www.machinnamasta.in

ওঁ শ্রীং হ্রীং ক্লী গং গণপতয়ে বর বরদ সর্বজনস্ময়ী বশমানয় ঠঃ ঠঃ

April 20, 2024 4:17 pm
jagadhatri জগদ্ধাত্রী

জগদ্ধাত্রী যে দুর্গারই বিকল্প রূপ, তার প্রথম সুস্পষ্ট উল্লেখ পাওয়া গেল শ্রীশ্রীচণ্ডীতে এসে। সেখানে বলা হল, যুদ্ধের সময় মত্ত মহিষাসুর নানা মায়ারূপ ধরে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছিলেন দেবীকে। একবার সেই প্রচেষ্টায় মহিষাসুর ধারণ করেন হস্তীরূপ। সেই হস্তী দেবীকে বধের চেষ্টা করলে দুর্গা ধারণ করেন এক চতুর্ভুজা মূর্তি। চক্রদ্বারা তিনি ছেদন করেন হাতির শুঁড়টি। সেই রূপটিই জগদ্ধাত্রীর।

রাজ্যের বিভিন্ন অংশে জগদ্ধাত্রী পুজো (Jagadhatri Puja)। ১২ নভেম্বর শুক্রবার এই পুজোর নবমী। দুর্গাপুজোর মতোই চার দিন ধরে চলে এই পুজো। তবে অনেক জায়গায় শুধু নবমীর পুজোও করা হয়ে থাকে। কৃষ্ণনগর ও চন্দনগরে জগদ্ধাত্রী (Chandannagar Jagadhatri Puja) পুজো দুর্গাপুজোকেও ছাপিয়ে প্রধান উত্‍সব হিসেবে গণ্য হয়। বহু মানুষ এই সময় জগদ্ধাত্রী পুজোর শোভা দেখতে চন্দননগরে যান। কিন্তু জগদ্ধাত্রী কী দুর্গারই আর এক রূপ? দেবী জগদ্ধাত্রী সম্পর্কে হিন্দু পুরাণ কী বলছে, তা একটু দেখে নেওয়া যাক।

‘জয় সর্বগত দুর্গে জগদ্ধাত্রী নমোহস্তুতে’! জগদ্ধাত্রীও নয়, দুর্গাও নয়, দুইয়ে মিলে দেবীর প্রকাশ। এই দেবী জগদ্ধাত্রী (Jagadhatri Puja) সিংহের পিঠে আসীন, নানা অলঙ্কারে ভূষিতা ও নাগরূপ যজ্ঞোপবীতধারিণী। দেবীর দুই বাম হাতে শঙ্খ ও শার্ঙ্গধনু এবং দুই ডান হাতে চক্র ও পঞ্চবাণ। কোনও কোনও পুরাণ বলছে, মহিষাসুর বধের পর অত্যধিক উল্লসিত হয়ে ওঠেন দেবতারা। তাঁরা ভেবেছিলেন, দুর্গা যেহেতু তাঁদেরই সম্মিলিত শক্তির প্রকাশ, তাই অসুর বধ হয়েছে তাঁদেরই যুগ্ম শক্তিতে, ব্রহ্মার বরের সম্মানরক্ষা করতে কেবল ওই নারীদেহটির আবশ্যিকতা। তাঁদের ওই গর্ব দেখে পরমেশ্বরী দেবী দেবতাদের শক্তি পরীক্ষা করতে একটি তৃণখণ্ড আড়াল থেকে ছুড়ে দেন। ইন্দ্র বজ্র দিয়ে সেই তৃণটি ধ্বংস করতে ব্যর্থ হন, অগ্নি সেই তৃণ দহন করতে পারলেন না, বায়ু ব্যর্থ হলেন তা উড়িয়ে নিয়ে যেতে, বরুণের শক্তি সেই তৃণকে জলস্রোতে প্লাবিত করতে পারল না। দেবতাদের এই দুরবস্থা দেখে তখন তাঁদের সামনে আবির্ভূতা হন পরমাসুন্দরী সালঙ্কারা চতুর্ভূজা জগদ্ধাত্রী। এভাবে তিনি দেবতাদের বুঝিয়ে দিলেন যে তিনিই এই জগতের ধারিণী শক্তি।

এই একই গল্প উপনিষদ এবং কাত্যায়নীতন্ত্রেও দেখা যায়। তফাতের মধ্যে কেবল উপনিষদে দেবী প্রথমে দেখা দিয়েছিলেন এক যক্ষের বেশে। আর স্বরূপে আবির্ভূতা হওয়ার পর তাঁর নাম জানা গিয়েছিল উমা হৈমবতী। মহিষাসুর বধের কোনও প্রসঙ্গ সেখানে নেই। আবার, কাত্যায়নী তন্ত্রে উমা বা জগদ্ধাত্রী- কোনও নাম পাওয়া যায় না। সেখানে দেবী কেবল হৈমবতী অর্থাৎ স্বর্ণালঙ্কারভূষিতা। যে দেবী দেবতাদের গর্ব খর্ব করার জন্য রূপধারণ করলেন, উপনিষদ তাঁকে আদিশক্তিরূপেই ব্যাখ্যা করছে। পুরাণেও দুর্গার আবির্ভাবের আগে বেশ কয়েকবার এক দেবীর উল্লেখ পাওয়া গিয়েছে যিনি বিষ্ণুমায়া বা বৈষ্ণবী শক্তি হিসেবেই সুপরিচিতা। বিষ্ণুর মতো জগদ্ধাত্রীর হাতেও রয়েছে শঙ্খ এবং চক্র, অতএব এই দেবীর বিষ্ণুমায়া হওয়াটাই বেশি যুক্তিযুক্ত। আবার, বিষ্ণুর মতোই তিনিও ধারণ ও পালন করেন এই বিশ্ব।

জগদ্ধাত্রী যে দুর্গারই বিকল্প রূপ, তার প্রথম সুস্পষ্ট উল্লেখ পাওয়া গেল শ্রীশ্রীচণ্ডীতে এসে। সেখানে বলা হল, যুদ্ধের সময় মত্ত মহিষাসুর নানা মায়ারূপ ধরে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছিলেন দেবীকে। একবার সেই প্রচেষ্টায় মহিষাসুর ধারণ করেন হস্তীরূপ। সেই হস্তী দেবীকে বধের চেষ্টা করলে দুর্গা ধারণ করেন এক চতুর্ভুজা মূর্তি। চক্রদ্বারা তিনি ছেদন করেন হাতির শুঁড়টি। সেই রূপটিই জগদ্ধাত্রীর। সেই জন্যই ধ্যানমন্ত্রে কোথাও উল্লেখ না থাকলেও মূর্তিতত্ত্বে আমরা দেখছি, জগদ্ধাত্রী বাহন সিংহ এক হস্তীর মৃত শরীরের উপর দাঁড়িয়ে। কখনও বা সেই সিংহ খেলা করে হস্তীর কাটা মাথা নিয়ে। সংস্কৃতে হাতির একটি নাম করী, সেই অনুসারে অসুরটির নাম করীন্দ্রাসুর। তাকে বধ করেন বলে জগদ্ধাত্রীর অপর নাম করীন্দ্রাসুরনিসূদিনী।

administrator

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *