রাজ্যে তৃণমূলের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় বাহিনী-কেন্দ্রীয় তদন্তকারীদের ব্যবহার করেও কমানো যাচ্ছে না তৃণমূলের জনপ্রিয়তা। বাধা মমতা ব্যানার্জী। অনেকে বলছেন রাজ্যে দ্বিতীয় বিকল্প শক্তি হিসাবে প্রমাণে মরিয়া বিজেপি কার্যত রাজ্যের সঙ্গে সংঘাত-রক্ষক্ষয়ী আন্দোলনের মধ্যে দিয়েই উঠে আসতে চাইছে। আর করবেই বা না কেন। সামনে পঞ্চায়েত। কিন্তু রাজনৈতিক কারবারীদের অপর একটি পক্ষের মতে, বিজেপির লোকবল কম। অশান্তি বাধাতে যে শক্তি দরকার তা তাদের নেই। তাই বামেদের প্রচ্ছন্ন মদতেই এই আন্দোলনের প্রস্তুতি। বামেদের এই আন্দোলনে যোগ দিতে আহ্বান জানিয়েছে বিজেপি। সরকারিভাবে না বললেও বামেরাই বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে আন্দোলন সফল করতে মাঠে নেমেছে তাতে এক প্রকার নিশ্চিত সকলে। কারণ বামেরা বুঝে গিয়েছে তৃণমূলকে আটকাতে হলে মতাদর্শকে পিছনে ফেলে বিজেকে নিয়েই আন্দোলন করতে হবে।
মঙ্গলবার বিজেপির বহু প্রতীক্ষীত নবান্ন অভিযান। (Nabanna Rally)। গেরুয়া শিবিরে মিছিল ঘিরে শহরে কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি যাতে না হয় তার জন্য আগাম সতর্কতা অবলম্বন করছে পুলিশ। উত্তর ও মধ্য কলকাতার একাংশ অ্যালুমিনিয়াম ব্যারিকেড (Barricade), বাঁশের সিজার ব্যারিকেড ও গার্ডরেল দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হবে। কলেজ স্ট্রিটে ১৪৪ ধারা জারি হয়েছে। তা ভেঙে গেরুয়া শিবিরের কর্মী, সমর্থকরা মিছিল করলে মামলা দায়ের করবে পুলিশ। কলকাতায় রিজার্ভ ফোর্স ছাড়া পুলিশের হাতে আগ্নেয়াস্ত্রর বদলে থাকবে লাঠি। প্রসঙ্গত, এই অভিযানের অনুমতি দেয়নি পুলিশ। আর বিজেপি সেই পুলিশকে চ্যালেঞ্জ করেই নবান্ন অভিযান সফল করতে মরিয়া।
নবান্ন অভিযানের দিন শহরজুড়ে থাকবে পুলিশের ব্যারিকেড। তার জন্য নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করা হয়েছে। জানা গিয়েছে –
- মধ্য কলকাতার কলেজ স্ট্রিট, মহাত্মা গান্ধী রোড ধরে বিজেপির মিছিল হাওড়া ব্রিজের দিকে এগোবে
- স্ট্র্যান্ড রোডের কাছে আটকানো হবে মিছিল
- দ্বিতীয় হুগলি সেতুর আটটি র্যাম্পে থাকবে ব্যারিকেড
- যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে হেস্টিংসের মাজারের কাছে
- কলকাতার অন্তত ১২টি ও হাওড়ার শহরজুড়ে প্রায় ৩০টি জায়গায় পুলিশের ব্যারিকেড করা হবে।
বন্ধ থাকবে হাওড়ার বহু রাস্তা, হতে পারে যানজটও।
কলকাতা পুলিশের (Kolkata Police) যুগ্ম পুলিশ কমিশনার শুভঙ্কর সিংহ সরকার জানান, কলকাতায় কোনও অশান্ত এড়াতে পর্যাপ্ত পুলিশি ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। শহরের যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে ব্যবস্থা নিচ্ছে ট্রাফিক পুলিশ।
কলকাতায় ১২টি জায়গায় ব্যারিকেড, এলাকা ভাগ করা হয়েছে সেক্টরে, নিরাপত্তায় দু’হাজার অতিরিক্ত পুলিশ, বিশেষ পুলিশ কমিশনার, দুই অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ও যুগ্ম পুলিশ কমিশনারদের অধীনে বিভিন্ন পয়েন্টে থাকবেন ১৮ জন ডিসি, ৩২ জন অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার, ৬২ জন ইন্সপেক্টর ও ১২৪ জন সার্জেন্ট। থাকছে পাঁচটি জলকামান ও গ্যাস ছোঁড়ার জন্য দু’টি ‘বজ্র’। থাকবে ড্রোনের (Drone) নজরদারি।
হাওড়ায় (Howrah) প্রায় আড়াই হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হচ্ছে। জি টি রোড, ফরশোর রোড, হাওড়া শরৎ সদনের সামনে মহাত্মা গান্ধি রোড ও সাঁতরাগাছির মতো মূল পয়েন্ট ও হাওড়া স্টেশন, নবান্নর সামনে শিবপুর মন্দিরতলা, আন্দুল রোড ও কোনা এক্সপ্রেসওয়ের ৩০টি জায়গায় থাকবে পুলিশের ব্যারিকেড। সেখানে থাকবেন রাজ্য পুলিশের পদস্থ কর্তারা। মোতায়েন থাকবে পুলিশ। নজরদারি রাখবে ড্রোন। থাকবে একাধিক জলকামান ও দমকলের গাড়ি।
জেনে নিন কোন কোন রাস্তা বন্ধ থাকছে—-
বিজেপির নবান্ন অভিযানের (Nabanna Rally) জেরে চরম ভোগান্তির মুখে পড়তে পারেন পথচারী ও যাত্রীরা। কারণ, আগামিকাল অর্থাৎ ১৩ সেপ্টেম্বর সকাল আটটা থেকে দ্বিতীয় হুগলি সেতু ও দুপুর বারোটা থেকে হাওড়া ব্রিজে যান নিয়ন্ত্রণ করা হবে। দুই সেতুতেই ফের যান চলাচল করবে বিকেল চারটের পর থেকে। ফলে হাওড়া-কলকাতার মধ্যে যোগাযোগ কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। নাজেহাল হতে পারেন নিত্যযাত্রীরাও।
হাওড়া সিটি পুলিশের তরফে নিত্যযাত্রীদের কলকাতায় যাওয়ার জন্য বা কলকাতা থেকে হাওড়ায় (Howrah) আসার জন্য বালির নিবেদিতা সেতু ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তবে নবান্ন অভিযান শুরুর আগে হাওড়ায় যাঁরা ট্রেন ধরতে যাবেন, অথবা কলকাতায় ফিরবেন, কিছু সময়ের জন্য হাওড়া ব্রিজ দিয়ে তাঁরা হেঁটে যাতায়াত করতে পারেন।
- কলকাতায় সাময়িকভাবে বন্ধ থাকবে কলেজ স্ট্রিট, মহাত্মা গান্ধী রোড, স্ট্র্যান্ড রোড, হাওড়া ব্রিজ ও দ্বিতীয় হুগলি ব্রিজ।
- যানবাহন নিয়ন্ত্রণ সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৩টে পর্যন্ত নির্মলচন্দ্র স্ট্রিট ও কলেজ স্ট্রিটে। সব গাড়ি ঘুরিয়ে দেওয়া হবে লেনিন সরণি, মৌলালি ও এজেসি বোস রোড দিয়ে।
- দুপুর বারোটা থেকে পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা মহাত্মা গান্ধী রোডে। গাড়ি ঘোরানো হবে এপিসি রোড থেকে এজেসি বোস রোড অথবা শিয়ালদহ ফ্লাইওভার, এমজি রোড, আমহার্স্ট স্ট্রিট, বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিট অথবা দক্ষিণমুখী সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ দিয়ে।
- দুপুর বারোটা থেকে কিংসওয়ে ক্রসিং থেকে স্ট্র্যান্ড রোডে যান নিয়ন্ত্রণ। গাড়ি ঘোরানো হবে কিংসওয়ে, রানি রাসমনি অ্যাভিনিউ ধরে সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ অথবা রেড রোডে।
- যান নিয়ন্ত্রণ সকাল আটটা থেকে দ্বিতীয় হুগলি সেতুতে। ব্যারিকেড আটটি র্যাম্পে। গাড়ি ঘোরানো হবে এজেসি বোস রোড, এক্সাইড ক্রসিং, এজেসি বোস রোড হয়ে উত্তরে এপিসি রোড অথবা এজেসি বোস রোড, জওহরলাল নেহরু রোড, সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ে।
- দুপুর বারোটা থেকে হাওড়া ব্রিজে যান নিয়ন্ত্রণ।
- মালবাহী গাড়ি কলকাতায় ভোর চারটে থেকে রাত আটটা পর্যন্ত চলাচল নিষেধ।
- বিজেপির তরফে হাওড়া ময়দান ও সাঁতরাগাছির মোড়ে নবান্ন অভিযানের জন্য জমায়েত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু হাওড়া ময়দান চত্বরে মঙ্গলাহাট বসায় এখানে বিজেপির নবান্ন অভিযানকে ঘিরে তীব্র যানজটের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। অশান্তি এড়াতে হাওড়া ময়দান চত্বরে ফুটপাতে বসা হাট ব্যবসায়ীদের ১০টার মধ্যে এলাকা খালি করে দিতে বলা হয়েছে।
- দাশনগরের হাওড়া-আমতা রোড ও লিলুয়ার বেলগাছিয়ার দিকে বেনারস রোড ছাড়া পুলিশ কমিশনারেট এলাকায় অধিকাংশ রাস্তাই এদিন বন্ধ থাকবে।
- পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে কোনা এক্সপ্রেসওয়ে, জি টি রোড, ফরশোর রোড ও আন্দুল রোড।