কৃষি নির্ভর গ্রাম বাংলার নিজস্ব ধৰ্মীয় সংস্কৃতির অন্যতম উৎসব হলো ইতু পুজো বা ইতু উৎসব। ভাষাবিদেরা বলছেন মিতু বা মিত্র থেকে ইতু শব্দের আবির্ভাব। মিত্র বলতে অবশ্য এখানে সূর্যকে বোঝানো হয়েছে। কার্তিক মাসের সংক্রান্তিকে বিষ্ণুপদী সংক্রান্তি বলে। এই সংক্রান্তিতে সূর্য জ্যোতিষ শাস্ত্রমতে নীচরাশি তূলা হতে নিষ্ক্রান্ত হয়ে উচ্চাভিমুখী হয়ে বৃশ্চিক রাশিতে প্রবেশ করে এবং এই অবস্থানে সূর্যের নাম মিত্র।সেই থেকেই বাংলার ঘরে ঘরে ইতু পুজো শুরু হয়। সুতরাং ইতু পূজা মানে সূর্য পূজা। তবে, আচার্য সুকুমার সেন ইতু পুজোর ইতিহাসকে অন্য আঙ্গিকে তুলে ধরেছেন। তাঁর মতে, ইতু হলেন প্রাচীন ইন্দ্রপূজার দৃষ্টান্ত। ঋকবেদীয় সূক্তগুলোর নাম ইন্দ্রস্তূপ, সেখান থেকে ইন্দথথু>ইতু। তাঁর মতে, মেয়েরা ইন্দ্রের মতো বর পাওয়ার বাসনায় ইন্দ্রদ্বাদশীর দিন ইতু পূজা করে। তবে বাংলার মেয়েরা ইতুকে শস্যের দেবী হিসেবেই পূজা করে থাকে।এখনও গ্রাম বাংলায় শস্যের দেবতা হিসাবেই ইতুকে পুজো করা হয়।
ইতু পুজো করার বিশেষ কিছু নিয়ম আছে। বলা হয়, একটি সুন্দর মাটির খোলাতে মাটি ভরে তার মধ্যে মান, কচু, কলমীলতা, হলুদ, আখ, শুষনি, সোনা ও রুপোর টোপর, জামাই-নাড়ু, শিবের জটা, কাজললতা রেখে ফুলের মালা, ধূপ-দীপ-সিঁদুর প্রভৃতি পুজোর উপকরণ ও ফল-মিষ্টান্ন ও নবান্ন সহযোগে ইতু পূজা করা হয়। অগ্রহায়ণ মাসের প্রতি রবিবার পুজো করে অগ্রহায়ণ মাসের সংক্রান্তিতে ইতু বিসর্জন করা হয়।