আব্দুল গফ্ফার চৌধুরী লিখিত ও আলতাভ মাহমুদ সুরারোপিত “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি” – গানটির ৭০ বছর পূর্ণ হলো। এই ৭০ বছর ধরেই পূর্ণ মর্যাদা ও সম্মানের সঙ্গে এই গান এখনো গাওয়া হয়।
গানটি ‘একুশের গান’ নামেই পরিচিত। এই গানের কথায় ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি ২১ তারিখে সংঘটিত বাংলা ভাষা আন্দোলনের (Bangladesh) ইতিহাস ফুটে উঠেছে।
সাংবাদিক ও লেখক আবদুল গাফফার চৌধুরী (Abdul Gaffar Chowdhury) ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারিতে গানটি (International Mother Language Day) রচনা করেন। প্রথমে আবদুল লতিফ ( Abdul Latif) গানটি সুরারোপ করেন। তবে পরবর্তীতে আলতাফ মাহমুদের করা সুরটিই অধিক জনপ্রিয়তা লাভ করে, ১৯৫৪ সালের প্রভাত ফেরীতে প্রথম গাওয়া হয়।
গানটি অনেক বড়ো। আবেগ মোথিত এই গানের প্রথম দুটি অনুচ্ছেদ হলো –
” আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি
আমি কি ভুলিতে পারি।
ছেলেহারা শত মায়ের অশ্রু গড়া-একুশে ফেব্রুয়ারি
আমি কি ভুলিতে পারি।
আমার সোনার দেশের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি
আমি কি ভুলিতে পারি।।
জাগো নাগিনীরা জাগো নাগিনীরা জাগো কালবোশেখীরা
শিশু হত্যার বিক্ষোভে আজ কাঁপুক বসুন্ধরা।
দেশের সোনার ছেলে খুন করে রোখে মানুষের দাবী
দিন বদলের ক্রান্তিলগ্নে তবু তোরা পার পাবি?
না, না, না, না খুন রাঙা ইতিহাসে শেষ রায় দেওয়া তারই
একুশে ফেব্রুয়ারি একুশে ফেব্রুয়ারি।”
পৃথিবীতে বহু আন্দোলন থেকে বহু গানের সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনের অনুপ্রেরণা ছিল এমন বহু গান আছে। কিন্তু শুধু ভাষার জন্য লড়াই আর তার থেকেই জন্ম নিলো এমন অসাধারণ গান – যা পৃথিবীতে বিরল। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতে পুলিশ ভাষা আন্দোলনকারী ছাত্রদের মিছিলে গুলি চালায়; এতে সালাম, বরকত,রফিক, জব্বার প্রমুখ ছাত্রের মৃত্যু হয়। সে সময় ঢাকা কলেজের ছাত্র আবদুল গাফফার চৌধুরী ঢাকা মেডিকেলে যান আহত ছাত্রদের দেখতে। ঢাকা মেডিকেলের আউটডোরে তিনি মাথার খুলি উড়ে যাওয়া একটি লাশ দেখতে পান, যেটি ছিল ভাষা সংগ্রামী রফিকের লাশ। লাশটি দেখে তার মনে হয়, এটা যেন তার নিজের ভাইয়েরই রক্তমাখা লাশ। তৎক্ষণাত তার মনে গানের প্রথম দুইটি লাইন জেগে উঠে। পরে কয়েকদিনের মধ্যে ধীরে ধীরে তিনি গানটি লিখেন। ভাষা আন্দোলনের প্রথম প্রকাশিত লিফলেটে এটি ‘একুশের গান’ শিরোনামে প্রকাশিত হয়। ১৯৫৩ সালে হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত ‘একুশে সংকলনে’ও এটি প্রকাশিত হয়। ইতিহাসের মহৎ সৃষ্টির মধ্যে এই গানটি চিরন্তন স্থান নিয়ে নিয়েছে। বিদ্রোহের অমৃত সুরে জেগে উঠেছিল ওপার বাংলার বাঙালি। আর সেই বিদ্রোহের সুর ধরেই ১৯৭১ সালে জন্ম নিল স্বাধীন রাষ্ট্র ‘বাংলাদেশ’।