www.machinnamasta.in

ওঁ শ্রীং হ্রীং ক্লী গং গণপতয়ে বর বরদ সর্বজনস্ময়ী বশমানয় ঠঃ ঠঃ

April 29, 2024 11:12 am
durga

মাত্র পঁচিশ বছর বয়সে বাণীকুমার (Bani Kumar) (বৈদ্যনাথ ভট্টাচার্য) মার্কেন্ডেয়- চণ্ডীর বিষয়বস্তুর ওপর ভিত্তি করে একটি চম্পু (গদ্যপদ্যময় কাব্য) রচনা করেন। ১৯৩০ সালে। নাম দেন ‘বসন্তেশ্বরী’। ১৯৩০ সালে বাসন্তী পুজোর ষষ্ঠীতে আকাশবাণীতে প্রচারিত। সংগীত সংযােজনা পঙ্কজকুমার মল্লিক (Pankaj Kumar Mallick) , ভাষ্য ও স্তোেত্র পাঠে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র। ১৯৩১ সালে ‘বসন্তেশ্বরী’ রূপান্তরিত হয় ‘মহিষাসুরমর্দিনী’-তে। এবং বাসন্তী পুজোর সময় এটি সম্প্রচারিত না করে ১৯৩১ সালের শরৎকালে দুর্গাষষ্ঠীতে (Durga Puja) আকাশবাণীতে সম্প্রচারিত করা হয়। আবার ১৯৩২ সালে দুর্গাষষ্ঠী থেকে সরিয়ে কয়েকদিন আগে মহালয়ার ভােরে সম্প্রচার করা হলাে। উল্লেখ্য, শিল্পীদের নিয়ে বীরেন্দ্রকুষ্ণ ভদ্র (Birendra Krfishna Bhadra) আকাশবাণীতে এক সময় সরাসরি (Live) অনুষ্ঠান করেছেন। …১৯৩২ সাল থেকে

মহালয়া ২০২৩ দিনক্ষণ (Mahalaya 2023 Date- Time) 

  • এই বছর মহালয়া পড়েছে ১৪ অক্টোবর (২৬ আশ্বিন), শনিবার। 
  • ১৩ সেপ্টেম্বর (২৫ আশ্বিন), রাত ৯/২৬/৯  থেকে…১৪ সেপ্টেম্বর (২৬ আশ্বিন), রাত ১০/৪৯/৪৪ পর্যন্ত থাকবে অমাবস্যা তিথি।

প্রতি বছর মহালয়ার ভােরে আকাশবাণী (Akashbani) কলকাতা কেন্দ্রের বিশেষ অনুষ্ঠান ‘মহিষাসুরমর্দিনী’-তে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র কণ্ঠ স্তোত্র-পাঠ বাংলা ছাড়িয়ে ভিন রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ে— স্তােত্র-পাঠ জানিয়ে দেয় দুর্গাপুজো তথা শারদোৎসবের সূচনা হয়ে গেল। যেদিন থেকে মহালয়ার ভােরের এই স্তােত্র-পাঠ, সেদিন থেকে জনমানসে এই ধারণা হয়েছে যে, সত্যি-সত্যিই যেন পুজোর সূচনা হয়ে গেল। কিন্তু এর আগে যে দু’ বছর (মহালয়ার (Mahalaya) ভােরে আকাশবাণীতে সরাসরি সম্প্রচারিত অনুষ্ঠান মহিযাসুরমদ্দিনী’র আগের দু’ বছর অর্থাৎ ১৯৩০ ও ১৯৩১ সাল) মহালয়ার ভােরে আকাশবাণীর বিশেষ অনুষ্ঠান এই ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ অনুষ্ঠিত হয়নি। তাহলেও কি মহালয়া জানান দেয়নি, যে, পুজোর সূচনা হয়ে গেল? হ্যা, আকাশবাণীর ওই বিশেষ অনুষ্ঠান না হলেও মহালয়া তার আপন বৈশিষ্ট্যে জনমানসে রেখাপাত করেছে। শুধু ওই দু’ বছর নয়, কয়েক শাে বছর আগে থেকেই মহালয়া দুর্গা-পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে আছে। সেকথায় পরে আসছি। এখন কীভাবে বিজ্ঞজন কথিত তৃতীয় এপিক (মহাকাব্য) ওই মহিষাসুরমর্দিনী, মহালয়ার সঙ্গে জড়িয়ে গেল তা সংক্ষেপে আলােচনা করা যাক।

মহালয়ার ইতিহাস ও সূচনা

মাত্র পঁচিশ বছর বয়সে বাণীকুমার (Bani Kumar) (বৈদ্যনাথ ভট্টাচার্য) মার্কেন্ডেয়- চণ্ডীর বিষয়বস্তুর ওপর ভিত্তি করে একটি চম্পু (গদ্যপদ্যময় কাব্য) রচনা করেন। ১৯৩০ সালে। নাম দেন ‘বসন্তেশ্বরী’। ১৯৩০ সালে বাসন্তী পুজোর ষষ্ঠীতে আকাশবাণীতে প্রচারিত। সংগীত সংযােজনা পঙ্কজকুমার মল্লিক (Pankaj Kumar Mallick) , ভাষ্য ও স্তোেত্র পাঠে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র। ১৯৩১ সালে ‘বসন্তেশ্বরী’ রূপান্তরিত হয় ‘মহিষাসুরমর্দিনী’-তে। এবং বাসন্তী পুজোর সময় এটি সম্প্রচারিত না করে ১৯৩১ সালের শরৎকালে দুর্গাষষ্ঠীতে (Durga Puja) আকাশবাণীতে সম্প্রচারিত করা হয়। আবার ১৯৩২ সালে দুর্গাষষ্ঠী থেকে সরিয়ে কয়েকদিন আগে মহালয়ার ভােরে সম্প্রচার করা হলাে। উল্লেখ্য, শিল্পীদের নিয়ে বীরেন্দ্রকুষ্ণ ভদ্র (Birendra Krfishna Bhadra) আকাশবাণীতে এক সময় সরাসরি (Live) অনুষ্ঠান করেছেন। …১৯৩২ সাল থেকে

মহালয়ার ভােরে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত টানা চুয়াল্লিশ বছর টানা সম্প্রচার হলাে। ১৯৭৬ সালের ২৩ সপ্টেম্বর, ধ্যানেশনারায়ণ চক্রবর্তী রচিত, উত্তমকুমার, বসন্ত চৌধুরী-পার্থ ঘােষ কর্তৃক ভাষ্যপাঠ, শ্যামল গুপ্ত রচিত গান— লতা, আশা, হেমন্ত, সন্ধ্যা, মান্না- সর্বভারতীয় শিল্পী সমন্বিত অনুষ্ঠান ‘দেবীং দূর্গতিহারিণীম মহালয়ার ভোরে সম্প্রচারিত। পরে শ্রোতাদের বিক্ষোভ এবং পত্রপত্রিকায় পাঠক ও বিদ্বজ্জনেরা সমালােচনা করায় ‘দেবীং দুর্গতি হারিণীম’ বন্ধ করে দিতে হয়।

১৯৭৭ সালের আগস্ট মাসে আকাশবাণী কলকাতা কেন্দ্রের সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে রবীন্দ্রসদনে রাইচাঁদ বড়াল, পঙ্কজকুমার মল্লিক প্রমুখদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়। রবীন্দ্রসদনে সেদিন কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এল কে আদবানীজী উপস্থিত ছিলেন। (১৯৭৭ সালে জনতা সরকার কেন্দ্রে)। যাই হােক, ১৯৭৬সালে ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ সম্প্রচারিত হয়নি, পরিবর্তে ‘দেবীং দুর্গতিহারিণীম’ সম্প্রচারিত হয়েছে এবং আকাশবাণীর কর্তৃপক্ষ যে বিক্ষোভের মুখে পড়েছেন— এসবই আদবানীজীর কানে এসেছে। তিনি রবীন্দ্রসদনের অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হিসেবে উপস্থিত হয়েছেন। রাইচাদ বড়াল, পঙ্কজকুমার মল্লিকদের মতাে প্রাক্তনীদর সংবর্ধনা সভায় পঙ্কজকুমার মল্লিকে উদ্দেশ্য করেই বলেছিলেন —-

Mullick, Your Mahishashuramardini will be on the air again from the next Mahalaya.” প্রাক্তনী হলেও পঙ্কজবাবুদের উল্লসিত হওয়ার কথা। উল্লেখ্য, ১৯৭৫ সালে আকাশবাণীর ‘সঙ্গীত শিক্ষার আসর’ পরিচালনা থেকে পঙ্কজবাবুকে কর্তৃপক্ষের নির্দেশে অব্যাহতি দেওয়া হয়। আবার পরের বছর মহিষাসুরমর্দিনী বাতিল। এসব তাঁকে আহত করেছিল। তবে আদবানীজীর কথায় অক্সিজেন পেলেন। আবার মহালয়ার ভােরে মহিষাসুরমর্দিনী বাজাবে। (১৯৭২ সালের রেকর্ডটাই মহালয়ার ভােরে পরিবেশিত হয়ে আসছে। অন্যমতে ১৯৭৩ সালের রেকর্ডটাই এখনও বাজানাে হয়।)

১৯৭৭ সাল থেকে আদবানীজীর কথামতাে মহালয়ার ভােরে আবার মহিষাসুরমর্দিনী শুরু। এ যাবৎ সম্প্রচারিত হয়ে আসছে। দেবীং দুর্গতিহারিণীম একেবারে বাতিল করা হয়নি। মহাষ্টমীতে সম্প্রচার করা হয়ে থাকে।

দুর্গাপুজা ও মহালয়া সম্পর্ক

দুর্গাপুজো কি মহালয়ার সঙ্গে জড়িয়ে আছে? পূর্বা সেনগুপ্তের মহালয়ায় পিতৃপক্ষের শেষ দেবীপক্ষর সূচনা’ নিবন্ধে (বর্তমান ৭। ১০। ১০) দেখা যায়, মহিষাসুরের নগর থেকে ‘মহীশুর’ কথাটির উৎপত্তি। আর এই নগরে বাস করেই মহিষাসুর নামে এক ভয়ানক দৈত্য অত্যাচারী হয়ে উঠেছিলেন। …দেবকুল তাঁর অত্যাচারের হাত থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বরের শথণাপন্ন। তিন দেবতা এবং অন্যান্য দেবতার তেজে সৃষ্টি হলাে এক দেবীর। তাঁর হাতে দেবদেবীরা অস্ত্র তুলে দিলেন।

দুর্গোৎসবের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। এক — মহালয়া, দুই — বােধন, তিন — সন্ধিপুজো। মহালয়া তিথিটিকে বলা হয়েছে দুর্গোৎসবের প্রস্তুতিপর্ব। হিন্দুধর্ম যে কোন শুভ কাজে যেমন বিয়ে উপনয়ন ইত্যাদিতে কাজের আগে নান্দীমুখ শ্রাদ্ধ করতে হয় তেমন মাতৃ আরাধনার আগে পূর্বপুরুষদের স্মরণ করে তিলজল নিবেদন করতে হয়। এর মূলে রয়েছে বিশ্বাস— কেউ মারা গেলেও তাঁর আত্মার মৃত্যু হয় না। আত্মার বিনাশ বা ক্ষয় নেই। পিতৃপুরুষের আত্মার তৃপ্তি সাধনের জন্য মহালয়ার তর্পণ-শ্রাদ্ধ। তর্পণ-শ্রাদ্ধ শেষ করেই দেবী পক্ষের দিকে এগিয়ে যাওয়া। মহালয়া হলাে পিতৃপক্ষের শেষ ও দেবীপক্ষের শুরুর সন্ধিক্ষণ। বলা যায় মহালয়া দেবীপক্ষের শুরু।

লােক বিশ্বাস-— কৈলাস থেকে দেবী দুর্গা নাকি মহালয়া থেকে বাপের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেন। কাজেই মহালয়া তিথিটি বিশেষ স্থান অধিকার করে নিয়েছে দুর্গা পুজাের ক্ষেত্রে …

মহালয়া কি

এখন মহালয়া কি তা জেনে নিই। ‘মহালয়া’ কথাটি এসেছে মহালয় থেকে। মহালয়ের অর্থ পরমাত্মা। বৃহৎ আলয়। সৌর আশ্বিনের কৃষ্ণপক্ষের নাম মহালয়। ব্যাকরণগত দিক— মহান আলয় যাহাতে তাহা— বহুব্রীহি সমাস। মহালয় + আপ- স্ত্রীলিঙ্গে মহালয়া। অন্যদিকে— মহালয়া যেহেতু একটি তিথি- এই তিথি শব্দটি সংস্কৃতে স্ত্রীলিঙ্গ বলেই বিশেষণ হিসেব শব্দটি হয়েছে মহালয়া। মহালয়া হলাে শারদীয়া দুর্গাপুজাের পূর্ব অমাবস্যা- অর্থাৎ আশ্বিন মাসের কৃষ্ণ পক্ষের অমাবস্যা।

(অমাবস্যা— অমা + বস + য, অধিকরণ বা + আপস্ত্রীং। কৃষ্ণপক্ষের শেষ তিথি। এই তিথিতে চন্দ্র অদৃশ্যভাবে উদিত হয়। এবং সূর্যের সঙ্গে সমসূত্র ভাবে অবস্থিতি করে– সমস্তরাত্রি অন্ধকার থাকে। ইংরেজিতে— ‘Day of the new moon.)

স্কন্দ পুরাণে মহালয়া শব্দটি পাওয়া যায়। এখানে মহালয়া কি তার ব্যাখ্যা এরকম—- মাহেশ্বর খণ্ডে সমুদ্র মন্থনের কাহিনী রয়েছে। সমুদ্র মন্থনকালে অন্যান্য দ্রব্যের সঙ্গে অমৃত কুম্ভ উঠেছিল। বর্তমান বিশ্বের উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলি সমুদ্র ও সমুদ্রের নীচ থেকে তেল সহ অন্যান্য সম্পদ আহরণে ব্যস্ত)। দেবতা ও অসুরদের মধ্যে অমৃত নিয়ে বিবাদ। বিবাদ স্থলে দেবতাদের আহ্বানে দেবী মােহিনীর ছদ্মবেশে স্বয়ং বিষ্ণু অবতীর্ণ। ছলাকলা করে অমৃত পাইয়ে দিয়েছিলেন তিনি। দেবতারা অমৃত পান করে হয়েছিলেন অমর। অমৃত না পেয়ে অসুররা হয়েছিলেন মরণশীল।…

মন্দার পর্বতকে মন্থন দণ্ড ও বাসুকি নাগকে মন্থনরজ্জু করে সমুদ্র মন্থন। মন্থনকালে অমৃতকুম্ভের দেবী অমৃতকুম্ভ নিয়ে উঠে এলেন। কারা আগে অমৃত পাবে এই নিয়ে দেবতা ও অসুরদের বচসা, বিবাদ। দেবতাদের আহ্বানে বিষ্ণু মােহিনীরপে উপস্থিত। তার রূপের ছটায় অসুররা সম্মোহিত। দৈত্যরাজ বলী বললেন ‘তুমি যেই হও, উপযুক্ত সময়ে তােমাকে পেয়েছি। অমৃত বন্টনের উপযুক্ত পাত্রী তুমি। মােহিনী ওরফে বিষ্ণু অসুরদের একটু পরখ করলেন— ‘অচেনা নারীকে কি অম্মৃত বন্টনের ভার দেওয়া উচিত?

বলীরাজ বললেন— ‘দেবীর মহৎ আলয়ে অনেক নিশ্চিন্ত বােধ করছি আমরা।’

মােহিনী বললেন— ‘বেশ, তাহলে আজ তােমরা উপবাস করাে। কাল উপবাস ভঙ্গের পর অমৃত পানের ব্যবস্থা হবে।

পরের দিন উপবাস ভঙ্গের পর অমৃত পানের ব্যবস্থা। দেবতা ও অসুররা আলাদা আলাদা সারিতে। দেবী মােহিনী বললেন— ‘দেবতারা অতিথি, এঁদের আগে অমৃত দেওয়া যেতে পারে। অতিথি সৎকার আগে করতে হয়। এটাই নিয়ম।

দেবীর রূপের ছটায় অসুররা এতাে সম্মোহিত যে ভালােমন্দ বােধটাই হারিয়ে ফেলেছেন। মােহিনী প্রথমে দেবতাদের অমৃত বন্টন করতে লাগলেন। তর সইছে না দেখে রাহু ও কেতু দেবতার ছদ্মবেশে দেবতাদের পাশে গিয়ে বসলেন চন্দ্র ও সূর্য চিনতে পেরে ধরিয়ে দিলেন। অমনি মােহিনীরূপী বিষ্ণু চক্র সাহায্যে রাহু ও কেতুর মাথা কেটে ফেললেন। মাথা ও ধড় আলাদা, কিছুটা অমৃত পানের জন্য মাথা দুটি কিছু সময়ে জন্য অমরত্ব লাভ করেছে। এবার প্রতিশােধের পালা। রাগে এই মাথা দুটি মুখ হাঁ করে চন্দ্র ও সূর্যকে গিলে ফেললাে। চন্দ্র ও সূর্যকে রাহু ও কেতুর গিলে ফেলার ঘটনাটি (পুরাণ-কথিত কাহিনী) পৃথিবীতে অশুভ ‘গ্রহণ’ রূপে চিন্হিত হয়ে গেল। ধর্মীয় বিশ্বাস যাই থাক, ভৌগােলিক ব্যাখ্যায় সূর্য বা চন্দ্রের গ্রহণটি হলাে— গ্রহ বা উপগ্রহের ছায়া পতন দ্বারা চন্দ্র বা সূর্যের কিছু অংশ, আবার কখনও সর্বাংশ আদৃশ্যই হলাে ‘গ্রহণ।

যাই হােক, দেবতারা অমৃত পান করে অমর, অসুররা অমৃত বঞ্চিত হয়ে মরণশীল। দেবী মােহিনী হলেন দেবতাদের আশ্রয়স্থল অর্থাৎ মহৎ আলয়। দেবী মােহিনীকে দেবতারা মহালয়া তিথিতে আরাধনা করেছিলেন। দেবী মোহিনী মহালয়া নামে স্বীকৃতি পেলেন।

মার্কণ্ডেয় পুরাণে শ্রীশ্রী চণ্ডীর অংশে আছে দেবী দুর্গা যেসব অসুরদের বিভিন্ন রূপে বধ করেছেন যেমন কুম্ভ, নিকুম্ভ, বাতাপি, মহিষ প্রমুখদের, এঁরা সবাই অমৃত পানের দিন উপস্থিত ছিলেন। এইসব অসুরদের ধ্বংসের প্রাথমিক পর্বটুকু সেরে রেখেছিলেন দেবী মােহিনী। অসুরদের অমরত্বলাভে বাধা হয়েছিলেন তিনি। আবার দেখা যায়, দ্বিভুজা মােহিনী হয়েছেন যােদ্ধা দশভুজা, দ্বিভুজা মােহিনী হলেন বিষ্ণু, আর দশভুজা হলেন দেবী দূর্গা । দ্বিভুজা মোহিনী পরে দশভুজা– ব্যাপারটা কেমন গােলমেলে ঠেকছে তাই না? দশভুজা দুর্গার আবির্ভাব হয়েছিল ব্রহ্মা-বিষ্ণুও মহেশ্বর ও অন্যান্য দেবতাদের মুখমগুলের তেজরশ্মি থেকে। কাজেই দূর্গার অংশী বিষ্ণু ওরফে দেবী মােহিনী- দ্বিভুজা— দেবতাদের কাছে তিনি মহালয়া- আশ্রয়স্থল – মহৎ আলয়। (দেবী দুর্গাও মর্ত্যবাসী ও দেবতাদের কাছে আশ্রয়স্থল)।

পিতৃপুরুষের তর্পণ-শ্রাদ্ধের দিন হল মহালয়া

মর্ত্যের মানুষ মহালয়া তিথিটিকে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ দিয়ে দেখে থাকেন। পিতৃপুরুষের তর্পণ-শ্রাদ্ধের দিন হিসেবে। পুরাণ বাদ দিয়ে মহালয়ার পেছনে কোনও মহাজাগতিক কারণ আছে কিনা দেখা যাক।

কথিত আছে, আজ থেকে ১৪,৪২৯ (২০১২ সালের হিসাবে) বছর আগে ১৬ ভাদ্রের অমাবস্যা তিথিতে এক মহা-লয় অর্থাৎ মহাপ্রলয় হয়েছিল। সামুদ্রিক জলােচ্ছাসে (Swelling of water in the Sea এর ছােট্ট সংস্করণ সুনামী Tsunami–High sea-wave.) সমগ্র পৃথিবীর স্থলভাগ জলের তলায় । পামির মালভূমি সহ কিছু কিছু পার্বত্য এলাকা ডুবতে বাকি ছিল। সে সময়কার হিসেবে কোটি কোটি মানুষ মারা গিয়েছিলেন। বহু জনপদ ধ্বংস হয়েছিল। পার্বত্য এলাকায় যাঁরা জীবিত ছিলেন, তাঁরা জল সরে যাওয়ার পর বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়েন। হাজার হাজার বছর পরে হলেও আর্যরা আমাদের ভারতে আসেন। তখন ভারতে অনার্যরাও ছিলেন। আর্যঋষিগণ বৈদিক যুগে হাজার হাজার বছর আগের ওই ১৬ ভাদ্রের অমাবস্যায় সংঘটিত মহাপ্রলয়ে মৃতদের উপলক্ষ করে মঘা নক্ষত্রে বিষুব মিলন কালীন সূর্যকে পিতৃগণ’ নামে স্তব করেছিলেন। ভাদ্র মাসের অমাবস্যার ১৪ দিন পূর্ব থেকে নানান অর্ঘ্য দিয়ে সূর্যের উপাসনা চালু করেছিলেন। ‘পিতৃগণ’ নামধারী সুর্যই হলেন পূর্বপুরষ।

শ্রী তপন আচার্য তাঁর ‘মহালয়া’ নিবন্ধে উল্লেখ করেছেন “কালক্রমে দেবতাদের স্বরূপ অজ্ঞানতার অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়ে যাওয়ায় ‘পিতৃগণ’ নামধারী সূর্যার্ঘ্য দান রূপান্তরিত পিতৃপুরুষের অর্পণে। দেখা যাচ্ছে, ভাদ্রের অমাবস্যা তিথিটি যে মহালয়া নামে চিহ্নিত হয়েছে এর উৎস বােধ হয় ওই মহা-লয় অর্থাৎ মহাপ্রলয় থেকে। (মহালয় স্ত্রীলিঙ্গে মহালয়া)। আবার তর্পণ-শ্রাদ্ধে দেখা যায়, তর্পণকারী জলে দাঁডিয়ে সূর্বের দিক তাকিয়ে তিলজল পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্য নিবেদন করছেন। আর্য-ঋষি-নির্দিষ্ট সূর্যই পিতৃগণ তথা পিতৃপুরুষ তথা পূর্বপুরুষ।

পুরাণ-কাহিনীগুলি মাথায় রেখে অর্থাৎ মান্যতা দিয়ে বলা যেতে পারে, সূর্যই আমাদের মহা-আলয়— সমগ্র জীবজগৎ তার মহৎ আলয়ে প্রতিপালিত। “পিতৃদেবাে ভব, মাতৃদেবাে ভব, আচার্য দেবাে ভব”— এই আপ্তবাক্যটিকে মূলধন করে দেবতার জ্ঞানে জন্মদাতা পিতা-মাতা, শিক্ষাদাতা শিক্ষককে আশ্রয় করে আমাদের চলমান জীবনচর্যা। আবার দেশবরেণ্য এবং বিশ্বরেণ্য মনীষীরাও একেকজন মহৎ আলয় বা মহালয়। কাজেই মহালয় কথাটি বা শব্দটি এখানে বহুমাত্রিক হিসেবে ধরে নেওয়া যেতে পারে। মহালয় থেকে মহালয়া- আগেই আলােচনা হয়েছে।

তর্পণ কি

মহালয়ার মূল আকর্যণ তর্পণ-শ্রাদ্ধ। পিতৃপক্ষে। পিতৃপক্ষ কাকে বলে? ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অমাবস্যা তিথি পর্যন্ত সময়ের মধ্যে যখন সূর্য (রবিগ্রহ) কন্যারাশিস্থ হয় তথন তাকে পিতৃপক্ষ নামে অভিহিত করা হয়। তিথির সময়ের হ্রাস, বৃদ্ধি ও মলমাসজনিত কারণে মহালয়ার অমাবস্যা তিথিটিও পিছােতে বা এগােতে পারে। এই যেমন মলমাসের কারণে ২০১২ বাং ১৪১৯ সালের মহালয়া বেশ পিছিয়ে গেল। বাংলা মাসে (একই মাসে) যদি দুটি অমাবস্যা পড়ে তাহলে মল মাসের সূচনা হয়। হিন্দুদের শুভ ক্রিয়াদি নিষিদ্ধ। পুজাপার্বণ ও পিছিয়ে যায়। যাকে নিয়ে এই নিষিদ্ধকরণ হলাে, সেই অমাবস্যার উৎস নামকরণ একটি বিস্ময়কর উপাখ্যানের মধ্য দিয়ে।

পুরাকালে সােমপথ নামে একটি স্থান ছিল (মতান্তরে ব্যক্তিবিশেষ)। সেখানে দেবপিতা মারীচনন্দনরা বাস করতেন। এঁরা তপস্যা করতেন। তাদের তপস্যা ও ইচ্ছা অনুযায়ী একটি পরমাসুন্দরী মানসকন্যার জন্ম হয়। সেই কন্যা আবার নদীর রূপ নিল- নাম অচ্ছোদা। এই অচ্ছোদা আবার দেব পিতাদের মতাে তপস্যা করেন। একবার দেব পিতারা তাকে দেখতে এলেন। অচ্ছোদা তাদের প্রণাম করলেন। দেব পিতাগণ এতাে রূপবান ছিলেন যে তাঁদের দেখে অচ্ছোদা অভিভূতা হলেন। অচ্ছোদা সবচেয়ে রূপবান অমাবসুকে দেখে কামার্ত হয়ে তাকে কামনা করে বসলেন। অমাবসু দেখলেন, অচ্ছোদা ব্যাভিচারিণী হয়ে মানসপিতাকে কলঙ্কের পাঁকে ফেলতে চাইছে। সমাজে পিতা ও কন্যার যে সম্পর্ক তা তাে রক্ষা হবে না!

কামার্ত কন্যার ইচ্ছা পূরণ করতে দেওয়া হবে না। তিনি কঠিন আচরণ প্রয়ােগ করে অচ্ছোদার ইচ্ছাকে প্রত্যাখ্যান করলেন। যে দিনে, যে তিথিতে অচ্ছোদা প্রত্যাখ্যাত হয়েছিলেন সেই দিনটি ‘অমাবস্যা’ নামে চিহ্নিত হয়ে গেল। এই কাহিনীটি রয়েছে মৎস্যপুরাণে।

যে কোনও অমাবস্যাতে তর্পণের বিধি-ব্যবস্থা নেই। কেবলমাত্র পিতৃপক্ষে পক্ষকাল ব্যাপী তর্পণের কথা বলা হয়েছে। আবার তর্পণ বা তর্পণ-শ্রাদ্ধ পক্ষকাল ব্যাপী হলেও মহালয়া তিথিটি সবচেয়ে প্রশস্ত সময়।

“কন্যা গতে সবিতারি, পিতরৌ যাস্তি বৈ সুতান
অমাবস্যা দিনে প্রাপ্তে, গৃহদ্বারং সমাশ্রিতা।”

যম ও যমলোক (স্বর্গ ও নরক)

রবি রাশিমণ্ডলে কন্যারাশিতে থাকাকালীন আশ্বিনের কৃষ্ণ পক্ষের অমাবস্যার দিনে পিতৃপুরুষগণ (প্রয়াত) নিজেদের জীবিত উত্তরপুরুষের কাছে সুক্ষদেহে এসে আশ্রয় নেন এবং গৃহের দোরের কাছে অবস্থান করেন। উত্তরপুরুষের কাছে একটু তিলজলের জন্য তাদের আসা। কোথা থেকে তারা আসেন? যমলােক থেকে আসেন। অনেকের ধারণা— যম, যমলােক, একটা ভয়ঙ্কর নাম, ভয়স্কর স্থান। কিন্তু একটু বিশ্লেষণ করলে আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। হ্যা, জীবমাত্রই মরণশীল। অনেকের ধারণা- মৃত্যুর পরেই যমলােকে গমন— যেখানে শুধুই যন্ত্রণা ভােগ। নরক-যন্ত্রণা-ভােগ। না মােটেই তা না। আমৃত্যু ইহলােকেস্থান, মৃত্যুর পর পরলােকে স্থান। এই পরলােকের দেবতা হলেন যমরাজ— দেবতা না বলে ধর্মরাজ’ বলাই ভালাে। এই ধর্মরাজ যমরাজ কোথায় কীভাবে থাকেন?

যমের পিতার নাম সূর্য। যমুনার দাদা যমরাজ। বিশাল দেহী। গায়ের রঙ গাঢ় পিত্ত, পিঙ্গলবর্ণ কেশ, দুহাতে দণ্ড ও পাশ, বাহন হলাে মহিষ। ভারি চেহারার ভারি বাহক। ইনি সৎকর্মনিষ্ঠ। যম যেখানে থাকেন সেখানে চিরদিবস। আবার যে ভবনে থাকেন সেটি আবার ‘দেব নির্মিত।’মৃত্যুর পর প্রতিটি মানুষ তার কাছে গমন করেন। কেন গমন করেন? পরলােকে বিশ্বাসী মানুষ। পরলাকে ইনি ভাগ্যনিয়ন্তা কর্মফলের ফলদাতা। যমলােকে যাওয়া মানে নরকগমন না, তিনি সুখময় দেশে নিয়ে যান যেখানে চিরদিবস, জলদ্বারা শােভিত, চির জ্যোতিথান। তাঁর ভবনটিও দেবনির্মিত -সংগীত ও বংশীধ্বনিতে মুখরিত। (তথ্য মহালয়া— বর্তমান ৭ ।১০ ।২০১০)।

হিন্দুশান্ত্রে স্বর্গ-নরকের কথা যেমন, তেমন মুসলিম-শাস্ত্রে বেহেশ্ত-দোজখ, খৃস্টান-শাস্ত্রে Heaven-Hell. ভালাে কাজে স্বর্গবাস, খারাপ কাজে নরকবাস। ইহলােকের কর্মফল, পরলােকে প্রাপ্তি। (বিশ্বাস মানুষের। এটি সচেতন বাক্য। মানুষ হয়ে জন্মেছো, মনুষ্যত্বের স্বাক্ষর রেখে যাও। ইহলােকে ভালাে কাজ করলে পুণ্যলাভ— সুখ শান্তি। খারাপ কাজ করলে পাপকর্ম— দুঃখ ভােগ। সঞ্জীব ট্টোপাধ্যায় একটি সুন্দর কথা বলেছেন— “পাপের ফলে দুঃখ, পুণ্যের ফলে সুখ- দুটিই কিন্তু ইহকালের কর্মফলের বেতন প্রাপ্তি।”

এতাে সেই কথাটির অনুরণন— “কোথায় স্বর্গ, কোথায় নরক, কে বলে তা বহুদুর, মানুষের মাঝে স্বর্গনরক-মানুষেতেই সুরাসুর। যতই হােক মানুষ কিন্তু ইহলােক পরলােকে বিশ্বাসী। বিশ্বাসী বলে সেই বিশ্বাসটা এখনও টোল খায়নি- মানুষ মারা গেলেও তার আত্মা অবিনশ্বর – পরলােক অর্থাৎ যমলােকে তাঁর অবস্থিতি। পিতৃপক্ষে যমলােকের খােলাদ্বার দিয়ে বেরিয়ে মর্তলাকে চলে আসেন সুক্ষ্ম শরীরে উত্তর- পুরুষেরৎহাতে একটু তিলজল পাওয়ার আশায়। “যমলােকং পরিত্যাজ্য আগতা যে মহালয়ে।..

তর্পণের নিয়ম

মহালয়াই তাদের লক্ষ্য। কারণ, তর্পণ-শ্রাদ্ধের প্রশস্ত দিনটি তাে এদিনই। তর্পণ হলাে— “‘তৃপ্যান্তি পিতরাে য়েন তৎপণয়।” অর্থাৎ পিতৃপুরুষ যে বস্তু প্রদানে প্রসন্ন হন তাকে তর্পণ বলে। সামান্য তিল জলেই পরিতৃপ্তি। যজূর্বেদ অনুসারে অঞ্জলি দানের মন্ত্রটি এই রকম “ ওঁ উর্জং বহন্তীরমৃতং ঘৃতং পয়ঃ কীলালাং প্ররিশ্রতং, স্বধাস্থ তর্পয়ত মে পিতৃণ্।” “গােত্র-অমুক, পিতা অমুক, দেবশর্মা – তৃপ্যতামেতৎ সতিলােদকং তস্মৈ স্বধা..। (তিনবার উল্লেখ)। তর্পণকারী মন্ত্রোচ্চারণ করেন। এবার স্বতিল জল প্রদান—”ওঁ আগচ্ছন্তু মে পিতর ইমং গৃহ্ণত্ত্ব পােহঞ্জলিং।” আমার পিতৃগণ, আসুন এই অঞ্জলি পরিমিত জল গ্রহণ করুন।

যারা এদিন তর্পণ করতে কোনও কারণে পারেননি, তারা দীপান্বিতার দিন করতে পারেন। তর্গণ শেষে একটুকরাে কাঠে জ্বলন্ত কয়লার টুকরাে জলে ভাসিয়ে দেয়া হয়। এই আলাে দেখে যমলােকে ফিরে যাওয়া। আবার কোথাও উল্কাদান। উল্কার আলাের পথ ধরে যমলােকে ফিরে যান অশরীরী আত্মারা। (আত্মাকে সুক্ষ্ম শরীরও বলা যেতে পারে।) মহালয়ায় আসা দীপাণ্বিতায় ফিরে যাওয়া।

“যমলােকং পরিত্যজ্য আগতা যে মহালয়া
উজ্জ্বল জ্যোতিষাবর্ত্ম প্রপণ্যন্তো ব্রজনস্তুতে

মহালয়ায় তর্পণ-শ্রাদ্ধ করলে পিতৃপুরূষরা আশীর্বাদ করেন। আবার তর্পণের দিন পর্যন্ত কৃত্যপাপ তৎক্ষণাৎ বিনষ্ট হয়। “যাবজ্জীবকৃতং পাপং, তৎক্ষণাদেব নশ্যতি।” মহালয়া হলাে আত্মোেপলদ্ধির দিন। পূর্বপুরষদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন সহ তাঁদের আত্মার শান্তি কামনা

যেমন আছে, তেমন তাঁদের প্রদর্শিত পথে চলা এবং ভালােভাবে থাকার প্রার্থনাও করেন তর্পণকারীরা।

মহালয়ার তাৎপর্য (দানবীর কর্ণ ও মহালয়া)

তার গভীরে যাওয়ার আগে বরং শােনা যাক একটি পৌরাণিক কাহিনি। অঙ্গরাজ কর্ণ। অধিরথ সুতপুত্র তিনি। কুন্তীপুত্র হয়েও নিয়তির খেলাতে নিজের অজ্ঞাতেই কৌরবরাজ দুর্যোধনের পরম সুহৃদ তিনি। কুরুক্ষেত্রে যুদ্ধের অন্যতম মহানায়কও কর্ণ। এসবই তাঁর এক-একটি পরিচয়। এর বাইরেও রয়েছে তার আরও একটি পরিচয়। তিনি দাতা। তার মতাে দাতা খুব কমই দেখা গেছে ভূ-ভারতে। তার কাছে কিছু চেয়ে বিমুখ হয়নি কখনও কেউ। সােনা-দানা, মণিমাণিক্য যে যা চেয়েছে তাই দিয়েছেন তিনি। এমনকী নিজের জীবনের সবচেয়ে বড়াে সুরক্ষা অভেদ্য কবচকুণ্ডলও তিনি হাসিমুখে দান করেছেন অবলীলায়।

বস্তুত মহাবীর কর্ণের চেয়ে দাতা কর্ণই বড়াে হয়ে ওঠেন সকলের কাছে। দানের জন্যই তিনি এক মহােত্তম মানুষ।

যমালয়ে কর্ণ

কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে নিহত হন কর্ণ। পরিণামে স্থান পান স্বর্গে। মরলােকে যে পরিমাণ সম্পদ তিনি দান করেছিলেন তার সহস্রগুণ ফিরে আসে তার কাছে। স্বর্ণ সম্পদের বিপুল বৈভবের নিচে তিনি যেন চাপা পড়ে যান। তবুও দুঃখী তিনি। একটি অপ্রাপ্তির তীব্র জ্বালা তাঁকে অস্থির করে তােলে। সব পাচ্ছেন তিনি কিন্তু পাচ্ছেন না খাদ্য। পাচ্ছেন না পানীয়। আর সেই না পাওয়ার যন্ত্রণা বাড়িয়ে তােলে তাঁর কষ্টকে লক্ষ কোটি গুণ।

ক্ষুধায় তৃষ্ণায় কাতর কর্ণ যান যমরাজের কাছে। ক্ষুদ্ধ কণ্ঠেই বলেন, এ কেমন বিচার!

অফুরন্ত স্বর্ণরত্ন তিনি পাচ্ছেন, কিন্তু সেসব তাে খাদ্য নয়। ক্ষুধার অন্ন নয়। তৃষ্ণার পানীয় নয়। তারই অভাবে যে তিনি বড়াে কাতর। এসব সােনাদানায় কাজ নেই তাঁর। এসব তাে খাওয়া যায় না। সকলের আগে তাে দরকার খাদ্যের। খাদ্য বা অন্নই তাে জীবন। সেই খাদ্য কোথায়?

কর্ণের এই জিজ্ঞাসার মুখে যমরাজ কিছুটা অসহায়। বিব্রত কণ্ঠেই বলেন, এর আমি কী করব? নরলােকে মানুষ যা দান করে, পরলােকে এসে তাই কয়েক সহস্রগুণ ফিরে পায়। বলা যায়, ইহলােকে দানের মূল্যেই মানুষ কেনে পরলােকের সুখ।

নরলােকে যে যা দান করে, পরলােকে পায় তাই-ই।

কর্ণ কুণ্ঠিত ভাবেই বলেন, আমি তাে মর্ত্যে দানে কোনও ক্রটি রাখিনি। বলা উচিত নয়, তবু বলছি, আমার তাে দানবীর বলে একটা খ্যাতি ছিল। তাহলে কেন বঞ্চিত থাকব খাদ্য-পানীয় থেকে?

যমরাজ বলেন, সত্য তােমার কথা। সঙ্গত তােমার জিজ্ঞাসা।

-তাহলে?

-দেখ, আমি আগেই বলেছি, মানুষ যা যা দান করে পরলােকে তাই পায়। তুমি যে অজস্র সম্পদ দান করেছ তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। তাই এখানে এসেও পাচ্ছ তাই। কিন্তু তুমি কোনওদিন কাউকে অন্নদান করনি। দাওনি কোনও তৃষ্ণার্তকে জল। সে কারণে এখানে বঞ্চিত তুমি সেসব থেকে।

-কিন্তু আমি যে ক্ষুধায় অস্থির। এর একটা বিহিত করুন আপনি। ফিরিয়ে নিন সম্পদ, পরিবর্তে দিন একটু খাদ্য। একটু জল।

যমরাজ বলেন, আমি নিরুপায়। ঈশ্বরের বিধান বদলের কোনও ক্ষমতা আমার নেই।

-না জেনে অপরাধ করেছি। অন্নজল দান যে এত মহােত্তম দান, এটা জানা ছিল না। সেই অনিচ্ছাকৃত অপরাধ ক্ষমা করুন। একটা কিছু প্রতিবিধান করুন।

পুনরায় মর্ত্যলােকে কর্ণ

করুণা হয় যমরাজের। বলেন, বেশ একটা সুযােগ তােমাকে দিচ্ছি। ফিরে যাও তুমি মর্ত্যলােকে। একটি পক্ষকালের জন্য। যথেচ্ছ দান করাে অন্নজল। নিশ্চিত করাে তােমার এখনকার জীবনের প্রকৃত সুখ। যাও, তবে এক পক্ষকাল, মাত্র পনেরাে দিনের জন্য।

পনেরাে দিনের জন্য কর্ণ ফিরে আসেন মর্ত্য। পনেরাে দিন ধরে দান করেন অন্ন। তৃষ্ণর্তকে দেন জল। পরিণামে স্বর্গে ফিরে পান অন্ন। পান জল

আশ্বিনের কৃষ্ণপক্ষের প্রতিপদ থেকে অমাবস্যা পর্যন্ত পনেরাে দিন কর্ণের ছিল দ্বিতীয় দফার মর্ত্যবাস। আর এই পনেরােটি দিনই হিন্দুশাস্ত্রে চিহ্নিত পিতৃপক্ষ হিসেবে। কর্ণ স্বর্গ ফিরে আসেন যে অমাবস্যা তিথিতে— সেটিই অভিহিত মহালয় বা মহালয়া নামে।

হিন্দু শাস্ত্রে, পিতৃপক্ষের পনেরাে দিন প্রয়াত পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে তিলতর্পণ এবং শ্রাদ্ধ করার বিধি। ওই সময় দরিদ্রদের আহার দান করালে শুধু নিজের নয় পরলােকে পিতুপুরুষদেরও অন্নজলের অভাব থাকে না।

তাৎপর্যপূর্ণ মহালয়া হল মুক্তির উপায়

গরুড় পুরাণে আছে, পুত্রছাড়া মুক্তি নেই। পিতৃপক্ষের পুত্রের দেওয়া অন্ন-জলেই তৃপ্ত হওয়া যায়। মার্কণ্ড পুরাণেরও নির্দেশ, পিতৃপক্ষে পিতৃপুরুষকে অন্নজল দিতে হবে। পিতৃপক্ষের তর্পণ আর মহালয়ার শ্রাদ্ধই দেয় মানুষক সুস্বাস্থ্য, জ্ঞান এবং সম্পদ। তাই মহালয়া তর্পণে রত হলাে সকলে। শাস্ত্রের বচন, পিতৃপক্ষ বা মহালয়াপক্ষে পিতৃপুরুষরা নেমে আসেন মর্তে— দর্শন করেন উত্তরপুরুষদের। তর্পণ শ্রাদ্ধে নিজেরা তৃপ্ত হন। আশীর্বাদ করেন উত্তরপুররষদের। দীপান্বিতা অমাবস্যায় তাঁরা ফিরে যান পিতৃলােকে। তাই মহালয়ার যেমন তর্পণ-শ্রাদ্ধ, দীপান্বিতাতেও তাই। সঙ্গে আকাশ প্রদীপ জ্বালানাে। তাঁদের পথ দেখানাের জন্য। নাকি এও কুয়াশা ঘেরা অন্ধকারে মানুষকে পথের দিশা দিতেই ধর্মীয় নির্দেশের আড়ালে এক সামাজিক দায় বহনের ব্যবস্থা।

মহালয়ার শুরু দেবীপক্ষের। এই পক্ষেই জগজ্জননী মা দুর্গার অকালবােধন করে রাবণকে নিহত করেন রাম। শারদীয়ার মাতৃবন্দনায় সকলে মাতেন এই দেবীপক্ষে।

মহালয়ার শ্রাদ্ধ ও তর্পণে কোথায় হয়

শুধু বঙ্গের নয় সমগ্র ভারতের অনুষ্ঠান। পিতৃপক্ষের পনেরােদিন না পারলেও অমাবস্যার মহালয়ে তর্পণ ও শ্রাদ্ধে শামিল হয় প্রায় সারা ভারত। এরই মধ্য দিয়ে একাত্ম হন সকলে। তাই মহালয়া একদিক থেকে মিলন, ঐক্য ও জাতীয় এমনকী বিশ্ব-সংহতিরও অনুষ্ঠান।

মহালয়ার অন্যান্য নাম

  • মহালয়ার পিতৃপক্ষের অন্যনাম যােলা শ্রাদ্ধ। ১৬টি শ্রাদ্ধ বা দান করা হয় বলে এই নাম।
  • উত্তর পুর্বভারতে যার নাম পিতৃপক্ষ দক্ষিণ ও পশ্চিম ভারতে তারই নাম পিত্রুপক্ষ।
  • এছাড়া কানাগত, জিতিয়া, মহালয়া পক্ষ, অপরপক্ষ, সর্ব্রীতি অমাবস্যা, পিক্র, পেদ্দেশা ও মহালয়া অমাবস্যা নামেও এটি পরিচিত।

মহালয়ার মাহাত্ম্য

মহালয়ায় তর্পণ-শ্রাদ্ধ হলাে পর্বপুরুষদের নিমিত্ত স্মরণ-অনুষ্ঠান। আমরা তাে প্রতি বছর প্রয়াত মনীষী ও প্রাজ্ঞ ব্যক্তিদের প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করে স্মতি তর্পণ করি। বিভিন্ন দিনে। এও তেমন। তবে পার্থক্য আছে। শাস্ত্রীয় বিধি ও মন্ত্রোচ্চারণ করে প্রয়াত পিতামাতা থেক বৃদ্ধ পিতামহ-পিতামহী, বৃদ্ধ মাতামহ-মাতামহী সহ অনেককে একসঙ্গে তিলজল নিবেদন করে তাদের স্মরণ করা হয় একই দিনে, কোমর-জল দাঁড়িয়ে। এ তাে পারিবারিক তর্পণ-শ্রাদ্ধ। এর বাইরে পুরােহিতমশাইরা তর্পণকারীকে দিয়ে জগৎসংসারের সর্ব প্রাণীর জন্য তিল-তর্পণ (জলসহ) করিয়ে নেন। নৃসিংহ প্রসাদ ভাদুড়ীমশাই মহালয়া সম্পর্কিত একটি নিবন্ধে (ব্রহ্মা থকে তৃণরাজি, সবাই ভালাে থেকো। আনন্দবাজার পত্রিকা-৭।১০ ।১০) সুন্দর আলােকপাত করেছেন।

পিতৃমাতৃ তর্পণের পর লক্ষ্মণ তর্পণ করতে দেখা যায়। সংক্ষিপ্ত এই তর্পণ। ‘সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা থেকে তৃণরাজি-এ জগতের সকলেই তৃপ্ত হও ‘আব্রহ্ম স্তম্ব পর্যন্তং জগৎ তৃপ্যতু’’ তর্পণকরী উচ্চারণ করেন এই মন্ত্র সংসারে স্বাভাবিক মৃত্যু যেমন আছে অস্বাভাবিক মৃত্যু যেমন- কেউ অ্যাক্সিডেন্টে, কেউ সাপে কাটায়, কেউ আগুনে পুড়, কেউ সুই-সাইডে আত্মহত্যা করে মারা গেলে তাঁরাও অর্থাৎ তাদের আত্মাও তর্পণ-জলটুকু আশা করেন। আবার যাঁদের কেউ কোথাও নেই অথচ সমাজ, দেশের হয়ে কাজ করে গেছেন, পিতামহ ভীষ্মের মতাে তাঁদের জীবন, — এঁদের মৃত্যুর পর আত্মার শান্তির জন্য কেউ কি তর্পণ করে তিলজল অর্পণ করবেন না? হ্যা, এঁদের জন্যও তর্পণকারীরা শ্রদ্ধাভরে তিলজল অর্পণ করেন। এই ধরনের তর্পণকে ভীষ্ম তর্পণ বলে অভিহিত করা হয়েছে শাস্ত্রে।

সমগ্র বিশ্বে যারা প্রয়াত হয়েছেন তাঁদের উদ্দেশ্যে তর্পণ করা হয়। শ্যামাচরণ কবিরত্ন বিদ্যাবারিধি সম্পাদিত ‘আহ্নিক কৃত্যম’ পুস্তকে প্রথম খন্ডে তর্পণ বিধিতে রয়েছে —-

“অতীত কুল কোটিনাং সপ্তদ্বীপ বাসী নাং
ময়া দত্তেন তােয়েন তৃপ্যন্তু ভুবনত্রয়ম। অর্থাৎ— “অতীতে বহু কোটি কুল, বহু জন্মান্তরে গত হইয়াছে সেই সেই কুলের পিতৃপিতামহাদি ও সপ্তদ্বীপবাসী মানবগণের পিতৃপিতামহাদি এবং ত্রিভুবনের যাবতীয় পদার্থ আমার প্রদত্ত-জলে তৃপ্ত হউক ।”

এখানে সপ্তদ্বীপবাসী বলতে সাতটি মহাদেশের কথা বলা হয়েছে। আবার স-প্রাণ প্রাণী, উদ্ভিদ শুধু নয়, জড়বস্তু বা জড় পাদার্থ সকলকে তৃপ্ত করার কথা বলা হচ্ছ।

আগেই বলা হিন্দুদের তর্পণ শ্রাদ্ধ হলাে পূর্বপুরুষদর স্মরণ করার অনুষ্ঠান। মুসলমানরা মােমবাতি জ্বালিয়ে পূর্বপুষদের স্মরণ করেন ‘শবেবরাত’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। খৃস্টানরা সারারাত বাড়ির ছাদে বা বাইরে আলাে জালিয়ে (সাধারণত মােমবাতি জ্বালানাে হয়) পূর্বপুরুষদর স্মরণ করেন। আগেকার দিনে কোনাে সমাধির ওপর লাইট হাউস বা বাতিঘর তৈরি করা হােত। কারণটা কি? কারণ হলাে সেই বিশ্বাস— মানুষের বিশ্বাস, মৃত মানুষের আত্মাকে পথ দেখিয়ে স্বর্গে নিয়ে যায় বাতিঘরের আলাে। সমাধির ওপরে এরকম একটি প্রাচীন বাতিঘর তৈরি হয়েছিল খৃস্টপূর্ব ২৮০ সালে। মিশরের আলেকজান্দ্রিয়া বন্দরে। বাতিঘরটির উচ্চতা ছিল চারশাে ফুটা। নাম- ‘ফ্যর। মধ্যপ্রাচ্যেও এই বিশ্বাস নিয়ে বাতিঘর হয়েছিল। তবে এই সব বাতিঘরগুলির এখন অস্তিত্ব নেই। খৃস্টানরা বিশ্বাস করেন বাড়ির ছাদে যিশুখ্রিস্টের জন্মদিনে আলাে জ্বালালে পূর্বপুরুষরা ওই আলাের পথ ধরে নেমে এসে বর্তমান প্রজন্মকে আশীর্বাদ করেন। ঠিক যেন আমাদের কার্তিক মাসে আকাশ-প্রদীপ জ্বালানাের মতাে ব্যাপারটা ।..

এক সময় শুভ মহালয়া তিথিতে নতুন নতুন গানের আত্মপ্রকাশ হত। আবার সিনেমার ছবিও মুক্তি পেত। অরবিন্দ মুখার্জীর ‘এই পুথিবী পান্থনিবাস’ ও ‘মন্ত্রমুগ্ধ’ ছবি দুটির শুভমুক্তি হয়েছিল মহালয়ার দিনে। এমনি আরও। বর্তমানে বৈদ্যুতিন মাধ্যমে রেডিয়াতে দেবী দুর্গার ওপরে সংগীত-বীথি “মহিষাসুরমর্দিনী’ এবং টিভিতে সচিত্র কাহিনী পরিবেশিত হচ্ছে মহালয়ার ভােরে। এছাড়া কী শহর, কী আধাশহর, কী মফঃস্বল— সব জায়গা থেকে বাঙালির কাঙ্খিত সাহিত্য সমৃদ্ধ শারদ সংখ্যাগুলির আত্মপ্রকাশ ঘটে মহালয়ার পুণ্যলগ্নে।

পরিশেষে, –মহালয়ায় পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে তর্পণ-শ্রাদ্ধ–এটি একটি শাস্ত্রীয় প্রক্রিয়া হলেও এর বিশ্বজনীন চিন্তা-দর্শনটি অতি চমৎকার -উঁচু তারে বাঁধা। ধনী-গরীব, জ্ঞানীগুণী থেকে অতি সাধারণ তর্পণকারীর শ্রদ্ধার্ঘ্য- অঞ্জলি-পরিমিত-জল’— নিজ পারিবারিকতার গণ্ডি ছাড়িয়ে, দেশ ও কালের গণ্ডি ছাড়িয়ে সমগ্র বিশ্বের প্রয়াত মানুষদের প্রতি অর্পিত হচ্ছে। এখানেই তর্পণ-শ্রাদ্ধের সার্থকতা— এখানে মহালয়া নাম্নী তিথিটিরও সার্থকতা। বর্তমান প্রেক্ষিত নিয়ে দু-চার কথা।

পুৎ’ নামক নরক থেকে উদ্ধার হওয়ার জন্য কিংবা বংশ রক্ষার জন্য পুত্রের কামনা বাবা মায়ের প্রয়াত হওয়ার পরও এঁদের বিদেহী আত্মা আকাঙ্ক্ষা করে মহালয়ায় পুত্রের হাতেই তিলজল গ্রহণ করবে। কারণ, তর্পণের প্রথম অধিকারী হলেন পুত্র। জীবদ্দশায় হয়তাে অনেক বাবা মা পুত্রের হাতে অন্নজল পান না। এতে ক্ষোভ, দুঃখ, রাগ অভিমান নেই স্নেহপ্রবণ বাবা মায়ের। আবার পুত্রের অসুখ, বিসুখ, কষ্ট যন্ত্রণার সময়ে বাবা মায়ের চোখে ঘুম নেই— পুত্র, পুত্রবধুর পাশে তাঁরা। এক সময় জাগতিক নিয়মে ইহলােক থেকে বাবা মায়ের ছুটি। স্থান হয় পরলােকে। আত্মা তাে অবিনশ্বর, পরলােক থেকে বিদেহী আত্মা মহালয়ার পুত্রের তর্পণের দিকে তাকিয়ে মহালয়ায় আসার জন্য উন্মুখ— তিলজল পুত্রের হাত দিয়ে প্রাপ্তি ঘটুক আর না ঘটুক—পূত্রসহ উত্তরসুরির মঙ্গল কামনায় তাঁদের আসা। এটাই ভারতীয় দর্শন— অপত্য স্নেহের অবিচ্ছেদ্য বন্ধনের উজ্জ্বল নিদর্শন।

সৌজন্য-বিভিন্ন প্রকাশিত লেখা থেকে সংগৃহীত

administrator

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *