খবরে আমরাঃ রামপুরহাট গণহত্যার ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতির মাঝেই আগামীকাকাল, বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টে এই ঘটনায় সিবিআই তদন্ত চেয়ে মামলার আরও এক প্রস্থ শুনানি হতে চলেছে। এদিন এই ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিযোগ করলেন, সরকারকে বদনাম করতে এই ধরনের কাজ করা হচ্ছে। জানালেন, আগামিকাল রামপুরহাট যাবেন তিনি।
বুধবার দুপুরে সরকারের তরফে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে রামপুরহাট প্রসঙ্গে মুখ খোলেন মমতা। তোপ দাগলেন সংবাদ মাধ্যম ও বিরোধীদের। তাঁর কথায়, “কন্যাশ্রী, রূপশ্রীর সুবিধা পাচ্ছে মানুষ। সেটা কেউ দেখায় না। কিন্তু কোথাও একটা ঘটনা ঘটল, সারাদিন সবাই মৃতদেহ দেখাচ্ছে। সরকার আমাদের, আমরা কখনওই চাইব না যে খুন হোক।”
এরপর মমতা বলেন, “রামপুরহাটে যা ঘটেছে তা দুর্ভাগ্যজনক। কিন্তু সরকারকে বদনাম করতে একদল মানুষ চক্রান্ত করে চলেছে। যারা এই কাণ্ড ঘটিয়েছে তারা ছাড় পাবে না। গতকাল এই ঘটনা ঘটার পর আমি কম করে ৫০ বার ফোন করেছি। সঙ্গে সঙ্গে ওসিকে সরিয়ে দিয়েছি। এসডিপিও-কেও সরানো হয়েছে। সিট গঠন করেছি। ডিজি নিজে আছেন। ফিরহাদ হাকিম রয়েছে। আগামিকাল নিজে যাব রামপুরহাটে।”
এরপরই বিজেপিকে কটাক্ষ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেন, “আজ একদল রামপুরহাটে যাচ্ছে ল্যাংচা খেতে খেতে। তাই আজ আমি যাব না। কারণ পায়ে পা লাগিয়ে ঝামেলা করব না আমি। তাই ঠিক করেছি কাল যাব।” এদিন মুখ্যমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন, ঘটনার পর্যাপ্ত তদন্ত হবে। অভিযুক্তরা শাস্তি পাবেনই।
এদিকে, রামপুরহাট-কাণ্ডে দিল্লির কেন্দ্রীয় ফরেনসিক দলকে পুণরায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে বুধবার নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। তারা ঘটনাস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহ করে আদালতে রিপোর্ট দেবেন। এই ঘটনায় এদিন সকালেই স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের করার নির্দেশ দেয় প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। আদালত আজ, বৃহস্পতিবার দুপুরের মধ্যে রাজ্য গঠিত স্পেশাল ইনভেস্টিগেটিং টিমকে প্রাথমিক তদন্ত সংক্রান্ত রিপোর্ট জমা করতে নির্দেশ দিয়েছে। পেশ করতে হবে কেস ডাইরিও। রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় আদালতে জানান, রাজ্য এই স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে আদালতের মামলা দায়েরকে স্বাগত জানাচ্ছে। এই নারকীয় ঘটনার সঠিক তদন্ত প্রয়োজন এবং সত্যি সামনে আসুক। ইতিমধ্যেই সিট গঠন করে তদন্ত শুরু হয়েছে।ফরেনসিক দলও ঘটনাস্থলে গিয়েছে। তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট সিটের কাছে চাওয়া হোক। আদালতের নির্দেশ, পূর্ব বর্ধমান জেলাজজের সঙ্গে আলোচনা করে রাজ্য পুলিশের ডিজি ও আইজিকে অবিলম্বে সাক্ষীদের সম্পূর্ণ নিরাপত্তা দিতে হবে। রাজ্য ঘটনাস্থল জুড়ে সিসিটিভির মাধ্যমে নজরদারির ব্যবস্থা করবে এবং পূর্ব বর্ধমানের জেলাজজ তাই দেখভাল করবেন। ঘটনাস্থলের ভিডিও ওবফটো সংরক্ষনও করতে হবে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সিবিআই তদন্ত চেয়ে সাতটি মামলা দায়ের হয়। আবেদনকারীরা ও কেন্দ্রের অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল দাবী করেন, আদালত সেখানে সিআরপিএফ মোতায়েন ও ঘটনার সিবিআই তদন্ত করাতে পারে। ডিভিশন বেঞ্চও রাজ্যের কাছে জানতে চায় কেন্দ্রীয় সংস্থাকে দিয়ে তদন্ত করালে অসুবিধা কোথায়। রাজ্য জানায় নারকীয় ঘটনার তদন্তে সিট গঠন করা হয়েছে। সিট এলাকায় হয়েছে। আপাতত আদালত জানায়, এই অবস্থায় রাজ্য কি করছে দেখা উচিত। তাই আজ, বৃহস্পতিবারই কেস ডায়েরি ও তদন্তের অগ্রগতি সংক্রান্ত রিপোর্ট আদালতে জমা দেওয়া হোক। ময়না তদন্ত ও এলাকার ভিডিও একইসঙ্গে সংরক্ষণ করে আদালতে জমা দিক সিট।