক্ষয় তৃতীয়ায় সোনা বা রুপোর গয়না কেনা অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়। অক্ষয় তৃতীয়ায় ঘরে সোনা বা রুপো আনলে কয়েক গুণ সম্পদ বৃদ্ধি পায় বলে প্রচলিত বিশ্বাস।
- অক্ষয় তৃতীয়া আখা তিজ নামেও অনেক জায়গায় পরিচিত। অক্ষয় তৃতীয়ায় নতুন গাড়ি কিনলে তা জীবনে মা লক্ষ্মীর আশীর্বাদ নিয়ে আসে।
- নতুন বাড়ি, ফ্ল্যাট বা জমি কিনতে চাইলে অক্ষয় তৃতীয়ার দিনে তার বুকিং করা শুভ বলে মনে করা হয়।
পুরাণ অনুসারে অক্ষয় তৃতীয়ায় অনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেছে। জেনে নিন অক্ষয় তৃতীয়া পালন করার পাঁচটি প্রধান কারণ।
অক্ষয় তৃতীয়া থেকে নতুন যুগের শুরু করা হয়। ভবিষ্যপুরাণ অনুসারে সত্য, ত্রেতা ও কলিযুগের সূচনা হয়। দ্বাপর যুগের অবসান ঘটে অক্ষয় তৃতীয়াতেই। সত্যযুগে নারায়ণ মত্স্য, কূর্ম, বরাহ ও নরসিংহ অবতার রূপে ধরাধামে আসেন। ত্রেতাযুগে তিনি বামন অবতার, পরশুরাম অবতার ও রাম অবতার রূপে জন্ম নেন। অধর্মের বিনাশ করে ধর্মের প্রতিষ্ঠা করতে বারবার অবতার-রূপে পৃথিবীতে এসেছেন বিষ্ণু।
গঙ্গার মর্ত্যে আগমন
পুরাণ অনুসারে অক্ষয় তৃতীয়াতেই স্বর্গ থেকে মর্ত্যে আসেন দেবী গঙ্গা (Ganga)। এদিন থেকে মর্ত্যে প্রবাহিত হতে শুরু করে এই পূণ্যসলিলা নদী। রাজা ভগীরথ তপস্যায় খুশি হয়ে মহাদেবের বরে অক্ষয় তৃতীয়া তিথিতে মর্ত্যে নেমে আসেন গঙ্গা। গঙ্গার জলে স্নান করলে গত সাত জন্মের পাপ ধুয়ে যায় বলে মনে করা হয়।
বদ্রীনারায়ণ ও বাঁকে বিহারীর দর্শন
এদিন থেকেই খুলে যায় চারধামের অন্যতম বদ্রীনাথ (Badrinath) মন্দিরের দরজা। তার সঙ্গে এদিনই মথুরায় (Mathura) বাঁকে বিহারীর দর্শন পাওয়া যায়। সারা বছর পোশাকের আড়ালে ঢাকা থাকেন বাঁকে বিহারী। তাঁর চরণ দর্শন করতে পারলে মৃত্যুর পর স্বর্গে স্থান হয় বলে প্রচলিত বিশ্বাস।
অক্ষয় পাত্র লাভ
পুরাণ মতে দেবী অন্নপূর্ণার কাছেই এই পৃথিবীর সমস্ত খাদ্য রয়েছে। এদিন খাদ্য দান করলে কোনও খাবারের অভাব হয় না বলে প্রচলিত বিশ্বাস। পুরাণ অনুসারে অক্ষয় তৃতীয়ায় অক্ষয় পাত্র লাভ করেছিলেন যুধিষ্ঠির। এই কারণে অক্ষয় তৃতীয়া থেকেই ক্ষেতে বীজ রোপণ করা শুরু করেন কৃষকরা।
মহাভারত রচনার শুরু
মহাভারতকে (Mahavarat) বলা হয় পঞ্চম বেদ। অক্ষয় তৃতীয়া থেকেই মহর্ষি বেদব্যাস মহাভারত রচনা শুরু করেন। মহাভারতের মধ্যেই রয়েছে শ্রীমদ ভগবত্ গীতা। বলা হয়ে থাকে, গীতার অষ্টদশ অধ্যায় যিনি পাঠ করেন, তাঁকে কোনও দুঃখ কষ্ট স্পর্শ করতে পারে না।
পরশুরামের জন্ম
অক্ষয় তৃতীয়াতেই জন্ম হয় বিষ্ণুর ষষ্ঠ অবতার পরশুরামের। এদিন পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে পুজো পাঠ করলে তাঁদের আশীর্বাদ লাভ করা যায়।