www.machinnamasta.in

ওঁ শ্রীং হ্রীং ক্লী গং গণপতয়ে বর বরদ সর্বজনস্ময়ী বশমানয় ঠঃ ঠঃ

October 15, 2024 5:38 pm
biswakarma puja

বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত মতে বলা হচ্ছে, ১৬ সেপ্টেম্বর সোমবার হচ্ছে ৩১ ভাদ্র। ভাদ্র শুক্লপক্ষের ত্রয়োদশী তিথি শেষ হচ্ছে বেলা ৩ টে ১১ মিনিটে। এদিকে, আবার আরও একটি মত বলছে, ১৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৭ টা ২৯ মিনিটে কন্যা রাশিতে প্রবেশ করছেন সূর্য। সেই কারণে পরের দিন ১৭ সেপ্টেম্বরই পালিত হবে বিশ্বকর্মা পুজো। ২০২৪ সালে বিশ্বকর্মা পুজোর তিথি নিয়ে গুপ্তপ্রেস পঞ্জিকার মত বলছে, ৩১ ভাদ্র পড়ছে ১৭ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার। তিথি ভাদ্র শুক্লপক্ষের চতুর্দশী বেলা ১১টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত থাকবে। মঙ্গলবারই শ্রীশ্রী বিশ্বকর্ম পুজো রয়েছে বলে মত গুপ্তপ্রেস পঞ্জিকার।

বিশ্বকর্মা পূজা বা বিশ্বকর্মা জয়ন্তী হচ্ছে একটি হিন্দুধর্মীয় উৎসব। হিন্দু স্থাপত্য দেবতা বিশ্বকর্মার সন্তুষ্টি লাভের আশায় এই পূজা করা হয়। তাকে স্বয়ম্ভু এবং বিশ্বের স্রষ্টা হিসাবে বিবেচনা করা হয়। তিনি দেবতা কৃষ্ণের রাজধানী দ্বারকা শহরটি নির্মাণ করেছিলেন। এছাড়াও তিনি রামায়ণে বর্ণিত লঙ্কা নগরী, পাণ্ডবদের মায়া সভা, রামায়ণে উল্লিখিত ব্রহ্মারপুষ্পক রথ, দেবতাদের বিভিন্ন গমনাগমনের জন্য বিভিন্ন বাহন, দেবপুরী এবং বিষ্ণুর সুদর্শন চক্র, শিব এর ত্রিশূল, কুবের এর অস্ত্র, ইন্দ্রের বজ্র, কার্তিকের শক্তি সহ দেবতাদের জন্য বহু কল্পিত অস্ত্রের স্রষ্টা। বিশ্বকর্মার ভক্তরা বিশ্বাস করেন যে তিনি এই বিশ্বের সব কর্মের সম্পাদক। তিনি সব ধরনের শিল্পের প্রকাশক। শিল্পবিদ্যায় বিশ্বকর্মার রয়েছে একচ্ছত্র অধিকার। তিনি নিজেই চতুঃষষ্টিকলা, স্থাপত্যবেদ এবং উপবেদ এর প্রকাশক। কথিত আছে, পুরীর (Puri) বিখ্যাত জগন্নাথমূর্তিও (Jagannath) তিনিই নির্মাণ করেন তাকে স্বর্গীয় সূত্রধরও বলা হয়।

বাঙালির কাছে বিশ্বকর্মা (Viswakarma) পুজো মানেই দুর্গাপুজোর ঘণ্টা বেজে গেল। আকাশে ঘুড়ির মেলা মন নিয়ে যায় সেই ছোটবেলায়। দেবশিল্পী বিশ্বকর্মার আরাধনা যেন এই বঙ্গভূমিতে নিয়ে আসে বাঙালির শ্রেষ্ঠ উত্‍সব দুর্গাপুজোর আগমন বার্তা। আগামিকাল ১৭ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার পালিত হবে বিশ্বকর্মা পুজো। সাধারণত বেশিরভাগ কল-কারখানায় বিশ্বকর্মার পুজো হলেও এই পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে ঘুড়ি উত্‍সব। বিশ্বকর্মা পুজোর দিন ঘুড়ি না ওড়ালে যেন সবটাই ফাঁকা ফাঁকা লাগে। এই জেট যুগে বিশ্বকর্মা পুজোয় আকাশে ঘুড়ির মেলা কমে এলেও ভো-কাট্টার নির্মল আনন্দ এখনও আকর্ষণ করে ছেলে-বুড়ো সবাইকেই।

হিন্দুদের অন্যান্য পূজার সময় চাঁদের গতি-প্রকৃতির উপর নির্ধারিত হলেও বিশ্বকর্মার পূজার সময় সূর্যের গতি প্রকৃতির উপর নির্ভর করে নির্ধারিত হয়। এই নিয়ম অনুসারে সূর্য যখন সিংহ রাশি থেকে কন্যা রাশিতে প্রবেশ করে তখন উত্তরায়ন শুরু হয়। এই সময়েই দেবতারা নিদ্রা থেকে জেগে ওঠেন এবং বিশ্বকর্মার পূজার আয়োজন শুরু করা হয়।

হিন্দু পঞ্জিকা অনুযায়ী বিশ্বকর্মা পূজার দিনটি ‘কন্যা সংক্রান্তি’ তে পড়ে। গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জী অনুসারে এটি সাধারণত প্রতি বছর ১৬ থেকে ১৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে উদযাপিত হয়। দিনটি ভারতীয় সৌর বর্ষপঞ্জি এবং বঙ্গাব্দের ভাদ্র মাসের শেষ দিন। সৌর ক্যালেন্ডারে ভারতীয় ভাডো মাসের শেষ দিন। বাংলাদেশ, ভারতের আসাম, উত্তরপ্রদেশ, কর্ণাটক, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা এবং ত্রিপুরা রাজ্যে সৌর বর্ষপঞ্জী অনুসারে দিনটি পালিত হয়। প্রতিবেশী দেশ নেপালেও এই উৎসব উদযাপিত হয়।

তবে কোন কোন অঞ্চলে অক্টোবর-নভেম্বর মাসে দীপাবলির একদিন পর গোবর্ধন পূজার সাথেও বিশ্বকর্মা পূজা পালন করা হয়।

ছোটবেলা থেকেই দুর্গাপুজোর (Durga) আগমনী ঘণ্টা হিসেবে জড়িয়ে আছে বিশ্বকর্মা পুজো। কিন্তু তখন থেকেই বিশ্বকর্মা পুজো ঘিরে একটা প্রশ্ন মনে বারবার উঁকি মেরেছে। তা হল অন্য সব দেব-দেবীর পুজোয় ক্যালেন্ডারে কোনও নির্দিষ্ট দিন না থাকলেও কেন বিশ্বকর্মা পুজো প্রায় প্রতি বছর ১৭ সেপ্টেম্বর উদযাপিত হয়? বিদ্যার দেবী সরস্বতী, অর্থের দেবী লক্ষ্মী বা শক্তির দেবী দুর্গা-কালী সবার পুজোরই কোনও বাঁধা ধরা তারিখ নেই। কিন্তু দেবশিল্পী বা দেবতাদের ইঞ্জিনিয়ার বিশ্বকর্মার পুজো মানেই ১৭ সেপ্টেম্বর। ইংরেজি ক্যালেন্ডারে এই দিনটি কেন স্থির তা জানতে একটু পঞ্জিকা উলটে দেখতে হবে।

সৌর পঞ্জিকা মেনে বিশ্বকর্মা পুজো

হিন্দু ধর্মে সব দেব-দেবীরই পুজোর তিথি স্থির হয় চাঁদের গতি প্রকৃতির উপর নির্ভর করে। এই বিষয়ে চান্দ্র পঞ্জিকা (Panchang) অনুসরণ করা হয়ে থাকে। কিন্তু বিশ্বকর্মার পুজোর তিথি স্থির হয় সূর্যের অবস্থানের উপর ভিত্তি করে। যখন সূর্য সিংহ রাশি থেকে কন্যা রাশিতে গমন করে, তখনই সময় আসে উত্তরায়ণের। দেবতারা নিদ্রা থেকে জেগে ওঠেন এবং শুরু হয় বিশ্বকর্মার পুজোর আয়োজন। হিন্দু পঞ্জিকার দুই প্রধান শাখা সূর্যসিদ্ধান্ত এবং বিশুদ্ধসিদ্ধান্ত- উভয়েই এই বিষয়ে একমত। সূর্য (Sun) যেহেতু প্রতি রাশিতে মোটামুটি এক মাস করে অবস্থান করে, তাই বিভিন্ন রাশিতে সূর্যের গোচরের দিন স্থির। প্রায় প্রতি বছরই সূর্য ১৭ সেপ্টেম্বর কন্যা রাশিতে গোচর করে, আর সেদিনই হয় বিশ্বকর্মা পুজো।

আরও একটু স্পষ্ট করে বলতে হলে, বিশ্বকর্মার পুজোর দিন ভাদ্র মাসের শেষ তারিখে নির্ধারিত। এই ভাদ্র সংক্রান্তির আগে বাংলা পঞ্জিকায় পাঁচটি মাসের উল্লেখ মেলে। এই পাঁচটি মাসের দিন সংখ্যাও প্রায় বাঁধাধরাই- সাকুল্যে ১৫৬টি দিন! এই নিয়ম ধরে বিশ্বকর্মা পুজোর যে বাংলা পঞ্জিকা মতে তারিখটি বেরোয়, তা ইংরেজি ক্যালেন্ডারের ১৭ সেপ্টেম্বরেই পড়ে। কোনও কোনও বছরে এই পাঁচ মাসের মধ্যে কোনওটা যদি ২৯ বা ৩২ দিনের হয়, একমাত্র তখনই বিশ্বকর্মা পুজো এক দিন পিছিয়ে বা এগিয়ে যায়। তবে তা খুবই ব্যতিক্রমী ঘটনা।

এই বছরেও নিয়মের অন্যথা হয়নি। সূর্য নিয়ম মেনে প্রতিষ্ঠিত হবেন কন্যা রাশিতে। ভাদ্র সংক্রান্তির আগে বাংলা পঞ্জিকার পাঁচটি মাসের দিনসংখ্যাও ১৫৬টিই থেকেছে এবং ১৭ সেপ্টেম্বর উদযাপিত হতে চলেছে বিশ্বকর্মা পুজো। আকাশ রঙিন হয়ে উঠবে ঘুড়ির সম্ভারে। আসন্ন উত্‍সবের সূচনার বার্তা নিয়ে আসছে তারা।

(Courtesy-Wiki & several articles)

administrator

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *