www.machinnamasta.in

ওঁ শ্রীং হ্রীং ক্লী গং গণপতয়ে বর বরদ সর্বজনস্ময়ী বশমানয় ঠঃ ঠঃ

April 30, 2024 2:41 am

বামাক্ষ্যাপা বা বামাচরণ চট্টোপাধ্যায় (জন্ম ১২ ফাল্গুন ১২৪৪, মৃত্যু ২ শ্রাবণ ১৩১৮ ) ছিলেন একজন ভারতীয় হিন্দু সাধক ও তান্ত্রিক । তিনি বীরভূম জেলায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন ও তারাপীঠে বাস করতেন। তিনি দেবী তারার ভক্ত ছিলেন এবং দেবী তারাকে "বড় মা" বলে ডাকতেন। মন্দিরের কাছে শ্মশানঘাটে সাধনা করতেন।

‘শ্যামাধন কি সবাই পায়?’ এই প্রশ্ন তো সব সাধকেরই। শক্তিরঙ্গ বঙ্গদেশ শ্যামাসাধনার এক পুণ্যক্ষেত্র। এমনটাই বিশ্বাস করেন ভারতব্যাপী শক্তিসাধকরা। আধ্যাত্মিক বিশ্বাস, এই ভূমিতে বহু সাধকই কালীসাধনায় সিদ্ধিলাভ করেছিলেন এবং তাঁদের আরাধ্যার দেখাও পেয়েছিলেন। রামপ্রসাদ সেন থেকে শ্রীরামকৃষ্ণদেব, সর্বানন্দ দেব থেকে বামাখ্যাপা— এই অভিজ্ঞতা প্রাপ্ত হয়েছিলেন বলে জানা যায়। জনশ্রুতি অনুযায়ী, এঁদের প্রত্যকের জীবনেই রয়ছে অগণিত অলৌকিক ঘটনা। বাংলার এই কালীসাধকদের মধ্যে তিন জনের দেহত্যাগের ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে আছে অতিলৌকিক কাহিনি। এঁরা যথাক্রমে রামপ্রসাদ সেন, কমলাকান্ত ভট্টাচার্য এবং বামাচরণ চট্টোপাধ্যায় বা বামাখ্যাপা।

আগামী ৯ মার্চ সাধক বামাক্ষ্যাপার জম্নতিথী। চলুন আজ রইল সাধক বামাক্ষাপার স্মৃতি রোমন্থন……

পশ্চিমবঙ্গের একটি গ্রামে বামাচরণ (Bamakhepa) নামে এক শিশুর জন্ম হয়। সন্তানের জন্মের কিছুদিন পরই তার বাবা মারা যান। মাও গরীব, তাই সন্তান লালন-পালনের সমস্যা এসেছিল। তাকে তার কাকার কাছে পাঠানো হয়। মামা থাকতেন তারাপীঠের কাছে এক গ্রামে। যেমনটি সাধারণত অনাথদের ক্ষেত্রে হয়।

গ্রামের শ্মশানে আসা সাধুবাবাদের সাহচর্যে থাকতে থাকতে বামাচরণেও দেবীর প্রতি ঝোঁক বাড়তে থাকে। এখন সে তারা মাকে বড় মা বলে ডাকে।

কখনো বামা চরণ (Bamakhyepa) শ্মশানে জ্বলন্ত চিতার কাছে বসে থাকতেন, কখনো বাতাসে কথা বলতেন। এভাবেই তিনি বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছেছেন। তার বিরোধীতার কারণে, তার নাম বামাচরণ থেকে বামাক্ষ্যাপা হয়। খেপা মানে পাগল। অর্থাৎ গ্রামবাসীরা তাকে অর্ধ পাগল মনে করত। নিজের নামের সাথে ‘পাগল’ ডাকনাম জুড়ে দিয়েছিলেন।

সেটি ছিল ভাদ্রপদ মাসের শুক্লপক্ষের তৃতীয়া তিথি, মঙ্গলবার। ভগবতী তারার সিদ্ধির জন্য চূড়ান্ত সিদ্ধ মুহুর্ত। তখন রাতের সময় বামাখেপা জ্বলন্ত চিতার পাশে শ্মশানে বসে ছিল, যখন নীল আকাশ থেকে আলো ফুটে চারদিকে আলো ছড়িয়ে পড়ে।

একই আলোকে বামাচরণ মা তারার দর্শন পেয়েছিলেন। কোমরে বাঘের চামড়া পরা! এক হাতে অস্ত্র।এক হাতে মাথার খুলি, এক হাতে নীল পদ্ম ফুল, এক হাতে খড়গ।

মা তারা (Maa Tara) মাথায় হাত রাখাতে বামাক্ষ্যাপা সেখানে সমাহিত হয়। সমাধি অবস্থায় তিনি ৩ দিন ও ৩ রাত শ্মশানে অবস্থান করেন। ৩ দিন পর জ্ঞান ফেরে এবং জ্ঞান ফেরার সাথে সাথে বামা চিৎকার করে এদিক ওদিক দৌড়াতে থাকে। গ্রামবাসীরা নিশ্চিত হয় যে বামা সম্পূর্ণ পাগল হয়ে গেছে। বামার এই অবস্থা একমাস ধরে চলল।

কিছু দিন পর, ভগবতী তারা সেখানকার রাণীর কাছে স্বপ্নে আবির্ভূত হন এবং তাকে নির্দেশ দেন যে শ্মশানের কাছে আমার জন্য একটি মন্দির তৈরি করুন এবং বামাকে পুরোহিত কর। পরদিন থেকে মন্দিরের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। কিছু দিনের মধ্যেই মন্দিরের কাজ শেষ হয় এবং বামাকে মন্দিরের পুরোহিত করা হয়। বামা খুব খুশি হয়েছিলেন কারণ তার বড় মা তার সাথে আছে তাই।

অনেক পান্ডা অর্ধ পাগলকে এমন মন্দিরে পুরোহিত বানাতে পছন্দ করেননি। তারা বামাক্ষ্যাপাকে তাড়াবার পথ খুঁজতে থাকে। বামাক্ষ্যাপার কাজগুলো ছিল অদ্ভুত। কখনো কখনো সারাদিন পূজা করতেন। কখনও কখনও তিনি দু তিন দিন পূজা করেন না। কখনো দেবীকে মালা পরাতেন আবার কখনো নিজে পরতেন। এই প্রক্রিয়াগুলির কোনটিই পুরোহিতদের মতে শাস্ত্রীয় পূজা পদ্ধতির সাথে মিলত না।

তারপর একদিন এমন হল যে, যখন প্রসাদ তৈরি হল এবং মন্দিরে পৌঁছানোর পরে, দেবীকে ভোগ নিবেদনের আগে,বামাক্ষ্যাপার মনে চিন্তা এলো যে এটির স্বাদ নেওয়ার এবং এটি মায়ের খাবারের যোগ্য কি না। এরপর আর কোনো চিন্তা ছিল না। প্রসাদের থালায় হাত ঢুকিয়ে মুখে দিলেন স্বাদ নিতে। চেখে দেখার পর যখন ঠিক মনে হল, তখন বাকি প্রসাদটা মাকে দিলেন।

এত বড় সুযোগ পণ্ডিতরা কেনো হাতছাড়া করবেন? বামা দেবীর প্রসাদ খেয়েছেন বলে তারা তোলপাড় সৃষ্টি করে। এখন দেবী রাগান্বিত হবেন, সারা গ্রামকে তার ক্রোধ বহন করতে হবে। এই শুনে গ্রামবাসীরা বামাচরণকে কঠোরভাবে মারধর করে। তাকে শ্মশানে নিয়ে গিয়ে ফেলে দেওয়া হয়। মন্দিরটি পুরোহিতদের দখলে যায়। তিনি শুদ্ধিকরণ এবং সমস্ত প্রক্রিয়া করেছিলেন। ওই দিন পুরোহিতদের কথামতো পুজো হয়।

ওদিকে যখন জ্ঞান ফিরল, তখন বামাক্ষ্যাপা মায়ের উপর রেগে গেল – আমি কি দোষ করেছি যে আপনি আমাকে মারধর করলেন। আপনাকে দেওয়ার আগে খাবারটি সুস্বাদু কি না তা পরীক্ষা করছিলাম। এতে আমার কি ভুল ছিল? আমি আপনাকে সুস্বাদু খাবার দেওয়ার চেষ্টা করছিলাম এবং চেয়েছিলাম আপনি ভাল স্বাদের প্রসাদ পান। স্বাদ খারাপ হলে ফেলে দিতাম আর একটা বানিয়ে ফেলতাম, কিন্তু তুমি অকারণে আমাকে মারধর করেছ, আমি এখন আর তোমার কাছে আসব না।

তার অবস্থা ছিল ঠিক যেমন শিশুরা তাদের মায়ের উপর রাগ করে কোন কোণে লুকিয়ে থাকে তেমন। বামাচরণ ও তারা মায়ের সম্পর্ক ছিল মা-ছেলের মতো। তারা মা তার সন্তানের যন্ত্রণা সইতে পারেননি। সেই রাতেই রানীর স্বপ্নে দেখা দিল মা।

রাগান্বিত মা রাণীকে ভর্ৎসনা করলো-তোমার পুরোহিতরা আমার ছেলেকে আঘাত করেছে। আমি তোমার মন্দির ছেড়ে চলে যাচ্ছি। এখন তোমাকে ও তোমার রাজ্যকে আমার ক্রোধ সইতে হবে, তুমি যদি তা এড়াতে চাও, কাল আমার ছেলেকে ফিরিয়ে এনে মন্দিরে পূজার দায়িত্ব দাও, নইলে পরিণতি ভোগ করতে প্রস্তুত থাকো। রাণী আতঙ্কে বিছানায় উঠে পড়ল। রাণীর রাত্রি যাপন করাও কঠিন হয়ে পড়ল। সারা রাত জেগে কাটালেন।

পরের দিন তিনি মন্দিরে ছুটে গেলেন। সম্পূর্ণ তথ্য পাওয়ার সাথে সাথে রানী তার লোক নিয়ে মন্দিরে পৌঁছে যান। তিনি সমস্ত পান্ডাকে তিরস্কার করলেন এবং তাদের মন্দিরে প্রবেশ নিষিদ্ধ করলেন। তিনি তার ভৃত্যদের আদেশ দিলেন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বামাখেপাকে নিয়ে আসতে।

তারা বামাক্ষ্যাপাকে খুঁজতে লাগলো সর্বত্র। এক ভৃত্য বামাক্ষ্যাপাকে গুহায় বসে থাকতে দেখে, কিন্ত তিনি ফিরতে রাজি না হওয়ায়, ভৃত্য গিয়ে বিষয়টি রাণীকে জানালেন। অবশেষে রানী নিজেই পৌঁছে গেলেন গুহায়। বামা তার উপরও রাগ প্রকাশ করল। কিন্ত তার শিশুসুলভ স্বাচ্ছন্দ্য দেখে রানীর মনও ভালোবাসায় ভরে গেল। তিনি আদেশ জারি করেন – এই মন্দিরের পুরোহিত বামাক্ষ্যাপা। সে স্বাধীন। তার পথে কেউ আসলে তাকে শাস্তি দেওয়া হবে।

স্বামী বিবেকানন্দের সাথে সাক্ষাৎ : (Swami Bibekananda)

ঠাকুর রামকৃষ্ণের সংস্পর্শে আসার পর নরেন্দ্রনাথের একবার ইচ্ছা হয় বামাক্ষ্যাপাকে দর্শন করার। নরেন্দ্রনাথের বয়স তখন মাত্র ১৯ বছর। সেকথা তিনি তাঁর কলেজের সহপাঠী শরৎচন্দ্র চক্রবর্তীকে জানান। শরৎচন্দ্র তাঁকে বলেন, ‘তুমি তো ঠাকুরের দেখা পেয়েছো। আবার কেন সেই ব্রহ্মজ্ঞ পুরুষকে দেখতে চাও?’ব্রহ্মজ্ঞ পুরুষদের চারটি অবস্থা বালকবৎ, জড়বৎ, উন্মাদবৎ এবং পিশাচবৎ। এই চারটি অবস্থাই ব্যামাক্ষ্যাপার মধ্যে দেখা যেত। কিন্তু ঠাকুর রামকৃষ্ণের মধ্যে পিশাচবৎ ভাবটি অনুপস্থিত ছিল। তাই বামাক্ষ্যাপাকে দেখার জন্য নরেন্দ্রনাথ আকুল হয়ে ওঠেন। শরৎচন্দ্রকে নিয়ে নরেন্দ্রনাথ চলে এলেন তারাপীঠে। দেখা হল দু’জনের। সে এক মহাসন্ধিক্ষণ। বামাক্ষ্যাপা ও নরেন্দ্রনাথ দু’জনেই দু’জনের দিকে দীর্ঘক্ষণ অপলক তাকিয়ে। আনন্দে আপ্লুত। দুজনের চোখেই জল। এক অপার আনন্দ নিয়ে ফিরলেন নরেন্দ্রনাথ। আর তাঁর সম্পর্কে বামাক্ষ্যাপা তাঁর বন্ধু শরৎচন্দ্রকে বললেন, এই যুবক একদিন ধর্মের মুখ উজ্জ্বল করবে।

মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাথে সাক্ষাৎ : (Devendranath Thakur)

দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ব্রাহ্ম হলেও তিনি বামাক্ষ্যাপাকে দেখার জন্য তারাপীঠে গিয়েছিলেন। সেখানে দুজনার কিছুক্ষণ কথা হয়। কথিত আছে, ফেরার সময় বামাক্ষ্যাপা মহর্ষিকে বললেন,“ফেরার পথে ট্রেন থেকেই দেখতে পাবে একটা বিশাল মাঠ। সেই মাঠের মাঝখানে আছে একটা ছাতিম গাছ আছে। তার নীচে বসে ধ্যান করবে। দেখবে মনের ভিতরে আনন্দের জ্যোতি জ্বলে উঠছে। ওখানে একটা আশ্রম বানাও দেখি। আহা, শান্তি শান্তি!”ফেরার পথে সেই মাঠ এবং ছাতিম গাছ দেখে তিনি চমৎকৃৎ হলেন। সেখানে বসে ধ্যানে মগ্নও হলেন। তিনি ঠিক করেন সেখানে তিনি আশ্রম স্থাপন করবেন। পরবর্তী কালে ওখানেই শান্তিনিকেতনপ্রতিষ্ঠিত হয়।

আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের সাথে সাক্ষাৎ : (Sir Ashutosh Mukherjee)

বাংলার বাঘ স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় ১৯০১ খ্রিষ্টাব্দে তার মা এবং স্ত্রীকে নিয়ে তারাপীঠে বামাক্ষ্যাপাকে দর্শন করার জন্য গিয়েছিলেন। আশুতোষ বামাক্ষ্যাপাকে ভক্তিভরে প্রণাম করতেই তিনি বলে উঠেছিলেন,“যা যা, তোর মনের ইচ্ছা পূর্ণ হবে। তুই শালা জজ হবি। ”তিনি তো তখন হাইকোর্টের আইনজীবী। কিন্তু মনে জজ হওয়ার খুব ইচ্ছে ছিল তার। ১৯০৪ সালে তিনি হাইকোর্টের জজ হন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও মুকুন্দদাসের সাথে সাক্ষাৎ : (Rabindranath Tagore)

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও একবার চারণকবি মুকুন্দদাসের সঙ্গে তারাপীঠে গিয়ে বামাক্ষ্যাপার সঙ্গে দেখা করার জন্য সারাদিন অপেক্ষা করেছিলেন। সন্ধ্যায় বামাক্ষ্যাপার সঙ্গে তাদের দেখা হয়। মুকন্দদাসকে দেখে বামাক্ষ্যাপা বললেন,

“তোর ফুটুস কলটা নদীতে ফেলে দিয়ে আয়। ”

উল্লেখ্য, চারণকবির কোমরে একটা রিভলভার গোঁজা ছিল। তারপর তিনি রবীন্দ্রনাথকে বললেন, ‘তোর খুব নামডাক হবে।’ দুজনকে তারামায়ের প্রসাদ খাইয়ে তিনি ছেড়েছিলেন।

বামাক্ষ্যাপা একবার কলকাতায় এসেছিলেন। ১৮৯৮ খ্রিস্টাব্দে মহারাজা যতীন্দ্রমোহন ঠাকুরের উদ্যোগে তিনি কলকাতায় আসেন।

দেবী লক্ষ্মী ও সরস্বতীর করুণাধারায় স্নাত মহারাজা যতীন্দ্রমোহন ঠাকুর। কিন্তু এতটুকুও শান্তি ছিল না মনে, পুত্রসন্তান ছিল না বলে। তাই দত্তকপুত্র গ্রহণ করেছিলেন ভ্রাতুষ্পুত্র মহারাজা প্রদ্যোৎকুমারকে। এমনই কপাল, তাঁরও কোনও পুত্র হল না। যতীন্দ্রমোহনের এই মনোব্যথাই নিত্যবরেণ্য সাধক বামাক্ষ্যাপাকে নিয়ে এল কলকাতায়। যতীন্দ্রের ভাগনে ছিলেন সত্যনিরঞ্জন। একসময় ক্ষ্যাপাবাবাকে দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন তিনি। তাঁর মুখে নির্বিকার শ্মশানচারী বামের কথা শুনে আকৃষ্ট হয়েছিলেন মহারাজা। কিন্তু পদমর্যাদার কথা ভেবে তিনি নিজে গেলেন না তারাপীঠে, যে করেই হোক ভাগনেকে দিয়ে ক্ষ্যাপাকে আনার চেষ্টা চালালেন। বার দুয়েক চেষ্টা করে বিফল হলেন সত্যনিরঞ্জন। ফিরে এলেন তারাপীঠ থেকে।এক সময় যতীন্দ্রমোহনের প্রাণের আকুল টানে নড়ে উঠলেন তারাপীঠের শ্মশানবাসী ভৈরব। আবার গেলেন সত্যনিরঞ্জন। বামের কনিষ্ঠ ভ্রাতা রাম। তাঁর সাহায্য নিলেন পাণ্ডাদের পরামর্শে, রাজি হলেন মাতৃসাধক।১৮৯৮ সালের কথা (১৩০৫ সন)। ভারতবরেণ্য মহাশক্তিধর মহাপুরুষ কৌপীনবন্ত ক্ষ্যাপাবাবা পদধূলি দিলেন মহারাজা যতীন্দ্রের রাজপ্রাসাদে। আদর আপ্যায়নের ত্রুটি রাখলেন না ভোগীশ্রেষ্ঠ মহারাজা। আর এটাও তিনি জানতেন বাম শ্মশানচারী তান্ত্রিক।

জঙ্গলাকীর্ণ দ্বারকাতীরের (Dwaraka River) শ্মশানেই তাঁর জীবন কাটে। জনসমাকীর্ণ মহানগরী তাঁর ভালো লাগে না। তাই থাকার ব্যবস্থা করেছেন শাখানগর সিঁথির প্রমোদ উদ্যানে Emerald Bower তথা বিলাসক্ষেত্র মরকতকুঞ্জে। তাঁর আরও একটি উদ্দেশ্য, মহাসাধকের চরণ দর্শন পাবেন মহারানিও।মহারাজের এতটুকুও ত্রুটি নেই রাজকীয় আয়োজনে। বামার জন্য মহাপ্রসাদও এসেছে কালীঘাট (Kalighat) থেকে। কারনের ব্যবস্থাও সম্পূর্ণ, যথাযথ। পরিচর্যার জন্য অসংখ্য রাজভৃত্য প্রাসাদজুড়ে। যথাসময়ে রসনা পরিতৃপ্ত করলেন সমস্ত সেবক-পাণ্ডা। কুলকুণ্ডলিনীতে কারন ও শুদ্ধি আহুতি দিয়ে কারনানন্দে আত্মহারা হলেন কুমার ব্রহ্মচারী বামা।রাজোচিত আভরণ ছাড়াই যতীন্দ্রমোহন এলেন বামের কাছে। প্রণামাদির পর্বও শেষ হল। ক্ষ্যাপাবাবার সঙ্গে একান্তে তিনি কিছু কথা বলতে চান গোপনে। মহারাজা বললেন, ‘বাবা, আমরা মোক্ষের চিন্তাও করি না, মোক্ষ আমাদের দূর বটে। তবে আশির্বাদ করুন যাতে ভক্তি হয়।’এ কথা যে মহারাজার অন্তরের কথা নয় তা ক্ষ্যাপাবাবা বুঝেই বললেন, ‘ভক্তি বড় দুর্লভ। সংসারের কামনা হৃদয়ে জাগরূক থাকলে তা আসে না। তোমার প্রাণ সতত যেভাবে ভোগ চাইছে, শরীরের সুস্থতা ও বংশরক্ষা চাইছে, ভক্তি কি সে ভাবে চাইছে?’মহারাজা দেখলেন তাঁর হৃদয়ের কথা জেনে ফেলেছেন বামা। প্রকাশিত হয়েছে আসল কথা, অন্তরের কথা। এবার সর্বত্যাগী নিঃস্ব বামার কাছে করজোড়ে ভিক্ষা চাইলেন লজ্জাবনত মহারাজ, রোগ আরোগ্য ও বংশরক্ষার। নির্বিকার ক্ষ্যাপাবাবা জানালেন, বংশরক্ষার যে বাধা, তার সমাধানের পথ। বাক্যের দ্বারা আশির্বাদও করলেন বংশরক্ষার। বামের আশির্বাদ ও বাক্য বিফল হয়নি। বংশরক্ষা হয়েছিল মহারাজের, মুক্তও হয়েছিলেন সেকালের অসাধ্য অম্লশূল থেকে।

নিষ্কাম শ্মশানপ্রেমিক ক্ষ্যাপাবাবা। মহারাজের আকুল আকুতিতে সাড়া দিয়ে নিজ শ্মশানভূমির আসন ছেড়ে এসেছেন রাজপ্রাসাদে। ভক্তের প্রয়োজনও শেষ হয়েছে। একে জনবহুল মহানগরী, তার উপরে রাজগৃহ। এতে শ্মশানবাসীর মন উচাটন না হয়ে পারে! আর থাকতে চাইলেন না তিনি। কিন্তু বামাকে ছাড়তে নারাজ মহারাজা। অনুরোধ করলেন কনিষ্ঠ ভ্রাতা রাম আর সঙ্গী পাণ্ডাদের, অন্তত দিন তিন-চারেক বাবা থাকুন এখানে।এবার কালীঘাটে যাওয়ার প্রস্তাব দিলেন মহারাজা। অনুরোধ করলেন বাম-সহ সেবকদের। চারদিন ধরে রাখলেন বামকে। মাকালী বামের চোখে ছোটমা, তারা মা হলেন বড়মা। মাতৃদর্শনের লোভেই বালকের মতো ভুললেন তারাগতপ্রাণ ক্ষ্যাপাবাবা।কালীঘাটের সেবক হালদারদের সংবাদ পাঠালেন মহারাজা। তারাপীঠের বামাক্ষ্যাপাকে নিয়ে তিনি যাচ্ছেন কালীঘাটে। এক ঘণ্টা মন্দিরে কোনও যাত্রী প্রবেশ করতে না পারে তার ব্যবস্থা করলেন। সেই জন্য টাকাও দিলেন পালাদারকে।ভোরের গাড়ি করে কালীঘাটে আনা হল বামাকে। হালদাররা সপরিবারে উপস্থিত। প্রণাম করলেন শ্রদ্ধাভরে। উপস্থিত ভক্তপ্রাণ যাত্রীরাও বামাদর্শনে উদগ্রীব। বামা দেখলেন গর্ভমন্দির শূন্য। একটি লোকও নেই তাঁর দর্শনের কারণে। যে কোনও তীর্থে সকলেরই সমান অধিকার। তাই আর সকলের সঙ্গেই ছোটমাকে দর্শনের কথা জানালেন ক্ষ্যাপাবাবা। অতএব দ্বার অবারিত হল সকলের জন্য।বামাকে এনে দাঁড় করানো হল মাতৃমূর্তির সামনে। অপলক দৃষ্টিতে বামা চেয়ে রইলেন ছোটমার দিকে। হৃদয়সমুদ্র উথলে উঠল ভক্তিলহরিতে। দু’চোখ বেয়ে দরদর করে নেমে এল পরমানন্দের মন্দাকিনী ধারা। ‘জয় তারা’ নাদ নেই মুখে। আত্মহারা হয়ে উঠলেন বামা। ধীরে ধীরে চোখদুটি হয়ে এল অর্ধনিমীলিত। মন চলে যায় এক অজানা অজ্ঞাতলোকের অতল তলে। অবয়ব ক্রমে হয়ে ওঠে ধীরস্থির অচঞ্চল। মাতৃপ্রেমিক ক্ষ্যাপা বিবশভাবে বলে ওঠেন, ‘এই যে আমার কালী মা। রূপের কি ছটা, মাথায় আবার মোহিনী জটা, যেমনি লকলকে জিভ, তেমনি টানা টানা চোখ, যেন জ্বলজ্বল করছে। তুই কাদের মেয়ে রে? চল না মা, তোকে তারা মা’র কাছে কোলে করে নিয়ে যাই। তুই যাবি তো, বেশ বেশ – তবে আয় আমার কোলে।’

আত্মবিস্মৃত উন্মত্ত সন্তান ক্ষ্যাপাবাবা মা মা বলে স্নেহ বাৎসল্যে পাষাণময়ী বিগ্রহকে কোলে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করতে বাধা দিলেন পূজারি পাণ্ডারা। স্পর্শ করতে দিলেন না নিত্যশুদ্ধ চৈতন্যরূপিণী দেবী কালিকার বিগ্রহ। বামের অন্তরের ভাব তারা কেউ বোঝেননি। সেবাইত ছাড়া আর কেউ বিগ্রহ স্পর্শ করতে পারেন না, এটাই ছিল সেকালের নিয়ম। সে নিয়ম তখন রক্ষাও হল বটে। ক্ষ্যাপার দিব্যদৃষ্টিতে জননীর সেই স্নেহময়ী রূপ ও ভাব মিলিয়ে গেল মুহুর্তে। বহির্নয়নে ভেসে উঠল পাষাণময়ীর বিকট রূপ ও কঠিন মুখমণ্ডল। বিচ্ছেদ হল দিব্যভাবের। এবার শ্মশানচারী ঘোর তান্ত্রিক ঊর্ধ্বরেতা ক্ষ্যাপাবাবা রুদ্রমূর্তি ধারণ করে বললেন, ‘চাই না তোদের রাক্ষসী কালীকে, যেমন কেলে রূপ, তেমনি লকলকে, মস্ত জিভ, যেন গিলতে আসছে। আহা, আমার তারা মা’র যেমন ছোট্ট জিভ তেমন রূপের ছটা, মাথায় জটা, পা দু’খানি খুরখুরে। চাই না তোদের কেলে কালী, আমার আকাশ তারাই ভালো’।মুহুর্তে মন্দিরের পরিবেশ হয়ে উঠল গম্ভীর, নীরব। দর্শনার্থী যাত্রীরা ভীত, বিহ্বল। সেই সময় হালদারমশাইরা উপস্থিত ছিলেন সেখানে। তাঁরা ভর্ৎসনা করলেন পুরোহিতদের। অপরাধ স্খলনের জন্য অনুরোধ করলেন নিরভিমান বামকে, ‘না বাবা, আপনি স্পর্শ করতে পারেন মাকে।’ক্রোধ উপশম করলেন ক্ষ্যাপাবাবা। কোনও অভিশাপ বর্ষিত হল না সেবাইত পূজারিদের উপরে। অন্তর্যামী জানেন মা-ই বাধা দিয়েছেন ওদের মাধ্যমে। তাই নিরভিমানের অভিমান হল মায়েরই উপর। তিনি আর স্পর্শ করলেন না মায়ের পাষাণ বিগ্রহ। ধীর স্থির শান্ত অচঞ্চল পদক্ষেপে বেরিয়ে এলেন মন্দির থেকে। এই ভাবেই সেদিন সাঙ্গ হয়েছিল নিরহংকার ক্ষ্যাপাবাবার কালীঘাটের কালীদর্শন।

যাঁরা ঈশ্বর দর্শন পেয়েছেন- তাঁদের অবস্থা হয় বালকের মত, পিশাচের মত বা উন্মাদের মতো। ক্ষ্যাপাবাবার মধ্যে এই তিন লক্ষণই প্রকাশিত হয়েছিল। কখনো বালকবত মা তারার কাছে এসে আবদার বায়না, কখনো উন্মাদের মত শ্মশানে বিচরণ অট্টহাস্য, কখনো ক্রোধে এমন ‘জয় তারা’ রব তুলতেন যে গোটা শ্মশানভূমি কেঁপে উঠতো। সেই সময় ভক্তেরাও বাবার সেই রুদ্র রূপে কম্পিত হতেন। বাবার কৃপা পেয়ে বহু মুমূর্ষু রোগী একেবারে সুস্থ হয়েছেন। এমনকি মৃত ব্যক্তিও পুনর্জীবিত হয়েছেন। বাবা কাওকে তাবিজ কবজ জলপোড়া তেলপোড়া দিতেন না। রেগে কাওকে পদাঘাত বা কাওকে থুথু ছিটিয়ে দিতেই সেই রোগী একেবারে যমের দুয়ার থেকে ফিরে আসতো। বিরক্ত হয়ে কাওকে মায়ের প্রসাদী ফুল বা শ্মশানের মাটি তুলে দিতেন, তাতেই সমস্যা মিটে যেতো। এমনই ছিল বামদেবের লীলা। বামদেবের আর একটি লীলা বড় অদ্ভুত। একবার তিঁনি মায়ের শিলামূর্তিতেই মূত্র ত্যাগ করে দিয়েছিলেন। সকলে বাবাকে বকাঝকা করলে বাবা বলেন- “শালা আমি আমার মায়ের কোলে হাগবো মুতবো- তাতে তোদের কি?” একবার কোনো কারণে ক্ষ্যাপাবাবা খুবুই অভিমান করেছিলেন মায়ের উপরে । প্রতিজ্ঞা করলেন মায়ের মন্দিরে বজ্রপাত ঘটাবেন। সেদিন নিশি রাত্রে সত্যই মায়ের মন্দিরে বাজ পড়ে মন্দিরের চূড়ার অংশ ভেঙ্গে পড়েছিলো। তারাপীঠ মা তারার মন্দির । তন্ত্র সাধনার স্থান। এই স্থানে যেনো আকাশে বাতাসে মিশে আছে ক্ষ্যাপাবাবার লীলার কথা।

1911 সালে মহাসমাধি (চূড়ান্ত মুক্তি) এ প্রবেশ করে সাধক বামাক্ষ্যাপা এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। মৃত্যুর অল্পকাল আগেই তিনি ভোগ প্রত্যাহার করেন। তিনি এইসময় ধ্যানের জন্য ব্যয় করেছিলেন এবং তাঁর শিষ্যদের সাথে কথা বলা বন্ধ করেছিলেন। বামাক্ষ্যাপা মহাসমাধি মন্দির তারাপীঠের তারা মন্দিরের নিকটে অবস্থিত এবং আজও কেউ এটি দেখতে যেতে পারেন।তারাপীঠের তারামা আর বামাক্ষ্যাপা এক হয়ে গিয়েছে। বহু মানুষের সাধনক্ষেত্র হলেও তারাপীঠ আর বামাক্ষ্যাপা আজ সমার্থক। যেভাবে দক্ষিণেশ্বর মন্দির এবং ঠাকুর রামকৃষ্ণ হয়ে আছেন। বামাক্ষ্যাপার বহু লীলার সাক্ষী তারপীঠ। মন্দির, জীবিতকুণ্ড, দ্বারকা নদী, শ্মশান সর্বত্র ছড়িয়ে রয়েছে এই যোগীপুরুষের স্মৃতি। তারাপীঠ তাই যেন মা ও ছেলের লীলাপ্রাঙ্গণ।

“Bama Khepa was a Shakta Tantric Master which many have come to regard as the greatest Tantric of our Modern Era. He became the symbol of devotion for millions of Bengali Shaktas, and is the saint seen by many Shaktas as the ideal child of the Mother, more faithful to his beloved Maa than any other devotee.” …

বামাক্ষ্যাপাকে নিয়ে বহু গান, পল্লীগীতি রচিত হয়েছে। তার জীবনী বৃত্তান্ত নিয়ে বাংলা টেলিসিরিয়াল তৈরী হয়েছে যা বামাক্ষ্যাপা জীবনকে বিস্ততারিত দেখানো হয়েছে ।’মহাপীঠ- তারাপীঠ’ সিরিয়ালে কুসংস্কার, বুজরুকি, ভণ্ডামি দেখিয়ে বামদেব ও সমস্ত মনীষীদের যুগকে অপমান করা হচ্ছে। মিথ্যা সিরিয়াল বন্ধের আর্জি জানাল খোদ সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবার। সাবর্ণ রায়চৌধুরী বাংলার একটি ঐতিহাসিক জমিদার পরিবার। ব্রিটিশদের আগমনের পূর্বে এই পরিবার ছিল কলকাতার জমিদার। ১৬৯৮ সালের ১০ নভেম্বর সুতানুটি, কলিকাতা ও গোবিন্দপুর গ্রাম তিনটির সত্ব সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবারের কাছ থেকে ইজারা নেয় ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। ২০০১ সালে সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবার পরিষদের পক্ষ থেকে কলকাতা হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করে দাবি করা হয় যে, জব চার্নক সত্যই কলকাতার প্রতিষ্ঠাতা কিনা তা খতিয়ে দেখা হোক। হাইকোর্ট একটি বিশেষজ্ঞ কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে ২০০৩ সালের ১৬ মে রায় দেন যে, জব চার্নক কলকাতার প্রতিষ্ঠাতা নন এবং ২৪ অগস্ট (যে তারিখটিতে জব চার্নক সুতানুটিতে উপনীত হয়েছিলেন) কলকাতার জন্মদিনও নয়।

সাবর্ণ রায়চৌধুরীর দুর্গাপূজা সে তো জগত্‍ বিখ্যাত আজও। সব কটি বাড়িতেই পুজো হয় এবং মূল সাবর্ণদের বসবাস বেহালা বড়িশার সখেরবাজার অঞ্চলে। সাবর্ণদের দুর্গাপুজো বড়িশা আটচালা আদি সতীপীঠগুলির সঙ্গেও জড়িয়ে আছে সাবর্ণ পরিবারের ইতিহাস। কলকাতার সাবর্ণ রায় চৌধুরীদের সঙ্গে কালীঘাটের সংযোগ সেই ১৫৬৯ খ্রিস্টাব্দ থেকে। কালীক্ষেত্রের মা কালী মূর্তিটি সাবর্ণদের কূলমাতা মা ভুবনেশ্বরীর আদলে। সাবর্ণ বংশের শ্রী সন্তোষ রায়চৌধুরী কালীঘাটের বর্তমান মন্দির তৈরি করেন ও তার কাজ সমাপ্ত করেন শ্রী রাজীবলোচন রায়চৌধুরী ১৮০৯ খ্রিষ্টাব্দে। প্রাচীন কালীঘাট মন্দির ফাইলচিত্র সুতরাং সতীপীঠ কালীঘাট, তারাপীঠের আদি ইতিহাস সাবর্ণ পরিবারের নখদর্পনে। তাঁরা যখন স্টার জলসায় ‘মহাপীঠ- তারাপীঠ’ সিরিয়ালটি দেখছেন পদে পদে হোঁচট খাচ্ছেন বিকৃত ইতিহাস দেখে। সতীপীঠ তারাপীঠ সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবার পরিষদের সম্পাদক শ্রী দেবর্ষি রায়চৌধুরী ‘দ্য ওয়াল’কে জানালেন, ‘যে কুসংস্কারের বিরুদ্ধে বাংলার মনীষীরা লড়েছিলেন তাঁদের প্রত্যেককে অপমান করা হচ্ছে এই ‘মহাপীঠ তারাপীঠ’ সিরিয়ালে।  বামাক্ষ্যাপা নিজের মধ্যে কালীসাধনা করতেন কিন্তু সেটা তো ভূত প্রেত আমদানি করে বুজরুকি ছিল না। বিকৃত সামাজিক ছিল না। যা দেখে আগামী প্রজন্ম ভুল শিখছে। 

(Collected)

administrator

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *