শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইচ্ছেমতো ফি নেওয়ার বিরুদ্ধে কড়া মন্তব্য মাদ্রাস হাইকোর্টের। একটি গুরুত্বপূর্ণ রায়ে আদালত স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, যে নির্ধারিত ফি-র বদলে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোনও টাকা নিলে, তা সে স্বেচ্ছ্বায় বা অনুদান হিসেবেই হোক না কেন, তাকে ক্যাপিটেশন ফি হিসেবেই ধরা হবে। এবং এই ক্যাপিটেশন ফি নেওয়া বেআইনি, এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
রায় দিতে গিয়ে বিচারপতি আর মহাদেবন এবং বিচারপতি মহম্মদ শফিক লিখেছেন, “শিক্ষা যে কোনও ব্যবসা নয়, এবং তাকে বাণিজ্যিক কাজকর্মের মধ্যে ফেলা যায় না, এ নিয়ে কোনও সন্দেহই নেই। কিন্তু কঠোর বাস্তব হল এই যে বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (Education) ভর্তির ক্ষেত্রে ক্যাপিটেশন ফি (Capitation Fee) নেওয়া শর্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
কয়েকটি ট্রাস্টের বিরুদ্ধে চলা আয়কর মামলায় এই রায় দিয়েছে হাইকোর্ট (Madras Highcourt)। এর মধ্যে রয়েছে তামিলনাড়ুর কাঞ্চিপুরম জেলার শ্রীপেরুমবুদুরের একটি ট্রাস্টও, যারা একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ চালায়। বিচারপতিরা আয়কর দফতরের আপিল গ্রহণ করেন এবং একটি ট্রাইব্যুনালের রায় থেকে ওই ট্রাস্ট যে সুবিধা পেয়েছিল, তাও নাকচ করে দেন।
রায় দিতে গিয়ে বিচারপতি মহাদেবন বলেন, কলেজ কর্তৃপক্ষগুলো অভিভাবকদের কাছ থেকে ক্যাপিটেশন ফি দাবি করে এবং কোনও সহযোগী সংস্থার অ্যাকাউন্টে তা জমা করতে চাপ দেয়। তারা এমনও দাবি করে, যে টাকা অভিভাবকদের অ্যাকাউন্ট থেকে নয়, কোনও আত্মীয় বা বন্ধুর অ্যাকাউন্ট থেকে দেওয়া হোক। এরপর বিভিন্ন ট্রাস্ট ঘুরে সেই টাকা কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে যায়। এর মধ্যে ওই ট্রাস্টগুলোও আয়করে ছাড় দাবি করে। কারণ হিসেবে তারা বলে যে তারা আসলে দাতব্য প্রতিষ্ঠান এবং ওই টাকা আসলে অনুদান হিসেবে দেওয়া হয়েছে। এই গোটা প্রক্রিয়াকে বেআইনি আখ্যা দেন বিচারপতিরা। এছাড়াও আয়কর আইনে 12A ধারায় ওইসব ট্রাস্টের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করারও নির্দেশ দেন।
এছাড়াও বিচারপতিরা কড়া সমালোচনা করেন তামিলনাড়ু সরকারের (Tamilnadu State Govt)। রাজ্যে ক্যাপিটেশন ফি-র বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট আইন থাকার পরও কেন তা বন্ধ করা যাচ্ছে না, সেই প্রশ্নও তোলেন তাঁরা। বিচারপতিদের আক্ষেপ, বিদেশে মূলত যা দেখা যায়, এদেশে ছবিটা সম্পূর্ণ বিপরীত। এখানে বাবা-মারা সরকারি স্কুলে বাচ্চাদের পাঠাতেই চান না। আর 2019-20 সালে শিক্ষা মন্ত্রকের সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, দেশের 78.6 শতাংশ কলেজই বেসরকারি। 2022-23 সালের কেন্দ্রীয় বাজেটে শিক্ষায় 1,04,277 কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। রাজ্য বড় অঙ্ক শিক্ষার জন্য বরাদ্দ করে, পাশাপাশি ক্যাপিটেশন ফি রুখতে রয়েছে আইনও। বিচারপতিরা বলেন, “এসব সত্ত্বেও এই অসৎ পদ্ধতিকে নির্মূল করা তো দূরের কথা, কমানোও যায়নি।”