হিন্দু ধর্মের তেত্রিশ কোটি দেবতার প্রত্যেকেরই নাকি নিজস্ব মন্দির আছে। তবে দেশজুড়ে মন্দিরের সংখ্যা ঠিক কটা তার হিসেব রাখা বেশ মুশকিল। জাগ্রত দেবতাদের মন্দিরের বেশি। আর এই সব মন্দিরের নিয়ম নীতি, আদব কায়দা ভিন্ন রকম। কোথাও পুজো দিতে হয় ভোর বেলা, কোথাও পুজো হয় গভীর রাতে। কোথাও পুজো করার জন্য নির্দিষ্ট পোশাক পরতে হয়। কোথাও আবার দেবতার উদ্দেশ্যে চড়ানো হয় বলি। কোনও মন্দিরে মহিলারা প্রবেশ করতে পারেন না। আবার কোনও মন্দিরে প্রবেশ নিষেধ পুরুষদের।আমাদের দেশে এমন অনেক মন্দির রয়েছে যেখানে পুরুষদের প্রবেশ নিষেধ। যেমন –
- কামাখ্যা মন্দির, অসম –
৫১ শক্তিপীঠের অন্যতম অসমের কামাখ্যা মন্দির। কথিত আছে, সতীর দেহত্যাগের পর বিষ্ণুর সুদর্শন চক্রে তাঁর যোনি ছিন্ন হয়ে এখানেই পড়েছিল। সেকারণেই দেবী কামাখ্যাকে ঊর্ব্বরতার দেবী বা “রক্তক্ষরণকারী দেবী” বলা হয়। অম্বুবাচীর সময় তিনদিন মন্দির বন্ধ থাকে। সেই তিনদিন কোনও মাঙ্গলিক কাজ এবং দেবী দর্শন নিষিদ্ধ থাকে। চতুর্থ দিন দেবীর স্নান এবং পূজা সম্পূর্ণ হওয়ার পর মন্দিরে দেবী মূর্তি দর্শনের অনুমতি দেওয়া হয়। তাছাড়া এই চারদিন মন্দিরে পুরুষের প্রবেশ নিষেধ। - আট্টুকাল মন্দির, কেরল –
কেরলের আট্টুকাল মন্দির প্রবেশের অনুমতি রয়েছে শুধুমাত্র মহিলাদের। পুরুষরা মন্দিরে প্রবেশ করতে পারেন না। প্রতি বছর পোঙ্গলের সময় এই মন্দিরে ৩০ লক্ষ মহিলা ভক্ত মন্দির প্রাঙ্গণে উপস্থিত হন। এত বড় নারী সম্মেলন বিশ্বে আর কোথাও হয় না। এই কারণেই গিনিস ওয়ার্ল্ড অফ বুকে জায়গা করে নিয়েছে এই মন্দির। - দেবী কন্যাকুমারী, কন্যাকুমারী – কন্যাকুমারীর দেবী মন্দিরে ভগবতীকে কন্যা রূপে পূজা করা হয়। এই মন্দির চত্বরে পুরুষদের প্রবেশ নিষেধ। যদিও কিন্তু পুরুষ সন্ন্যাসীরা মন্দিরের প্রধান দ্বার পর্যন্ত যেতে পারেন। এটিও শক্তিপীঠের একটি। পুরাণ অনুসারে, কন্যাকুমারী মন্দিরে সতীর মৃতদেহের ডান কাঁধ এবং মেরুদণ্ডের অংশটি পড়েছিল।
- মাতা মন্দির, মুজফ্ফরনগর –
অসমের কামাখ্যার মতো বিহারের মুজফ্ফরনগরের মাতা মন্দির একটি শক্তি পীঠ। নির্দিষ্ট লসময়ে দেবীর ঢতুস্রাব হয় এবং তখন মন্দিরে পুরুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকে। সেই সময় মন্দির পরিচালনার দায়িত্বে থাকেন মহিলারা। পুরোহিত, ভক্ত সকলেই মহিলা হন।
- ব্রহ্মা মন্দির, রাজস্থান –
ভারত তথা বিশ্বের একমাত্র ব্রহ্মা মন্দিরটি রয়েছে রাজস্থানের পুষ্করে। প্রজাপতি ব্রহ্মার এই মন্দিরে কিন্তু বিবাহিত পুরুষদের প্রবেশ নিষেধ। পুরাণ অনুযায়ী, এই স্থানে স্ত্রী সরস্বতী দেবীকে নিয়ে যজ্ঞে বসার কথা ছিল প্রজাপতির। কিন্তু যজ্ঞানুষ্ঠানে পৌঁছোতে দেরী করেন দেবী সরস্বতী। সেই সময় যজ্ঞানুষ্ঠান সম্পন্ন করার জন্য দেবী গায়ত্রীকে বিয়ে করেন ব্রহ্মা।