www.machinnamasta.in

ওঁ শ্রীং হ্রীং ক্লী গং গণপতয়ে বর বরদ সর্বজনস্ময়ী বশমানয় ঠঃ ঠঃ

May 7, 2024 7:19 pm
guru purnima

পরমেশ্বর শিবের দক্ষিণামূর্তি রূপকে “গুরুমূর্তি” বলা হয়, সপ্ত ঋষি ও ব্রহ্মা-বিষ্ণু সহ সমস্ত দেবতারা এই মাসের পূর্ণিমা তিথিতে মহাদেবের কাছে পরমজ্ঞান লাভ করেন, শিবকে আদিগুরু মানা হয়,তাই এটি গুরু পূর্ণিমা বলেই বিখ্যাত এটি ব্যাস পূর্ণিমা নামেও পরিচিত, কারণ এটি ঋষি বেদব্যাসের জন্মদিন চিহ্নিত করে, যিনি মহাভারত রচনা করেছিলেন

আষাঢ় মাসের পূর্ণিমাতেই গুরুপূর্ণিমা পালন করা হয়। আজকের দিনে গুরুর প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়ে থাকে। আজকের দিনটিকে সর্বতভাবে একটি শুভ দিন বলে মনে করা হয়। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পাশাপাশি বৌদ্ধরাও এই দিনটিকে মহা সাড়ম্বরের সঙ্গে উদযাপন করেন। এবার ভারতে ০৩ জুলাই গুরুপূর্ণিমা পালিত হবে।

গুরুপূর্ণিমাকে (Guru Purnima) ব্যাস পূর্ণিমাও বলা হয়ে থাকে। কারণ মনে করা আষাঢ় মাসের পূর্ণিমা তিথিতেই নাকি জন্ম নিয়েছিলেন ব্যাসদেব। তাই অনেকেকের কাছে ব্যসদেব-এর জন্মতিথি হিসসাবেও গুরুপূর্ণিমা পালন করা হয়। তবে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মতে, এই গুরুপূর্ণিমার বিশেষ তিথিতেই গৌতম বুদ্ধ ধর্ম নিয়ে উপদেশটি দিয়েছিলেন।

প্রসঙ্গত এই গুরু শব্দেরও কিন্তু একটা অন্তর্নিহিত অর্থ রয়েছে। ‘গু’-কথার অর্থ অন্ধকার এবং ‘রু’ কথার অর্থ অন্ধকার দূরীভুত করা। আর সেই কারণেই একজন মানুষের জীবনে গুরুর অবদান সবথেকে বেশি। বলা হয় একজন গুরুই পারেন  তাঁর শিষ্যের জীবন থেকে যাবতীয় অন্ধকার দূর করে দিতে পারেন। নেপালে আজকের দিনটি বিশেষ আঢ়ম্বরে পালিত হয়ে থাকে কারণ নেপালে আজকের দিনটি শিক্ষক দিবস হিসাবে পালিত হয়। এই দিন সেখানে সকলে তাঁদের গুরুর প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। 

পাশাপাশি গুরুপূর্ণিমা নিয়ে প্রচলিত আর একটা মতে বলা হয় যে, ভগবান শিব এই তিথিতেই প্রথম জ্ঞান প্রদান করেছিলেন। আর সেখান থেকেই গুরু প্রথাল সৃষ্টি হয়ে। ভগবান শিবকেও তাই আদি গুরু হিসাবে মনে করা হয়। গুরুর বচনকে পাথেয় করেই জীবনে এগিয়ে চলাই সকলের জীবনের মূল লক্ষ্য। তাই শাস্ত্রেও আজকের দিনটির বিশেষ মাহাত্ম্য অনেক বেশি। 

গুরু পূর্ণিমা মূলত গুরু কে ভিত্তি করে প্রচলিত একটি বিশেষ উৎসব যা সনাতন ধর্মীয় ঐতিহ্য অনুসারে বহুকাল ধরে পালিত হয়ে আসছে। এই উৎসবে শিবের রূপে জগতের সমস্ত আচার্য দের গুরু হিসেবে পূজা করা হয়। ভগবান শিব থেকেই সমগ্র সনাতন ধর্মশাস্ত্র প্রকট হয়েছে বলে কথিত আছে, তাই শিব আদিগুরু হিসেবে জগৎ বিখ্যাত। ‘গুরু’ শব্দটি ‘গু’ এবং ‘রু’ এই দুই সংস্কৃত শব্দের সম্মেলনে গঠিত; ‘গু’ শব্দটির অর্থ “অন্ধকার” / “অজ্ঞতা” এবং ‘রু’ শব্দের অর্থ ” অন্ধকারকে দূরীভূত করা “। অর্থ্যাৎ, ‘গুরু’ শব্দ দ্বারা এমন একজন ব্যক্তিকে নির্দেশ করা হয় যিনি অন্ধকার দূর করেন।

বেদব্যাস (Vedvyas)

কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন বা বেদব্যাস বা সংক্ষেপে ব্যাস পৌরাণিক কালের একজন ঋষি ছিলেন। ব্যাস মুনি ঋষি বশিষ্ঠের প্রপৌত্র, শক্তি মুনীর পৌত্র, পরাশর মুনীর পুত্র তথা শুকদেবের পিতা। ইনি হিন্দুধর্মীয় প্রাথমিক প্রত্যাদিষ্ট হিন্দুশাস্ত্র বলে স্বীকৃত বেদের ব্যবহারিক-বিন্যাসকারী হিসেবে পরিচিত। মহর্ষি ব্যাস পৌরাণিক মহাকাব্য মহাভারত ছাড়াও বেদান্তদর্শনের সংকলক, সম্পাদক এবং সমন্বায়ক এক জ্ঞানান্বেষী ঋষি।

মহর্ষি বেদব্যাসের জন্ম (Birth of rishi Vedvyas)

পৌরাণিক কালে যমুনা নদীতে খেয়া নৌকার মধ্যে পরাশর মুনি সত্যবতীর সাথে মিলিত হন, অতঃপর সত্যবতী গর্ভবতী হন এবং যমুনার একটি দ্বীপে বেদব্যাসের জন্ম হয়। তিনি গুরু পূর্ণিমার বিশেষ দিনে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। যমুনার দ্বীপে জন্ম হয়েছিল বলে তাঁর নাম রাখা হয় দ্বৈপায়ন। ব্যাসের গায়ের রং কালো ছিল বলে, পুরো নাম কৃষ্ণ-দ্বৈপায়ন রাখা হয়েছিল।

জন্মের পরই তিনি মা সত্যবতীর অনুমতি নিয়ে তপস্যার জন্য যাত্রা করেন। তাঁর তপস্যার স্থানটি ছিল বদরিকাশ্রম যার কারণে তিনি বাদরায়ণ নামেও পরিচিত ছিলেন। পরবর্তীতে কৃষ্ণ-দ্বৈপায়ন তপস্যাবলে মহর্ষিত্ব লাভ করেন এবং বেদবিন্যাস করে চার ভাগে ভাগ করেছিলেন। উক্ত কারণে তিনি বেদব্যাস বা ‘ব্যাস’ নামে পরিচিতি লাভ করেন। 

পুরাণ রচনা (Composition of Purana)

মহর্ষি বেদব্যাসের চারটি বেদেরই সম্পূর্ণ জ্ঞান ছিল।  তিনি বেদ রচনা করেননি তবে বেদকে লিপিবদ্ধ করেছিলেন এবং চারটি ভাগে বিভক্ত করেছেন, সেগুলি হল: ঋক্, সাম, যজু ও অথর্ব। বহু শতাব্দী ধরে ভারতীয় ধর্মীয় ইতিহাসে গুরু পুজোর প্রথা চলে আসছে। গুরু রূপে পূজিত হন যে মহান তাপস তিনিই হলেন মহর্ষি কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন। মহর্ষি বেদব্যাস ভাগবত , মহাভারত ইত্যাদি হিন্দু ধর্মীয় যত পুরাণ আছে সবই তিনি রচনা করেন ।

“যথাতে সংযোগ হয় বিয়োগ অবশ্য।
শরীর অনিত্য জান মরণ অবশ্য।।

হিন্দু ধর্মীয় গ্রন্থ মহাভারতের এরূপ হাজারও শ্লোকের রচনা করেন ব্যাসদেব। মহাভারত থেকে জানা যায় যে তিনি “মহাভারত” লিপিবদ্ধ করার উদ্দেশ্যে ভগবান ব্রহ্মার নিকট একজন লিপিকার নিয়োগের পরামর্শ গ্রহণ করতে যান,  ব্রহ্মা তখন গণেশকে নিয়োগ করার কথা বলেন। গণেশ লিপিকার হতে সম্মতি দেওয়ার পূর্বে একটি শর্ত রেখেছিলেন যে, লিপিবদ্ধ করার কাজে ব্যাসদেব ক্ষণমাত্রও বাক্য পাঠ থামাবেন না। ব্যাস তাতে রাজি হন কিন্তু সাথে অপর একটি শর্ত জুড়ে দিয়ে বলেন যে , গণেশ যেন কোনো বাক্যের অর্থ সম্পূর্ণ না বুঝে লিপিবদ্ধ ন করে। অতঃপর এই শর্তে গণেশ রাজি হলে মহাভারত লেখার কাজ শুরু হয়।

মহর্ষি ব্যাসদেব তাঁর শ্লোকগুলো রচনাকালের সময় কিছু জটিল শ্লোকও রচনা করতেন। যেগুলির অর্থ বুঝে লিখতে গিয়ে গণেশ যে সময় ব্যয় করতেন, সেই সময়ের মধ্যেই ব্যাস মুনি আরও অনেক শ্লোক তৈরি করে ফেলতেন।

গুরুপূর্ণিমা পুজোর নিয়ম  (How to worship Guru Purnima)

গুরুপূর্ণিমা পুজোর আলাদা করে বিশেষ কোনও নিয়ম নেই। তবে ভগবানকে ভোগ হিসেবে নানা নিরামিষ খাবার, যেমন লুচি ও সুজি, খিচুড়ি , তরকারি, ভাজা, পায়েস, ক্ষীর, তথা নানা প্রকার মিষ্টি ইত্যাদি দেওয়া যায়। এছাড়াও গঙ্গাজল, দই, মধু এবং ড্রাই ফ্রুট সহযোগে চরণামৃত তৈরি করে অর্পণ করা হয়ে থাকে। পূর্ণিমা তিথি চলাকালীন সময়ে নিরামিষ খাবার খেয়ে শুদ্ধ থাকা উচিত বলে বিশ্বাস করা হয়। অনেকে এই বিশেষ দিনে বাড়িতে সত্যনারায়ণের সিন্নিও দেন। যে-কোনও শুভ কাজ করার ক্ষেত্রে এই দিনটিকে অত্যন্ত শুভ দিন বলে মনে করা হয়।

কিন্তু কেন আষাঢ় মাসের পূর্ণিমার দিনটিতেই গুরুপূর্ণিমা বলে মনে করা হয়? সনাতন ধর্মে কেন এই বিশেষ সময়টিই গুরুপূর্ণিমা হিসেবে চিহ্নিত? ব্যাখ্যা রয়েছে শিবপুরাণে (shiv puran)। সেখানে বলা হচ্ছে, আষাঢ় মাসের পূর্ণিমার দিনই জন্মেছিলেন মহর্ষি বেদব্য়াস। পুরাণ অনুযায়ী, মহর্ষি বেদব্যাস শ্রীবিষ্ণুর অবতার। সাধারণ মানুষকে চতুর্বেদের জ্ঞান দিয়েছিলেন বলে তাঁকেই প্রথম গুরু হিসেবে গণ্য করা হয়। তাই বিশেষ পূর্ণিমাটি ব্যাসপূর্ণিমা নামেও পরিচিত। আগামী ১৩ জুলাই সেই পূর্ণিমারই উদযাপন। 
রীতি অনুযায়ী, গুরুপূর্ণিমার দিন গুরুর পুজো করার কথা। অনেকে তাঁদের সেবাও করেন। অনেকের ধারণা, মহর্ষি বেদব্যাসও এই দিনটিতে তাঁর গুরুর অর্চনা করতেন। বস্তুত গুরু-শিষ্য় সম্পর্কের ধারা এ দেশের মাটিতে যে বহু বছর ধরে চলে আসছে, এই পূর্ণিমা তার প্রমাণ। ভারতীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, শিষ্যকে অন্ধকারের হাত থেকে রক্ষা করে যিনি আলোর দিকে নিয়ে যান, তিনিই গুরু। তবে এদেশের সংস্কৃতিতে শুধু গুরু নন, পরিবারের সকল বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্য়ই গুরুর মতো সম্মানের অধিকারী। 

কিন্তু কেন আষাঢ় মাসের পূর্ণিমার দিনটিতেই গুরুপূর্ণিমা বলে মনে করা হয়? সনাতন ধর্মে কেন এই বিশেষ সময়টিই গুরুপূর্ণিমা হিসেবে চিহ্নিত? ব্যাখ্যা রয়েছে শিবপুরাণে (shiv puran)। সেখানে বলা হচ্ছে, আষাঢ় মাসের পূর্ণিমার দিনই জন্মেছিলেন মহর্ষি বেদব্য়াস। পুরাণ অনুযায়ী, মহর্ষি বেদব্যাস শ্রীবিষ্ণুর অবতার। সাধারণ মানুষকে চতুর্বেদের জ্ঞান দিয়েছিলেন বলে তাঁকেই প্রথম গুরু হিসেবে গণ্য করা হয়। তাই বিশেষ পূর্ণিমাটি ব্যাসপূর্ণিমা নামেও পরিচিত। আগামী ১৩ জুলাই সেই পূর্ণিমারই উদযাপন। 

রীতি অনুযায়ী, গুরুপূর্ণিমার দিন গুরুর পুজো করার কথা। অনেকে তাঁদের সেবাও করেন। অনেকের ধারণা, মহর্ষি বেদব্যাসও এই দিনটিতে তাঁর গুরুর অর্চনা করতেন। বস্তুত গুরু-শিষ্য় সম্পর্কের ধারা এ দেশের মাটিতে যে বহু বছর ধরে চলে আসছে, এই পূর্ণিমা তার প্রমাণ। ভারতীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, শিষ্যকে অন্ধকারের হাত থেকে রক্ষা করে যিনি আলোর দিকে নিয়ে যান, তিনিই গুরু। তবে এদেশের সংস্কৃতিতে শুধু গুরু নন, পরিবারের সকল বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্য়ই গুরুর মতো সম্মানের অধিকারী। 

পুরাণ তো বটেই, ভারত তথা গোটা বিশ্বের ইতিহাসের নিরিখে বহু বিশিষ্ট ব্য়ক্তিত্ব সাধারণ মানুষের জীবনে গুরুর ভূমিকা বার বার বর্ণনা করে গিয়েছেন। 

স্বামী বিবেকানন্দ (Swami Vibekananda)
  গুরু পরম্পরা থেকে যে আধ্য়াত্মিক শক্তি পেয়েছেন তিনিই সদগুরু, মনে করতেন স্বামী বিবেকানন্দ। শিষ্যের অন্যায়-অপরাধ সব নিজের উপর নেন তিনি।

তুলসীদাস (Tulsidas)
  ‘রামচরিত মানস’-এ তুলসীদস লিখেছিলেন, ‘গুরু বিন ভাবনিধি তরই না কোই।’ সহজ কথায় যার অর্থ গুরুর দাক্ষিণ্য ছাড়া বিশ্ব মহাসাগর থেকে আত্মার মুক্তি সম্ভব নয়। 

শুধু গম্ভীর দর্শন নয়, সাহিত্যেও গুরুর ভূমিকা উঠে এসেছে বার বার। ‘দেশে বিদেশে’থেকে শুরু করে একাধিক লেখায় বার বার গুরুদেব অর্থাৎ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কথা বিশেষ ভাবে বলে গিয়েছিলেন সৈয়দ মুজতবা আলি। এমন আরও উদাহরণ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আশপাশে। 

সেই সমস্ত গুরুদের অর্চনা জানাতেই এই দিন। 

উপসংহার (conclusion) 

বাংলা আষাঢ় মাসের পূর্ণিমা তিথিতেই গুরুপূর্ণিমা পালন করা হয়। এই দিনে গুরুর প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়, কারণ গুরুদের বচনকে পাথেয় করার মাধ্যমেই এগিয়ে চলা সকলের জীবনের মূল লক্ষ্য। তাই ধর্মীয় শাস্ত্রেও দিনটির মাহাত্ম্য অনেক বেশি।

(Collected)

administrator

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *