www.machinnamasta.in

ওঁ শ্রীং হ্রীং ক্লী গং গণপতয়ে বর বরদ সর্বজনস্ময়ী বশমানয় ঠঃ ঠঃ

April 27, 2024 2:37 pm

একই রকম ঐতিহ্য মেনে দোল উৎসবের পরদিন ’জোড়া রাধাবল্লভের’ দোল উৎসবে মাতোয়ারা হন জামালপুরের রাধাবল্লভবাটি মৌজা এলাকার বাসিন্দারা। দীর্ঘ প্রায় চারশো বছর ধরে জোড়া রাধাবল্লভ পূজিত হয়ে আসছেন জামালপুরের রায় পরিবারের মন্দিরে। তাই দোল পূর্ণিমা তিথি শেষে হোলিতে রাধাবল্লভের চরণে আবির দিয়ে তারপর বিকেলে রঙের উৎসবে মাতোয়ারা হবেন জামালপুরবাসী। মন্দির প্রাঙ্গণে মেলা বসে গিয়েছে। জোড়া রাধাবল্লভের পুজো দেখতে আশপাশের এলাকার বহু মানুষের ভিড়ও মন্দির প্রাঙ্গণে উপচে পড়ে। পূর্ব বর্ধমান জেলায় আজও অন্যতম ঐতিহ্যের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে জোড়া রাধাবল্লভের দোল উৎসব ।

দোল উৎসবে মাতোয়ারা বাংলা। রঙের উৎসবে মেতেছে বঙ্গবাসী। তবে সুপ্রাচীন ঐতিহ্য মেনে এই দিনটিতে আবিরের রঙে রাঙা হন না রাঢ়বঙ্গের অন্যতম প্রাচীন নগর বর্ধমানের (Burdwan) বাসিন্দারা। এখানে দোল উৎসব (Dol Utsav) পালিত হয় দোল পূর্ণিমার পরের দিন। রাজা না থাকলেও শতাব্দী প্রাচীন কাল ধরে রাজরীতি মেনে এ ভাবেই রঙের উৎসব পালন করে চলেছেন বর্ধমানবাসী।

গোটা বাংলা আজ দোলের রঙে রঙিন ।  রঙের আনন্দে মেতেছে বাংলার সব প্রান্ত। ব্যতিক্রম বর্ধমান। দোলের দিন রঙের ধারে পাশেও যান না এখানকার মানুষ। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এই রাজ আমলের প্রথা আজও কঠোরভাবে মেনে চলেন বর্ধমানের বাসিন্দারা। ঠাকুরের পায়ে আবির না দেওয়া পর্যন্ত রঙের আনন্দ থেকে দূরেই থাকেন তাঁরা।           

দোল পূর্ণিমার (Dol Purnima) দিন বর্ধমানবাসীর রঙের উৎসবে মাতোয়ারা না হওয়ার পিছনেও রয়েছে দেবতাদের প্রতি ভক্তির কাহিনী।কথিত আছে বর্ধমানের মহারাজা বিজয় চাঁদ মহতাব এই প্রথা চালু করেন। প্রথম দিন অর্থাৎ দোল পূর্ণিমার দিনটি বর্ধমানের অধিষ্ঠাত্রী দেবী মা সর্বমঙ্গলা দেবীর দোল। এও কথিত আছে বর্ধমানে দোল পূর্ণিমা তিথিটি হল ঠাকুর ’দেবতার দোল’ উৎসবের দিন। সেদিন শুধুমাত্র দেব-দেবীর রাঙা চরণ আবির ও কুমকুমে চর্চিত হয়। সেই উপলক্ষে রাজবাড়ির অন্দর মহলে দোল খেলা হয়ে থাকে। পরের দিন অনুষ্ঠিত হবে মানব সাধারণের রঙের উৎসব। সেই রীতির আজও সার্থক উত্তরাধিকারী বর্ধমানের মানুষ । তাই ঐতিহ্য মেনে দোল পূর্ণিমা তিথিতে শুধুই বর্ধমানের অধিষ্ঠাত্রী দেবী সর্ব্বমঙ্গলার বাড়িতে দোল উৎসব পালিত হল।

একই রকম ঐতিহ্য মেনে দোল উৎসবের পরদিন ’জোড়া রাধাবল্লভের’ দোল উৎসবে মাতোয়ারা হন জামালপুরের রাধাবল্লভবাটি মৌজা এলাকার বাসিন্দারা। দীর্ঘ প্রায় চারশো বছর ধরে জোড়া রাধাবল্লভ পূজিত হয়ে আসছেন জামালপুরের রায় পরিবারের মন্দিরে। তাই দোল পূর্ণিমা তিথি শেষে হোলিতে রাধাবল্লভের চরণে আবির দিয়ে তারপর বিকেলে রঙের উৎসবে মাতোয়ারা হবেন জামালপুরবাসী। মন্দির প্রাঙ্গণে মেলা বসে গিয়েছে। জোড়া রাধাবল্লভের পুজো দেখতে আশপাশের এলাকার বহু মানুষের ভিড়ও মন্দির প্রাঙ্গণে উপচে পড়ে। পূর্ব বর্ধমান জেলায় আজও অন্যতম ঐতিহ্যের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে জোড়া রাধাবল্লভের দোল উৎসব ।

জোড়া রাধাবল্লভের দোল উৎসব নিয়ে প্রচলিত রয়েছে নানা লোককথা। জামালপুরের রায় পরিবারের সদস্য প্রশান্ত কুমার রায় জানালেন, তাঁদের পূর্ব পুরুষরা ছিলেন রাজপুত। প্রায় চারশো বছর আগে রাজস্থান থেকে বর্ধমানে বাণিজ্য করতে এসেছিলেন তাঁদের রাজপুত সিংহ বংশিয় এক পূর্বপুরুষ। বর্ধমান জেলার জামালপুরে তিনি আস্তানা গাড়েন। শত্রু আক্রমণ ঠেকাতে ’গড়’ কাটা হয় আস্তানার চারপাশ জুড়ে। সেই গড় কাটার সময় মাটি থেকে উদ্ধার হয় রাধাকৃষ্ণের অষ্টধাতুর একটি মূর্তি। রাধাকৃষ্ণ মূর্তিটি রাজপুত পরিবারের কাছে রাধাবল্লভ নামে পরিচিতি পায়।

আস্তানা এলাকায় ছোট্ট একটি মন্দির গড়ে রাধাবল্লভের মূর্তির পুজোপাঠ শুরু করে রাজপুত পরিবার। সেই সমসাময়িক কালেই কোনও এক বৈষ্ণব সাধক ওই মন্দিরের সামনে কষ্টিপাথরের কৃষ্ণ মূর্তি এবং অষ্ট ধাতুর রাধা মূর্তি ফেলে রেখে দিয়ে চলে যান। সেই থেকে দোল উৎসবের পরদিন প্রতিপদ তিথিতে জোড়া রাধাবল্লভের মূর্তির পুজোপাঠ হয়ে আসছে রাধাবল্লভ মন্দিরে।

প্রশান্ত রায় আরও জানান, পূর্বতন বর্ধমান মহারাজা জামালপুরের কয়েকটি মৌজা এলাকার জমিদারি দেখভালের দায়িত্ব দিয়েছিল তাদের পূর্ব পুরুষদের। সেই সময়েই রাধাবল্লভকে স্মরণ করে এখানকার জমিদারি মৌজা রাধাবল্লভবাটি মৌজা নামে পরিচিতি পায় । বর্ধমান মহারাজা কর্তৃক রায় উপাধিতে ভূষিত হয় রাজস্থান থেকে জামালপুরে আস্তানা গাড়া সিংহ পরিবার। ভক্তিতে ভর করেই জোড়া রাধাবল্লভের দোল উৎসবের দিনেই রঙের উৎসবে মাতেন জামালপুরের রাধাবল্লভবাটি মৌজার বাসিন্দারা।

বর্ধমানের রাজার আমল থেকে চলছে এই প্রথা

রাজ্যজুড়ে মঙ্গলবার রঙের উৎসব। আবিরে-রঙে বসন্তকে বরণ করে নেওয়ার পালা। নাচে-গানে রাঙিয়ে দেওয়ার দিন। বসন্তোৎসব উপলক্ষে দিনভর নানা জায়গায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। 
চলছে রং খেলা, আবির মাখিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময়।   কিন্তু বর্ধমান এক্ষেত্রে একটু ব্যতিক্রম। 

বর্ধমানের রাজারা ছিলেন অবাঙালি। তাদের উপাস্য দেবতা ছিলেন লক্ষীনারায়ণ জিউ। এই লক্ষ্মীনারায়ণ জিউয়ের মন্দিরে দোলের দিন ঠাকুরের পায়ে রং দেওয়া হয়। হোলিকে ঘিরে হত নানান উৎসব,আচার-অনুষ্ঠান। এইসব করতে গড়িয়ে যেত বেলা। প্রজাদের সেদিন আর রং খেলা হত না। তাই বর্ধমান রাজ পরিবার থেকে এই প্রথা চালু করা হয়েছিল যে,দোলের দিন শুধু ঠাকুরের দোল হবে।পরের দিন ঠাকুরের পায়ের রং দিয়ে দোল উৎসবে মাতবে বর্ধমানের আপামর মানুষ।

রাজপরিবারের পুরোহিত জানালেন, দীর্ঘ দিন থেকে এই প্রথা চলে আসছে, দোলের দিন শুধু ঠাকুরের দোল, পরের দিন বর্ধমানের আপামর মানুষের দোল। এদিন দেবতার পায়ে আবির নিবেদন করা হয়। পরের দিন দোল খেলার প্রথা আজও রয়ে গেছে। দোলপূর্ণিমায় শুধু ঠাকুরের দোল, পরের দিন মানুষের দোল। এটাই মেনে আসছেন এখানকার মানুষ। 

তবুও মঙ্গলবার  সকাল থেকেই প্রভাতফেরী করে নাচ ও গানের  মাধ্যমে আবির খেলে বসন্ত উৎসবে মেতে উঠেছে  বর্ধমানবাসীদের একাংশ । বর্ধমানের ইতিহাসবিদ সর্বজিত যশ জানালেন, বর্ধমান মহারাজা মহাতব চাঁদের সময় থেকেই এই প্রথা চলে আসছে।  

অন্যদিকে দোল পূর্ণিমায় আজ বিশ্বভারতীতে বসন্তোৎসব বন্ধ হলেও, রঙের উৎসবে মেতেছে শান্তিনিকেতন। সোনাঝুরিতে শুরু হয়েছে বসন্তোৎসব। দেশ, বিদেশ থেকে হাজার হাজার পর্যটকরা ভিড় করেছেন। পুলিশি নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পাশাপাশি, বোলপুর পুরসভার ২২টি ওয়ার্ডে জমিয়ে চলছে দোল খেলা।  

collected

administrator

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *