www.machinnamasta.in

ওঁ শ্রীং হ্রীং ক্লী গং গণপতয়ে বর বরদ সর্বজনস্ময়ী বশমানয় ঠঃ ঠঃ

May 5, 2024 7:09 pm
bengali new year

১৫৫৬ খ্রিষ্টাব্দের ১০ই মার্চ বা ৯৯২ হিজরিতে বাংলা সন গণনা শুরু হয়। তবে এই গণনা পদ্ধতি কার্যকর করা হয় আকবরের সিংহাসন আরোহণের সময় (৫ই নভেম্বর, ১৫৫৬) থেকে। প্রথমে এই সনের নাম ছিল ফসলি সন, পরে "বঙ্গাব্দ" বা বাংলা বর্ষ নামে পরিচিত হয়। আকবরের সময়কাল থেকেই পহেলা বৈশাখ উদ্‌যাপন শুরু হয়।

বাঙালির বর্ষবরণ। পয়লা বৈশাখ বা নববর্ষের মাধ্যমে আপামর বাঙালির জীবনে পুনরায় হতে চলেছে নতুন দিগন্তের সূচনা। পয়লা বৈশাখ (বাংলা ক্যালেন্ডারের প্রথম মাস বৈশাখের ১ তারিখ) (Bengali New Year) বাংলা সনের প্রথম দিন তথা বাংলা নববর্ষের শুরু। এই দিনটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গে (West Bengal) এবং প্রতিবেশী বাংলাদেশে (Bangladesh) বিশাল জাঁকজমক করে পালিত হয়। ত্রিপুরায় বসবাসরত বাঙালিরাও এই উৎসবে অংশ নেয়। এটি বাঙালিদের একটি সর্বজনীন উৎসব।

এই দিনটি বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে গৃহীত। গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে ১৪ই এপ্রিল অথবা ১৫ই এপ্রিল পহেলা বৈশাখ পালিত হয়। সেইমতো এই বছর ১৫ এপ্রিল পহেলা বৈশাখ পালিত হতে চলেছে। জীর্ণ পুরাতন সবকিছু মুছে নতুনকে স্বাগত জানাবে বাঙালি জাতি।

কিন্তু এই পয়লা বৈশাখের পেছনের কাহিনী জানেন?

ইতিহাস ভারতবর্ষে মুঘল সাম্রাজ্য (Mughal Empire) প্রতিষ্ঠার পর সম্রাটরা হিজরী পঞ্জিকা অনুসারে কৃষি পণ্যের খাজনা আদায় করতেন। কিন্তু হিজরি সন চাঁদের উপর নির্ভরশীল হওয়ায় তা কৃষি ফলনের সঙ্গে মিলত না। তাই চাষিদের অসময়ে খাজনা পরিশোধ করতে হত। ফলে সমস্যা দেখা দিত। তাই মুঘল সম্রাট আকবরের আদেশে বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী ফতেহ উল্লাহ সিরাজি সৌর সন এবং আরবি হিজরী সনের উপর ভিত্তি করে নতুন বাংলা সন তৈরি করেন। প্রথমে এই সনের নাম ছিল ফসলি সন, পরে তা “বঙ্গাব্দ” বা বাংলা বর্ষ নামে পরিচিত হয়।

তবে, হিন্দু সৌর পঞ্জিকা অনুসারে (Bengali Panchang) বাংলার ১২টি মাস বহু শতাব্দী আগে থেকেই প্রচলিত ছিল। সৌর পঞ্জিকা শুরু হতো গ্রেগরীয় পঞ্জিকায় এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে। সৌর বছরের প্রথম দিন আসাম, বঙ্গ, কেরল, মনিপুর, নেপাল, উড়িষ্যা, পাঞ্জাব, তামিল নাড়ু এবং ত্রিপুরার সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে অনেক আগে থেকেই পালিত হত।

এখন যেমন নববর্ষ নতুন বছরের সূচনার নিমিত্তে পালিত একটি সর্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে, এক সময় এমনটি ছিল না। তখন নববর্ষ বা পহেলা বৈশাখ ঋতুধর্মী উৎসব হিসেবে পালিত হত। তখন এর মূল তাৎপর্য ছিল কৃষিকাজ, কারণ প্রাযুক্তিক প্রয়োগের যুগ শুরু না হওয়া পর্যন্ত কৃষকদের ঋতুর উপরই নির্ভর করতে হত। কয়েকজন ঐতিহাসিকের মতে, বাংলা দিনপঞ্জি উদ্ভব হয়েছিল রাজা শশাঙ্কের সময় থেকে। পরবর্তীতে মুঘল সম্রাট আকবর এটিকে রাজস্ব বা কর আদায়ের উদ্দেশ্যে পরিবর্তিত করেন।

ইতিহাস অনুযায়ী, মুঘল সম্রাট আকবরের (Akbar) সময়কাল থেকেই নাকি পয়লা বৈশাখ উদযাপন শুরু হয়। তখন প্রজারা চৈত্র মাসের শেষ দিনের মধ্যে সকল খাজনা পরিশোধ করত। এর পরদিন অর্থাৎ পহেলা বৈশাখে ভূমির মালিকরা নিজ নিজ অঞ্চলের অধিবাসীদেরকে মিষ্টান্ন দ্বারা আপ্যায়ন করতেন। এ উপলক্ষে বিভিন্ন উৎসবের আয়োজন করা হত। এই উৎসবটিই বর্তমানে এত বড় সামাজিক উৎসবে পরিণত হয়েছে।

পয়লা বৈশাখের সঙ্গেই নাকি শুরু হয় হালখাতা। প্রকৃতপক্ষে হালখাতা হল বাংলা সনের প্রথম দিনে দোকানপাটের হিসাব আনুষ্ঠানিকভাবে হালনগদ করার প্রক্রিয়া। গ্রাম, শহর, বাণিজ্যিক এলাকা, সকল স্থানেই পুরনো বছরের হিসাবের বই বন্ধ করে নতুন হিসাবের বই খোলা হয়। বাংলা নববর্ষের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িয়ে হালখাতা উদযাপন। হালখাতা বাঙালি ঐতিহ্য ও ইতিহাসের একটি অংশ।

আচার-অনুষ্ঠান

১) পশ্চিমবঙ্গে মহাসমারোহে সাড়ম্বরে উদযাপিত হয় বাংলা নববর্ষারম্ভ পয়লা বৈশাখ। সারা চৈত্র মাস জুড়েই চলতে থাকে বর্ষবরণের প্রস্তুতি। চৈত্র মাসের শেষ দিন অর্থাৎ চৈত্র সংক্রান্তি বা মহাবিষুব সংক্রান্তির দিন পালিত হয় গাজন উৎসব উপলক্ষ্যে চড়ক পূজা অর্থাৎ শিবের উপাসনা। এইদিনেই সূর্য মীন রাশি ত্যাগ করে মেষ রাশিতে প্রবেশ করে।

২) বহু পরিবারে বর্ষশেষের দিন টক এবং তিতা ব্যঞ্জন ভক্ষণ করে সম্পর্কের সকল তিক্ততা ও অম্লতা বর্জন করার প্রতীকী প্রথা একবিংশ শতাব্দীতেও বিদ্যমান।

৩) পরের দিন অর্থাৎ পয়লা বৈশাখে প্রতিটি পরিবারে স্নান সেরে বয়ঃজ্যেষ্ঠদের প্রণাম করার রীতি বহুল প্রচলিত। বাড়িতে বাড়িতে এবং সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চলে মিষ্টান্ন ভোজন।

৪) ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলির অধিকাংশই এদিন থেকে তাদের ব্যবসায়িক হিসেবের নতুন খাতার উদ্বোধন করে, যার পোশাকি নাম হালখাতা। এই উপলক্ষ্যে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলিতে মঙ্গলদাত্রী লক্ষ্মী ও সিদ্ধিদাতা গণেশের আরাধনা করা হয়। নতুন খাতায় মঙ্গলচিহ্ন স্বস্তিক আঁকা হয়।

৫) হালখাতার দিনে দোকানদাররা তাদের ক্রেতাদের মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়ন করে থাকে। এই প্রথাটি এখনও অনেক দোকানে আছে।

৬) গ্রামাঞ্চলে এবং কলকাতা শহরের উপকণ্ঠে বিভিন্ন মন্দির ও অন্যান্য প্রাঙ্গনে পয়লা বৈশাখ থেকে আরম্ভ হয় বৈশাখী মেলা।

৭) ভারতের সাংস্কৃতিক রাজধানী কলকাতা পয়লা বৈশাখ উদযাপনে একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নববর্ষারম্ভ উপলক্ষে শহরের বিভিন্ন অলিতে গলিতে নানান সংগঠনের উদ্যোগে প্রভাতফেরি আয়োজিত হয়।

৮) বিগত বছরের চৈত্র মাসে শহরের অধিকাংশ দোকানে ক্রয়ের উপর দেওয়া হয়ে থাকে বিশেষ ছাড়, যার প্রচলিত কথ্য নাম ‘চৈত্র সেল’। তাই, পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে এবং এই ছাড়ের সুবিধা গ্রহণ করতে সমস্ত মানুষ একমাস ধরে নতুন জামাকাপড়, বিভিন্ন জিনিসপত্র ক্রয় করে।

৯) বিভিন্ন মন্দিরে মন্দিরে পুজোর জন্য প্রচুর ভিড় হয়। এইদিন বাঙালীরা পরিবারের মঙ্গল কামনা করে পুজো দেন।

১০) এইদিন বাঙালির ঐতিহ্যবাহী পোশাক হিসাবে নতুন ধুতি-পাঞ্জাবি এবং শাড়ি পরার রেওয়াজ প্রচলিত।

১১) প্রতিটি বাঙালির ঘরে ঘে এইদিন জমিয়ে খাওয়া-দাওয়া হয়। ইলিশ, চিংড়ি, পাঁঠা, মুরগি-তে একেবারে ভরপুর পেটপুজো হয়ে থাকে।

বাংলাদেশ এবং ভারত ছাড়াও পৃথিবীর আরও নানান দেশে পয়লা বৈশাখ উদযাপিত হয়। অস্ট্রেলিয়ার সিডনি, মেলবোর্ন, ক্যানবেরাতে বৈশাখী মেলার মাধ্যমে পয়লা বৈশাখ উদযাপন করা হয়।

(Collected)

administrator

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *