www.machinnamasta.in

ওঁ শ্রীং হ্রীং ক্লী গং গণপতয়ে বর বরদ সর্বজনস্ময়ী বশমানয় ঠঃ ঠঃ

March 19, 2024 9:19 am
ma manasa

দেবী ভাগবত পুরানে (Bhagabat Puran) আবার মনসাকে কশ্যপ মুনির কন্যা বলা হয়েছে। মহাভারত বলে মনসা দেবী বিবাহিতা। তাঁর পতির নাম জগৎকারু। তাঁদের একটি পুত্র সন্তান হয়, তাঁর নাম আস্তিক। শিব (Siv) মনসাকে কৈলাসে নিয়ে এলে দেবী পার্বতী রাগে তাঁর এক চোখ নষ্ট করে দেন৷ সেই থেকে মনসা দেবী কানা৷

রহ্মবৈবর্ত্ত পুরাণ, দেবী ভাগবত পুরানে মনসা দেবীর লীলা ও ঘটনার কথা লেখা রয়েছে। মহাভারতেও কিছুটা অংশে রয়েছে মনসা দেবীর প্রসঙ্গ৷ মঙ্গল কাব্য মতে দেবী মনসা হলেন শিবের মানস কন্যা। তিনি আবার নাগরাজ বাসুকীর ভগিনী। পদ্ম পাতায় দেবীর জন্ম বলে তাঁর আর এক নাম পদ্মাবতী।

দেবী ভাগবত পুরানে (Bhagabat Puran) আবার মনসাকে কশ্যপ মুনির কন্যা বলা হয়েছে। মহাভারত বলে মনসা দেবী বিবাহিতা। তাঁর পতির নাম জগৎকারু। তাঁদের একটি পুত্র সন্তান হয়, তাঁর নাম আস্তিক। শিব (Siv) মনসাকে কৈলাসে নিয়ে এলে দেবী পার্বতী রাগে তাঁর এক চোখ নষ্ট করে দেন৷ সেই থেকে মনসা দেবী কানা৷

এই মনসা দেবী (Maa Manasa) আবার সর্পরাজ্যের (Snake) রানি৷  সাপদের দেবী তিনি৷ মনসা কথার উৎপত্তি ‘মানস’ শব্দ থেকে৷ অর্থাৎ তিনি মনের অধিষ্ঠাত্রী দেবী৷ আগামী কাল সেই মনসা দেবীর পুজো৷ নাগকূলকে তুষ্ট রাখতেই প্রাচীনকালে মনসার পুজো করতেন গ্রামগঞ্জের সাধারণ মানুষরা৷

দেবী মনসার মন্ত্র  (Maa Manasa Mantar)maa manasa

দেবীমম্বামহীনাং শশধরবদনাং চারুকান্তিং বদন্যাম্ । হংসারূঢ়মুদারামসুললিতবসনাং সর্বদাং সর্বদৈব ।। স্মেরাস্যাং মণ্ডিতাঙ্গীং কনকমণিগণৈর্মুক্তয়া চ । প্রবালৈর্বন্দেহ হং সাষ্টনাগামুরুকু চগলাং ভোগিনীং কামরূপাম্ ।।

এর অর্থ হল— সর্প দিগের মাতা, চন্দ্র বদনা, সুন্দর কান্তি বিশিষ্টা, বদন্যা, হংস বাহিনী, উদার স্বভাবা, লোহিত বসনা, সর্বদা সর্ব অভিষ্ট প্রদায়িনী, সহাস্য বদনা, কণকমনি মুক্তা প্রবালাদির অলঙ্কার ধারিনী, অষ্ট নাগ পরিবৃতা, উন্নত কুচ যুগল সম্পন্না, সর্পিণী, ইচ্ছা মাত্র রূপধারিনী দেবীকে বন্দনা করি।

মনসার ধ্যান মন্ত্র (Maa Manasa Dhyan Mantra)

এখানে দুটি  মা মনসার ধ্যান মন্ত্র এবং পূজার মন্ত্র দেওয়া হল।

প্রথম ওঁ দেবীমম্বামহীনাং শশধরবদনাং চারুকান্তিং বদান্যাম্। হংসারূঢ়ামুদারামরুণিতবসনাং সৰ্ব্বদাং সৰ্ব্বদৈব ৷৷ স্মেরাস্যাং মণ্ডিতাঙ্গীং কনকমণিগণৈমুক্তয়া চ। প্রবালৈৰ্ব্বন্দেহহং সাষ্টনাগামুরুকুচযুগলাং ভোগিণীং কামরূপাম্‌ ।।

পূজার মন্ত্র।—বাং শ্রীং বিষহর্য্যৈ নমঃ ।

দ্বিতীয় ওঁ শ্বেতচম্পকবর্ণাভাং রত্নভূষণ ভূষিতাম্, বহ্নিশুদ্ধাং শুকাসনাং নাগযজ্ঞোপবীতিনীম্। মহাজ্ঞানযুতাঞ্চৈব প্রবরাং জ্ঞানিনাং সত্যম্।

পূজার মন্ত্র।—ওঁ হ্রীং শ্রীং ক্লীং ঐং মনসাদেব্যৈ স্বাহা।

 

মনসা দেবীর প্রণাম মন্ত্র: (maa Manasa Pronam Mantra)

আস্তীকস্য মুনর্মাতা ভগিনী বাসুকেস্তথা।

জরৎকারু-মুনি-পত্নী মনসা দেবী নমোহস্ত্ততে ।।

 

|| অথ মানসা দেবি দ্বাদশনাম স্তোত্রম্ || (Maa Manasa Stotrom)

 

জরত্কারু জগদ্গৌরি মানসা সিদ্ধয়োগিনী |

বৈষ্ণবি নাগভগিনি শৈবি নাগেশ্বরী তথা || ১ ||

 

জরত্কারূপ্রিয়াঽস্তীকমাতা বিষহরীতি চ |

মহাজ্ঞানয়ুথা চৈব সা দেবি বিশ্বপূজিতা || ২ ||

 

দ্বাদশৈতানি নামানি পূজাকালেতু য়ঃ পঠেত্ |

তস্য় নাগভয়ং নাস্তি তস্য় বংশোত্ভবস্য় চ || ৩ ||

 

ইদং স্তোত্রং পঠিত্বা তু মুচ্য়তে নাত্রসংশয়ঃ |

নাগভীতে চ শয়নে নাগগ্রস্তে চ মংদিরে || ৪ ||

 

নাগক্ষতে নাগদুর্গে নাগবেষ্ঠিতবিগ্রহে |

নিত্য়ং পঠেত্ য়ঃ তং দৃষ্ট্বা নাগবর্গঃ পলায়তে || ৫ ||

 

নাগৌষধং ভূষণঃ কৃত্বা ন ভবেত্ গরুডবাহনাঃ |

নাগাসনো নাগতল্পো মহাসিদ্ধো ভবেন্নরঃ || ৬ ||

 

|| ইতী মানসাদেবী দ্বাদশনাম স্তোত্রং সংপূর্ণম্ ||

মা মনসা ব্রত কথা  (Maa Manasa Brata Katha)

শ্রাবণ ও ভাদ্র মাসে শনি ও মঙ্গলবারে মনসা পুজো করার নিয়ম। একটি মনসা গাছ, নৈবেদ্য ৮টি, কলা আর দুধ। মনসা পুজোয় ধূপ দেওয়া নিষেধ।

মা মনসা ব্রতের ব্রতকথা—এক দেশে এক গরীব ব্রাহ্মণ বাস করত। তার সাতটি মেয়ে হয়েছিল, কিন্তু ছেলে একটিও হয়নি। সে ঠিক সময় মতো ছ’টি মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিল, কিন্তু তার ছোটমেয়ে সরলার বর আর কিছুতেই জুটলো না।

ব্রাহ্মণ চারিদিকে সরলার জন্যে বর খুঁজতে লাগল, শেষে তাদের গ্রাম থেকে কিছু দূরের গ্রামে এক ব্রাহ্মণের খবর পেয়ে সরলার বাবা সেই ব্রাহ্মণের বাড়ি গেল। সেই ব্রাহ্মণের এগারোটি ছেলে ছিল।

সে দশটি ছেলের বিয়ে খুব বড়লোকের বাড়িতে দিয়ে দশটি বৌ এনেছিলো। কিন্তু বড়লোকের মেয়েরা শ্বশুরকে মোটেই যত্ন করত না, সেই জন্যে সে তার ছোটছেলের বিয়ে দিয়ে একটি গরীবের মেয়ে আনবার জন্যে খোঁজাখুঁজি করছিল।

সে সরলার বাবার কাছে সরলার কথা শুনে সরলার সঙ্গেই তার ছোটছেলের বিয়ে দিল। সরলা শ্বশুরবাড়িতে এল, কিন্তু শাশুড়ী আর জায়েরা তাকে দেখে ঘেন্না করতে লাগল। একমাত্র শ্বশুর ছাড়া সরলাকে কেউ ভাল চোখে দেখতে পারতো না।

তার জন্যে সরলার মনে খুবই কষ্ট ছিল। সে ভাবতো যে, গরীবের মেয়েরা বেঁচে থাকে কেন! জন্মাবার সঙ্গে সঙ্গে মরে গেলেই তো আর তাকে এমন কষ্ট সহ্য করতে হয় না। সরলার দিন খুব দুঃখেই কাটতে লাগল। এমনি একদিন, বেশ ঝিরঝিরে জল ঝড় হচ্ছিল।

সরলার জায়েরা অন্য এক জায়গায় দল বেঁধে বসে সেই দিন কী খেলে ভাল লাগবে তাই নিয়ে আলোচনা করছিল। কেউ পোলাওয়ের কথা বললে, কেউ বলল ভূনি খিচুড়ি, আবার কেউ বলল যে, এটা তেলেভাজা খাবারই দিন।

এমন সময় সরলা সেদিকে আসতে অন্য বউয়েরা তাকে বলল, “আচ্ছা ছোটবউ! আজকের দিনে কী খেতে ভাল লাগে বলত?” সরলা তো ছিল গরীবের মেয়ে, সে তার পছন্দ মতো বলল, “মাছের টক আর পান্তা ভাত।”

অন্য বউয়েরা হো হো করে হেসে উঠে তাকে খুব ঠাট্টা করতে লাগল। তার পর একটু বেলা হতে সকলে পুকুরে স্নান করতে গেল, সরলাও গেল তাদের সঙ্গে।

পুকুর ঘাটে সরলা দেখল যে, কতকগুলো ছোট ছোট মাছ কিলবিল করে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সে তার গামছা পেতে মাছগুলোকে ধরে নিল।

তাই দেখে তার জায়েরা আবার খুব ঠাট্টা করে বলল, “ওই দ্যাখো, ছোটবউ মাছের টকের ব্যবস্থা করে ফেলেছে আর পান্তা ভাতও ঘরে আছে, ওর আর কোনো ভাবনাই রইল না।” পুকুর ঘাট থেকে এসে সরলা একটা ছোট হাঁড়ির মধ্যে মাছগুলোকে জিইয়ে রাখল।

কিন্তু কিছুক্ষণ পরে দেখল যে সেগুলো মাছ নয়, সব সাপের বাচ্চা। সরলা কারুকে কিছু না বলে সাপের বাচ্চাগুলোকে দুধ কলা দিয়ে পুষতে লাগল। সাপগুলো ছিল মা মনসার ছেলে তারা একটু বড়ো হতেই মা মনসার কাছে স্বর্গে চলে গেল।

তারা, তাদের মাকে সরলার দুর্দশার কথা সব জানাল। সব শুনে মা মনসার মনে খুব কষ্ট হল। তিনি এক বুড়ী ব্রাহ্মণীর বেশ ধরে সরলাদের বাড়িতে এসে নিজেকে তার মাসী বলে পরিচয় দিয়ে সরলাকে দিন কয়েকের জন্যে নিয়ে যেতে চাইলেন।

শ্বশুরবাড়ির লোকেরা কোনো আপত্তি না করে সরলাকে সেই বুড়ী ব্রাহ্মণীর সঙ্গে পাঠিয়ে দিল। বুড়ী ব্রাহ্মণী তখন সরলাকে নিয়ে এক নির্জন বনের মধ্যে গিয়ে উপস্থিত হলেন।

তিনি সরলাকে বললেন, “মা! তুমি চোখ বুজে থাকো, আমি না বললে চোখ খুলো না।” সরলা তার কথা মত চোখ বুজে রইল। এমনি সময় স্বর্গ থেকে এলো পুষ্পক রথ। মা মনসা সরলাকে সঙ্গে নিয়ে সেই রথে উঠলেন।

অল্পক্ষণের মধ্যে সেই রথ স্বর্গে যা মনসার প্রাসাদে গিয়ে পৌঁছালো। সরলা সেখানে গিয়ে দেখল চারিদিকে সাপ কিলবিল করছে, ছোটাছুটি করছে, কিন্তু কেউ তাকে কামড়াচ্ছে না। মনসা দেবী তখন সরলাকে বললেন, “মা সরলা।

আমি তোমার মাসী নই, আমি মনসা দেবী—তোমার দুঃখ দেখে তোমাকে এখানে এনেছি। তুমি এখানে থাক, আজ থেকে আমার পুজোর যোগাড় কর, আর তোমার ওই ছোট ছোট ভাইয়ের—আমার ছেলেদের একবাটি করে দুধ গরম করে খেতে দিও।

আর একটা কথা জেনে রাখো যে, ওই দক্ষিণ দিকটায় কখনো যেও না।” সরলা মা মনসা সব কথা মেনে নিল। স্বর্গে সরলার দিন বেশ আনন্দে কাটছিলো। হঠাৎ একদিন মা মনসার বারণ দক্ষিণ দিকটা তার দেখবার ইচ্ছে হল।

যে দক্ষিণ দিকে গিয়ে দেখল যে, মা মনসা নাচছেন। নাচ দেখতে দেখতে সরলা ছোট ভাইদের জন্যে দুধ গরম করার কথা একেবারে ভুলে গিয়েছিল, হঠাৎ মনে পড়ায় ছুটে এসে দুধ গরম করে রাখল।

এর কিছু পরেই তার সাপ-ভাইয়েরা দুখ খেতে এল, কিন্তু দুধ তখনও জুড়োয়নি, গরম দুধ খেয়ে তাদের মুখ পুড়ে গেল। তারা সবাই সঙ্গে সঙ্গে গিয়ে মাকে সব জানাল আর বলল যে, ওকে আজ ছোবল মেরে মেরে ফেলবো।

কিন্তু মা মনসা বললেন, “না তা হবে না, বরং ওকে এক গা গয়না পরিয়ে ওর শ্বশুরবাড়িতে রেখো এসো।” শেষে তাই হল, সরলাকে এক গা গয়না পরিয়ে তাকে তার সাপ-ভাইয়েরা তার শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে এল।

সরলার গায়ে এক গা গয়না দেখে তার জায়েরা আবার খুব ঠাট্টা করে বলল, এক গা গয়না পরে কত ঢং দেখ।” সরলা তখন বলল, “ষাট! ষাট! বেঁচে থাক আমার আরোল, পারোল, ঢোঁড়া, বোড়া, কেউটে আমার সাপ ভাইয়েরা, আমার আবার গয়নার অভাব!”

তখনও সরলার সাপ-ভাইয়েরা তাকে পৌঁছে দিয়ে বাড়ি ফেরেনি, আশপাশেই ছিল।

তারা সরলার কথা শুনে স্বর্গে গিয়ে তাদের মাকে সব বলল। সব কথা শুনে মা মনসা আবার সরলাদের বাড়িতে এলেন আর যেখানে যা সাজে সেই ভাবে সরলাকে আরও গয়না পরিয়ে দিয়ে বললেন, “মা! তুমি পৃথিবীতে এখন থেকেই আমার পুজোর প্রচলন কর।

আমি বাস করবো ফণী মনসা গাছে। দশহরা আর নাগ পঞ্চমীর দিন, এই গাছের ডাল এনে বাড়িতে পুজো করো। প্রত্যেক বছর ভাদ্র মাসের শনি ও মঙ্গলবারে আমার পুজো করে পান্তা ভাত ভোগ দিয়ো, তাহলে কখনও সাপের ভয় থাকবে না।” এই কথা বলে মা মনসা অদৃশ্য হলেন। সেই থেকে দেশে দেশে মা মনসার পুজোর প্রচার হল।

ব্রতের ফল—শ্রাবণ ও ভাদ্র মাসে মনসা পুজো করলে বাড়িতে কখনো সাপে কামড়ানোর ভয় থাকে না।

 

(সংগৃহীত)

administrator

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *