আজ, বুধবার জন্মাষ্টমী৷ দেশ জুড়ে ভক্তরা পালন করবেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মতিথি৷ এই তিথি তথা পার্বণে পালনীয় কিছু রীতি নীতি আছে৷ মনে করা হয়, এই নিয়ম পালন করলে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সন্তুষ্ট হয়ে আশীর্বাদ করেন৷ জন্মাষ্টমী পালনের জন্য অনেকে মন্দিরে যান৷ অনেক ভক্ত আবার বাড়িতেই আয়োজন করেন পুজো ও উৎসবের৷ দুধ, ঘি, জল উৎসর্গ করে কৃষ্ণ অভিষেকের পর্ব পালন করা হয়৷ জন্মাষ্টমী তিথিতে উপবাস ব্রত পালন করেন ভক্তরা৷ প্রচলিত বিশ্বাস, এই উপবাসে কোনও দানাশস্য গ্রহণ করা বিধেয় নয়৷ তামসিক আহার বর্জন করে সাত্তিক খাবার তথা ফলাহার গ্রহণ করা যায়৷ অনেক মন্দিরে বা ভক্তদের বাড়িতে দোলনা ঝোলানো হয় গাছে৷ সেই দোলনায় দোদুল্যমান থাকেন স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণের বালগোপাল বা নাড়ুগোপাল বিগ্রহ৷ রোহিণী নক্ষত্র সমাপনে এবং অষ্টমী তিথি শেষ হলে উপবাস ভঙ্গ করা হয়৷ চরণামৃত এবং প্রসাদ খেয়ে উপবাস ভঙ্গ করা হয়৷ পুজোর আয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ হল পায়েস বা ক্ষীর৷ বাংলার ঘরে ঘরে জন্মাষ্টমী উপলক্ষে তৈরি হয় তালের বড়া৷
জন্মাষ্টমীর পুজোয় শশার মাহাত্ম্য
কৃষ জন্মাষ্টমী তিথিতে গোপালকে অবশ্যই শশা নিবেদন করবেন। এই তিথিতে এমন শশা আনা উচিত যাতে ডাঁটি ও পাতা থাকে। এমন শশায় প্রসন্ন হন কৃষ্ণ। এর প্রভাবে ভক্তদের সমস্ত দুঃখ-কষ্ট দূর হয়।
শশা ছাড়া জন্মাষ্টমীর পুজো অসম্পূর্ণ (Janmashtami 2023)
সন্তান প্রসবের সময় গর্ভনাল ছেদ করা হয়। তার পর শিশু ভূমিষ্ঠ হয়। জন্মাষ্টমী পুজোর সময় শশাকে প্রতীকী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মাঝরাতে জন্মাষ্টমীর পুজোয় কৃষ্ণ জন্মের সময়ে শশার ডাঁটি কেটে পৃথক করা হয়। এর পরই কৃষ্ণ জন্মের উৎসবে মেতে ওঠেন ভক্তরা।
নাল ছেদন কী?
কৃষ্ণ (Sri Krishna) জন্মাষ্টমীর দিনে শশা কাটার প্রক্রিয়াকে নাল ছেদন বলা হয়। জন্মাষ্টমীর পুজোর আগে শশাটিকে কৃষ্ণের পাশে রেখে দিন। রাত বারোটা বাজলে একটা কয়েন দিয়ে শশা ও চার ডাঁটি কেটে দিন। এই প্রক্রিয়াকে দেবকীর গর্ভ থেকে কৃষ্ণের জন্মের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী নববিবাহিতা বা গর্ভবতী মহিলাদের এই শশার প্রসাদ খাওয়ালে কৃষ্ণের মতো পুত্র লাভ করা যায়।
জন্মাষ্টমীর পুজোয় মাথায় রাখুন এই বিষয়গুলি (Janmashtami)
উপবাসের আগের রাতে হাল্কা ভোজন গ্রহণ ও ব্রহ্মচর্য পালন করুন।
উপবাসের দিন সকালে স্নান করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে নিন।
এর পর সূর্য, সোম, যম, কাল, সন্ধি, ভূত, বায়ু, দিকপতি, ভূমি, আকাশ, খেচর, অমর ও ব্রহ্মাদিকে নমস্কার করে পূর্ব বা উত্তর দিকে মুখ করে বসে পড়ুন।
এর পর জল, ফল, কুশ ও সুগন্ধ দিয়ে সংকল্প করুন-
মমখিলপাপপ্রশমনপূর্বক সর্বাভীষ্ট সিদ্ধয়ে
শ্রীকৃষ্ণ জন্মাষ্টমী ব্রতমহং করিষ্যে।।
মধ্যাহ্নে কালো তিলের জলে স্নান করুন ও দেবকীর জন্য সূতিকাগৃহ নিশ্চিত করুন।
তার পর কৃষ্ণের মূর্তি বা ছবি স্থাপন করুন।
এমন ছবি বাছাই করবেন, যেখানে দেবকী কৃষ্ণকে স্তনপান করাচ্ছেন এবং লক্ষ্মী তাঁর চরণ স্পর্শ করে রয়েছেন।
এর পর নিয়ম মেনে পুজো করুন। পুজোর সময়ে দেবকী, বাসুদেব, নন্দ, যশোদা ও লক্ষ্মীর নাম জপ করে যান। তার পর নিম্ন মন্ত্র জপ করে
পুষ্পাঞ্জলী অর্পণ করুন-–
প্রণমে দেব জননী ত্বয়া জাতস্তু বামনঃ।
বসুদেবাত তথা কষ্ণো নমস্তুভ্যং নমো নমঃ।
সুপুত্রার্ঘ্যং প্রদত্তং মেং গৃহাণেমং নমোস্তুতে।
শেষে প্রসাদ বিতরণ ও ভজন-কীর্তন করে রাত্রি জাগরণ করুন।
Courtesy-Astro Sri Paritosh