www.machinnamasta.in

ওঁ শ্রীং হ্রীং ক্লী গং গণপতয়ে বর বরদ সর্বজনস্ময়ী বশমানয় ঠঃ ঠঃ

October 15, 2024 11:49 am

বন্দরে এসে ভিড়েছে বিশাল জাহাজটা। নাবিক আর যাত্রীরা নেমে আসছে জাহাজ থেকে। ডেকের রেলিং ধরেও দাঁড়িয়ে রয়েছে কয়েকজন। যাত্রা শেষ হয়নি এখনও। তবে টানা দুবছর ধরে সমুদ্রযাত্রা করার পর মনে হচ্ছে, “জল শুধু জল, দেখে দেখে চিত্ত মোর হয়েছে বিকল”। ডাঙা দেখার জন্য মন অস্থির হয়ে উঠেছিল সকলেরই। বন্দর মানেই নতুন জায়গা, নতুন লোকজনের সঙ্গে কথা বলা, খোঁজখবর নেওয়া। আর সবচেয়ে বড় কথা, রসদ সংগ্রহ করা। এটি আসলে সাধারণ যাত্রীজাহাজ নয়। বিশ্বভ্রমণের উদ্দেশ্য নিয়ে বেরিয়েছে এই ফরাসি জাহাজটি। বাড়ি ফিরতে এখনও ঢের দেরি। সুতরাং তাহিতি বন্দরে নেমে পড়েছে জাহাজের দলবল। নাবিকেরা বাজারে ঘুরছে, সওদা কিনছে। অভিযাত্রী দলের কেউ কেউ নিজেদের গবেষণার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করে নিচ্ছেন। এমন সময়েই কানে এল মহিলা কণ্ঠের চিৎকার। কিন্তু তাহিতি দ্বীপ, যেখানে তথাকথিত সভ্য লোকের বাস প্রায় নেই, সেখানে ফরাসি ভাষায় কথা বলছে কে!

যারা কৌতূহলী হয়ে এগিয়ে গেল, তারা দেখল, আরে! এ তো তাদের জাহাজের এক ছোকরা, জন। ডাক্তার ফিলিবার্ট কমারসন-এর সঙ্গী হয়ে এই অভিযানে নাম লিখিয়েছে সে। দুজনে মিলে কীসব গাছগাছড়া সংগ্রহ করে বেড়ায় কেবল। কমারসন একটু রুগ্ন গোছের, তবে এই ছোকরা দিব্যি চটপটে। সবসময় যেন উৎসাহে ফুটছে। ফাঁক পেলে নাবিকদের কাজকর্মেও হাত লাগায়। কিন্তু কোন জাদুতে তার গলা হঠাৎ করে এমন মেয়েলি হয়ে গেল, সেটাই বোঝা যাচ্ছে না। স্থানীয় কিছু ছেলেপুলের সঙ্গে সমানে মুখ চালাচ্ছে সে, প্রায় হাতাহাতি বেধে যায় আর কি। তাড়াতাড়ি তাকে সরিয়ে নিয়ে গেল জাহাজের লোকেরা। আর তারপরেই সামনে এল এক চমকে দেওয়া তথ্য। জন আসলে পুরুষই নয়! সে আসলে মহিলা, নাম জাঁ বারে।

যে সময়ের কথা বলছি, সেই আঠেরো শতকে মেয়েদের ঘরের বাইরে পা রাখা নিয়েই জারি ছিল হাজারও নিয়মকানুন। ফরাসি নৌবাহিনীর কড়া নিয়ম ছিল, নৌ-অভিযানে মেয়েদের প্রবেশ নিষেধ। সেখানে দুবছর ধরে নাকি অভিযানের অংশ হয়ে আছে এই মেয়ে! আসলে এর পিছনে অনেকটা কৃতিত্ব রয়েছে ডাক্তার কমারসন-এর। ছোট থেকেই লতাপাতা, গাছগাছড়া সংগ্রহ করার নেশা ছিল ওই মেয়েটির। সেই সূত্রেই আলাপ কমারসন-এর সঙ্গে। আলাপ থেকে প্রেম। অসুস্থ কমারসন যখন এই অভিযানে যোগ দেওয়ার সুযোগ পেলেন, তখন তাঁর প্রয়োজন ছিল একজন যোগ্য অনুচরের। আর সেই কাজে জাঁ বারের চেয়ে বেশি যোগ্য যে কেউ হতেই পারে না, সে কথাও ভালই জানতেন তিনি। তাই পুরুষের ছদ্মবেশে, পুরুষের নাম নিয়ে এই যুগান্তকারী অভিযানে সামিল হলেন জাঁ বারে।

ভাগ্যিস! কারণ গোটা অভিযানে প্রায়ই শয্যাশায়ী থাকতেন কমারসন। একার উদ্যোগে প্রায় ছহাজার প্রজাতির উদ্ভিদের নমুনা সংগ্রহ করেন ওই মেয়েটি। কিন্তু তাঁর আসল পরিচয় জানাজানি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সমস্ত কাজটিই বন্ধ হয়ে যায়। অন্যান্য অভিযাত্রীদের বয়ান থেকে জানা যায়, নাবিকদের নির্যাতন, এমনকি ধর্ষণেরও শিকার হয়েছিলেন তিনি। অবশেষে মরিশাস বন্দরে নেমে যান জাঁ বারে ও কমারসন। কমারসনের মৃত্যু পর্যন্ত সেখানেই থেকে গিয়েছিলেন তাঁরা।

নিজের প্রাপ্য সম্মান পাননি এই মেয়েটি। অথচ উদ্ভিদবিদ্যার জগতে এক বিপুল অবদান রেখে গিয়েছিলেন তিনি। আর তিনিই ছিলেন পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম নারী, যিনি এই গোটা পৃথিবীটা একবার ঘুরে এসেছেন।

administrator

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *