শনিবার ভগবান শনিকে উৎসর্গ করা হয়। বৈদিক জ্যোতিষশাস্ত্র অনুসারে, শনির স্বভাব রূঢ়। ভগবান শনির নেতিবাচক প্রভাবের কারণে জাতকদের জীবনে সমস্যা ও ঝামেলা পোহাতে হতে পারে। শনিদেবের কুপ্রভাব দূর করার জন্য মানুষ নানান ব্যবস্থা করে থাকেন। কেউ উপোস রাখেন , কেউ আবার অনেক কিছু দান করে।
বৈদিক জ্যোতিষ (Vedic Astorlogy) অনুযায়ী শনি (Shani Dev) সবচেয়ে অগ্নিময় গ্রহ। সৌরজগতের ধীরতম চলন্ত গ্রহ। কাজেই, ঠান্ডা, অনুর্বর ও শুষ্ক। শনির প্রভাব অন্য কোন গ্রহের চেয়ে তীব্রতর এবং সেইসঙ্গে বেশি সময়সীমার জন্য অনুভূত হয়। কথিত আছে, শুক্রের (Venus) অধীনে যাঁরা জন্মগ্রহণ করেন, তাঁরা শনির অনুকূলে থাকেন।
অন্যদিকে, যারা বুধের অধীনে জন্মান তাঁদের পক্ষে শনি ক্ষতিকারক। জ্যোতিষশাস্ত্রমতে, শনি একটি সাপ, যার মাথাকে রাহু এবং লেজকে কেতু বলা হয়। কেতু কে অগ্রাধিকার দিলে ব্যক্তির উপকার হয়।
কাজেই, শনির (Saturn) অবস্থান যে-কোনও ব্যক্তির সাফল্য ও ব্যর্থতা নির্ধারণ করে। কোনও ব্যক্তি শনির মহাদশায় পড়লে, তাঁর জীবনে নেমে আসে ঘন অন্ধকার। স্বাস্থ্যের সমস্যা যেমন ক্যান্সার, চর্মরোগ, পক্ষাঘাত, বাত, গেঁটেবাত, বদহজম, বাতুলতা, পুরুষত্বহীনতা, হাঁপানি, প্রস্রাব, মানসিক অবসাদ এবং চোখ ও কিডনির সমস্যা দেখা দেয়।
পরিবারের সদস্যদের সমস্যা, গার্হস্থ্য সঙ্কট ও কার্যক্ষেত্রে একাধিক সমস্যা হতে পারে। পাশাপাশি দেখা দেয় আর্থিক সঙ্কট, মানসিক অস্থিরতা। কাজেই শনির মহাদশার প্রভাব কাটিয়ে ওঠার জন্য রয়েছে কয়েকটি কার্যকর প্রতিকার–
১) সোমবার ও শনিবার শিবলিঙ্গে (Siva) জল ঢালুন। শিবের কাছে প্রার্থনা করলে শনি দেবতা সন্তুষ্ট হন। কাজেই সম্ভব হলে প্রতিদিন বা তা নাহলে শনিবারে (Saturday) কাঁচা দুধের সঙ্গে কালো তিল মিশিয়ে শিবলিঙ্গে নিবেদ করুন।
২) মঙ্গলবার ও শনিবার হনুমানের (Hanuman) উপাসনা করলে মন শান্ত থাকে। এছাড়াও, প্রতিদিন হনুমান চালিসা (Hanuman Chalisa) পাঠ করুন।
৩) দরিদ্র মানুষকে কালো মাষকলাইয়ের ডাল দান করুন এবং কিছুটা ডাল নদীতে ভাসিয়ে দিন। শনিবার, চাল এবং কালো মাষকলাই ডালের খিচুড়ি খান এবং ওই দিন আমিষ খাবার এড়িয়ে চলুন।
৪) একটি বাটিতে সর্ষের তেল ঢেলে, সেই তেলে আপনার ছায়া দেখুন এবং শনিবারে তেলটি শনি দেবতাকে নিবেদন করুন। এছাড়া, প্রতি শনিবার রাতে, ঘুমাতে যাওয়ার আগে শরীর ও নখের উপর সর্ষের তেল লাগান।
৫) কালো শনি দেবের পছন্দের রং। তাই শনিবার কালো পোশাক পরুন। (Astrology)
৬) শনি মন্ত্র হল–“নীলাঞ্জন সমভাষাম রবিপুথোরাম যমরাজাম ছায়া মার্থন্দ সম্ভূতম থম নমামি সানাইশ্যারাম”। শনিবার যত বার সম্ভব এই মন্ত্র উচ্চারণ করুন।১০৮ বার পাঠ করতে পারলে তো খুবই ভাল! (Spirituality)
শনির মহামন্ত্রগুলো কী কী?
ওম নীলাঞ্জন সমভাষম রবিপুত্রম যমগরাজম্। ছায়ামর্তান্ড সম্ভূতম্ তম নমামি শনাইশ্চরম্।
শনি দোষ নিবারণ মন্ত্র- ওম ত্র্যম্বকম যজামহে সুগন্ধিম্ পুষ্টিবর্ধনম্। উর্ভারুক মিভ বন্দনান মৃত্যুমুখীয়া মা মৃত্যুঃ।
শনির বৈদিক মন্ত্র- ওঁ শন্নোদেবীর-ভিষ্টয়, আপো ভবন্তু পিত্তেয় শ্যায়োর্বিস্ত্রবন্তুঃ।
শনি গায়ত্রী মন্ত্র- উম ভগবভায়া বিদমহেন মৃত্যুরূপায় ধীমহি তন্নো শনিঃ প্রচোদ্যত। শন্নোদেবীরভিষ্টায় ভবন্তু।
স্বাস্থ্যের জন্য শনি মন্ত্র- ধ্বজহিনী ধামিনী চৈব কঙ্কলি কলহপ্রিহা। কাঙ্কতি কালহি চৌথ তুরঙ্গি মহিষি আজা৷ শনৈর্নামণি পত্নীনামেতানি সঞ্জপন পুমান।
শনির দোষ কাটাতে:
“ওম ত্রয়ম্বকম ইজামাহে সুগন্ধম পুষ্টি-বার্ধানাম উর্বারুকা মিভা বন্ধনাম মৃত্যুর মুকশো মামরাত…”, এই মন্ত্রটি প্রতি শনিবার ১০৮ বার পাঠ করলে শনির দোষ কেটে যেতে সময় লাগে না। ফলে দীর্ঘ সাত বছর শনি দেবের প্রকোপ সহ্য় করতে আর হয় না। আর যেমনটা আপনাদের সকলেরই জানা আছে যে, শনির সাড়ে সাতি কেটে গেলে জীবনের প্রতি বাঁকে সফলতার স্বাদ মেলে। শুধু তাই নয়, শাস্ত্র মতে এই শনি মন্ত্রটি জপ করা শুরু করলে আশেপাশে পজেটিভ শক্তির প্রভাব এতটা বেড়ে যায় যে কোনও খারাপ ঘটনা ঘটার আশঙ্কাও যায় কমে।
সফলতার চুড়ায় ওঠার জন্য: শাস্ত্র মতে প্রতি শনিবার “ওম শাম শানিশ্চারায় নমহঃ”, এই মন্ত্রটি ১০৮ বার জপ করলে জীবন পথে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠা নানাবিধ বাঁধার পাহাড় সরে যায়। সেই সঙ্গে কর্মক্ষেত্রে চরম সফলতা লাভের সম্ভাবনাও বৃদ্ধি পায়। এখানেই শেষ নয়, এই মন্ত্রটিকে সমৃদ্ধির মন্ত্র বলা হয়। তাই তো নিয়ম করে এই মন্ত্রটি পাঠ করলে এবং শনি দেবের আরাধনা
যে কোনও দুঃখ দূর করতে শনি বেজ মন্ত্র: নানাবিধ দুঃখের মারে কি জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে? তাহলে বন্ধু যত শীঘ্র সম্ভব শনি দেবের আরাধনা শুরু করুন। দেখবেন ফল মিলতে সময় লাগবে না। এক্ষেত্রে প্রতি শনিবার স্নান সরে পরিষ্কার জামাকাপড় পরে শনি বেজ মন্ত্র জপ করতে হবে। তাহলেই একের পর এক দুঃখের পাহাড় সরে যেতে শুরু করবে। সেই সঙ্গে খারাপ দৃষ্টির প্রভাবে কোনও ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কাও যাবে কমে। প্রসঙ্গত, মন্ত্রটি হল- “আম প্রাণ প্রেম প্রন সে শনিশ্চরায় নমহঃ”।
সুখ সমৃদ্ধির ছোঁয়া পেতে: লক্ষ জন্ম পেরিয়ে পাওয়া এই মানব জন্মে অপার সুখের সন্ধান পেতে কে না চায় বলুন! কিন্তু কীভাবে সুখের সন্ধান মিলতে পারে, সে বিষয়ে আনেকেই জানেন না। তাই তো আজ আপনাদের এমন একটি শনি মন্ত্রের সম্পর্কে জানাতে চলেছি, যা নিয়মিত ১০৮ বার পাঠ করলে সুখ-সমৃদ্ধির ছোঁয়া পেত সময় লাগে না। এক্ষেত্রে শনি বার, শনি দেবের সামনে বসে একটি প্রদীপ জ্বালিয়ে “শাজায়াম চ ভার্তিশানইয়াকতাম ভাহানিনা ইয়াজিতাম মায়া দীপাম গ্রিহান দেবাশন ত্রিলোকিয়া তিমিরা পাহাম!”, এই মন্ত্রটি জপ করতে হবে। প্রসঙ্গত, পর পর চারটি শনিবার যদি এই ভাবে শনি দেবের আরাধনা করতে পারেন, তাহলে ব্যাপক লুফল মেলে।
(Disclaimer: এই খবরে ব্যবহৃত সব তথ্য শুধুমাত্র বিশ্বাস এবং বিভিন্ন শাস্ত্র-আধ্যাত্মিক পুস্তিকা নির্ভর তথ্যের উপর ভিত্তি করে। সাহায্য নেওয়া হয় জ্যোতির্বিজ্ঞানের প্রকাশিত লেখনির। এখানে উল্লেখ করা গুরুত্বপূর্ণ যে machinnamasta.in কোনও বিশ্বাস বা তথ্য নিশ্চিত করে না। কোনও তথ্য বা বিশ্বাস অনুশীলন করার আগে একজন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ বাধ্যতামূলক। সঠিক ব্যবহার না হলে ক্ষতি হতে পারে এবং তার দায় নিউজ চ্যানেল কর্তৃপক্ষের নয়।)