এবার ইডির নজরে বর্ধমান (Burdwan) শহরের এক প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা। দলের পদেও রয়েছেন তিনি। আর তাঁর নাম উঠেছে এসেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (Enforcement Directorate) খাতায়। শিক্ষায় দুর্নীতির তদন্তে নেমে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে (Partha Chatterjee) গ্রেফতার এবং পার্থের শতাধিক ডাম্পারের (dumper) হদিশ মিলতেই এর পেছনে উঠে এসেছে ওই বর্ধমান শহরের তৃণমূল নেতার নাম। তদন্ত শুরু করেছে ইডি। পার্থের সঙ্গে ওই তৃণমূল নেতার যোগায়োগের খতিয়ান জানতে চায় তদন্তকারীরা। বর্ধমানের ওই নেতা সম্প্রতি একটি ঘটনার তদন্তে সিবিআই হাজিরাও দিয়েছেন দুর্গাপুরে। শুধু ডাম্পার নয়, ওই তৃণমূল নেতা শহরের একাধিক দলের কর্মী ও যুবক-যুবতীদের চাকরী দিয়েছেন এই পার্থের হাত ধরেই বলে জানা গিয়েছে। তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনিই আবার রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী। কিন্তু শিক্ষা নামক ব্যবস্যার সঙ্গে যে তিনি ডাম্পারের ব্যবস্যা করতেন, তা জানতেন না অনেকেই।
পার্থ ধরা পড়ার পরেই বর্ধমানের পালসিটে (Burdwan Palsit) দাঁড়িয়ে রয়েছে শতাধিক ডাম্পার। এগুলি পার্থ কিনেছিলেন বলেই জানা গিয়েছে। সেগুলি গায়ে লেখা রয়েছে ‘পি’। গ্রামের দুই বাসিন্দা খাতায় কলমে মালিক বলে জানা গেলেও, এতে যে পার্থ-র বিনিয়োগ রয়েছে, তেমনটাই দাবি ইডির। পার্থ-র সম্পত্তির তালিকায় একাধিক বিলাসবহুল ফ্ল্যাটের পর এবার মিলল ডাম্পারের হদিশ, পার্থ-র সম্পত্তিতে ডাম্পারগুলি। আর এই ডাম্পারের সন্ধানের সঙ্গেই উঠে এসেছে বর্ধমানের ওই তৃণমূল নেতার নাম। বেআইনিভাবে ওই নেতা বালির কাদানও চালান বলে খবর।
পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেফতারির পর ইডি-র আইনজীবী বলেছিলেন, পরতে পরতে দুর্নীতির অভিযোগ বেরিয়ে আসছে। রাজ্যের মন্ত্রীকে গ্রেফতার করার পর থেকেই ইডির নজরে আসছে একের পর এক সম্পত্তির হদিশ। অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া নগদ টাকাই শেষ কথা নয়, রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, পার্লার, বাগানবাড়িই শুধু নয়, এবার হদিশ মিলল অন্তত ১০০ টি ডাম্পারের। সেগুলি পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের টাকাতেই কেনা হয়েছিল বলে ইডি সূত্রে খবর। পূর্ব বর্ধমানের পালসিটে গেলে দেখা যাবে রাস্তায় দাঁড় করানো সারি সারি ডাম্পার।
দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে লাগোয়া পালসিট টোলপ্লাজার আগে আজাপুর গ্রামে গেলেই ওই সব ডাম্পার নজরে পড়বে। কারণ পার্থ-র গ্রেফতারির পর থেকে ডাম্পার চালানো হচ্ছে না। ফলে, গ্রামের রাস্তায় মাঠের পাশে সার দিয়ে দাঁড় করানো আছে সেগুলিকে। জানা যাচ্ছে, এগুলির গায়ে এতদিন পর্যন্ত P লোগো লাগানো ছিল। পার্থ-র গ্রেফতারির পর সেগুলি খুলে ফেলা হয়েছে। ডাম্পারগুলির গায়ে লেখা আছে রাহুল-রাজ। কে এই রাহুল-রাজ? গ্রামের বাসিন্দারা বলছেন, এলাকার দুই বাসিন্দা বাবলু ও ডাবুই মূলত এই ডাম্পারগুলির দেখভাল করেন। আর তাঁদের ছেলের নাম রাহুল ও রাজ।
আপাতত এলাকায় দেখা মিলছে না বাবলু ও ডাবুর। জানা গিয়েছে, জামালপুরের দুটি বালি খাদান থেকে ও বর্ধমানের তিনটি বালি খাদান থেকে বালি তোলা হত বেআইনিভাবে। সেই বালি নাকি প্রথম দিকে পাঠানো হত রাজারহাটে। বিগত বেশ কিছুদিন ধরে বালি যাচ্ছিল সিঙ্গুরে। তবে গত কয়েকদিন ধরে সেই বালি তোলার কাজ বন্ধ রয়েছে।
যেখানে ডাম্পারগুলি দাঁড়িয়ে আছে, সেখানে রয়েছে একটি অফিস। সংবাদমাধ্যম পৌঁছনোর আগেই কেউ বা কারা সেটি বন্ধ করে দিয়েছেন বলে স্থানীয় সূত্রে খবর। সেখানে রয়েছে তৃণমূলের পতাকা। সামনে দাঁড় করানো দুটি চারচাকার গাড়ি। ইডি সূত্রে জানা যাচ্ছে, প্রাথমিকভাবে বাবলু ও ডাবু এই ব্যবসা শুরু করলেও পরে পার্থ এখানে প্রচুর টাকা বিনিয়োগ করেন। তাঁর টাকাতেই কেনা হয় ডাম্পারগুলি। গ্রামে বাবলু ও ডাবুর বাড়ি তৈরির কাজও চলছে।