মধ্যযুগে ধর্মমঙ্গল,মনসামঙ্গল, চন্ডিমঙ্গলের মতো আরেকটি ধারা আছে যার নাম অন্নদামঙ্গল কাব্য। সেই কাব্যে দেবী অন্নদা আর্থাৎ যিনি অন্নদান করেন সেই দেবীর আরাধনা করা হয়েছে। এই দেবীকেই অন্নপূর্ণা নামে অভিহিত করা হয়। কবি ভারত চন্দ্র রায়ের ‘অন্নদামঙ্গল’ মধ্যযুগের অন্যতম একটি কাব্য।
অন্নপূর্ণার মাহাত্ম্য বর্ণনা করে অন্নদামঙ্গল কাব্য রচনা করেছিলেন। অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে – “অন্নদামঙ্গলকাব্য অষ্টাদশ শতাব্দীর সর্বশ্রেষ্ঠ কাব্য, সমগ্র বাংলা সাহিত্যের উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের অন্যতম। মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র কর্তৃক অন্নপূর্ণা পূজা উপলক্ষে মহারাজের নিজ কীর্তি এবং তাঁহার পূর্বপুরুষ ভবানন্দ মজুমদারের রাজ্য ও রাজা উপাধি লাভের কাহিনী বর্ণনাই ছিল কবির প্রধান উদ্দেশ্য। দেবী অন্নদা (অন্নপূর্ণা) কীভাবে ভবানন্দ মজুমদারকে কৃপা করিলেন, এবং ভবানন্দ কীভাবে জাহাঙ্গীরের দ্বারা অন্নপূর্ণা পূজা করাইয়া রাজত্ব ও রাজা খেতাব লাভ করিলেন – ইহার বর্ণনাই ছিল কবির প্রচ্ছন্ন উদ্দেশ্য। কিন্তু কবি পৌরাণিক অংশ বিশেষ ফলাও করিয়া বর্ণনা করিয়াছেন।” মাইকেল মধুসূদন দত্ত দেবী অন্নপূর্ণা ও অন্নদামঙ্গল কাব্যের প্রশস্তি করেছেন তার “অন্নপূর্ণার ঝাঁপি” কবিতায়।
অন্নপূর্ণা এক হিন্দু দেবী। তাঁর অপর নাম অন্নদা তিনি শক্তির এক রূপ। অন্নপূর্ণা দ্বিভুজা ত্রিনয়নী, তাঁর দুই হাতে অন্নপাত্র ও দর্বী; তিনি রক্তবর্ণা, সফরাক্ষী, স্তনভারনম্রা, বিচিত্র বসনা, নিয়ত অন্নপ্রদায়িনী ও ভবদুঃখহন্ত্রী; তাঁর মস্তকে নবচন্দ্রকলা, একপাশে ভূমি ও অন্যপাশে শ্রী। নৃত্যপরায়ণ শিবকে দেখে তিনি হর্ষিতা। দেবী পার্বতী ভিক্ষারত শিবকে অন্নপ্রদান করে এই নামে আখ্যায়িত হন।
চৈত্র মাসের শুক্লাষ্টমী তিথিতে অন্নপূর্ণার পূজা করা হয় , শান্তিপুর ধামে মাঘীপূর্ণিমা ও বৌদ্ধপূর্ণিমা তিথিতে যথাক্রমে বড়বাজারে ও আমড়াতলা বারোয়ারীতে এবং নবদ্বীপ ধামে রাস পূর্ণিমা তিথিতে বৌবাজার বারোয়ারী অন্নপূর্ণা পূজা পালন করে থাকে৷ হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী, অন্নপূর্ণার পূজা করলে গৃহে অন্নাভাব থাকে না।দক্ষিণামূর্তি সংহিতা গ্রন্থে চতুর্ভুজা এবং পদ্ম, অভয়, অঙ্কুশ ও বরদহস্তা অন্নপূর্ণার বর্ণনা রয়েছে। কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ রচিত বিভিন্ন তন্ত্রগ্রন্থের সংকলন বৃহৎ তন্ত্রসার গ্রন্থে এই পূজাপদ্ধতির বিবরণ পাওয়া যায়। এছাড়াও “অন্নদাকল্প”, “শারদাতিলকতন্ত্র” প্রভৃতি তন্ত্রগ্রন্থে অন্নপূর্ণার পূজাপদ্ধতি নিবদ্ধ আছে। কাশীতে অন্নপূর্ণার একটি বিখ্যাত মন্দির আছে; এই মন্দিরে অন্নপূর্ণা পূজা ও অন্নকূট উৎসব প্রসিদ্ধ।