www.machinnamasta.in

ওঁ শ্রীং হ্রীং ক্লী গং গণপতয়ে বর বরদ সর্বজনস্ময়ী বশমানয় ঠঃ ঠঃ

May 19, 2024 3:40 am

২৮শে চৈত্র ১৪২৯সন বুধবার,ইং ১২ই এপ্রিল ২০২৩সাল। অষ্টমী লাগছে রাত্রি ঘ ২/৩১মিনিটে। ২৯শে চৈত্র ১৪২৯সন বৃহস্পতিবার, ইং ১৩ই এপ্রিল ২০২৩সাল, অষ্টমী ছাড়ছে রাত্রি ঘ ১২/১১মিনিটে। দীপ জ্বালানোর সময় বৈকাল ৫/৩০মিনিট থেকে সন্ধ্যা ৬/৫০মিনিট পর্যন্ত

নীলষষ্ঠী ব্রতের সময় বা কাল চৈত্র মাসের নীলষষ্ঠীর দিন মেয়েরা এই ব্রত করবে।

নীলষষ্ঠী ব্রতের কি কি দ্রব্য লাগে ও তার বিধান বেলপাতা, ডাব, বেল, শশা, আতপচাল আর ফল। নীলষষ্ঠীর দিন উপোস করে থেকে সন্ধ্যের সময় শিবের মাথায় ডাবের জল ঢেলে শিবকে প্রণাম করে তারপর জল খেতে হয়। এই পুজোয় গঙ্গা মাটি বা শুদ্ধ মাটি, বেল পাতা, গঙ্গাজল, দুধ, দই, ঘি, মধু, কলা, বেল, বেলের কাঁটা, ধুতুরা, আকন্দ, অপরাজিতা ইত্যাদি মহাদেবের পছন্দের যে কোনও ফুল ব্যবহার করা হয়।

নীল ষষ্ঠীতে কেন শিবের পুজো হয় (Lord Siv)

নীল ষষ্ঠীর পরের দিন চৈত্র সংক্রান্তি (Chaitra Sankranti)। আর এর পরের দিন নতুন বাংলা বছর। গ্রাম বাংলায় চৈত্র সংক্রান্তিতে চরক পুজো করা হয়। চরক উপলক্ষ্যে গাজনের মেলা বসে গ্রাম বাংলার অনেক স্থানে। পুরাণ অনুসারে নীল ষষ্ঠীর এই বিশেষ দিনেই মহাদেবের সঙ্গে নীল চণ্ডিকা বা নীলাবতীর বিয়ে হয়েছিল। মহাদেব নিজে হলেন নীলকণ্ঠ (Nilkantha)। আর তাঁর সঙ্গে এদিন নীল চণ্ডিকা বা নীলাবতীর বিবাহ হয়েছিল বলেই এই দিনটি নীল ষষ্ঠী নামে পরিচিত। এদিনের পুজোকে নীল পুজো বলা হয়ে থাকে।

দক্ষযজ্ঞে স্বামীর অপমান সহ্য করতে না পেরে দেহত্যাগ করেছিলেন শিবের পত্নী সতী। তারপর নীলধ্বজ রাজার ঘরে নতুন করে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। নীলাবতী নামের এই কন্যার শিবের বিয়ে দেন রাজা নীলধ্বজ। সেই কারণে নীল ষষ্ঠী, চৈত্র সংক্রান্তি ও গাজন শিব দুর্গার বিয়ের উত্‍সব হিসেবেও পালিত হয় অনেক জায়গায়। গাজনের সময় শিব ও পার্বতী সেজে অনেকে গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে ঘুরে ভিক্ষা সংগ্রহ করেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন প্রাচীন কাল থেকেই এদিন মহাদেব ও নীলচণ্ডিকার বিবাহের দিন হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। তবে নীলষষ্ঠীতে সন্তানের মঙ্গল কামনা করে উপবাস রাখার প্রথা অনেক পরে শুরু হয়। এক ব্রাহ্মণ ও ব্রাহ্মণীর বারবার সন্তান জন্মেই মারা যাচ্ছিল। মনের দুঃখে তাঁরা সংসার ত্যাগ করে তীর্থ ভ্রমণে বেরিয়ে পড়েন। বারাণসীতে আসার পর সেখানে এক বৃদ্ধা এসে ওই ব্রাহ্মণীকে চৈত্র সংক্রান্তির আগের দিন নীল পুজো করার পরামর্শ দেন। সন্তান লাভ করতে সারাদিন নির্জলা উপবাস থেকে সন্ধেয় শিবের ঘরে বাতি জ্বালিয়ে জল খাওয়ার উপদেশ দেন তিনি। এভাবেই শুরু হয় নীল ষষ্ঠীতে মায়েদের সন্তানের মঙ্গল কামনায় ব্রত রাখার প্রথা।

ব্রতের নিয়ম

নীলষষ্ঠীর দিনে সারাদিন উপবাস করে, সন্ধ্যাবেলা শিবের মাথায় জল ঢালতে হবে। এর পর শিবের মাথায় ফুল ও একটি ফল ছুঁয়ে রাখুন। অপরাজিতার মালা পরিয়ে সন্তানের নামে একটি মোমবাতি জ্বালিয়ে প্রার্থনা করুন।

উপবাস ভাঙার পর ফল, সাবু খাওয়া উচিত। সন্ধৈব লবণ দেওয়া খাবার খাওয়া যায়। 

পুজোর পর এই মন্ত্র পাঠ করুন

ও নমো নমঃ তৎসদস্য, চৈত্র মাসে শুক্লপক্ষে প্রতীপদ্যান্তিথৌ (নিজের গোত্র বলুন) গোত্রঃ শ্রী/শ্রীমতি (নিজের নাম বলুন) শিব শক্তি ষষ্ঠী প্রীতিকামঃ দেবরস্যোক্ত নীলষষ্ঠী ব্রতমহং করিশ্যে।।

ওম য়া গুঙ্গূরশয্যা সিনীবালী যা রাকা যা সরস্বতী।

ইন্দ্রাণীমহ্ব উতয়ে বরুণানীং স্বস্তয়ে।।

নীলষষ্ঠীব্রতং হ্যেতৎ কৃরিশ্যেইহং মহাফলম।

নির্বিঘ্নে মে চাত্র ত্বৎ প্রসাদাজগৎপতে।।

প্রতিপদ্যাং নিরাহারো ভূত্বা চৈবাপরেইহনি।

ভোক্ষ্যেইহং ভুক্তিমুক্ত্যর্থং শরণং মে ভবেশ্বর।।

জলাভিষেক মন্ত্র

ওম নমঃ শিবায়

পুষ্পাঞ্জলী মন্ত্র (Nil Sasthi Mantra)

১. ওম নমঃ শিবায়

এষ সচন্দন পুষ্পবিল্বপত্রাঞ্জলি নমো নীলকণ্ঠায় নমঃ।

২. ওম এষ সচন্দন পুষ্পবিল্বপত্রাঞ্জলি নমো নীলচণ্ডীকায় নমঃ।

৩. ওম এষ সচন্দন পুষ্পবিল্বপত্রাঞ্জলি নমো ষষ্ঠীদেবীয় নমঃ।

প্রণাম মন্ত্র

ওম নমঃ শিবায় শান্তায় পঞ্চবক্ত্রায় নীলকণ্ঠায় শূলিনে।

নন্দি ভৃঙ্গি মহাব্যালগণ যুক্তায় শম্ভবো।।

শিবায়ৈ হরকান্তায়ৈ প্রকৃত্যৈ সৃষ্টিহেতবে।

নমস্তে ব্রহ্মচারিণ্যৈ নীলচণ্ডিত্র্যৈ নমো নমঃ।।

সংসারভয় সন্তাপাৎ পাহি মাং সিংহবাহিনি।

রাজ্য সৌভাগ্য সম্পত্তিং দেহি মামা।।

জয় দেবী জগন্মাত জগতানন্দকারী

প্রসীদ মম কল্যাণী নমস্তে ষষ্ঠী দেবীতে।।

নীলষষ্ঠীর মাহাত্ম্য

এই উপবাস করলে নীলকণ্ঠ অর্থাৎ শিব, দেবী নীলচণ্ডিকা এবং মা ষষ্ঠীর কৃপা লাভ হয়। এর প্রভাবে সন্তানের কল্যাণ হয়। এমনকি সন্তান লাভের সমস্ত বাধা দূর হয়।

নীলষষ্ঠী ব্রতকথা  এক বামুন আর বামনীর কোনো ছেলেপুলে হয়েই মারা যেত কেউ বাঁচতো না। তারা দু’জনে পরামর্শ করে একদিন তীর্থে যাবার জন্য বেরিয়ে পড়ল।

ক্রমে তারা যখন সরযু নদীর তীরে এসে পৌঁছল তখন বামুন বলল, “চল এই জলে ডুবেই আমাদের জীবন শেষ করি, বংশ রক্ষার জন্যে যখন একটি ছেলেও রইল না, তখন বেঁচে থেকে আর ফল কী?” এই কথা বলে তারা নদীতে নামতে লাগল।

এমন সময় মা ষষ্ঠী এক বুড়ীর রূপ ধরে এসে বললেন, “ওগো বাছারা, তোমরা আর বেশী দূরে যেও না, আরও দূরে গেলে ডুবে মারা যাবে।” বামুন আর বামনী তখন তাঁকে নিজেদের দুঃখের কথা সব বলল।

মা ষষ্ঠী সব শুনে বললেন, “দোষতো তোমাদেরই বাছা, সদ্যোজাত শিশুর কান্না শুনে অহঙ্কারে মত্ত হয়ে তোমরা সব সময় আমায় বলতে, ‘বাবা! আপদ গেলে বাঁচি।’

কখনো বলেছ কি যে, ‘আহা, ষষ্ঠীর দাস বেঁচে থাক!’ সেই পাপেই তোমাদের এই দুর্দশা। “বামনী তখন বুড়ীর পায়ে ধরে বলল, “কে তুমি বল মা।” বুড়ী বললেন, “আমিই মা ষষ্ঠী।

শোন, এই চৈত্র মাসে সন্ন্যাস করবি আর শিবপুজো করবি। সংক্রান্তির আগের দিন উপোস করে থেকে নীলাবতীর পুজো করে নীলকণ্ঠ শিবেরঘরে বাতি জ্বেলে দিবি তারপর আমায় প্রণাম করে জল খাবি। একে বলে নীলষষ্ঠা। দেবী এই কথা বলে অদৃশ্য হয়ে গেলেন।

এর পর বামুন আর বামনী দেশে ফিরে এসে নীলের দিন খুব ভক্তি আর নিষ্ঠার সঙ্গে নীলষষ্ঠী ব্রত পালন করল। এরপর কিছুদিনের ভেতর মা ষষ্ঠীর দয়ায় বামনীর একটি সুন্দর ছেলে হল।

মা ষষ্ঠীর কথামত তার কোন অনিষ্ট হল না। বামনীর ব্রতের মাহাত্ম্য দেখে দেশে দেশে সবাই এই ব্রত পালন করতে আরম্ভ করল।

নীলষষ্ঠী ব্রতের ফল— ছেলে-মেয়ের মায়েরা নীলষষ্ঠী ব্রত করলে তাদের সন্তানদের অমঙ্গল কোনো দিনই হয় না।

administrator

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *