www.machinnamasta.in

ওঁ শ্রীং হ্রীং ক্লী গং গণপতয়ে বর বরদ সর্বজনস্ময়ী বশমানয় ঠঃ ঠঃ

May 3, 2024 4:42 am
eid

ঈদ-উল-ফিতরের মধ্য দিয়েই পবিত্র ইসলামী মাস রমজানের সমাপ্তি হয় এবং শুরু হয় শাওয়াল মাস। দীর্ঘ এক মাস রোজা রাখা বা সিয়াম সাধনার পর মুসলমানেরা এই দিনটি খুব আনন্দের সাথে পালন করে থাকে। 'ঈদ' মানে আনন্দ উৎসব, ঈদ মানে যা বারবার ফিরে আসে। 'ফিতর' মানে উপবাস ভঙ্গ করা বা রোজা ভাঙা। রমজানের রোজার শেষে এই ঈদ আসে বলে এর নাম 'ঈদ-উল-ফিতর'। এটি রোজার ঈদ হিসেবেও পরিচিত।

দৈনন্দিন জীবনের সংকীর্ণ গণ্ডি থেকে মিলনের বৃহত্তর ক্ষেত্রে মানুষকে উত্তীর্ণ করে যেকোনো উৎসব অনুষ্ঠান। মুসলমান সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব এই ঈদও তার ব্যতিক্রম নয়। ঈদ শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো খুশি বা আনন্দ। বরাবরই আমরা জানি আনন্দ ভাগ করে নিলে বাড়ে আর দুঃখ ভাগ করে নিলে কমে যায়।

ঈদ মুসলিম (Eid) উম্মাহর জাতীয় অনুষ্ঠান। ঈদ অর্থ খুশি, আনন্দ, উৎসব ইত্যাদি। প্রকৃতপক্ষে ঈদ অর্থ ফিরে আসা। যেহেতু ঈদ প্রতিবছর মুসলমানদের (Muslim) ঘরে ফিরে আসে, তাই একে ঈদ বলে। বছরে দুটি ঈদ অনুষ্ঠিত হয়। একটি ঈদুল ফিতর, অন্যটি ঈদুল আজহা। এই দুই দিনে মুসলমানেরা আনন্দিত হয়ে মহান আল্লাহর নির্দেশ পালন করে এবং সব ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে ধনী-গরিব এক কাতারে শামিল হয়ে ঈদের নামাজ আদায় করে। এ দুটি অনুষ্ঠানই মুসলমানদের সর্বোচ্চ আনন্দানুষ্ঠান। 

ঈদের ইতিহাস
মহানবী (সা.)-এর মক্কার তেরো বছরের জীবনে রোজা ও ঈদের বিধান প্রচলিত ছিল না। ৬২২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মহান আল্লাহর নির্দেশে মদিনা হিজরত করেন। মদিনায় তাঁর আগমনের আগে নওরোজ ও মেহেরজান নামক দুটি উৎসব প্রচলিত ছিল। মদিনাবাসীরা নববর্ষ উপলক্ষে নওরোজ ও বসন্তকাল উপলক্ষে মেহেরজান অনুষ্ঠান পালন করত এবং সেখানে নানাবিধ আনন্দ-ফুর্তি ও খেল-তামাশা করত। যার মধ্যে অশ্লীলতা, মদপান ও বেহায়াপনা মিশ্রিত ছিল।

মহানবী (সা.)-এর দাওয়াতে অনেক মদিনাবাসী ইসলাম কবুল করে। ইসলাম কবুলের কারণে তাদের জন্য নওরোজ ও মেহেরজান নিষিদ্ধ হয়ে যায়। তারা মহানবী (সা.)-এর কাছে এমন উৎসব কামনা করেন, যেখানে বৈধভাবে উৎসব করা যায়। এরই মধ্যে দুটি বছরও কেটে যায় এবং ৬২৪ খ্রিষ্টাব্দে রমজানের রোজা ফরজ হয়। এ সময় আল্লাহ তাআলা জাহিলি যুগের দুটি উৎসবের পরিবর্তে ইসলামে দুটি উৎসব প্রবর্তন করেন। একটি ঈদুল ফিতর অন্যটি ঈদুল আজহা। (নাসায়ি)

এই দুই উৎসবে মুসলমানরা পারস্পরিক ভালোবাসা, ভ্রাতৃত্ব, প্রীতি ও সৌহার্দ্যের অনুপম দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করে। ভুলে যায় সব ভেদাভেদ। আল্লাহ উম্মতে মুহাম্মাদিকে এমন দুটি বরকতময় উৎসব উপহার দিয়েছেন, যা অতীতের কোনো উম্মতকে দেননি। ঈদুল ফিতর সম্পর্কে মহানবী (সা.) বলেন, ‘রোজাদারের জন্য দুটি আনন্দ। একটি উপবাস ভঙ্গের (ঈদুল ফিতর) আনন্দ অন্যটি হলো (আখিরাতে) আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাতের আনন্দ।’

ঈদুল ফিতরের তাৎপর্য
আরবি ফিতর অর্থ উপবাস ভঙ্গ করা। তাই ঈদুল ফিতর অর্থ উপবাস ভঙ্গের আনন্দ। যেহেতু দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর রোজাদার দিনের বেলায় আহার গ্রহণ করে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে এবং বিভিন্নভাবে আনন্দ প্রকাশ করে, তাই এর নাম ঈদুল ফিতর। ঈদের দিন সূর্যাস্তের পর ঈদের নামাজ ছাড়া আল্লাহর কাছে কোনো প্রিয় ইবাদত নেই।

রমজান (Ramjan) শেষে শাওয়ালের চাঁদ দেখে পরের দিন মুসলিম জাতি ঈদগাহে অথবা মসজিদে (Masjid) সমবেত হয়ে মহানন্দের সঙ্গে আমির-ফকির, ছোট-বড়, শিক্ষিত-অশিক্ষিত সম্মিলিতভাবে যে দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায় করে, তা-ই ঈদুল ফিতরের নামাজ। রমজানের রোজা শেষ করে আল্লাহর কৃতজ্ঞতাস্বরূপ তাঁর মাহাত্ম্য ও বড়ত্ব প্রকাশ করা প্রতিটি মুমিনের জন্য আবশ্যক। আল্লাহ তাআলা (Allah) বলেন, ‘মহান আল্লাহ চান যে তোমরা রমজানের সংখ্যাগুলো পূর্ণ করো এবং আল্লাহর মাহাত্ম্য বর্ণনা করো, যেভাবে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন। আর এভাবেই হয়তো তোমরা তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারবে।’ (সুরা বাকারা: ১৮৫)

তাফসিরকারকগণ বলেন, ঈদের দিন সজোরে এই তাকবির দেওয়া প্রত্যেক মুসলমানের দায়িত্ব। ‘আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর ওয়া লিল্লাহিল হামদ।’ (দারাকুতনি) 

ঈদের নামাজের সময় ও স্থান
ঈদের নামাজ সূর্যাস্তের পর থেকে জোহরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত পড়া যায়। এ নামাজ জামাতের সঙ্গে ঈদগাহে আদায় করা ওয়াজিব। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, ‘মহানবী (সা.) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দিনে ঈদগাহে যেতেন।’ (বুখারি)। তবে বিশেষ কারণে ঈদগাহে আদায় করতে না পারলে মসজিদে আদায় করা যায়। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘একবার বৃষ্টি হওয়ায় মহানবী (সা.) সবাইকে নিয়ে মসজিদে ঈদের সালাত পড়েন।’ (আবু দাউদ)

কেউ জামাতে ঈদের নামাজ আদায় করতে না পারলে একা একা পড়া অথবা কাজা আদায় করতে হয় না। কারণ ঈদের নামাজের কোনো কাজা নেই। তবে কেউ যদি ইমামের সঙ্গে এক রাকাত পায়, তবে অন্য রাকাতটি নির্দিষ্ট তাকবির দিয়ে একা একা আদায় করতে হবে।

ঈদুল ফিতরের সুন্নতগুলো
ঈদুল ফিতরের দিন ফজরের পর আর কোনো ইবাদত না করে ঈদের নামাজের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা আবশ্যক। নামাজের আগে মেসওয়াক করা, গোসল করা, পবিত্র ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পোশাক পরিধান করা, সুগন্ধি ব্যবহার করা, চোখে সুরমা লাগানো, সামর্থ্য অনুযায়ী উত্তম খাবারের ব্যবস্থা করা, পরিবার-পরিজনসহ খাওয়া, প্রতিবেশী, এতিম, মিসকিন ও গরিব-দুঃখীকে সাধ্যমতো খাওয়ানো, ঈদগাহে যাওয়ার আগে মিষ্টান্ন খাওয়া, সদকাতুল ফিতর আদায় করা, আদায় করতে না পারলেও সম্পদ থেকে ফিতরার অর্থ আলাদা করা, যথাসময়ই ঈদগাহে গমন করা, ঈদগাহে যে পথে যাবে নামাজ শেষে অন্য পথে ফিরে আসা, যাওয়া-আসার পথে তাকবির দেওয়া, যথাসম্ভব হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া, ঈদের খুতবা মনোযোগ দিয়ে শোনা ইত্যাদি। 

