বিশ্বের সনাতন ধর্ম হলো ‘বেদান্তধর্ম’, যাকে আমরা ‘হিন্দুধর্ম’ বলে থাকি। স্বামী বিবেকানন্দ শিকাগোতে গিয়ে সেই কথাই বলেছিলেন। সেই বেদান্ত ধর্মের ভিত্তি হলো বেদ, বেদান্ত ও উপনিষদ।
উপনিষদ মানুষকে ‘অমৃতের সন্তান’ অর্থাৎ ঈশ্বরের সন্তান বলেছে। কিন্তু স্বরূপত মানুষ তা বুঝতে পারে না। কারণ মানুষের ‘আমিত্ব’ মেঘের মতো তার মনের সূর্যকে ঢেকে রাখে। আজ সমস্ত বিশ্ব মহামানব যীশুকে সেই ‘ঈশ্বরের পুত্র’ বলছে (Spiritual)।
যীশুখ্রীষ্ট (Jesus Christ) এই পৃথিবীর বুকে ঈশ্বরের পুত্র রূপে নিজেকে অবতীর্ণ করে বিশ্ববাসীকে পথ দেখিয়ে গেছেন। প্রত্যেক মানুষ ঈশ্বরের পুত্র বা অমৃতের সন্তান। প্রত্যকের পিতা এক ঈশ্বর। তাঁকে পিতা রূপে জেনে তাঁর দেওয়া আত্মারূপ বীজকে অঙ্কুরিত করে বৃক্ষে পরিণত করতে হবে এবং সেই বৃক্ষকে পত্র, ফুল, ফল ও সৌরভে বিকশিত করে তার জন্ম দিতে হবে এবং সেই আত্মারূপ পুত্রকে রক্ত- মাংসের গর্ভ থেকে বের করে আনতে হবে এই পৃথিবীর বুকে। তখনি মানুষ নিজের পুত্রকে ঈশ্বরের পুত্ররূপে দেখবে পাবে নিজ মন্দিরে।
প্রভু যীশু শুধু বিশ্বের মুক্তির জন্য তাঁর সংক্ষিপ্ত জীবন উৎসর্গ করেন। তিনি বিশ্ববাসীর বটগাছ – যিনি নিজের ছায়ায় সমস্ত বিশ্ববাসীকে শীতল করার বাসনা নিয়েই জন্ম নিয়েছিলেন। প্রভু যীশুখ্রীষ্ট রক্ত- মাংসের দেহকে পবিত্র ক্রুশে আবদ্ধ রেখে বেড়িয়ে আসেন ঈশ্বরের পুত্র রূপে এবং পিতার সাথে এক হয়ে যান। তাঁর বিচার সভায় উপস্থিত হয়ে। প্রভু যীশুখ্রীষ্টের দেখানো পথ সকল মানব জাতির জন্য কল্যাণময়। তিনি সকল মানব জাতির মুক্তির পথ নিজের জীবন দান করে দেখিয়ে গেছেন।
বিশ্বের সকল মানুষ এক আত্মা থেকে সৃষ্টি হয়েছে তা হচ্ছে ঈশ্বরের আত্মা। তাই আমাদের উপনিষদের ‘একেশ্বরবাদ’ তত্ত্ব বলছে ‘আমরা সকলেই ঈশ্বর বা ঈশ্বরের অংশ। সকল মানুষের আত্মা ঈশ্বরের আত্মার সাথে যুক্ত। ঈশ্বরের আত্মাও মানবাত্মার সাথে যুক্ত চিরসাথী হয়ে। সকল মানুষ এক বিশ্বপিতার সন্তান হয়ে বিশ্বমানব শিক্ষার কর্মী হয়ে কর্ম করে চলেছেন এক ঈশ্বরকে ঘিরে। এই সত্যকে জেনে যারা নিজ আত্মার উন্নতি সাধন করেন তারাই ঈশ্বরের পুত্র—ঈশ্বরের আত্মা—অমৃতের সন্তান হয়ে নিজের পুনরুত্থান ঘটান ও স্বর্গে গিয়ে ঈশ্বরের আশ্রয় লাভ করে জীবন ধন্য করেন— অনন্ত জীবন লাভ করে।
এই প্রসঙ্গেই ঠাকুর রামকৃষ্ণের (Ramkrishna Paramhansa) সঙ্গে স্বামী বিবেকানন্দের (Swami Vivekananda) একটি কথোপকথন উল্লেখ করা অপ্রাসঙ্গিক হবে না। একবার বিভ্রান্ত নরেন রমকৃষ্ণকে বলেন,আমি ধ্যানস্থ হয়ে ঈশ্বরের আরাধনা করবো।ঈশ্বরের স্বরূপকে খুঁজবো। তখন রামকৃষ্ণ তাঁকে বলে , “শুধু নিজের মুক্তির জন্য তোর জন্ম নয়। তোর জন্ম একটা বিরাট বটবৃক্ষ হওয়ার জন্য।তোর ছায়ায় দীন দুঃখী মানুষেরা আশ্রয় নেবে।” ঠিক ওই ভাবনার কথাই যীশু সমস্ত জীবন দিয়ে বুঝিয়েছেন।তাই তিনি যথার্থ ঈশ্বরের পুত্র – প্রকৃত মানবাত্মা।উপনিষদের ভাষায় – “অমৃতস্য পুত্রা:”!