www.machinnamasta.in

ওঁ শ্রীং হ্রীং ক্লী গং গণপতয়ে বর বরদ সর্বজনস্ময়ী বশমানয় ঠঃ ঠঃ

May 8, 2024 8:05 am
ramprasad sen

বাংলার বৈষ্ণব প্রেমের বাণীর মূল বাহক যেমন শ্রীচৈতন্য ঠিক তেমনি আধুনিক বাংলার ভক্তি আন্দোলনের প্রবর্তক ছিলেন সাধক রামপ্রসাদ সেন। তাঁর ভক্তি আন্দোলনেই ঈশ্বরের নারীভাব প্রকাশ পেয়েছে। কালীকে নিয়ে তাঁর একের পর এক 'প্রসাদী গান' বা ‘রামপ্রসাদী গান’ ছড়াতে লাগল লোকমুখে (Spiritual) ।

আজ রামপ্রসাদ সেনের শাক্ত গীতিতে সমস্ত বাংলা মুগ্ধ। কিন্তু এই কালী এক সময় ছিল শ্মশানের দেবী, ভয়ংকরা রক্তগ্রাসী। মূলত শ্মশানে তান্ত্রীদের উপাসক দেবী ছিলেন ‘কালী’। সাধক রামপ্রসাদ ও তাঁর গুরু কৃষ্ণানন্দের প্রচেষ্টায় এখন কালী আমাদের ঘরের মা। এই মাতৃরূপী কালীর সাধনায় আপামর হিন্দু বাঙালি উদ্বেলিত।

কৃষ্ণানন্দের শিষ্য ছিলেন রামপ্রসাদ। তিনি তাঁর রামপ্রসাদী (Ramprasad) গানের সুরে, ভয়ঙ্করী রূপের দেবী কালীকে করে তুললেন নিজের মা। শ্মশানবাসিনী নিরাভরণ শাক্ত-তান্ত্রিকদের কালীই হয়ে উঠলেন বাঙালির ঘরের মেয়ে। ১৭২৩ সালে জন্ম নেন রামপ্রসাদ সেন। আগল ভাঙলেন তিনিই। তান্ত্রিক-কাপালিকদের তন্ত্রসাধনার থেকে তৎকালীন বঙ্গসমাজ খানিকটা দূরত্বই বজায় রাখত। ফলত কালীও সাধারণ বঙ্গীয় সমাজের অঙ্গ ছিল না। এই দূরত্ব প্রথম ভেঙে দেন সাধক রামপ্রসাদ সেন (Ramprasad Sen)।

বাংলার বৈষ্ণব প্রেমের বাণীর মূল বাহক যেমন শ্রীচৈতন্য ঠিক তেমনি আধুনিক বাংলার ভক্তি আন্দোলনের প্রবর্তক ছিলেন সাধক রামপ্রসাদ সেন। তাঁর ভক্তি আন্দোলনেই ঈশ্বরের নারীভাব প্রকাশ পেয়েছে। কালীকে নিয়ে তাঁর একের পর এক ‘প্রসাদী গান’ বা ‘রামপ্রসাদী গান’ ছড়াতে লাগল লোকমুখে (Spiritual) ।

‘এমন মানবজমিন রইল পতিত, (Spirituality) আবাদ করলে ফলত সোনা, মন রে কৃষিকাজ জান না’-র মতো গান আজও বাংলার ঘরে ঘরে গাওয়া হয়। লোমশ্রুতি হলো, সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবারের পৃষ্টপোষকতাতেই খানিকটা জমি পান তিনি। প্রতিষ্ঠা করেন মন্দির। শুরু হলো রামপ্রসাদের শক্ত সঙ্গীতের মালা। আজও রামপ্রসাদের এই ভিটে, তাঁর পঞ্চবটীর আসন রয়েছে হালিশহরে।এই ভিটেতেই নিজে হাতে মূর্তি গড়ে কালীর পুজো করতেন সাধক কবি।

তাঁর সমস্ত গানে কালী মায়ের রূপ নিয়ে যেন তাঁর কাছেই বসে আছেন। বিখ্যাত দু’একটা গান সেই ছবি স্পষ্ট। যেমন – ‘আমার খেলান হলো। খেলা হলো গো আনন্দময়ি॥ ভবে এলেম কর্তে খেলা, করিলাম ধূলা-খেলা, এখন কাল পেয়ে পাষাণের …’  অথবা – ‘মন কেন মায়ের চরণছাড়া। মন ভাব শক্তি, পাবে মুক্তি, বাঁধ দিয়া ভক্তিদড়া॥ নয়ন থাকতে দেখলে না মন, কেমন – -‘

সেই ভক্তিই (Maa Kali) সাধক কবি রামপ্রাসাদের মনের প্রধান সুর। তিনি গাইলেন – ‘চিকন-কালরূপা সুন্দরী ত্রিপুরারি-হৃদে বিহরে। অরুণ-কমলদল, বিমল-চরণতল, হিমকর-নিকর রাজিত নখরে॥ বামা অট্ট অট্ট …।’ যেন নিজের হৃদয়ের সমস্ত ভক্তি দিয়ে গড়ে নিলেন নিজের মাকে। ‘এমন দিন কি হবে মা তারা। যবে তারা তারা তারা বলে তারা বেয়ে ধরবে ধারা॥ হৃদিপদ্ম উঠবে ফুটে, মনের আঁধার যাবে …।’ এমন অজস্র গানের মধ্য দিয়েই বাংলার ভক্তি আন্দোলনকে প্রসারিত করেছেন সাধক রামপ্রসাদ। তাই মাকালী এখন আমাদের ঘরের রক্ত মাংসের ‘মা’ হয়ে উঠেছেন।

administrator

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *