www.machinnamasta.in

ওঁ শ্রীং হ্রীং ক্লী গং গণপতয়ে বর বরদ সর্বজনস্ময়ী বশমানয় ঠঃ ঠঃ

April 19, 2024 4:08 pm

খবরে আমরাঃ সিনেমায় দেখেছেন। এবার রিয়েল লাইফে। সংসার সুখের হয় রমনীর গুনে। সেই বিবাহিতা রমনীর প্রাক্তন প্রেমিকের সন্ধান পেতেই…….না কোন অ্যাকশন নয়। সুখের চাদরে রেখে দিতে স্ত্রীকে বিবাহ বিচ্ছেদ দিয়ে নিজেই তাঁকে তুলে দিলেন প্রেমিকের হাতে। এমনই নজির বঙ্গে।

স্ত্রীকে মোবাইলে দিনরাত মগ্ন থাকতে দেখে সন্দেহ হয়েছিল যুবকের। কিছু দিন পর জানতে পারলেন, সন্দেহ নিতান্তই অমূলক নয়। বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়েছেন স্ত্রী। এর পর দাম্পত্যকলহই হয়তো স্বাভাবিক। কিন্তু আলিপুরদুয়ারের ফালাকাটার সামান্য এক খাবারের হোটেলের মালিক নিজের ভাবনা-চিন্তায় এখানেই হয়ে উঠেছেন অসাধারণ। সমাজ-সংসারের সমস্ত সমালোচনার বিরুদ্ধে গিয়ে স্ত্রীর পাশে দাঁড়িয়েছেন। বিবাহবিচ্ছেদ তো করেইছেন। উপরন্তু আইনি সব নিয়ম মেনে স্ত্রীর সঙ্গে রেজিস্ট্রি করিয়েছেন তাঁর প্রেমিকের। ওই ব্যবসায়ীর এই নজিরবিহীন পদক্ষেপে জোর চর্চা জেলা জুড়ে।

২০০৯ সালে ফালাকাটার যুবক উত্তম রায়ের (নাম পরিবর্তিত) সঙ্গে সামাজিক মতে বিয়ে হয়েছিল ফালাকাটারই এক তরুণীর। অভিভাবকরা বিয়ে দিয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু কোনও দিন বনিবনা হয়নি দম্পতির। অনটনের সংসারে সমস্যা শুধু বেড়েই চলেছিল। অশান্তি ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। এমনকী, উত্তমের পরিবারের সদস্যরা বলছেন, কখনও কখনও অশান্তি এই পর্যায়ে পৌঁছত যে, উত্তমের উপর চড়াও হয়ে মারধর করতেন স্ত্রী। ঝামেলার জেরে থানা-পুলিশও হয়। শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে বধূ নির্যাতনের মামলাও করেন তরুণী। এ ভাবেই কেটে যায় বারোটা বছর। তার মধ্যেই জন্ম নিয়েছে দুই সন্তান। তবে দাম্পত্য সমস্যা মেটেনি।

বছর খানেক আগে শহরের একটি শপিং মলে কাজ নেন বধূ। তাঁকে আধুনিক পোশাক পরতে দেখে পাড়ায় একটা ‘গেল-গেল’ রব ওঠে। কিন্তু তাতে কান না দিয়ে স্ত্রীকেই সমর্থন করেছিলেন উত্তম। স্ত্রী সকাল সকাল কাজে বের হতেন। আর উত্তম যেতেন হোটেলে। ইতিমধ্যে ছেলেমেয়েও বড় হয়ে উঠেছে। মেয়ের বয়স ১২ আর ছেলে ১০ বছরের। হঠাৎই স্ত্রীর কিছু আচরণে সন্দেহ হয় উত্তমের। সারা দিন ফোন হাতে কাকে যেন মেসেজ করেন স্ত্রী। বাড়ি ফিরতেও দেরি করেন মাঝেমধ্যেই। একসময় জানতে পারলেন, কোচবিহারের তুফানগঞ্জের এক যুবকের সঙ্গে তাঁর স্ত্রী বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক জড়িয়েছেন। তাঁর সঙ্গেই সারা দিন ফোনে চ্যাট করেন। বাড়ির বাইরে একান্তে দেখা-সাক্ষাৎও করেন। সব জেনে প্রথমটায় চমকে উঠলেও, পরে ঠান্ডা মাথায় ভাবতে বসেন উত্তম। যে দাম্পত্যে আদতে প্রেমহীন, তাকে জোর করে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা যে আসলে কাউকেই সুখি করবে না, তা উপলব্ধি করেন তিনি। এর পর খোঁজখবর নেন স্ত্রীর প্রেমিক সম্পর্কে। উত্তম বলেন, ”ও যখন আমার সঙ্গে সংসার করতে চাইছে না, ওকে তো জোর করতে পারি না। আমাদের ১২ বছরের সম্পর্ক। ভালোবাসা না থাকলেও, ওকে বিয়ে করেছি যখন, ওর দায়িত্ব তো আমার। সেই দায়িত্বের জায়গা থেকেই ভাবলাম, যে কোনও কারও সঙ্গে তো চলে যেতে দেওয়া তো যায় না! এর পর আইনি পরামর্শ করে ওদের বিয়ের ব্যবস্থা করি। তার আগে আমরা ডিভোর্স নিই।”

চলতি মাসের ১৪ তারিখ সন্ধ্যায় বাড়িতে রীতিমতো রেজিস্ট্রার ডেকে দাঁড়িয়ে থেকে স্ত্রীর বিয়ে দিয়েছেন উত্তম। সইসাবুদের পালা শেষ হতেই নতুন স্বামীর সঙ্গে পুরোনো শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে রওনা দিয়েছেন স্ত্রী।

সারা শহরে এখন তাঁকে নিয়েই চর্চা। তার মাঝে একটাই চিন্তা কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে উত্তমকে। ছেলেমেয়ে দুটোকে একা মানুষ করবেন কী ভাবে!

নাম না প্রকাশের শর্তে এক প্রতিবেশী বললেন, ”উত্তম অত্যন্ত সহজ-সরল ছেলে। ওর সংসারের বারোটা বাজল। এমন ঘটনার কথা আগে কখনই শুনিনি।” উত্তম অবশ্য সহজ কথাটা সহজ ভাবে বুঝেছেন। তাই প্রেমহীন দাম্পত্যকে আঁকড়ে রাখার চেষ্টা করেননি। বরং নির্মোহ ‘দায়িত্ব’ পালন করেছেন।

administrator

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *