মোল্লা জসিমউদ্দিন:
স্বাস্থ্য সাথীর কার্ডে বিরল রোগের অপারেশন হলো বর্ধমান শহরে অন্নপূর্ণা নামে এক বেসরকারি নার্সিংহোমে।
বিশ্বের ০.১৩% থেকে ০.৩% ব্যক্তি এই রোগের আক্রান্ত হন।এই রোগটির নাম এসএমএ সিন্ড্রোম SMA Syndrome)। এই রোগের রোগীদের খাবার খেলেই শতকরা ৯০ ভাগ বমি হয়ে যায়, বাকিটা পাকস্থলীতে যায় খাবার পাচনের জন্য। মূলত খাদ্যনালীর বিরল রোগ এটি। একটি মানুষের গড়ে খাদ্যনালীর ৪৫ ডিগ্রি থেকে ৬০ ডিগ্রির মধ্যে থাকে। এই খাদ্যনালীর ডিগ্রির হেরফের হলে তখনই এই সমস্যা দেখা যায়। ক্ষুদ্রান্ত্র – বৃহদান্ত্র সমস্যায় মূল সমস্যা হিসাবে উঠে আসে।
ঠিক এইরকম পরিস্থিতিতে পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়া শহর সংলগ্ন শ্রীখন্ডের চন্দ্রকোঠা গ্রামের ফতেমা বিবির মেয়ে রিয়া খাতুন এই রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসার জন্য আসে বর্ধমান শহরের নবাবহাট এলাকার অন্নপূর্ণা নামে এক বেসরকারি নার্সিংহোমে।
গরিব এই পরিবারের চিকিৎসার জন্য সম্বল মানবিক মুখ্যমন্ত্রীর ‘স্বাস্থ্যসাথী’ কার্ড (Chief Minister of West Bengal)। যেখানে সরকারি হাসপাতালেই অনেক সময় রোগীর চিকিৎসায় হয়রানির অভিযোগ তোলেন রোগীর আত্মীয়রা। সেখানে এক বেসরকারি নার্সিংহোম এগিয়ে এলো স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের (Swastha Sathi) সার্থক রূপায়ন করতে। এই বিরল রোগের অপারেশন করতে নার্সিংহোম কিংবা বেসরকারি হাসপাতালে লক্ষাধিক টাকার খরচ ঘটে। সেখানে বিনামূল্যে অপারেশন এবং সুচিকিৎসার যাবতীয় সুবিধা দিল এই নার্সিংহোম।
গত ২২ অক্টোবর বিশিষ্ট শল্যচিকিৎসক প্রণয় ঘোষের নেতৃত্বে এক মেডিকেল টিম টানা তিন ঘন্টা অপারেশন করে থাকেন। খাদ্যনালী গুলি চাপ পেয়ে একপ্রকার পেচিয়ে গিয়েছিল। সেখানে সেলাই না করে ‘স্টেপলার’ পদ্ধতিতে এই বিরল রোগ থেকে মুক্তি দিল এই নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ। ১১ বছরের রিয়া খাতুনের ওজন মাত্র ১৬ কেজি। খাবার ঠিকঠাক হজম না হওয়ার জন্য এই অল্প ওজন বয়স অনুপাতে দেখা যায় এই ধরনের রোগীদের। অপারেশন পরবর্তীতে নার্সিংহোমে রয়েছে রিয়ার পরিবার।
ডক্টর প্রণয় ঘোষ জানিয়েছেন – ” আমরা এখনও কয়েকদিন পর্যবেক্ষণে রাখছি, খাদ্যনালীর মূল সমস্যা মিটে গেছে অনেকটাই”। রিয়ার মা ফতেমা বিবি বলেন – ” আমরা অনেক জায়গায় গিয়েছি রোগের চিকিৎসা করাতে,বেশিরভাগ জায়গা হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। তবে প্রণয় ডাক্তারবাবু আমাদের কাছে দেবদূতদের মতো”।
কাটোয়া বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টপাধ্যায় (MLA Rabindranath Chatterjee) জানান -” আমাদের মুখ্যমন্ত্রী কতটা মানবিক তা স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে অসংখ্য মানুষ উপকার পাচ্ছেন। শ্রীখন্ডের রিয়ার পরিবার তারই নবতম সংযোজন”।