পরিচালন সমিতির সচিবের “দাদাগারিতে” অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হল বর্ধমানের সেন্ট পলস স্কুলের (St.Pauls Academy) স্বাভাবিক পঠন পাঠনে। সচিব বিজয় গুপ্ত নোট লিখে স্কুলের শিক্ষক-অশিক্ষক কর্মীদের বেতন দিতে অস্বীকার করায় এই অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে।
বেতন না পেয়ে ক্ষোভে ফুঁসছেন স্কুল সব বাসের ড্রাইভার-হেলপার ও অশিক্ষক মহিলা কর্মীরা। স্কুল সূত্রে খবর, গত ২৮ এপ্রিল বেতনের রসিদ ও চেকে সই করে চেয়ারম্যানের কার্যালয় থেকে সচিব বিজয় গুপ্তের কাছে পাঠান হয় সইয়ের জন্য। চেয়ারম্যান ও সচিবের যৌথ সইয়ে আর্থিক লেনদেন হয়। কিন্তু এখানে চেয়ারম্যান সই করলেও বিজয় গুপ্ত সই করতে অসম্মত হন। আর এতেই আটকে গিয়েছে বেতন।
আজ রবিবার ও আগামীকাল মে দিবসের (May Day) ছুটি। মঙ্গলবার থেকে স্কুলের স্বাভাবিক ক্লাস ফের শুরু হওয়ার কথা। চলবে গরমের ছুটির আগে পর্যন্ত। কিন্তু বেতন আটকে দেওয়ায় এবার কাজ করতেই বেঁকে বসেছেন বাস ড্রাইভার ও হেল্পারেরা। তাঁরা মঙ্গলবার স্কুল বাস নিয়ে রাস্তায় নামতে রাজী নন বলেই খবর মিলেছে। স্কুল শিক্ষকদেরও বেতন আটকে থাকলেও তারা এই নিয়ে কোনও বক্তব্য এখনও পেশ করেননি।
আর এতেই প্রায় হাজার চারেক ছাত্রছাত্রী যাঁরা বর্ধমান শহর তো বটেই এমনকী মেমারি (Memari), রসুলপুর, জামালপুর, বৈঁচি থেকে স্কুল বাসে একটু ভাল পড়াশোনার জন্য শহরের এই সেন্ট পলস স্কুলে আসে, তাদের স্কুলে আসাটাই অনিশ্চয়তার মুখে। এই নিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ কোনও বক্তব্য জানায়নি। কর্মীদের মতে, বেতন না পেলে কাজ করব কেন। রাস্তায় বাস নামাব না। বিজয়ের দাদাগিরি আর সহ্য করা হবে না।
বিজয়ের (Bardhaman) ঘনিষ্ঠ মহলের থেকে দাবি করা হয়েছে, সব কর্মচারীদের নয় তিনি জনা তিরিশেক শিক্ষক, অশিক্ষক কর্মীর বেতন আটকাতে বলেছেন। বাকীদের ক্ষেত্রে তাঁর আপত্তি নেই। এই আটকে থাকার তালিকায় রয়েছেন খোদ স্কুলের প্রিন্সিপ্যালও। বিজয়ের অভিযোগ, এই প্রিন্সিপ্যাল (Principal), শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মচারীদের তাঁর কাছে নিশর্তে ক্ষমা চাইতে হবে। তাঁরা ক্ষমা না চাইলে বেতন হবে না। কিন্তু একাংশকে বাদ দিয়ে সব কর্মচারীর বেতন করানো সম্ভব নয় বলেই, সবারই বেতন আটকে গিয়েছে।
শুক্রবারই বিজয়ের বিরুদ্ধে রীতা মজুমদার নামে এক অসিক্ষক মহিলা কর্মচারী শ্লীলতাহানি, হুমকি ও মারধরের মামলা রুজু করেছে। পাল্টা বিজয় ঘনিষ্ঠ প্রাক্তন টিচার্স ইনচার্জ তন্নু চৌধুরী স্কুলের চেয়ারম্যান, প্রিন্সিপ্যাল ও শিক্ষক-অশিক্ষক কর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। অবিভাবকদের বিক্ষোভের মাছে তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হলেও তাঁর দাবি, এই অভিযুক্তেরা তাঁকে মারধর করে সাদা কাগজে সই করিয়ে নিয়েছেন।
বিজয় ঘনিষ্ঠ তন্নুকে নিয়ে কয়েকদিন ধরেই গোলমাল চলছে। বিজয়ের ঘনিষ্ঠ টিচার্স কো-অর্ডিনেটর তন্নু চৌধুরীর আচরণ, ব্যবহার ও কিছু অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগ নিয়ে মর্নিং বিভাগের সব শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীরা জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারের দ্বারস্থ হয়। এমনকী মর্নিং বিভাগের ছাত্রছাত্রীদের অবিভাবকেরা স্কুলে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। বিক্ষোভের চাপে তন্নু পদত্যাগ করেন। কিন্তু তাঁর পদত্যাগ ঠেকাতে রাস্তায় নামেন বিজয়। ওই আন্দোলন ও গোলমালে যুক্ত থাকার অভিযোগ তুলে এই কর্মচারীদের বেতনের রসিদে সই করতে রাজী হননি বিজয়।
একদিকে স্কুলের সব শিক্ষক-অশিক্ষক কর্মীরা। অন্যদিকে বিজয় ও তন্নু। তন্নুর স্কুলে আসা বন্ধ হওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছেন বিজয় বলে অভিযোগ। তার প্রতিশোধ তুলে চাপ সৃষ্টি করতেই স্কুলের চেয়ারম্যন সহ শিক্ষক-অশিক্ষক কর্মীদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা ঠুঁকে চলেছেন বিজয়। তারই নবতম সংযোজন এই বেতন বন্ধ রেখে চাপ সৃষ্টি। এই নিয়ে অবশ্য বিজয় বা তন্নুর কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।