খবরে আমরাঃ শুক্রবার, ২২ এপ্রিল ধরিত্রী দিবস। প্রতি বছর এই দিন উদ্যাপনের লক্ষ্যই হল পরিবেশ নিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা এবং বৃহত্তর লক্ষ্য নিয়ে জনমত গড়ে তোলা। আর সেই লক্ষ্যেই উইমেন্স ক্রিশ্চান কলেজের ইকো ক্লাব ও ছাত্রী সংসদের তরফে আয়োজন করা হয় এক অভিনব অনুষ্ঠানের। বৈচিত্রপূর্ণ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও শিল্প প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে ধরিত্রী দিবস পালন করা হয়। আগামী প্রজন্মের মধ্যে পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধিই ছিল মূল লক্ষ্য।
১৯৭০ সালে প্রথমবার ধরিত্রী দিবস পালন করা হয় এবং সেনেটর গেয়লর্ড নেলসন ক্রমশ দূষিত হতে থাকা পরিবেশ নিয়ে সরব হন। বলাই বাহুল্য, বিভিন্ন দেশ এবং সরকার দূষণ কমানো এবং পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে দায় ঝেড়ে ফেলতে বেশি আগ্রহী। তবে শুধুমাত্র দেশ বা সরকার নয়, বরং ব্যক্তিগত স্তরে কিছু বিজ্ঞানসম্মত পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে, যা পরিবেশ রক্ষা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যা রোখার ক্ষেত্রে কার্যকর হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গাছ লাগাতে হবে— এই সত্যিটা সকলেই জানেন, নতুন করে বলার কিছু নেই। কিন্তু পর্যাপ্ত গাছ কি সত্যি লাগানো হচ্ছে? আর গাছ লাগানো হলে সেটা কি মাটি বুঝে লাগানো হচ্ছে? গাছ নিয়ে সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার ব্যাপারে এখনও কেন বোঝানো গেল না মানুষকে? অনেক প্রশ্নেরই উত্তর নেই!
পরিবেশ নিয়ে সবাইকে শিক্ষিত করে তুলতে হবে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, শুধুমাত্র বোঝানোর দিক থেকে খামতি থাকার জন্য কোনও যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ হল প্লাস্টিকের ব্যবহার। প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে চট বা অন্য কিছু কেন তুলে ধরা যাচ্ছে না, সত্যিই বিস্ময়কর।
সমাজের সঙ্গে অর্থনীতির সম্পর্ক ওতপ্রোত। পরিবেশগত যে কোনও সিদ্ধান্তের অর্থনৈতিক প্রভাব থাকাই স্বাভাবিক। সেই ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ধরে নেওয়া যাক ভারতের কথা, যেখানে পেট্রোল, ডিজেল চালিত গাড়ি থেকে ব্যাটারি বা বিদ্যুৎচালিত গাড়ির ব্যবহার যাতে মানুষ বেশি করে করেন, সে বিষয়ে সচেতন করার প্রচেষ্টা চলছে সরকারের তরফে। কিন্তু সরকার কি প্রয়োজনীয় ভর্তুকি দিচ্ছে এই ক্ষেত্রে? এর ফলে সমাজের দুর্বলতম অংশ চাইলেও পরিবেশবান্ধব সিদ্ধান্তের দিকে এগোতে পারেন না। শুধু তাই নয়, জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জের নেতৃত্বে যে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বলা হয়েছে, অনেক সময়েই সেই বিষয়ে প্রথম বিশ্বের দেশগুলিকে পাশে পাওয়া যায়নি। এর ফলে সিদ্ধান্ত ভালো হলেও পৃথিবী জুড়ে ইতিবাচক প্রভাব পড়েনি।
অর্থনীতির ভাষায় যে কোনও জিনিসের দাম ঠিক করে বাজার। আর তাই বাজার অর্থনীতি সব সময়েই খুব উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। কিন্তু জলবায়ুর অর্থনীতি নিয়ে কি রাষ্ট্র সত্যি ওয়াকিবহাল? শহরাঞ্চলে পরিবেশ দূষণের ফলে যে ক্ষতি হয়ে চলেছে, তার অর্থনৈতিক পর্যালোচনা করা হয় না বললেই চলে। এর ফলে সমাজের এক অংশের মানুষ জেনে উঠতেই পারেন না, তার দীর্ঘস্থায়ী তাৎপর্য। তাই এবারের ধরিত্রী দিবস কিন্তু ঘুম থেকে উঠে পরিবেশ নিয়ে সক্রিয় হওয়ার দিন। নইলে, অদূর ভবিষ্যতে, বিপদ অপেক্ষা করছে সমগ্র মানব জাতির জন্য।
আর সেই লক্ষ্যেই নিজের দায়িত্ব পালনে ব্রতী হল উইমেন্স ক্রিশ্চান কলেজ।