সকাল সকাল বাড়িতে হানা দিয়েছে সিবিআই-ইডি। কলকাতা হাইকোর্ট আগেই শিক্ষক নিযোগে দুর্নীতিতে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে অভিযুক্ত ধরে নিয়েই সিবিআই তদন্তের মুখোমুখি হতে বলেছেন। হাইকোর্টের মতে ডাল মে কুছ কালা হ্যায়। ঠান্ডা ঘর, নিরাপত্তার ঘেরাটোপ। কিন্তু ছন্দপতন ঘটল শুক্রবারই।
সকাল থেকেই কেন্দ্রীয় তদন্তকারীদের টানা জিজ্ঞাসাবাদে অসুস্থ হয়ে পড়লেন রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee)। সূত্রের খবর, তাঁর চিকিৎসার জন্য এসএসকেএম (SSKM) থেকে ডাক্তারদের ডেকে আনা হয়েছে। তাঁরা মন্ত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে ইসিজি (ECG) করার পরামর্শ দিয়েছেন বলে খবর। যদিও এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা একেবারেই মুখে কুলুপ এঁটেছেন। একটানা জেরায় মানসিক চাপ আর রাখতে পারলেন না পার্থ।
এসএসসি (SSC) দুর্নীতি মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শুক্রবার সকাল থেকে রাজ্যের ১৩টি জায়গায় তল্লাশি চালিয়েছে সিবিআই-ইডি। রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ছাড়াও মন্ত্রী পরেশ অধিকারী, এসএসসির প্রাক্তন শীর্ষ কর্তা এসপি সিনহা, বোর্ডের প্রাক্তন অধিকর্তা কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়-সহ অভিযুক্ত সন্দেহে একাধিক ব্যক্তির বাড়িতে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকরা।
শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি ইস্যুতে তোলপাড় রাজ্য। নাম জড়িয়েছে একাধিক শীর্ষ স্থানীয় ব্যক্তির। তালিকায় রয়েছেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও। এই মামলায় আগে সিবিআই দপ্তরে হাজিরও দিয়েছিলেন তিনি। শুক্রবার সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নাকতলার বাড়িতে হানা দেন ইডি আধিকারিকরা। সঙ্গে ছিল কেন্দ্রীয় বাহিনী। জানা গিয়েছে, ইডি আধিকারিকরা গিয়েই পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আপ্ত-সহায়ক, নিরাপত্তারক্ষীদের ফোন জমা নিয়ে নেন। সিআরপিএফ জওয়ান দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয় বাড়ি। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন তদন্তকারীরা।
জানা যায়, টানা জেরায় দুপুরের দিকে অসুস্থ বোধ করেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। ইডি আধিকারিকরাই তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করান। এসএসকেএম থেকে চিকিৎসকদের ডেকে পাঠানো হয় নাকতলার বাড়িতে। তাঁরা ইসিজি করার পরামর্শ দেন। তবে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত শিল্পমন্ত্রীর শারীরিক অবস্থা আপাতত স্থিতিশীল। এখনও পর্যন্ত টানা প্রায় সাত ঘণ্টা ধরে তাঁকে এসএসসি দুর্নীতি মামলায় একাধিক প্রশ্ন করা হয়েছে।
এদিকে, পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের এক আত্মীয়ের বাড়িতে শুক্রবার হানা দিয়েছেন আয়কর দপ্তরের আধিকারিকরা। এসএসসি মামলাতেই এই তল্লাশি কি না, সে বিষয়ে অবশ্য কিছু জানা যায়নি। শুক্রবার বিকেলে বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করে তৃৃণমূল। দলের মিডিয়া কো-অর্ডিনেটর তথা রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য প্রশ্ন তোলেন, ”কেন ২১ জুলাইয়ের পরদিনই আমাদের নেতাদের বাড়িতে গিয়ে জেরা?” পাশাপাশি তাঁর হুঁশিয়ারি, ”আমরা কিন্তু ছেড়ে কথা বলব না। ইডি, সিবিআইয়ের জেরার পর আমরা তাপস পাল, সুলতান আহমেদকে হারিয়েছি। মাথা নত করব না, অভিষেক বলেছেন। আমরাও তাই বলছি। শুধু মানুষের কাছেই মাথা নোয়াব। সকাল থেকে যা চলছে, তার তীব্র নিন্দা করছি। সাঁড়াশি আক্রমণ করলে তার মাথা কীভাবে ভোঁতা করতে হয়, তৃণমূল জানে।”