সমস্যায় ভর্তি আমাদের জীবন। প্রতিনিয়ত সাংসারিক সমস্যা-অর্থ সংকট নিয়ে আমাদের দুন গুজরান। গ্রহের ফেরে আমাদের জীবন অনেকটাই চড়াই উতড়াইয়ের মধ্য দিয়ে কাটে। আর এই সমস্যার থেকে মুক্তি দেয় মন্ত্র। মন্ত্র জপে কাটে বাধা বিপত্তি। (Mantra)
প্রচলিত এবং ব্যাপক অর্থে বলা যায়, নিজের বাসনাকে ব্যক্ত করবার অন্যতম মাধ্যম হল সাউন্ড বা শব্দ। মনের সংকল্পকে বাহ্যিক ভাবে রূপায়ণ করবার মাধ্যমকে মন্ত্র (Spiritual) বলা হয়। আর মন্ত্রের সঙ্গে প্রকৃতিজাত বস্তু, প্রাণী বা গাছের সন্নিবেশ করে যে সংকল্প রচনা করা হয় তাকে তন্ত্র বলে। তবে তন্ত্র নির্দিষ্ট মন্ত্র ছাড়াও সম্পন্ন হতে পারে। আধ্যাত্মিক অর্থে মনের ত্রাণ বা মুক্তিকে মন্ত্র বলা হয়েছে।
এখন জেনে নেওয়া যাক কখন কোন মন্ত্র ব্যবহার করা উচিত:
১. ঘুমাবার আগে বলুন- ওঁ শয়নে শ্রী পদ্মনাভায় নমঃ।
২. জন্ম সংবাদ শুনলে বলুন-আয়ুষ্মান ভব।
৩. মৃত্যু সংবাদ শুনলে বলুন- দিব্যান লোকান্ স গচ্ছতু।
৪. খাবার আগে বলুন- ওঁ শ্রী জনার্দনায় নমঃ।
৫. বিপদে বলুন – ওঁ শ্রী মধুসূদনায় নমঃ।
৬. সকল কাজ শুরুর আগে বলুন- ওঁ তৎ সৎ।
৭. গৃহ প্রবেশ মন্ত্র- ওঁ শ্রী বাস্তুপুরুষায় নমঃ।
৮. মাতৃ প্রণাম মন্ত্র- ভূমেগরীয়সী মাতা স্বাগাৎ উচ্চতর পিতা জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদগি গরিয়সী। গর্ভ ধারণ্যং পোষ্যভাং পিতুমাতা বিশ্বস্তে। সর্বদেব সরুপায় স্তন্মৈমাত্র নমঃ নমঃ।।
৯. পিতৃ প্রণাম মন্ত্র- পিতাস্বর্গঃ পিতা ধর্মঃ পিতাহিপরমংতপঃ। পিতরি প্রীতিমাপন্নে প্রীয়ন্তে সর্বদেবতা নমঃ পিতৃ চরণেভ্য নমঃ।।
১০. শ্রীকৃষ্ণ প্রণাম মন্ত্র- হে কৃষ্ণ করুণা সিন্ধু দীনবন্ধু জগৎপথে। গোপেশ গোপীকা কান্ত রাধা কান্ত নমহস্তুতে।।
নম ব্রহ্মণ্য দেবায় গো ব্রহ্মণ্য হিতায় চ। জগদ্ধিতায় শ্রীকৃষ্ণায় গোবিন্দায় বাসুদেবায় নমঃ নমঃ।।
১১. শ্রীরাধারানি প্রণাম মন্ত্র- তপ্ত কাঞ্চন গৌরাঙ্গীং রাধে বৃন্দাবনেশ্বরী। বৃষভানু সূতে দেবী তাং প্রণমামি হরি প্রিয়ে।।
১২. দেহ শুচীর মন্ত্র- ওঁ অপবিত্র পবিত্রোবাং সর্বাবস্থান গতহ্বপিবা। যৎ সরেত পুণ্ডরিকাক্ষং স বাহ্য অভ্যান্তরে শুচি।।
পাপোহং পাপ কর্মাহং পাপাত্মা পাপ সম্ভাবান্। ত্রাহি মাং পুণ্ডরীকাক্ষং সর্ব পাপো হরো হরি।।
১৩. গুরু প্রণাম মন্ত্র- অখণ্ড মণ্ডলা কারং ব্যাপ্তং যেন চরাচরম। তদপদং দর্শিতং যেন তস্মৈ শ্রী গুরুবে নমঃ।।
অজ্ঞান তিমিরান্ধস্য জ্ঞানাঞ্জন শলাকয়া। চক্ষুরুন্মিলিত যেন তস্মৈ শ্রী গুরুবে নমঃ।।
গুরু ব্রহ্মা গুরু বিষ্ণু গুরুদেব মহেশ্বর। গুরু রেব পরং ব্রহ্ম তস্মৈ শ্রী গুরুবে নমঃ।।
১৪. শ্রী পঞ্চতত্ত্ব প্রণাম মন্ত্র- পঞ্চতত্ত্ব আত্মকং কৃষ্ণং ভক্তরূপ স্বরূপকম্। ভক্ত অবতারং ভক্তাখ্যাং নমামি ভক্ত শক্তিকম্।।
১৫. সূর্য প্রণাম মন্ত্র- ওঁ জবাকুসুমসঙ্কাশং কাশ্যপেয়ং মহাদ্যুতিম্। ধ্বান্তারিং সর্বপাপঘ্নং প্রণতোহষ্মি দিবাকরম্।।
১৬. গোবিন্দ প্রণাম মন্ত্র- ওঁ ব্রহ্মাণ্ড দেবায় গোব্রাহ্মণ হিতায় চঃ। জগদ্ধিতায় শ্রীকৃষ্ণায় গোবিন্দায় নমঃ।।
১৭. তুলসী প্রণাম মন্ত্র- ওঁ বৃন্দায়ৈ তুলসী দৈব্যে প্রিয়াঐ কেশবস্য চঃ। কৃষ্ণভক্তিপদে দেবী সত্যবত্যৈ নমঃ নমঃ।।
১৮. দুর্গা প্রণাম মন্ত্র- সর্বমঙ্গল মঙ্গল্যে শিবে সবার্থসাধিকে। শরণ্যে ত্র্যম্বকে গৌরী নারায়ণী নমোহস্তুতে।।
১৯. শ্রীবিষ্ণু প্রণাম মন্ত্র- অশ্বথ বৃক্ষমূলে জল দিয়ে
ওঁ অশ্বত্থ বৃক্ষরূপোহসি মহাদেবেতি বিশ্রুতঃ। বিষ্ণুরপধরোহসি ত্বং পুণ্যবৃক্ষ নমোহস্ত্ত তে।।
২০. বিশ্বকর্মা প্রণাম মন্ত্র- দেবশিল্পীন মহাভাগ দেবানাং কার্যসাধক। বিশ্বকর্মন্নমস্তুভ্যং সর্বাভীষ্টফলপ্রদ।।
২১. গায়ত্রী প্রণাম মন্ত্র- ওঁ ভূর্ভুবঃ স্বঃ তৎ সবিতুর্বরেণ্যং ভর্গো দেবস্য ধীমহি ধিয়ো যো নঃ প্রচোদয়াৎ ওঁ ।।
রোগ থেকে সেরে ওঠার মন্ত্র
ওম হৌং জূং সঃ ভূর্ভুবঃ স্বঃ ত্রয়ম্বকং যজামহে সুগন্ধি পুষ্টিবর্ধনম উর্বারুকমিব বন্ধনাং মৃত্যুর্মুক্ষীয় মামৃতাৎ ওম স্বঃ ভুবঃ ভূঃ ওম জূং হৌং ওম।
মানব কল্যাণের জন্য মন্ত্র
ওম ভূর্ভুবঃ স্বঃ তৎস্যবিতুর্বরেণ্যম ভর্গো দেবস্য ধীমহি ধিয়ো য়ো নঃ প্রচোদয়াৎ।।
সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার মন্ত্র
নমো স্তবন অনন্তায় সহস্ত্র মূর্তেয়, সহস্ত্রপাদাক্ষি শিরোরূ বাহবে।
সহস্ত্র নাম্নে পুরুষায় শাশ্বতে, সহস্ত্রকোটি যুগ ধারিণে নমঃ।।
রক্ষার জন্য মন্ত্র
শুলেন পাহি নো দেবি পাহি খডগেন চাম্বিকে।
ঘণ্টাস্বনেন নঃ পাহি চাপজ্যানিঃস্বনেন চ।।
রোগ ধ্বংস করার মন্ত্র
রোগানশেষানপহংসি তুষ্টা
রুষ্টা তু কামান্ সকলানভীষ্টান্।
ত্বামাশ্রিতানাং ন বিপন্নরাণাং
ত্বামাশ্রিতা হৃশ্রয়তাং প্রয়ান্তি।।
বিপত্তিনাশের মন্ত্র
দেব প্রপন্নার্তিহরে প্রসীদ
প্রসীদ মাতর্জগতোখিলস্য।
প্রসীদ বিশ্বেশ্বরী পাহি বিশ্বং
ত্বমীশ্বরী দেবি চরাচরস্য।।
বাধা দূর করার মন্ত্র
সর্বাবাধাপ্রশমনং ত্রৈলোক্যস্যাখিলেশ্বরি।
এমমেব ত্বয়া কার্যমস্মদ্বরিবিনাসনম্।।
ভয় মুক্তি মন্ত্র
যস্যাঃ প্রভাবমতুলং ভগবাননন্তো
ব্রহ্মা হরশ্চ ন হি বক্তুমলং বলং চ।
সা চণ্ডিকাখিলজগত্পরিপালনায়
নাশায় চাশুভভয়স্য মতিং করোতু।।
কী ভাবে জপ করবেন
১. প্রতিদিন সকালে স্নান করে একটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন স্থানে আসন বিছিয়ে নিন। এর পর পূর্ব দিকে মুখ করে বসুন।
২. আসনে বসে উপরোক্ত কোনও এক মন্ত্র জপ করতে শুরু করুন।
৩. জপের সময় ঈশ্বরের প্রতি শ্রদ্ধা ভাব এবং ইচিবাচক চিন্তাভাবনা রাখুন।
৪. অন্তত ১০৮ বার মন্ত্র জপ করবেন। এ ভাবে রোজ মন্ত্র জপ করলে রোগভোগের ভয় থেকে মুক্তি পাবেন।