পুরাণ অনুযায়ী, সমাধি নামক বৈশ্যের সঙ্গে মিলে রাজা সুরথ বসন্তকালে ঋষি মেধসের আশ্রমে দেবী দুর্গার আরাধনা করেন। যা পরে বাসন্তী পুজো (Basanti Puja) নামে প্রসিদ্ধ হয়। দেবী দুর্গার প্রথম পুজারী হিসাবে চণ্ডীতে রাজা সুরথের উল্লেখ রয়েছে। পরে রাবণ বধের উদ্দেশে শ্রীরামচন্দ্র অকাল বোধন করেন এবং তখন থেকে দুর্গাপুজো শরৎকালে শুরু হয়।
বাসন্তী পুজো করার পাশাপাশি ধরে বেশ কিছু জিনিস নিয়ে এলে সংসার থেকে নেতিবাচক শক্তি দূর হয়, সঙ্গে হু হু করে ধেয়ে আসে প্রচুর অর্থলাভ ও সুখ-শান্তি-সমৃদ্ধি। আগামী ১৬ এপ্রিল দুর্গা অষ্টমীতে কিছু জিনিস বাড়িতে আনা শুভ। দুর্গা অষ্টমীর দিন বাড়িতে কী কী জিনিস আনবেন, তা স্পষ্ট করে জেনে নিন…
রাজা সুরথের কাহিনী
রাজা সুরথকে চিত্রগুপ্তবংশী রাজা (চিত্রগুপ্তের বংশধর) হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে দূর্গা সপ্তশতী দেবী মাহাত্ম্য এবং মার্কণ্ডেয় পুরাণে। সুরথ সুশাসক ও যোদ্ধা হিসেবে বেশ খ্যাত ছিলেন। কোনও যুদ্ধে নাকি তিনি কখনও হারেননি। কিন্তু প্রতিবেশী রাজ্য একদিন তাঁকে আক্রমণ করে এবং সুরথ পরাজিত হন। এই সুযোগে তাঁর সভাসদরাও লুটপাট চালায়। কাছের মানুষের এমন আচরণে স্তম্ভিত হয়ে যান সুরথ। বনে ঘুরতে ঘুরতে তিনি মেধাসাশ্রমে পৌঁছোন। ঋষি তাঁকে সেখানেই থাকতে বলেন। কিন্তু রাজা শান্তি পান না। এর মধ্যে একদিন তাঁর সমাধির সঙ্গে দেখা হয়। তিনি জানতে পারেন, সমাধিকেও তাঁর স্ত্রী এবং ছেলে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। তবুও তিনি স্ত্রী-ছেলের ভালোমন্দ এখনও ভেবে চলেছেন।
তাঁরা দুজনেই তখন ভাবলেন, যাদের কারণে তাদের সব কিছু হারিয়েছে, তাদের ভালো আজও তারা কামনা করছেন। ঋষিকে একথা বলায়, তিনি বলেন সবই মহামায়ার ইচ্ছা। এরপর ঋষি মহামায়ার কাহিনি বর্ণনা করেন। ঋষির উপদেশেই রাজা কঠিন তপস্যা শুরু করেন। পরে মহামায়ার আশীর্বাদ পেতেই বসন্ত কালের শুক্ল পক্ষে রাজা পুজো শুরু করেন। শুরু হয় বাসন্তী পুজো (Basanti Puja)। এই পুজো এখন কয়েকটি বাড়িতেই শুধু হয়।
স্বস্তিকা
স্বস্তিকা খুব শুভ, আর বাড়িতে রাখলে তার শুভ ফল পাওয়া যায় বলে মনে করা হয়। চৈত্র নবরাত্রির দুর্গা অষ্টমীর দিন রুপোর তৈরি স্বস্তিকা ঘরে আনা অত্যন্ত শুভ ও কার্যকরী। দেবী দুর্গার বিশেষ আশীর্বাদ পাওয়া যায়।
রৌপ্য মুদ্রা
সোনা ও রৌপ্য শুভ ধাতু। চৈত্র নবরাত্রির দুর্গাষ্টমীর দিন একটি রৌপ্যমুদ্রা এনে দেবীকে নিবেদন করুন, এরপর নবরাত্রির পর বাড়ির সবচেয়ে নিরাপদ জায়গায় রেখে দিন। দুর্গার কৃপায় ঘরে কখনও সম্পদের অভাব হবে না।
ময়ুরের পালক
চৈত্র নবরাত্রির দুর্গা অষ্টমীর দিন বাড়িতে ময়ূরের পালক আনাও খুবই শুভ। সংসারের সব ঝামেলা ও কলহ দূর হয়, পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সম্পর্ক আরও দৃঢ়।
মাটির ঘট
দুর্গা অষ্টমীর দিনে মাটির তৈরি ঘর বাড়িতে আনলে খুব শুভ ফল পাওয়া যায়। দেবী ভক্তের উপর আশীর্বাদ বর্ষণ করেন সারা বছর, সংসারে সর্বদা সুখ শান্তি বজায় থাকে।
দেবী দুর্গার প্রথম পূজারী হিসাবে চন্ডিতে রাজা সুরথের নাম উল্লেখ রয়েছে।
যোদ্ধা হিসাবে রাজা সুরথ ছিলেন খুব দক্ষ। কোন যুদ্ধে নাকি তিনি কখনও হেরে যাননি একদিন প্রতিবেশী রাজ্য তাকে আক্রমণ করলে তিনি পরাজিত হন, এই সুযোগে তার সভাসদরা লুঠপাঠ চালায়। নিজের কাছের লোকেদের এমন আচারনে তিনি অবাক হয়ে যান।
এই সময় তিনি ঘুরতে ঘুরতে ঋষি মেধসের আশ্রমে পৌঁছান। ঋষি তাকে সেখানেই থাকতে বলেন। কিন্তু রাজা মনের শান্তি পান না। এর মধ্যে একদিন তার সঙ্গে সমাধি বলে একজনের দেখা হয়। তিনি জানতে পারেন সমাধিকে তার স্ত্রী ও ছেলে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে, তবুও তিনি বউ ছেলের ভালো-মন্দ এখনও ভেবে চলেছেন।
তারা দুজনেই বিস্মিত হলেন যে, যাদের কারণে তারা আজ সব হারিয়েছে, এখনও তারা তাদের ভালো চেয়ে যাচ্ছেন। ঋষিকে এ কথা জানানোতে তিনি বলেন যে এসবই মহামায়ার ইচ্ছা। এরপর ঋষি মহামায়ার কাহিনী বর্ণনা করেন। ঋষির পরামর্শ মতই রাজা কঠিন তপস্যা শুরু করে। পরে মহামায়ার আশীর্বাদ পেতেই রাজা বসন্তকালের শুক্লপক্ষে দেবী দুর্গার পুজো শুরু করে সেই সময় থেকে শুরু হয়েছিল বাসন্তী পুজো।
দেবীর আগমন ঘোটকে
দুর্গাপুজোয় সময় প্রতি বছর দেবীর বিভিন্ন বাহনে আগমন ও গমন হয়। দেবীর আসা ও যাওয়ার বাহনের উপর নির্ভর করে গোটা বছর কেমন কাটতে চলেছে মর্ত্যবাসীর। দেবী দুর্গা কোনও বছর ঘোড়া, কোনও বছর হাতি, আবার কোনও বছর নৌকায় আসেন। এই বছর চৈত্র নবরাত্রিতে দেবীর আগমন হবে ঘোটক বা ঘোড়ায়। ঘরে চড়ে দেবীর মর্ত্যে আগমন জ্যোতিষ অনুসারে শুভ লক্ষণ নয়। এর ফলে ক্ষমতার পরিবর্তন ও অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।