বিশেষ ক্ষমার ঘোষণা
ঈদগাহে উপস্থিত সব রোজা পালনকারীকে মহান আল্লাহ ক্ষমা করেন এবং তাদের সব মন্দ কাজকে ভালো কাজ দিয়ে বদলে দেন। মহানবী (সা.) বলেন, ‘ঈদুল ফিতরের দিন আল্লাহ ফেরেশতাদের সামনে রোজা পালনকারীদের নিয়ে গর্ব করতে থাকেন। তিনি বলেন, হে আমার ফেরেশতারা, যে শ্রমিক পরিপূর্ণ কাজ করেছে তার পুরস্কার কী? তখন ফেরেশতারা বলেন, তার পুরস্কার পরিপূর্ণভাবে প্রদান করা আবশ্যক। তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা-বান্দিরা তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করেছে, তারা উচ্চ স্বরে তাকবির দিয়ে ঈদগাহে উপস্থিত হয়েছে। আমার সম্মান ও গাম্ভীর্যের কসম, আমি তাদের ডাকে সাড়া দেব। এরপর তিনি বলেন, আমি তোমাদের ক্ষমা করে দিলাম। মহানবী (সা.) বলেন, তাই তারা ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়ে ঘরে ফিরে আসে।’ (মিশকাত)

ঈদুল ফিতর আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ এক উপহার, যার মাধ্যমে আল্লাহ তাঁর বান্দাকে ক্ষমা করেন এবং বান্দা তার রবের সঙ্গে সম্পর্ক আরও মজবুত করে। তবে এটি সত্য যে যারা রোজা পালন করে না, তারা কিন্তু ঈদের সব বরকত থেকে বঞ্চিত হয়। 

ঈদ-উল-ফিতরের তাৎপর্য ১) ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের কাছে ঈদ-উল-ফিতরের ব্যাপক গুরুত্ব রয়েছে। ২) রমজান মাসকে অত্যন্ত পবিত্র মাস হিসেবে বিশ্বাস করা হয়। এইমাসে সৎকর্ম, মানুষের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ ছড়িয়ে দেওয়া ও ধৈর্য ধরা হয় এবং সমস্ত মন্দ চিন্তা ও অভ্যাসকে দূরে সরানো হয়। আর, এই ঈদ-উল-ফিতরের মধ্য দিয়েই পবিত্র ইসলামী মাস রমজানের সমাপ্তি হয়। ৩) কিছু প্রাচীন ধর্মগ্রন্থ ও ঐতিহাসিক কাহিনী অনুসারে, আরব অঞ্চলে ইসলামের আবির্ভাবের পূর্বেই ঈদ-উল-ফিতর উদযাপিত হত। ৪) এই দিনে বিশ্বজুড়ে মুসলমানরা তাদের প্রিয়জনদের সঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নেয় এবং ভালবাসা ও ভ্রাতৃত্বের বার্তা ছড়িয়ে দেয়। ৫) তারা মসজিদে সবাই একসঙ্গে নামাজ পড়ে এবং একে অপরকে জড়িয়ে ধরে খুশির বার্তা দেয়। একে অপরকে জড়িয়ে ধরে ঈদ মোবারক জানানোর পিছনের ধারণা হল, সমাজে সহানুভূতি ও ভালবাসা ছড়িয়ে দেওয়া। ৬) বিভিন্ন ধরনের সুস্বাদু খাবার এই দিনটিতে প্রস্তুত করা হয়। এর মধ্যে সেমাই সবচেয়ে প্রচলিত খাবার। এছাড়াও বিরিয়ানি, কাবাব এবং আরও অনেক কিছু তৈরি করা হয়। পরিবার ও বন্ধু সবার সঙ্গে খাওয়া হয়। ৭) একে অপরকে শুভেচ্ছা ও উপহার প্রেরণ করে মানুষ কৃতজ্ঞতা ও ভালবাসা প্রকাশ করে। এই দিনটিতে সবাই রাগ-হিংসা ভুলে গিয়ে একে অপরকে কাছে টেনে নেয়। Powered By 5 5 00:03 / 02:00 ৮) যারা দরিদ্র বা অভাবী তাদের মধ্যে বস্ত্র, অর্থ এবং খাবার বিতরণ করা হয়। ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে গরীব দুঃস্থদের মাঝে বিতরণ করা দানকে যাকাতুল ফিতর বলা হয় এবং এটি ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

(লেখক: অধ্যাপক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় / আজকের পত্রিকা)

administrator

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *