ফুল দিয়ে সাজানো ট্রেনের কামরা! হাওড়াগামী কাটোয়া লোকাল তখন ছুটছে পরের স্টেশনের দিকে। এর মধ্যেই হচ্ছে মন্ত্রপাঠ! চলন্ত ট্রেনের কামরাতেই হল পুজো! পুজোর পর নিত্যযাত্রীদের মিস্টি বিতরণ। হৈ হৈ করে ট্রেনের কামরার ভেতরেই পালিত হল বিশ্বকর্মা পুজো। কাটোয়া থেকে ট্রেনটি পাঁচটা চল্লিশে ছেড়ে হাওড়ায় পৌঁছয় আটটা পঁয়তাল্লিশে। প্রতিদিন দীর্ঘ ১৪৫ কিলোমিটার পথ তারা একসঙ্গে কাটান। তারা কাটোয়া লোকালের চার নম্বর কামরার নিত্যযাত্রী। কেউ বা কলকাতা বড় বাজারের খুব কম বেতনের কোন দোকানে হেলপারের কাজ করেন, কেউ আবার সরকারি বড় অফিসার, কেউ সাংবাদিক, কেউবা কলেজ পড়ুয়া। কিন্তু এই তিন ঘন্টার যাত্রা পথে তাদের একটাই পরিচয় তারা সবাই নিত্যযাত্রী। প্রচন্ড ঠান্ডা হোক বা গরম বা বর্ষা এই নিত্যযাত্রীদের দিন শুরু হয় এই তিন ঘন্টা একই সঙ্গে এই চেনা মুখগুলোর সাথে দেখা হওয়ার পর থেকে। এই তিন ঘন্টায় তারা যেমন নিজেদের সুখ দুঃখ ভাগ করে নেন। অনেক ভালো গল্প যেমন তৈরি হয় নিজেদের মধ্যে, মাঝে মাঝে ঝগড়াঝাঁটিও যে লাগে না তা নয়। কিন্তু দিনের শেষে একটাই পরিচয়, তারা সহযাত্রী। সারা বছর দিন শুরুর এই তিন ঘন্টা তারা একইসঙ্গে সময় কাটান। গত ৩১ বছর ধরে নিত্য যাত্রীদের উদ্যোগে ওই ট্রেনের চার নম্বর কামরার হয়ে আসছে বিশ্বকর্মা পুজো। মূর্তি এনে ট্রেনের কামরার ভিতরই ধুমধাম করে হয় পুজো। এবারও ট্রেনের কামরায় বিশ্বকর্মা পুজোর আয়োজন করলেন নিত্যযাত্রীরা। নিজেরাই চাঁদা তুলে এই পুজোর ব্যবস্থা করেছেন। একটা দিনের পুজো বা এই হৈ হৈ করে উৎসব পালন করা তাদের সারা বছরের যাত্রা পথ কে যেন আরো মসৃণ করে দেয়।