www.machinnamasta.in

ওঁ শ্রীং হ্রীং ক্লী গং গণপতয়ে বর বরদ সর্বজনস্ময়ী বশমানয় ঠঃ ঠঃ

May 6, 2024 3:11 pm
maa tara

দশমহাবিদ্যার অন্যতম মহাবিদ্যাশক্তি হল আদ্যাশক্তি। সেই আদ্যাশক্তির আরাধনা করেন যাঁরা, তাঁদের কাছে কৌশিকী অমাবস্যা। ভাদ্রমাসের এই তিথিতে তন্ত্রমতে ও শাস্ত্রের রীতি মেনেই কালীপুজো করা হয়ে থাকে। এই অমাবস্যা মেনে চললে জীবনে অনেক সমস্যা দূর হয়ে যায়। কথিত আছে, কঠিন ও গুপ্ত সাধনার মাধ্যমে কৌশিকী অমাবস্যা পালন করলে সিদ্ধিলাভ ঘটে, আশাতীত সাফল্য লাভ করতে পারেন ভক্তরা। শুধু তাই নয়, এই অমাবস্যার বিশেষ লগ্নে পুজো করলে স্বর্গ ও নরকের দরজা খুলে যায়।

কথিত আছে, সাধক বামাক্ষেপা কৌশিকী অমাবস্যার দিনে তপস্যায় সিদ্ধিলাভ করেন। তারাপীঠ শ্মশানের শ্বেত শিমূল তলায় সাধনা করেন তিনি।

পঞ্জিকা অনুসারে,

  • আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর, ২৭ ভাদ্র  কৌশিকী অমাবস্যা।
  • ভোর ৫.৩১ মিনিটে শুরু হচ্ছে কৌশিকী অমাবস্যা।
  • অমাবস্যার তিথি শেষ হবে ১৫ সেপ্টেম্বরে। 

প্রাচীনকালে- যখন সমস্ত দেব-দেবী (দেবতা) এবং মানুষ অসুর-শুম্ভ-নিশুম্ভের অত্যাচারে সম্পূর্ণভাবে বিপর্যস্ত হয়েছিল, তখন তারা তাদের সুরক্ষার জন্য মহামায়া মা দুর্গার কাছে প্রার্থনা করেছিলেন। মা দুর্গা দেবতাদের প্রার্থনায় সন্তুষ্ট হয়েছিলেন এবং তিনি তাঁর ঐশ্বরিক দেহের কোশ (কোষ) থেকে একটি অবতার প্রবর্তন করেছিলেন, যা দেবী কৌশিকী নামে পরিচিত।

এই শুভক্ষণে দেবী কৌশিকী (Maa Koushiki) অবতার গ্রহন করেন এবং শুম্ভ-নিশুম্ভ চাঁদ-মুন্ডের মতো নিষ্ঠুর অসুরদের বধ করেন এবং সকলের জীবনে শান্তি ও ধার্মিকতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। মা কৌশিকীর অবতারে পৃথিবী অজ্ঞানতার অন্ধকার থেকে মুক্ত হয়ে জ্ঞানের দিব্য আলোয় আলোকিত হল। আধ্যাত্মিক (Spirituality) স্বাধীনতা এবং আনন্দ উদযাপনের জন্য, লোকেরা প্রদীপ জ্বালিয়েছিল (প্রদীপ), তাই এই দিনটিকে আলোক অমাবস্যাও বলা হয়। 

মা কৌশিকীর স্বরূপ (ব্যক্তিত্ব) খুব সুন্দর এবং বন্ধুত্বপূর্ণ। তার গায়ের রং গভীর নীলাভ আকাশ এবং সে একটি ছোট্ট মেয়ের রূপ যে তার হাতে বীণা নামক বাদ্যযন্ত্রটি ধরে আছে। রাক্ষস-শুম্ভ-নিশুম্ভ বধের পর, পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য, কৌশিকী মা মাধ্যম হিসাবে এটিকে বেছে নিয়েছিলেন। মা দুর্গা (Maa Durga) তার জন্য আকাশের সপ্তম স্তরে একটি সুন্দর দুর্গ তৈরি করেছিলেন যা তারার মতো উজ্জ্বল, যেখানে তিনি ক্রমাগত বীণা অনুশীলন করেন।

সাধকের জীবনে কৌশিকী অমাবস্যা উৎসবের মতো এবং মাতৃ সাধনা সিদ্ধি অনুশীলনের একটি মহান দিন। সমস্ত সাধক সারা বছর এই দিনটির জন্য খুব অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন কারণ মা কৌশিকির দৈব কৃপায় যদি সাধক গুরুর দেওয়া দীক্ষা মন্ত্র জপ অভ্যাস করেন, তাহলে এর আধ্যাত্মিক ফল (ফল) দশগুণ বেশি হয়।

দিন. গুরু প্রদত্ত দীক্ষা মন্ত্র ও সাধনার মাধ্যমে সাধক ব্রহ্মময়ী (Bamakhyapa) মায়ের উপাসনা করেন এবং ব্রহ্ম জ্ঞানের আশীর্বাদ পেতে প্রার্থনা করেন। কৌশিকী অমাবস্যার একদিন আগে “অঘোর চতুর্দশী” (Aghar Chaturdoshi) নামে পরিচিত আরও একটি শুভ দিন রয়েছে। ‘ঘর’ শব্দের আভিধানিক অর্থ হল অন্ধকার এবং ‘অঘোর’ অর্থ অন্ধকার থেকে আলোর দিকে। তাই, ঐশ্বরিক আধ্যাত্মিক জ্ঞানের আলো অর্জনের জন্য, সমস্ত সাধক দেবী কৌশিকির কাছে প্রার্থনা করেন যা তাদের মহা-সিদ্ধির পথে নিয়ে যায়।

কৌশিকী শব্দের (Kaushiki Amavasya) আভিধানিক অর্থ, আদ্যাশক্তির রূপ বিশেষ। পুরাণ মতে, কৌশিকী রূপেই শুম্ভ নিশুম্ভকে বধ করেছিলেন আদ্যাশক্তি। শ্রীশ্রীচণ্ডীতে বর্ণিত মহা সরস্বতী দেবীর কাহিনীতে বলা আছে পুরাকালে একবার শুম্ভ ও নিশুম্ভ কঠিন সাধনা করে ব্রহ্মাকে তুষ্ট করলে প্রজাপতি ব্রহ্মা তাঁদের বর দেন, কোনও পুরুষ তাঁদের বধ করতে পারবেন না৷ শুধু কোনও অ-যোনি সম্ভূত নারী তাঁদের বধ করতে পারবেন। অর্থাৎ এমন এক নারী, যিনি মাতৃগর্ভ থেকে জন্ম নেননি, তাঁর হাতেই এই দুই অসুর ভাই-এর মৃত্যু হবে। (Religion)

সতী যখন দক্ষ যজ্ঞ স্থলে দেহত্যাগ করেছিলেন, তাই কালিকা-জন্মে (Maa Kali) তাঁর রং ছিল কালো মেঘের মতো। তাই শিব (Siva) তাঁকে কালিকা (Kali) বলে ডাকতেন।  এবার শুম্ভ-নিশুম্ভর হাত থেকে রক্ষা করতে শিব (Sivas) যখন সকলের সামনেই কালিকাকে ডেকে ওঠেন, তখন গোঁসা হয় তাঁর। কেন সকলের সামনে কালিকা বলে ডাকলেন মহাদেব? মানস সরোবরের ধারে কঠিন তপস্যা করলেন। তপস্যার শেষে তাঁর গায়ের রঙ হল পূর্ণিমার চাঁদের মতো। আর ওই কালো কোশিকাগুলি থেকে এক অপূর্ব সুন্দর কৃষ্ণবর্ণ দেবীর সৃষ্টি হয়। তিনিই দেবী কৌশিকী। সেই  দেবী কৌশিকীই এই অমাবস্যা (Koushiki Amavasya) তিথিতে শুম্ভ ও নিশুম্ভকে বধ করেন। তাই এই অমাবস্যার নাম কৌশিকী অমাবস্যা। 

এই তিথিতে বৌদ্ধ ও হিন্দু দুই সাধনাতেই বিশেষ মাহাত্ম্য আছে। তন্ত্র মতে এই রাতকে ‘তারা রাত্রি’ও বলা হয়৷ এক বিশেষ মুহূর্তে স্বর্গ ও নরক দুইয়ের দরজা মুহূর্তের জন্য খোলে ও সাধক নিজের ইচ্ছা মতো ধনাত্মক অথবা ঋণাত্মক শক্তি সাধনার মধ্যে আত্মস্থ করেন ও সিদ্ধি লাভ করেন৷ হিন্দু তন্ত্রমতে, এই তিথিতে কঠোর তপস্যায় আশাতীত ফল মেলে। সাধক কুলকুণ্ডলিনী চক্রকে জয় করতে পারে।

শাক্ত বাঙালিদের কাছে এই অমাবস্যার (Koushiki Amavasya 2023)) গুরুত্ব যে কত বড়, তা তারাপীঠে না গেলে বিশ্বাস হবে না। সামনেই রয়েছে কৌশিকী অমাবস্যা। আর সেই কারণেই বর্তমানে তারাপীঠে ভিড় জমিয়েছেন বাঙালি-অবাঙালিরা। সারা বিশ্ব থেকেই লক্ষ লক্ষ মানুষ এই ময় বীরভূমের জনপ্রিয় ও জাগ্রত দেবীর কাছে নিজের ইচ্ছে ও মঙ্গল কামনা প্রার্থনা করেন।   পঞ্চাঙ্গ মতে, এবছর কৌশিকী অমাবস্যা পালিত হবে আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর। শেষ হবে ১৫ সেপ্টেম্বর অমাবস্যায়। হিন্দুশাস্ত্রেই শুধু নয়, বৌদ্ধশাস্ত্রেও (Buddha) এই অমাবস্যার গুরুত্ব রয়েছে।

এদিন দেবী কালীর তথা তারা মায়ের বিশেষ পুজো করা হয়ে থাকে। অনেকেই বাড়িতে কালীপুজো (kali Puja) করে থাকেন। সারাদিন-রাত একটা ঘিয়ের প্রদীপ ঠাকুরের সামনে জ্বালিয়ে রাখার নিয়ম। এই প্রদীপ যেন কোনওভাবেই নিভে না যায়। কালীপুজোয় কোনও খুঁত থাকতে নেই। তবে এই পুজোর আয়োজন খুব সাধারণ। নৈবেদ্য হিসেবে আতপ চাল, নারকেল, ১০৮টি জবা ফুল, ঘিয়ের প্রদীপ ও ঘি বনিবেদন করা যায়। ভাদ্রমাসের এই অমাবস্যায় সকল ভক্তের কাছেই গুরুত্বপূর্ণ। তন্ত্র-মন্ত্র সাধনা যাঁরা করেন, তাঁদের কাছে এক পবিত্র দিন।

(Collected)

administrator

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *