হিন্দু ক্যালেন্ডার অনুসারে প্রতি মাসের ত্রয়োদশী তিথি প্রদোষ ব্রত হিসেবে উদযাপিত হয়। প্রদোষ ব্রতকে উপবাস রেখে মহাদেবের পুজো করার রীতি প্রচলিত আছে। আর কোনও মাসে ত্রয়োদশী শনিবারে পড়লে তাকে শনি প্রদোষ ব্রত (Shani Pradosh Vrat) বলা হয়। এই বছর ১ জুলাই শনিবার হিন্দু ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ত্রয়োদশী তিথি। সেই কারণে এদিন শনি প্রদোষ ব্রত পালিত হচ্ছে।
যাঁদের শনির (Shani) ধাইয়া যোগ বা শনির সাড়ে সাতি দশা চলছে, তাঁদের জন্য শনি প্রদোষ ব্রত পালন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মকর, কুম্ভ, ধনু এবং মিথুন রাশির জাতকরা এই শনি প্রদোষ ব্রত অবশ্যই পালন করুন। এদিন অশ্বথ গাছের নীচে সর্ষের তেলের প্রদীপ জ্বালালে শুভ ফল লাভ করা যায়।
এদিন উপবাস রেখে শনি প্রদোষ ব্রত পালন করলে মহাদেবের (Siv) সঙ্গে শনিকেও তুষ্ট করা সম্ভব। সূর্যাস্তের আগে ২ ঘণ্টা সময় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়কে প্রদোষ কাল বলা হয়। এদিন উপবাস রেখে শনি ছাড়াও মহাদেব (Mahadev) ও পার্বতীর আরাধনা করার রীতি প্রচলিত আছে। শনি প্রদোষ ব্রত পালন করার পর শনিদেবের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত জিনিসপত্র দান করা উচিত। মনে করা হয় শনি প্রদোষ ব্রত পালন করলে শনির সাড়ে সাতি দশা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এছাড়া সন্তানের মঙ্গলকামনাতেও অনেকে শনির প্রদোষ ব্রত পালন করেন।
শনি (Shani Dev) প্রদোষ ব্রততে ভোরে ঘুম থেকে উঠে স্নান সেরে পরিষ্কার বস্ত্র পরে শিব ও পার্বতীর ছবি বা মূর্তিকে পরিষ্কার করুন। এরপর প্রদীপ জ্বালিয়ে বেল পাতা, ধূত্র ফুল ও নৈবেদ্য নিবেদন করুন। এছাড়া লবঙ্গ, এলাচ, পান, সুপুরি ও অগুরু নিবেদন করতে হবে। শনি প্রদোষ ব্রততে (Spiritual) একটা স্টিলের বাটিতে একটু তিলের তেল নিয়ে তার মধ্যে নিজের মুখ দেখুন (Astrology)। এরপর শনির উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করুন এবং কালো ডাল, তিল ও বার্লি দান করুন। এদিন কোনও কালো কুকুর ও গরুকে রুটি ও মিষ্টি খাওয়ান। এদিন শনি স্তোত্র (Stotra) পাঠ করা উচিত (Spirituality) ।
শনি প্রদোষ ব্রতকথা
এক সময় এক শেঠ ও শেঠানি ছিলেন। তাঁদের অনেক ধন সম্পদ থাকলেও কোনও সন্তান ছিল না। সেই কারণে তাঁদের মনে খুব দুঃখ ছিল। একদিন কর্মচারীদের সব দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে শেঠ ও শেঠানি তীর্থযাত্রায় বেরোলেন। পথে তাঁরা এক ধ্যানরত সাধুকে দেখতে পান। সাধুর আশীর্বাদ পেতে তাঁর ধ্যানভঙ্গ হওয়ার অপেক্ষায় সেখানেই দীর্ঘক্ষণ বসে থাকেন ও শেঠ ও শেঠানি। চোখ খুলে সাধু যখন জানতে পারেন যে তাঁর আশীর্বাদের জন্য তাঁরা অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছেন, তখন তিনি তাঁদের বলেন উপবাস রেখে শনি প্রদোষ ব্রত পালন করলে সন্তান লাভ হবে। সাধুর কথামতো শনি প্রদোষ ব্রত পালন করে সন্তান লাভ করে ওই শেঠ ও শেঠানি।
তাৎপর্য
হিন্দদের বিশ্বাস অনুসারে, এই দিনে উপবাস পালনকারী ভক্তরা সুস্থ, ধনী এবং সমৃদ্ধ জীবনের মত বিশেষ আশীর্বাদ প্রাপ্ত হন। এছাড়াও, তারা তাদের অতীত এবং বর্তমান পাপ থেকে মুক্তি পান বলে বিশ্বাস করা হয়। এই দিনেই ভগবান শিব অসুর ও দেবগণকে হত্যা করেছিলেন। প্রদোষ কালের সময় ভক্তরা এটাই সাহায্য চেয়েছিলেন। ভক্তদের ডাকে সাড়া দিয়ে শিব তাঁর পবিত্র ষাঁড় নন্দীকে নিয়ে সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তাই ত্রয়োদশী তিথি এখন ভগবান শিব ও নন্দীর পূজার করে পালন করা হয়।
পূজা বিধি
হিন্দু বিশ্বাস অনুসারে, যখন সূর্যাস্তের পর এই তিথি পড়ে, তখন এটি প্রদোষ ব্রত নামে পরিচিত। সূর্যাস্তের পরে সমস্ত আচার ও পূজা করা হয়।
– পূজার আগে স্নান করে পরিষ্কার কাপড় পরিধান করুন
– গঙ্গাজল ও ফুলে ভরা মাটির পাত্র রাখা উচিত
– ভগবান শিব ও দেবী পার্বতীকে গঙ্গাজল দিয়ে প্রথমে নিবেদন করুন
– শিবলিঙ্গে দুধ, মধু, ঘি, দই ও বেলপত্র দিয়ে পুজো করুন
– প্রদোষ ব্রতকথা পড়ুন, মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র ১০৮ বার জপ করুন
– আরতি করে পূজা শেষ করার নিয়ম রয়েছে।
শনিদেবের আশীর্বাদ পেতে এই ৭ টি কাজ করুন
হিন্দু পুরাণে, শনি দেবকে ন্যায়বিচারের দেবতা হিসেবে বিশ্বাস করা হয়। তিনি কোনও ব্যক্তিকে তার ভাল বা খারাপ কাজের ভিত্তিতে আশীর্বাদ করেন বা শাস্তি দেন। তিনি সহজে ক্ষমা করেন না।
শনি দেব তুষ্ট থাকলে জীবনে কোনও কিছুরই অভাব থাকে না! টাকা-সাফল্য- গাড়ি-বাড়ি-পারিবারিক শান্তি-মধুর দাম্পত্য ও প্রেম জীবন… এককথায়, জীবন পরিপূর্ণতায় ফুলেফেঁপে উঠবে। শনিদেবকে তুষ্ট করতে এই ৪টি কাজ করুন–
চন্দনের মূল বা শিকড়– শনির সাড়েসাতি ও আড়াইয়ের প্রকোপ থেকে মুক্তি পেতে টানা ৪০ দিন জলে চন্দনের শিকড় মিশিয়ে স্নান করুন।
শনি মন্ত্র জপ করুন– শনি মন্ত্র জপ করলে আপনার জীবনে ইতিবাচকতা এবং সমৃদ্ধি আসতে আসবে।
অন্যের প্রতি সদয় হওয়া– শনি দেবকে তুষ্ট করার এটি অন্যতম উপায়। সহৃদয় ব্যক্তিদের তিনি আশীর্বাদ করেন। যে ব্যক্তি অন্যকে ঈর্ষা করে বা অন্যকে আঘাত করে আনন্দ পায়, তাকে শনি দেব কখনও আশীর্বাদ করেন না। তাই আপনি যদি অন্যের প্রতি খারাপ ব্যবহার করেন, তবে তিনি আপনাকে তার শাস্তি দেবেন এবং অন্যের ভাল করলে তিনি আপনাকে সর্বদা আশীর্বাদ করবেন।
শনিবারে লাল চন্দনের তিলক লাগান– প্রতি শনিবার কপালে লাল চন্দনের তিলক লাগান। আপনি চাইলে শনিদেবকে লাল চন্দন নিবেদন করতে পারেন। এতে শনিদেব শান্ত হবেন এবং অশুভ প্রভাবও দূর হবে।
যজ্ঞ করুন– যজ্ঞের আসল অর্থ হল পূজা, আত্মসমর্পণ, অভ্যাস, কঠোর নীতিনিষ্ঠা, উৎসর্গ, নিষ্ঠা এবং পবিত্রতা। শুদ্ধ আত্মা এবং মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে যজ্ঞ করলে সর্বদা শনি দেবের আশীর্বাদ লাভ করা যায়।
দরিদ্র ও অভাবীদের সহায়তা করুন– দরিদ্র ও অভাবী মানুষকে সাহায্য করলে শনি দেব সন্তুষ্ট হন। যে ব্যক্তি অন্যকে নিয়ে মজা করে বা কষ্ট দেয় বা তার চারপাশের লোকেদের সর্বদা সন্দেহ করে, সে কখনওই শনি দেবের আশীর্বাদ লাভ করতে পারে না। পাশাপাশি ক্ষুধার্ত মানুষকে খাবার দান করুন, শনিদেব খুশি হবেন।
সর্ষের বীজ এবং অন্যান্য কালো শস্য দান করুন– কালো বীজ এবং শস্য শনি দেবের প্রিয়। বলা হয় যে, তিনি সরিষার তেলও পছন্দ করেন এবং তাই কালো সর্ষের বীজ এবং অন্যান্য কালো শস্য দান করলে শনি দেব সন্তুষ্ট হন।
(collected)