www.machinnamasta.in

ওঁ শ্রীং হ্রীং ক্লী গং গণপতয়ে বর বরদ সর্বজনস্ময়ী বশমানয় ঠঃ ঠঃ

April 24, 2024 10:35 am
মা বগলামুখি (Bagalamukhi) মন্ত্র

বগলামুখী দেবী হলেন হিন্দু দশমহাবিদ্যা (Ten Mahabidya) দেবমণ্ডলীর অন্তর্গত অন্যতম দেবী। তিনি ভক্তের মানসিক ভ্রান্তি নাশের (অথবা শত্রু নাশের) দেবী। বগলামুখী দেবীর (Ma Bagalamukhi) ধ্যান মন্ত্র অনুসারে ইনি সুখ সাগরের মধ্যে মণিময় মণ্ডপে আচ্ছাদিত রত্ন নির্মিত বেদীর ওপর সিংহাসনে উপবিষ্টা, ইনি পীতবর্ণা, পীত বস্ত্র পরিহিতা, সুবর্ণের মালাতে দেবীর সর্ব শরীর বিভূষিত। হস্তে মুদ্গর ও আর এক হস্ত দ্বারা তিনি শত্রুর জিহ্বা ধারন করে আছেন।

বগলামুখী দেবী হলেন হিন্দু দশমহাবিদ্যা (Ten Mahabidya) দেবমণ্ডলীর অন্তর্গত অন্যতম দেবী। তিনি ভক্তের মানসিক ভ্রান্তি নাশের (অথবা শত্রু নাশের) দেবী। বগলামুখী দেবীর (Ma Bagalamukhi) ধ্যান মন্ত্র অনুসারে ইনি সুখ সাগরের মধ্যে মণিময় মণ্ডপে আচ্ছাদিত রত্ন নির্মিত বেদীর ওপর সিংহাসনে উপবিষ্টা, ইনি পীতবর্ণা, পীত বস্ত্র পরিহিতা, সুবর্ণের মালাতে দেবীর সর্ব শরীর বিভূষিত। হস্তে মুদ্গর ও আর এক হস্ত দ্বারা তিনি শত্রুর জিহ্বা ধারন করে আছেন। ব-বারুনী দেবী (অসুর দলনে উন্মত্তা), গ-সিদ্ধি দায়িনী (সর্ব প্রকার সিদ্ধি দেন), ল-পৃথিবী (পৃথিবী যেমন সব সহ্য করেন, মা যেমন ছেলের সব দুষ্টামী সহ্য করে তাকে লালন পালন করে তেমনি মা বগলা তেমন সহ্য করেন)। ইঁহাই এঁনার অসীমা শক্তির কথা জানায়। এই দেবী এক হস্তে মুদ্গর ও অপর হস্তে ইনি অসুরের বা শত্রুর জিহ্বা টানিয়া থাকেন। বগলামুখীর মন্ত্র ব্রহ্মাস্ত্রের ন্যায়। সাধকদের কাছে তা পরম সিদ্ধি, হিতকর। শত্রুকে দমনকারী রূপে ব্যবহৃত হয়। এই বগলা মন্ত্রের প্রভাব এত যে বায়ু কেও রুদ্ধ করা যায়। অগ্নিও শীতল হয়। গর্বিতের গর্ব চূর্ণ হয়। ক্ষিতিপতিও শঙ্কিত হন। মা বগলার ধ্যান মন্ত্রে শত্রু দলনী দেবী দুর্গার স্মরণ করা হয়। মা দুর্গা, দেব শত্রু মহিষ ও তার সেনাবাহিনীকে ধ্বংস করেছিলেন।
স্নানের পর প্রতিদিন সকালে দুইটি জ্বলন্ত ধূপকাঠি, এক প্রদীপ বাতি, দেবী বগলামুখীর একটি ভাল ছবি, এবং কিছু ফুল নিয়ে একটি গদির বা আসনের উপর বসুন, উত্তর বা পূর্ব অভিমুখে, আপনি আপনার ইচ্ছা, যা আপনি চাইছেন সেইধরনের কামনা জানিয়ে ও সেই সঙ্গে দেবীর কাছে বিশেষ কামনাটির জন্য আবেদন করে সাধনা শুরু করুন। আপনি যদি দেবী বগলামুখীর ছবি সংগ্রহ না করতে পারেন, তাহলে আপনি দেবী দুর্গার কোন ছবি নিতে পারেন।

মন্ত্রটি হল: “ওঁ হ্লীং বগলামুখী সর্ব দুষ্টানাং বাচং মুখং পদং স্তম্ভন, জিহ্বাং কীলয় কীলয় বুদ্ধি বিনাশায় হ্লীং ওঁ স্বাহা”।।
তবে এই ধ্যান সাধারনদের না করাই শ্রেয়, অনেক ভুল ভ্রান্তি হতে পারে। তবে একান্তই আপনি যদি করতে চান সেক্ষেত্রে কোনও ভালো জ্যোতিষবিদের কাছে নিজের সমস্যার কথা বলে যদি তিনি করতে বলেন বা আপনার করা উচিত বলে তিনি মনে করেন তবেই করবেন। অন্যথা এই মন্ত্র জপ করে হিতে বিপরীত হতে পারে। সাধারণত শত্রু দমনের জন্য এই বিদ্যা প্রয়োগ করা হয়। কেন কি দেবী শত্রু দমন করেন। কিন্তু দেখা গেছে দুর্মতি তান্ত্রিক রা অর্থের লোভে অনেক সময় অপরের সর্বনাশ করে ফেলেন। মারন, উচাটণ, বশীকরণ, স্তম্ভন এগুলি করে থাকেন। জাগতিক সুখের জন্য মায়ের বিদ্যা প্রয়োগ করেন। মায়ের বিদ্যা কেবল শুভ কাজের জন্যই প্রয়োগ করা উচিৎ। যেমন ভগবান বিষ্ণু বিশ্ব রক্ষার জন্য করেছিলেন। অপরের সর্বনাশ করা ঘোর পাপ।

…….অষ্টম মহাবিদ্যা মা বগলামুখী……

জয় ধ্বনিঃ জয় জয়কারিনী শত্রুনাশিনী বগলা।

এক হস্তে এক ভরতচন্দ্র রায় তাঁর “অন্নদামঙ্গল” কাব্যে সরল বাংলায় খুব সুন্দর করে দেবী বগলামুখীর ধ্যানমন্ত্রটি তুলে ধরেছেন——

” ধূমাবতী দেখে ভীম সভয় হৈলা।
হইয়া বগলামুখী সতী দেখা দিলা।।
রত্নগৃহে রত্নসিংহাসনমধ্যস্থিতা।
পীতবর্ণা পীতবস্ত্রাভরণ ভূষিতা।।
এক হস্তে এক অসুরের জিহ্বা ধরি।
আর হস্তে মুদ্গর ধরিয়া উর্দ্ধ করি।।
চন্দ্র সূর্য অনল উজ্জ্বল ত্রিনয়ন।
ললাটমণ্ডলে চন্দ্রখণ্ড সুশোভন।।
দেখি ভয়ে ভোলানাথ যান পলাইয়া। ”

সংস্কৃত ধ্যানটিতেও শেষাংশে আছে——

” জিহ্ববাগ্রমাদায় করেণ দেবীং, বামেন শত্রুন পরিপীড়য়ন্তীম্।
গদাভিঘাতেন চ দক্ষিণে ন পীতাম্বরাঢ্যাং দ্বিভুজাং নমামি।। ”

অর্থাৎ , বাম হস্তে জিহ্বাগ্র টেনে ধরে শত্রুকে পীড়ন করতে করতে যিনি ডান হস্তদ্বারা গদার
আঘাত করছেন , সেই পীতবসনা দ্বিভুজা দেবীকে প্রণাম করি। দেবী বগলামুখী উগ্রস্বভাবা , তাঁর
সংহারমূর্তি। মহিষমর্দিনী দুর্গার সঙ্গে তাঁর সবদিক দিয়ে সৌসাদৃশ্য- অঙ্গবরণ , অসুরদলনী ভূমিকা , ত্রিনয়ন, প্রায়ে সবটাই এক। পরমাত্মার সংহারশক্তিই হলে দেবী বগলা। সুতরাং , সর্বাভীষ্টদাত্রী এই দেবীকে সাধক আরাধনা করেন বাকসিদ্ধি ও শত্রুভয়মুক্তির জন্য। মহাবিদ্যাগণের মধ্যে এঁর ভূমিকা অন্যন্যসাধারণ।

মা বগলা হলেন দশ মহাবিদ্যার মধ্যে এক অভিনব দেবীমূর্তি।ইনিই দেবী বগলামুখী। মা বগলা তন্ত্রের বিখ্যাত শক্তি মূর্তি। ইনি পৃথিবীতে অসাধ্য-সাধনের অধিকারী। বগলামুখীর মন্ত্র জপ ও পুরশ্চরণে অসম্ভবও সম্ভব হয়। ঠিক ঠিক ক্রিয়াদি সম্পন্ন হলে মায়ের ভক্ত সর্বদিকে বিজয় লাভ করেন। মা বগলা সন্তানকে সকলরকম জাগতিক শত্রুতা থেকে রক্ষা করেন এবং সেইসাথে সন্তানের ভিতরের পরম শত্রু ষড় থেকেও রক্ষা করেন। সেইসাথে ব্যাধি ও গ্রহের প্রকোপ থেকেও রক্ষা মায়ের এই রূপের শরণ নিলে। ঠিকমত মায়ের শরণ নিলে মা সন্তানকে তার প্রারব্ধ অনুসারে সব দুর্যোগ কাটিয়ে সুখ শান্তি ও সৌভাগ্য দেন।

তাঁর মন্ত্রেই আছে তাঁর রূপের বিবরণ ——

“মধ্যে সুধাব্ধিমণিমণ্ডপ রত্নবেদী
সিংহাসনোপরিগতাং পরিপীতবর্ণাং।
পীতাম্বরাভরণ মাল্য বিভূষিতাঙ্গীং
দেবীং স্মরামি ধৃতমুদ্গর বৈরি জিহ্বাম্ ।।
জিহ্ববাগ্রমাদায় করেণ দেবীং
বামেন শত্রুন পরিপীড়য়ন্তীম্।
গদাভিঘাতেন চ দক্ষিণে ন পীতাম্বরাঢ্যাং দ্বিভুজাং নমামি।”

অর্থাৎ , বলা হচ্ছে যে সুধাসাগরের মধ্যে মণিমণ্ডপ, তার উপর রত্নবেদী , সেই বেদীতে রাখা সিংহাসনে দেবী বগলা আসীন রয়েছেন। তাঁর গায়ের রং হলদে। হলদে রং-এর কাপড়‌ , সেই রং-এর অলঙ্কার ও মালায় তিনি বিভূষিতা। তিনি বাম হাতে শ্যামল বর্ণবিশিষ্ট শত্রু অসুরের জিভ টেনে রেখেছেন ও অন্য হাতে গদা নিয়ে তাকে প্রহার করছেন। ইনিও তমোগুণ প্রধানা। ইনি জীবের দারিদ্র দুঃখরূপ অসুরের হাত থেকে ও শত্রুর হাত থেকে জীবকে রক্ষা করেন। এই তন্ত্রোক্ত দেবীর কৃপায় জীবের জীবনের নানা অশুভ অশান্তি দূর হয়।এঁর উৎপত্তি সম্পর্কে স্বতন্ত্র তন্ত্রে সংক্ষেপে বলা হয়েছে-সত্যযুগে পৃথিবীর বিনাশের জন্য একবার প্রচণ্ড প্রলয়ঝড়ের উদ্ভব হয়েছিল , তাতে পালনকর্তা বিষ্ণু খুব উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। তিনি আদ্যাশক্তি মহামায়ার শরণ নেন এই বিপদ থেকে ধরিত্রীকে রক্ষা করবার জন্য। ত্রিপুরাম্বিকা দেবী সেই তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে একটি হলুদ রং-এর হ্রদ সৃষ্টি করে তার মধ্যে এক মঙ্গলবারে চতুর্দশী তিথিতে বীর রাত্রির মধ্যভাগে জলক্রীড়ায় নিজের রূপ সৃষ্টি করেন – ইনি বিষ্ণুতেজোময়ী দেবী বগলামুখী। দেবী বগলামুখী ভগবান বিষ্ণুকে দর্শন দিলেন। ভগবান বিষ্ণু মা বগলার কাছে স্তম্ভন বিদ্যা পেয়ে ঐ বিশ্ব ঝড় কে স্তম্ভন করে জগত ও জগতের জীব কূলকে রক্ষা করলেন । এই দেবীর পূজা সাধারণত দৈবী প্রকোপ শান্ত হয়। ইনি ভোগ ও মুক্তি দুটি প্রদান করেন।

বগলামুখী বা বগলা (দেবনাগরী: बगलामुखी) হলেন হিন্দু দশমহাবিদ্যা দেবমণ্ডলীর অন্তর্গত অন্যতম দেবী। তিনি ভক্তের মানসিক ভ্রান্তি নাশের (অথবা শত্রু নাশের) দেবী। তাঁর অস্ত্র মুগুর। উত্তর ভারতে তিনি পীতাম্বরী নামেও পরিচিত। “বগলামুখী” শব্দটি “বগলা” (অর্থাৎ , ধরা) এবং “মুখ” শব্দদুটি থেকে উৎপন্ন। এই শব্দটির অর্থ যিনি যাঁর মুখ কোনো কিছুর নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে তুলে নিতে সমর্থ। অন্য একটি অর্থে , যিনি মুখ তুলে ধরেছেন।

বগলামুখীর গায়ের রং সোনালি এবং তাঁর কাপড়ের রং হলুদ। তিনি হলুদ পদ্মের ভরা অমৃতের সমুদ্রের মাঝে একটি হলুদ সিংহাসনে বসে থাকেন। তাঁর মাথায় অর্ধচন্দ্র শোভা পায়। দুটি পৃথক বর্ণনার একটিতে তাঁকে দ্বিভূজা ও অপরটিতে তাঁকে চতুর্ভূজা বলা হয়েছে।

বগলামুখীর দ্বিভূজা মূর্তি পূজার প্রচলনই বেশি। এই মূর্তিটিকে সৌম্য মূর্তি ধরা হয়। এই মূর্তিতে তাঁর ডান হাতে থাকে গদা। এই গদা দিয়ে তিনি শত্রুকে প্রহার করেন। অন্যদিকে বাঁহাতে শত্রুর জিভটি টেনে ধরে থাকেন। এই মূর্তিটিকে অনেক সময় “সম্ভন” (শত্রুকে নিস্তব্ধ করে দিয়ে তাকে শক্তিহীন করা) প্রদর্শন হিসেবে ধরা হয়। এই বর লাভের জন্য ভক্তেরা তাঁর পূজা করে থাকে। অন্যান্য মহাবিদ্যাদেরও এই শক্তি আছে বলে ধরা হয়।

বগলামুখীকে” “পীতাম্বরা দেবী” বা “ব্রহ্মাস্ত্র-রূপিণী”ও বলা হয়। তিনি একটি গুণকে বিপরীত গুণে পরিবর্তন করতে পারেন বলে হিন্দুরা বিশ্বাস করেন। যেমন , তিনি বাক্যকে নিঃস্তব্ধতায় , জ্ঞানকে অজ্ঞানে , শক্তিকে শক্তিহীনতায় , পরাজয়কে জয়ে পরিবর্তন করেন।

বগলামুখী দেবী সম্পর্কে একটি গল্প প্রচলিত
আছে :——

এঁর উৎপত্তি সম্পর্কে স্বতন্ত্র তন্ত্রে সংক্ষেপে বলা হয়েছে-সত্যযুগে পৃথিবীর বিনাশের জন্য একবার প্রচণ্ড প্রলয়ঝড়ের উদ্ভব হয়েছিল , এই ঝড়ে যখন সকল সৃষ্টি ধ্বংসের সম্মুখীন হয় , তখন সকল দেবতা সৌরাষ্ট্র অঞ্চলে একত্রিত হন। বিষ্ণু খুব উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। তিনি আদ্যাশক্তি মহামায়ার শরণ নেন এই বিপদ থেকে ধরিত্রীকে রক্ষা করবার জন্য। ত্রিপুরাম্বিকা দেবী সেই তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে একটি হলুদ রং-এর হ্রদ সৃষ্টি করে তার মধ্যে এক মঙ্গলবারে চতুর্দশী তিথিতে বীর রাত্রির মধ্যযামে জলক্রীড়ায় নিজের রূপ সৃষ্টি করেন , সেই ঝড় থামিয়ে দেন ও ধরিত্রীকে রক্ষা করেন-
ইনি বিষ্ণুতেজোময়ী দেবী-বগলামুখী। ভারতের মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের দাতিয়া অঞ্চলের পীতাম্বরা পীঠমে হরিদ্রা সরোবরের অনুরূপ একটি হ্রদ রয়েছে।

বগলামুখী তন্ত্রের বিখ্যাত শক্তি মূর্তি-এঁর নামের অর্থ ব-কারে বারুণী দেবী, গ-কারে সিদ্ধিদায়িনী, ল-কারে পৃথিবী। ইনি পৃথিবীতে অসাধ্য-সাধনে অধিকারী। বগলামুখীর মন্ত্র জপ ও পুরশ্চরণে অসম্ভবও সম্ভব হয়। ঠিক ঠিক ক্রিয়াদি সম্পন্ন হলে পবনের গতি স্তব্ধ হয় , অগ্নি শীতল হয় , গর্বিতের গর্ব যায় , ক্ষিতিপতিও শংকিত হয়।

এই দেবীর প্রকাশ আমরা মা সারদার জীবনে
দেখি । মা সকলকে দীক্ষা দিতেন । ভক্তদের কৃপা করতেন । শ্রীমা সকলকে চেতনা দান করতেন । মানুষের মনে কাম , ক্রোধ , লোভ , মদ , মাৎসর্য আছে এগুলিকে ষড়রিপু বা ছয় শত্রু বলা হয় । শ্রীমা এই শত্রুদের দলিত করেছেন । যেমন মা বগলা শত্রু দলন করেন । শ্রীমায়ের ভক্ত সন্তান দের মনের মধ্যে অবস্থান কারী এই শত্রুদের তিনি তাঁর শক্তি দ্বারা দলিত করেছেন । ভক্তেরা মায়ের সান্নিধ্যে এসে পেয়েছেন অমৃত । মায়ের এখানেই বগলামুখী রূপ প্রস্ফুটিত ।

জৈনেক এক ভক্তের মুখে তাঁর স্বপ্ন বৃতান্ত শুনে স্বামীজী ইঙ্গিতে তাঁকে বলেছিলেন ,
“… ঐ মন্ত্র জপ করতে থাক , পরে সশরীরে সেই মন্ত্রদাত্রী মূর্তি দেখতে পাবি । তিনি বগলার অবতার , সরস্বতী মূর্তিতে বর্তমানে আবির্ভূতা । … সময়ে বুঝতে পারবি । যখন দেখতে পাবি , দেখবি উপরে মহা শান্তভাব কিন্তু ভিতরে সংহারমূর্তি ; সরস্বতী অতি শান্ত কিনা।”

ঠাকুর মায়ের শান্ত সরস্বতী রুপের কথা জানিয়েছিলেন । কিন্তু তিনি যে সংহার মূর্তি বগলা এবং ‘জ্যান্ত দুর্গা’ – , যিনি দানব দলনী মহাশক্তি – একথা স্বামী বিবেকানন্দ গুরুভাই ও শিষ্যদের বলেন । তাঁর আর্ষদৃষ্টিতে শ্রী শ্রীমায়ের এই আশ্চর্য স্বরূপ উদ্ঘাটিত হয়েছিল ।

মায়ের এক সময় আমরা বগলা রূপ দেখি । ঘটনাটি মা স্বয়ং বলেছেন এই ভাবে ——
“ হরিশ এইসময় ( শ্রী রামকৃষ্ণের তিরোভাবের পর শ্রীমা যখন কামারপুকুরে আছেন ) কামারপুকুরে এসে কিছুদিন ছিল । একদিন আমি পাশের বাড়ি থেকে আসছি । এসে বাড়ির ভেতর যেই ঢুকেছি , অমনি হরিশ আমার পিছু পিছু ছুটছে । হরিশ তখন ক্ষেপা । পরিবার পাগল করে দিয়েছিল । তখন বাড়িতে আর কেউ নেই । আমি কোথায় যাই । তাড়াতাড়ি ধানের হামারের ( তখন ঠাকুরের জন্মস্থানের উপর ধানের গোলা ছিল ) চারদিকে ঘুরতে লাগলুম । ও আর কিছুতেই ছাড়ে না । সাতবার ঘুরে আমি আর পারলুম না । তখন… আমি নিজ মূর্তি ধরে দাঁড়ালুম । তারপর ওর বুকে হাঁটু দিয়ে জিভ টেনে ধরে গালে এমন চড় মারতে লাগলুম যে , ও হেঁ হেঁ করে হাঁপাতে লাগল । আমার হাতের আঙ্গুল লাল হয়ে গিছল ।” মা বগলার এক রূপ তিনি। মা বগলা স্বয়ং মায়ের মধ্যে তখন আবির্ভূতা । তিনি বগলা আবার তিনিই ষোড়শী ।

বিষ্ণুযামল তন্ত্রে বগলামুখীর অষ্টোত্তর শতনামে দেবীকে বন্দনা করে পীতবসনা , পীতভূষনভূষিতা , পীতপুস্পপ্রীতা , পীতহরা , পীতস্বরূপিনী । জয়রামবাটিতে একদা জৈনেক ভক্ত সন্তানকে শ্রী শ্রী মা নিজে মুখে বলেন – “ সাদা ফুল ঠাকুর ভালোবাসেন , হলুদ ফুল আমি ভালোবাসি ।” হলুদ ফুলের প্রতি তাঁর প্রীতি বগলামুখী সত্ত্বার পরিচায়ক ।

বগলামুখী মহাবিদ্যা , ব- বারুনী দেবী( অসুর দলনে উন্মত্তা), গ- সিদ্ধি দায়িনী( সর্ব প্রকার সিদ্ধি দেন) , ল- পৃথিবী( পৃথিবী যেমন সব সহ্য করেন, মা যেমন ছেলের সব দুষ্টামী সহ্য করে তাকে লালন পালন করে তেমনি মা বগলা তেমন সহ্য করেন) । ইঁহাই এঁনার অসীমা শক্তির কথা জানায়। এই দেবী এক হস্তে মুদ্গর ও অপর হস্তে ইনি অসুরের বা শত্রুর জিহ্বা টানিয়া থাকেন। দশমহাবিদ্যার মধ্যে অষ্টম মহাবিদ্যা হলেন বগলা । এই দেবী সিদ্ধ বিদ্যা ও পীতাম্বরবিদ্যা নামে প্রসিদ্ধা। এই দেবী শব বাহনা, শবের ওপর থাকেন। এই দেবীর পূজো বাংলাতে কম দেখা যায়। এই দেবীর সাথে দুর্গা , জগদ্ধাত্রী অল্প কিছুটা সাদৃশ্য আছে। এই দেবী ভয়ানক রূপ ধারিনী নন। দেবী উগ্র স্বভাবা । মানে অসুর নিধন কালে ইনি ভয়নাক মূর্তিতে আসেন। পরমাত্মার সংহার শক্তি হলেন মা বগলা। সাধক গণ নানা প্রকার সিদ্ধি, বাক সিদ্ধি , শত্রু দমনের জন্য এই দেবীর সাধনা করেন ।

তন্ত্রসার শাস্ত্রে এই দেবীর মাহাত্ম্য বলা হয়—–

” ব্রহ্মাস্ত্রং সংপ্রবক্ষ্যামি সদ্যঃ প্রত্যয়কারম্ ।
সাধকানাং হিতার্থায় স্তম্ভনায় চ বৈরিনাম্ ।।
যস্যাঃ স্মরণমাত্রেণ পবনোহপি স্থিরায়তে । ”

ভারতের অসম রাজ্যের গুয়াহাটিতে অবস্থিত কামাখ্যা মন্দির তন্ত্রবিদ্যার কেন্দ্রস্থল। এখানে দশমহাবিদ্যার মন্দির আছে। এই মন্দিরের কয়েক মেইল দূরেই বগলামুখী মন্দিরের অবস্থান। উত্তর ভারতের হিমাচল প্রদেশ রাজ্যের বাণখণ্ডীতে , মধ্যভারতের মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের আগর মালব জেলার নলখেদা ও দাতিয়ার পীতাম্বরা পীঠে এবং দক্ষিণ ভারতের তামিল নাড়ু রাজ্যের তিরুনেলভেলি জেলার পাপানকুলাম জেলার কল্লাইদাইকুরিচিতে বগলামুখীর মন্দির আছে।

এই বগলামুখীর মন্ত্র ব্রহ্মাস্ত্র স্বরূপ। সাধক দের কাছে তা পরম সিদ্ধি , হিতকর। শত্রুকে স্তম্ভন কারী ব্রহ্মাস্ত্র রূপেও ব্যবহৃত হয় । এই বগলা মন্ত্রের প্রভাব এত যে বায়ু কেও রুদ্ধ করা যায়। অগ্নিও শীতল হয়। গর্বিতের গর্ব চূর্ণ হয়। ক্ষিতিপতিও শঙ্কিত হন । মা বগলার ধ্যান মন্ত্রে শত্রু দলনী দেবী দুর্গার স্মরণ করা হয়। মা দুর্গা , দেব শত্রু মহিষ ও তার সেনাবাহিনীকে ধ্বংস করেছিলেন।

সাধারণত শত্রু দমনের জন্য এই বিদ্যা প্রয়োগ করা হয়। কেন কি দেবী শত্রু দমন করেন । কিন্তু দেখা গেছে দুর্মতি তান্ত্রিক রা অর্থের লোভে অনেক সময় অপরের সর্বনাশ করে ফেলেন। মারন , উচাটণ , বশীকরণ , স্তম্ভন এগুলি করে থাকেন। জাগতিক সুখের জন্য মায়ের বিদ্যা প্রয়োগ করেন। মায়ের বিদ্যা কেবল শুভ কাজের জন্যই প্রয়োগ করা উচিৎ। যেমন ভগবান বিষ্ণু বিশ্ব রক্ষার জন্য করেছিলেন। অপরের সর্বনাশ করা ঘোর পাপ। যেসব তান্ত্রিক নিরীহ লোকের সর্বনাশ করেন এই সব মন্ত্র বিদ্যা দিয়ে- তাদের যে মা কি ভয়ানক শাস্তি দেন, তা কল্পনার বাইরে । আর যে সব লোক টাকা পয়সা দিয়ে এই সব তান্ত্রিক দের উৎসাহিত করেন ব্যাক্তিগত আক্রোশ মেটানোর জন্য – জন্ম জন্মান্তরেও তারা মায়ের কোপ থেকে নিস্কৃতি পান না । শত্রু বাইরে থাকেনা , শত্রু আছে নিজের মধ্যেই । মা সারদা বলতেন- দোষ দেখবে নিজের । আমাদের মধ্যে যে ষড় রিপু আছে, যাদের নিষ্পেষণে আমরা নানান পাপাচার করে থাকি এগুলো কিন্তু কোন অসুর বা শত্রুর থেকে কম নয়। এরা আধ্যাত্মিক পথ বন্ধ করে নরকের রাস্তা পরিষ্কার করে।

বগলা:
দশমহাবিদ্যার অষ্টম রূপ বগলা। রুরু নামক দৈত্যের পুত্র দুর্গম দেবতাদের চেয়ে বলশালী হওয়ার জন্য ব্রহ্মার তপস্যা করে বরপ্রাপ্ত হন। দেবতারা তখন দেবী ভগবতীর আরধনা করেন। দেবী আর্বির্ভূত হয়ে যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। দেবীর গায়ের বর্ণ পীত। বসন পীত বর্ণ। সুধা সমুদ্রের মাঝে সিংহাসনে উপবিষ্টা। এঁর বাহন শব। দ্বিভূজ দেবী বাম হাতে দুর্গম অসুরের জিহবা ধরে ডান হাতে গদা দিয়ে শত্র দমন করেন। এই যুদ্ধে দেবীর দেহ হাতে কালী, তারা, ভৈরবী, রমা, মাতঙ্গী, বগলা,কামাক্ষী, জম্ভিনী, মোহিনী, ছিন্নমুণ্ডা, গুহ্যকালী প্রভৃতি মহাশক্তি বের হয়ে যুদ্ধে অবতীর্ণ হন।

॥ শ্রীবগলামুখীস্তোত্রম্ ॥

ॐ শ্রীগণেশায় নমঃ ।

চলত্কনককুণ্ডলোল্লসিতচারুগণ্ডস্থলীং
লসত্কনকচম্পকদ্যুতিমদিন্দুবিম্বাননাম্ ।
গদাহতবিপক্ষকাং কলিতলোলজিহ্বাঞ্চলাং
স্মরামি বগলামুখীং বিমুখবাঙ্মনস্স্তম্ভিনীম্ ॥ ১॥

পীয়ূষোদধিমধ্যচারুবিলদ্রক্তোত্পলে মণ্ডপে
সত্সিংহাসনমৌলিপাতিতরিপুং প্রেতাসনাধ্যাসিনীম্ ।
স্বর্ণাভাং করপীডিতারিরসনাং ভ্রাম্যদ্গদাং বিভ্রতীমিত্থং
ধ্যায়তি য়ান্তি তস্য সহসা সদ্যোঽথ সর্বাপদঃ ॥ ২॥

দেবি ত্বচ্চরণাম্বুজার্চনকৃতে য়ঃ পীতপুষ্পাঞ্জলীন্ভক্ত্যা
বামকরে নিধায় চ মনুং মন্ত্রী মনোজ্ঞাক্ষরম্ ।
পীঠধ্যানপরোঽথ কুম্ভকবশাদ্বীজং স্মরেত্পার্থিবং
তস্যামিত্রমুখস্য বাচি হৃদয়ে জাড্যং ভবেত্তত্ক্ষণাত্ ॥ ৩॥

বাদী মূকতি রঙ্কতি ক্ষিতিপতির্বৈশ্বানরঃ শীততি ক্রোধী
শাম্যতি দুর্জনঃ সুজনতি ক্ষিপ্রানুগঃ খঞ্জতি ।
গর্বী খর্বতি সর্ববিচ্চ জডতি ত্বন্মন্ত্রিণা য়ন্ত্রিতঃ
শ্রীর্নিত্যে বগলামুখি প্রতিদিনং কল্যাণি তুভ্যং নমঃ ॥ ৪॥

মন্ত্রস্তাবদলং বিপক্ষদলনে স্তোত্রং পবিত্রং চ তে
য়ন্ত্রং বাদিনিয়ন্ত্রণং ত্রিজগতাং জৈত্রং চ চিত্রং চ তে ।
মাতঃ শ্রীবগলেতি নাম ললিতং য়স্যাস্তি জন্তোর্মুখে
ত্বন্নামগ্রহণেন সংসদি মুখে স্তম্ভো ভবেদ্বাদিনাম্ ॥ ৫॥

দুষ্টস্তম্ভনমুগ্রবিঘ্নশমনং দারিদ্র্যবিদ্রাবণং
ভূভৃত্সন্দমনং চলন্মৃগদৃশাং চেতঃসমাকর্ষণম্ ।
সৌভাগ্যৈকনিকেতনং সমদৃশঃ কারুণ্যপূর্ণেক্ষণম্
মৃত্যোর্মারণমাবিরস্তু পুরতো মাতস্ত্বদীয়ং বপুঃ ॥ ৬॥

মাতর্ভঞ্জয় মদ্বিপক্ষবদনং জিহ্বাং চ সঙ্কীলয়
ব্রাহ্মীং মুদ্রয় দৈত্যদেবধিষণামুগ্রাং গতিং স্তম্ভয় ।
শত্রূংশ্চূর্ণয় দেবি তীক্ষ্ণগদয়া গৌরাঙ্গি পীতাম্বরে
বিঘ্নৌঘং বগলে হর প্রণমতাং কারুণ্যপূর্ণেক্ষণে ॥ ৭॥

মাতর্ভৈরবি ভদ্রকালি বিজয়ে বারাহি বিশ্বাশ্রয়ে
শ্রীবিদ্যে সময়ে মহেশি বগলে কামেশি বামে রমে ।
মাতঙ্গি ত্রিপুরে পরাত্পরতরে স্বর্গাপবর্গপ্রদে
দাসোঽহং শরণাগতঃ করুণয়া বিশ্বেশ্বরি ত্রাহি মাম্ ॥ ৮॥

সংরম্ভে চৌরসঙ্ঘে প্রহরণসময়ে বন্ধনে ব্যাধিমধ্যে
বিদ্যাবাদে বিবাদে প্রকুপিতনৃপতৌ দিব্যকালে নিশায়াম্ ।
বশ্যে বা স্তম্ভনে বা রিপুবধসময়ে নির্জনে বা বনে বা
গচ্ছংস্তিষ্ঠংস্ত্রিকালং য়দি পঠতি শিবং প্রাপ্নুয়াদাশু ধীরঃ ॥ ৯॥

ত্বং বিদ্যা পরমা ত্রিলোকজননী বিঘ্নৌঘসঞ্ছেদিনী
য়োষিত্কর্ষণকারিণী জনমনঃসম্মোহসন্দায়িনী ।
স্তম্ভোত্সারণকারিণী পশুমনঃসম্মোহসন্দায়িনী
জিহ্বাকীলনভৈরবী বিজয়তে ব্রহ্মাদিমন্ত্রো য়থা ॥ ১০॥

বিদ্যা লক্ষ্মীর্নিত্যসৌভাগ্যমায়ুঃ পুত্রৈঃ পৌত্রৈঃ সর্বসাম্রাজ্যসিদ্ধিঃ ।
মানো ভোগো বশ্যমারোগ্যসৌখ্যং প্রাপ্তং তত্তদ্ভূতলেঽস্মিন্নরেণ ॥ ১১॥

ত্বত্কৃতে জপসন্নাহং গদিতং পরমেশ্বরি ।
দুষ্টানাং নিগ্রহার্থায় তদ্গৃহাণ নমোঽস্তু তে ॥ ১২॥

পীতাম্বরাং চ দ্বিভুজাং ত্রিনেত্রাং গাত্রকোমলাম্ ।
শিলামুদ্গরহস্তাং চ স্মরে তাং বগলামুখীম্ ॥ ১৩॥

ব্রহ্মাস্ত্রমিতি বিখ্যাতং ত্রিষু লোকেষু বিশ্রুতম্ ।
গুরুভক্তায় দাতব্যং ন দেয়ং য়স্য কস্যচিত্ ॥ ১৪॥

নিত্যং স্তোত্রমিদং পবিত্রমিহ য়ো দেব্যাঃ পঠত্যাদরাদ্ধৃত্বা
য়ন্ত্রমিদং তথৈব সমরে বাহৌ করে বা গলে ।
রাজানোঽপ্যরয়ো মদান্ধকরিণঃ সর্পা মৃগেন্দ্রাদিকাস্তে
বৈ য়ান্তি বিমোহিতা রিপুগণা লক্ষ্মীঃ স্থিরা সিদ্ধয়ঃ ॥ ১৫॥

॥ ইতি শ্রীরুদ্রয়ামলে তন্ত্রে শ্রীবগলামুখীস্তোত্রং সমাপ্তম্ ॥

॥ অপরাধক্ষমাপণস্তোত্রম্ ॥

ওঁ অপরাধশতং কৃত্বা জগদম্বেতি চোচ্চরেত্ ।
য়াং গতিং সমবাপ্নোতি ন তাং ব্রহ্মাদয়ঃ সুরাঃ ॥ ১॥

সাপরাধোঽস্মি শরণং প্রাপ্তস্ত্বাং জগদম্বিকে ।
ইদানীমনুকম্প্যোঽহং য়থেচ্ছসি তথা কুরু ॥ ২॥

অজ্ঞানাদ্বিস্মৃতের্ভ্রোন্ত্যা য়ন্ন্যূনমধিকং কৃতম্ ।
তত্সর্বং ক্ষম্যতাং দেবি প্রসীদ পরমেশ্বরি ॥ ৩॥

কামেশ্বরি জগন্মাতঃ সচ্চিদানন্দবিগ্রহে ।
গৃহাণার্চামিমাং প্রীত্যা প্রসীদ পরমেশ্বরি ॥ ৪॥

সর্বরূপময়ী দেবী সর্বং দেবীময়ং জগত্ ।
অতোঽহং বিশ্বরূপাং ত্বাং নমামি পরমেশ্বরীম্ ॥ ৫॥

য়দক্ষরং পরিভ্রষ্টং মাত্রাহীনঞ্চ য়দ্ভবেত্ ।
পূর্ণং ভবতু তত্ সর্বং ত্বত্প্রসাদান্মহেশ্বরি ॥ ৬॥

য়দত্র পাঠে জগদম্বিকে ময়া
বিসর্গবিন্দ্বক্ষরহীনমীরিতম্ ।
তদস্তু সম্পূর্ণতমং প্রসাদতঃ
সঙ্কল্পসিদ্ধিশ্ব সদৈব জায়তাম্ ॥ ৭॥

য়ন্মাত্রাবিন্দুবিন্দুদ্বিতয়পদপদদ্বন্দ্ববর্ণাদিহীনং
ভক্ত্যাভক্ত্যানুপূর্বং প্রসভকৃতিবশাত্ ব্যক্ত্তমব্যক্ত্তমম্ব ।
মোহাদজ্ঞানতো বা পঠিতমপঠিতং সাম্প্রতং তে স্তবেঽস্মিন্
তত্ সর্বং সাঙ্গমাস্তাং ভগবতি বরদে ত্বত্প্রসাদাত্ প্রসীদ ॥ ৮॥

প্রসীদ ভগবত্যম্ব প্রসীদ ভক্তবত্সলে ।
প্রসাদং কুরু মে দেবি দুর্গে দেবি নমোঽস্তু তে ॥ ৯॥

॥ ইতি অপরাধক্ষমাপণস্তোত্রং সমাপ্তম্॥

তান্ত্রিক নিরীহ লোকের সর্বনাশ করেন এই সব মন্ত্র বিদ্যা দিয়ে- তাদের যে মা কি ভয়ানক শাস্তি দেন, তা কল্পনার বাইরে। আর যে সব লোক টাকা পয়সা দিয়ে এই সব তান্ত্রিক দের উৎসাহিত করেন ব্যাক্তিগত আক্রোশ মেটানোর জন্য – জন্ম জন্মান্তরেও তারা মায়ের কোপ থেকে নিস্কৃতি পান না। শত্রু বাইরে থাকেনা, শত্রু আছে নিজের মধ্যেই। মা সারদা বলতেন- দোষ দেখবে নিজের। আমাদের মধ্যে যে ষড় রিপু আছে, যাদের নিষ্পেষণে আমরা নানান পাপাচার করে থাকি এগুলো কিন্তু কোন অসুর বা শত্রুর থেকে কম নয়। এরা আধ্যাত্মিক পথ বন্ধ করে নরকের রাস্তা পরিষ্কার করে।

উত্তর ভারতে তিনি পীতাম্বরী নামেও ভারতের অসম রাজ্যের গুয়াহাটিতে অবস্থিত কামাখ্যা মন্দির তন্ত্রবিদ্যার কেন্দ্রস্থল। এখানে দশমহাবিদ্যার মন্দির আছে। এই মন্দিরের কয়েক মাইল দূরেই বগলামুখী মন্দিরের অবস্থান। উত্তর ভারতের হিমাচল প্রদেশ রাজ্যের বাণখণ্ডীতে, মধ্যভারতের মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের আগর মালব জেলার নলখেদা ও দাতিয়ারপীতাম্বরা পীঠে এবং দক্ষিণ ভারতের তামিল নাড়ুরাজ্যের তিরুনেলভেলি জেলার পাপানকুলাম জেলার কল্লাইদাইকুরিচিতে এবং পশ্চিমবঙ্গের কলকাতাতেও বগলামুখীর মন্দির আছে।

মা বগলামুখী ধ্যান ও শোস্ত্রমঃ
=============
মধ্যে সুধাব্ধিমণিমণ্ডপরত্নবেদী সিংহাসনোপরিগতাং পরিপীতবর্ণাম্।
পীতাম্বরং কণকমাল্যবিভূষিতাঙ্গীং দেবীং স্মরামি ধৃতমুদ্গর বৈরিজিহ্বাম্।।
জিহ্ববাগ্রমাদায় করেণ দেবীং,বামেন শত্রুন্ পরিপীড়য়ন্তীম্।
গদাভিঘাতেন চ দক্ষিণে ন পীতাম্বরাঢ্যাং দ্বিভুজাং নমামি।

— মুণ্ডমালা তন্ত্র অনুসারে দশমহাবিদ্যা হলেন কালী, তারা, ষোড়শী, ভৈরবী, ভুবনেশ্বরী, ছিন্নমস্তা, ধূমাবতী, বগলা, মাতঙ্গী ও কমলাকামিনী। মা বগলামুখী। ইনি অষ্টম মহাবিদ্যা। ইনি হলুদ পুস্প খুব ভালোবাসেন। এঁনার পূজোয় হলুদ পুস্প, হলুদ সিঁদুর দেওয়া হয়। মা বগলা কে শত্রু নাশের জন্য পূজো করা হয়। আমাদের অন্তরে যে রিপু, স্বার্থপরতা, হিংসা, অহংকার রুপী যে শত্রু আছে – আমরা তার বিনাশের জন্য মায়ের চরণে প্রার্থনা জানাবো। মা যেন সেই শত্রু গুলিকে নিপাত করেন।

মা বগলামুখী জপমন্ত্র —-
ওঁ হ্লীং বগলামুখি
সর্বদুষ্টানাং বাচং মুখং পদং স্তম্ভয়
জিহ্বাং কীলয়
বুদ্ধিং বিনাশয় হ্লীং ওঁ স্বাহা

॥ শ্রীবগলামুখীস্তোত্রম্ ॥

শ্রীগণেশায় নমঃ ।

চলত্কনককুণ্ডলোল্লসিতচারুগণ্ডস্থলীং
লসত্কনকচম্পকদ্যুতিমদিন্দুবিম্বাননাম্ ।
গদাহতবিপক্ষকাং কলিতলোলজিহ্বাংচলাং
স্মরামি বগলামুখীং বিমুখবাঙ্মনস্স্তম্ভিনীম্ ॥ ১॥

পীয়ূষোদধিমধ্যচারুবিলদ্রক্তোত্পলে মণ্ডপে
সত্সিংহাসনমৌলিপাতিতরিপুং প্রেতাসনাধ্যাসিনীম্ ।
স্বর্ণাভাং করপীডিতারিরসনাং ভ্রাম্যদ্গদাং বিভ্রতীমিত্থং
ধ্যায়তি য়ান্তি তস্য সহসা সদ্যোঽথ সর্বাপদঃ ॥ ২॥

দেবি ত্বচ্চরণাম্বুজার্চনকৃতে য়ঃ পীতপুষ্পাঞ্জলীন্ভক্ত্যা
বামকরে নিধায় চ মনুং মন্ত্রী মনোজ্ঞাক্ষরম্ ।
পীঠধ্যানপরোঽথ কুম্ভকবশাদ্বীজং স্মরেত্পার্থিবং
তস্যামিত্রমুখস্য বাচি হৃদয়ে জাড্যং ভবেত্তত্ক্ষণাত্ ॥ ৩॥

বাদী মূকতি রঙ্কতি ক্ষিতিপতির্বৈশ্বানরঃ শীততি ক্রোধী
শাম্যতি দুর্জনঃ সুজনতি ক্ষিপ্রানুগঃ খঞ্জতি ।
গর্বী খর্বতি সর্ববিচ্চ জডতি ত্বন্মন্ত্রিণা য়ন্ত্রিতঃ
শ্রীর্নিত্যে বগলামুখি প্রতিদিনং কল্যাণি তুভ্যং নমঃ ॥ ৪॥

মন্ত্রস্তাবদলং বিপক্ষদলনে স্তোত্রং পবিত্রং চ তে
য়ন্ত্রং বাদিনিয়ন্ত্রণং ত্রিজগতাং জৈত্রং চ চিত্রং চ তে ।
মাতঃ শ্রীবগলেতি নাম ললিতং য়স্যাস্তি জন্তোর্মুখে
ত্বন্নামগ্রহণেন সংসদি মুখে স্তম্ভো ভবেদ্বাদিনাম্ ॥ ৫॥

দুষ্টস্তম্ভনমুগ্রবিঘ্নশমনং দারিদ্র্যবিদ্রাবণং
ভূভৃত্সন্দমনং চলন্মৃগদৃশাং চেতঃসমাকর্ষণম্ ।
সৌভাগ্যৈকনিকেতনং সমদৃশঃ কারুণ্যপূর্ণেক্ষণম্
মৃত্যোর্মারণমাবিরস্তু পুরতো মাতস্ত্বদীয়ং বপুঃ ॥ ৬॥

মাতর্ভঞ্জয় মদ্বিপক্ষবদনং জিহ্বাং চ সঙ্কীলয়
ব্রাহ্মীং মুদ্রয় দৈত্যদেবধিষণামুগ্রাং গতিং স্তংভয় ।
শত্রূংশ্চূর্ণয় দেবি তীক্ষ্ণগদয়া গৌরাঙ্গি পীতাম্বরে
বিঘ্নৌঘং বগলে হর প্রণমতাং কারুণ্যপূর্ণেক্ষণে ॥ ৭॥

মাতর্ভৈরবি ভদ্রকালি বিজয়ে বারাহি বিশ্বাশ্রয়ে
শ্রীবিদ্যে সময়ে মহেশি বগলে কামেশি বামে রমে ।
মাতঙ্গি ত্রিপুরে পরাত্পরতরে স্বর্গাপবর্গপ্রদে
দাসোঽহং শরণাগতঃ করুণয়া বিশ্বেশ্বরি ত্রাহি মাম্ ॥ ৮॥

সংরম্ভে চৌরসঙ্ঘে প্রহরণসময়ে বন্ধনে ব্যাধিমধ্যে
বিদ্যাবাদে বিবাদে প্রকুপিতনৃপতৌ দিব্যকালে নিশায়াম্ ।
বশ্যে বা স্তম্ভনে বা রিপুবধসময়ে নির্জনে বা বনে বা
গচ্ছংস্তিষ্ঠংস্ত্রিকালং য়দি পঠতি শিবং প্রাপ্নুয়াদাশু ধীরঃ ॥ ৯॥

ত্বং বিদ্যা পরমা ত্রিলোকজননী বিঘ্নৌঘসংছেদিনী
য়োষিত্কর্ষণকারিণী জনমনঃসম্মোহসন্দায়িনী ।
স্তম্ভোত্সারণকারিণী পশুমনঃসম্মোহসন্দায়িনী
জিহ্বাকীলনভৈরবী বিজয়তে ব্রহ্মাদিমন্ত্রো য়থা ॥ ১০॥

বিদ্যা লক্ষ্মীর্নিত্যসৌভাগ্যমায়ুঃ পুত্রৈঃ পৌত্রৈঃ সর্বসাম্রাজ্যসিদ্ধিঃ ।
মানো ভোগো বশ্যমারোগ্যসৌখ্যং প্রাপ্তং তত্তদ্ভূতলেঽস্মিন্নরেণ ॥ ১১॥

ত্বত্কৃতে জপসন্নাহং গদিতং পরমেশ্বরি ।
দুষ্টানাং নিগ্রহার্থায় তদ্গৃহাণ নমোঽস্তু তে ॥ ১২॥

পীতাম্বরাং চ দ্বিভুজাং ত্রিনেত্রাং গাত্রকোমলাম্ ।
শিলামুদ্গরহস্তাং চ স্মরে তাং বগলামুখীম্ ॥ ১৩॥

ব্রহ্মাস্ত্রমিতি বিখ্যাতং ত্রিষু লোকেষু বিশ্রুতম্ ।
গুরুভক্তায় দাতব্যং ন দেয়ং য়স্য কস্যচিত্ ॥ ১৪॥

নিত্যং স্তোত্রমিদং পবিত্রমিহ য়ো দেব্যাঃ পঠত্যাদরাদ্ধৃত্বা
য়ন্ত্রমিদং তথৈব সমরে বাহৌ করে বা গলে ।
রাজানোঽপ্যরয়ো মদান্ধকরিণঃ সর্পা মৃগেন্দ্রাদিকাস্তে
বৈ য়ান্তি বিমোহিতা রিপুগণা লক্ষ্মীঃ স্থিরা সিদ্ধয়ঃ ॥ ১৫॥

॥ ইতি শ্রীরুদ্রয়ামলে তন্ত্রে শ্রীবগলামুখীস্তোত্রং সমাপ্তম্ ॥

মুণ্ডমালা তন্ত্র মতে দশমহাবিদ্যার রূপঃ-

“কালী তারা মহাবিদ্যা ষোড়শী ভুবনেশ্বরী ।
ভৈরবী ছিন্নমস্তা চ বিদ্যা ধূমাবতী তথা ।।
বগলা সিদ্ধিবিদ্যা চ মাতঙ্গী কমলাত্মিকা ।
এতা দশ মহাবিদ্যাঃ সিদ্ধবিদ্যা প্রকীর্ত্তিতাঃ “।।

দশমহাবিদ্যা হলেন- কালী, তারা , ষোড়শী,
ভুবনেশ্বরী, ভৈরবী, ছিন্নমুন্ডা, ধূমাবতী, বগলা,
মাতঙ্গী, কমলা ।

ব্যুৎপত্তি
মহাবিদ্যা কথাটি মূলত সংস্কৃত শব্দ। সংস্কৃত মহা (অর্থাৎ মহৎ) ও বিদ্যা (অর্থাৎ প্রকাশ, রূপ, জ্ঞান বা বুদ্ধি) শব্দদুটি থেকে মহাবিদ্যা কথাটির উৎপত্তি। এর সঙ্গে কখনও কখনও সংখ্যাবাচক দশ কথাটি যুক্ত হয়ে থাকে।
তবে মহাবিদ্যার সংখ্যা নিয়ে মতান্তর রয়েছে। এমনকি একটি মতে মহাবিদ্যার সংখ্যা ২৭ বলা হয়েছে। দুর্গা, কামাখ্যা ও অন্নপূর্ণাও মহাবিদ্যা। মালিনী বিজয় গ্রন্থের মতে, মহাবিদ্যা হলেন কালী, নীলা, মহাদুর্গা, ত্বরিতা, ছিন্নমস্তিকা, বাগ্বাদিনী, অন্নপূর্ণা, প্রত্যঙ্গিরা, কামাখ্যাবাসিনী, বালা, মাতঙ্গী ও শৈলবাসিনী।

শাক্তরা বিশ্বাস করেন , “একই সত্য দশটি ভিন্ন রূপে প্রকাশিত ; দিব্য জননী দশটি বিশ্বরূপে দৃষ্ট ও পূজিত হয়ে থাকেন ।” এই দশটি রূপই হল দশমহাবিদ্যা ।মহাবিদ্যাগণ প্রকৃতিগতভাবে তান্ত্রিক। তাঁদের সাধারণ নামগুলি হল:

কালী : সর্বসংহারকারিনী, জন্ম ও শক্তির দেবী। কালীকুল সম্প্রদায়ের সর্বোচ্চ দেবী।
তারা : পথপ্রদর্শক ও রক্ষাকারিনী (তারিনী) দেবী। বিশ্বের উৎস হিরণ্যগর্ভের শক্তি এবং মহাশূন্যের প্রতীক।
ত্রিপুরসুন্দরী বা ললিতা-ত্রিপুরসুন্দরী (ষোড়শী) : পূর্ণতা ও পূর্ণাঙ্গতার স্বরূপ। শ্রীকুল সম্প্রদায়ের সর্বোচ্চ দেবী। তান্ত্রিক পার্বতী নামে পরিচিতা।
ভুবনেশ্বরী : বিশ্বজননী। পার্থিব জগতের শক্তিসমূহের প্রতীক।
ভৈরবী : ভয়ংকরী দেবী। সেই কামনা ও প্রলোভনের স্বরূপ যা মৃত্যুর দিকে টেনে নিয়ে যায়।
ছিন্নমস্তা : উলঙ্গিনী দেবীমূর্তি। তিনি স্বহস্তে নিজ মস্তক ছিন্ন করে নিজ রক্ত নিজেই পান করেন। চক্রপথে আত্মধ্বংস ও আত্মপুনরুজ্জীবনের মাধ্যমে সৃষ্ট জগতের অবিরাম বিদ্যমানতার শক্তির প্রতীক।
ধূমাবতী : বিধবা দেবীমূর্তি। অগ্নির দ্বারা জগৎ ধ্বংসের পর ভষ্মরাশির মধ্য থেকে যে ধূম নির্গত হয়, তার স্বরূপ। তিনি কখনও কখনও অলক্ষ্মী বা জ্যেষ্ঠাদেবী নামেও অভিহিতা হন।
বগলামুখী : শত্রুনিষ্ক্রিয়কারিনী দেবী। ঈর্ষা, ঘৃণা ও নিষ্ঠুরতার মতো মানবচরিত্রের অন্ধকার দিক নিয়ন্ত্রণ করেন। তাঁকে সারস-মুণ্ড রূপেও কল্পনা করা হয়।
মাতঙ্গী : কর্তৃত্ব শক্তির দেবী। জাতিহীন দেবী (কালীকুল সম্প্রদায়ে), ললিতার প্রধানমন্ত্রী (শ্রীকুল সম্প্রদায়ে); তান্ত্রিক সরস্বতী।
কমলাকামিনী : বরাভয় প্রদায়িনী শুদ্ধ চৈতন্যের দেবী। ভাগ্যদেবী লক্ষ্মীর অন্যরূপ। তান্ত্রিক লক্ষ্মী নামেও অভিহিতা।

দশমহাবিদ্যা ও নবগ্রহের সম্পর্ক :
১ .শনিগ্রহের ইষ্টদেবী কালীকা
২. গুরুগ্রহ বা বৃহস্পতির ইষ্টদেবী তারা
৩.বুধগ্রহের ইষ্টদেবী ষোড়শী
৪.চন্দ্রের ইষ্টদেবী কমলা বা কমলাকামিনী
৫.ভৈরবী সময় ও লগ্নের নিয়ন্ত্রণ করে
৬.রাহুগ্রহের ইষ্টদেবী প্রচণ্ড চন্ডিকা ছিন্নমস্তা
৭.কেতুগ্রহের ইষ্টদেবী ধূমাবতী
৮.মঙ্গলগ্রহের ইষ্টদেবী বগলামুখী
৯.সূর্যগ্রহের ইষ্টদেবী মাতঙ্গী
১০. শুক্রগ্রহের ইষ্টদেবী ভুবনেশ্বরী

মহাভাগবত পুরাণ ও বৃহদ্ধর্ম পুরাণ–এ ত্রিপুরসুন্দরীকে দেবীরই অপর নাম ষোড়শী নামে অভিহিত করা হয়েছে। গুহ্যাতিগুহ্য তন্ত্রে বলা হয়েছে মহাবিদ্যাগণই হলেন বিষ্ণু দশ অবতারের উৎস। দেবীর এই দশ রূপ, তা ভয়ংকরই হোক বা কোমল, বিশ্বজননী রূপে পূজিত হয়।

পৌরাণিক উপাখ্যান
বৃহদ্ধর্ম পুরাণ–এ বর্ণিত কাহিনি অনুসারে, শিব ও তাঁর স্ত্রী তথা পার্বতীর পূর্বাবতার দাক্ষায়ণী সতীর মধ্যে একটি দাম্পত্য কলহ দশমহাবিদ্যার উৎস। সতীর পিতা দক্ষ শিব ও সতীর বিবাহে মত দেননি। তাই তিনি যখন যজ্ঞের আয়োজন করেন তখন নববিবাহিত শিব-সতীকে আমন্ত্রণ জানান না। সতী বিনা আমন্ত্রণেই পিতৃগৃহে যেতে চাইলে শিব বারণ করেন। ক্রুদ্ধ সতী স্বামীর অনুমতি আদায়ের জন্য তৃতীয় নয়ন থেকে আগুন বের করতে থাকেন এবং কালী বা শ্যামায় রূপান্তরিত হন। এই মূর্তি দেখে ভীত শিব পলায়ন করতে গেলে সতী দশ মহাবিদ্যার রূপ ধারণ করে শিবকে দশ দিক দিয়ে ঘিরে ফেলেন। এরপর শিব তাঁকে দক্ষযজ্ঞে উপস্থিত থাকার অনুমতি দান করেন।

পূজা পদ্ধতি
মা সন্তোষীর পূজাতে টক বস্তু, আমিষ দ্রব্য প্রদান নিষেধ । সাধারণত আমিষ দ্রব্যকে তমঃ গুন সম্পন্ন আহার বলা হয় । টক পদার্থ হল রজগুনী আহার । মিষ্ট দ্রব্য হল সত্ত্ব গুনী আহার । মায়ের ভক্তদের ঐ তম, রজ গুনের ওপরে সত্ত্ব গুনে অধিষ্ঠিত হতে হয় । তাই ভক্ত গন মাকে কেবল মিষ্ট দ্রব্য ভোগে অর্পণ করেন। মায়ের প্রসাদ গো জাতীয় প্রানীকে অল্প প্রদান করার নিয়ম। কারন গো মাতা হিন্দু দিগের আরাধ্য। গো জাতিকে রক্ষা ও ভরন পোষণের জন্য এই নিয়ম । প্রতি শুক্রবারে মায়ের ব্রত করার নিয়ম। মায়ের পূজোতে সরিষার তৈল নিষেধ। ঘিয়ের প্রদীপ দিতে হয়। সরষের তেল রজ গুনী। তাই একাদশী তিথিতে সরিষার তৈল বর্জনীয় । শুক্রবারে স্নান সেড়ে শুদ্ধ বস্ত্রে মায়ের পূজো করতে হবে। তিথি নক্ষত্র দোষ নেই এই পূজাতে।
সাধারণত উদযাপন ছাড়া এই পূজোতে পুরোহিত লাগে না। সবাই করতে পারবেন । খেয়াল রাখবেন এই দিন গৃহে কোন সদস্য বা যিনি ব্রত পূজা করবেন- ভুলেও যেনো টক পদার্থ না গ্রহণ করেন। অনান্য সদস্য গন হোটেলে বা রেষ্টুডেন্ট, বিয়ে , অন্নপ্রাশনে খাবেন না। ঘট স্থাপন করবেন বট, কাঠাল, পাকুড় পল্লব দ্বারা। আম পল্লব দেবেন না । পূজোতে সব পুষ্পই চলবে। বিল্বপত্র আবশ্যক । ঘটে পুত্তলিকা অঙ্কন করবেন সিঁদুরে ঘি মিশিয়ে। ঘি প্রদীপ পূজাতে ব্যবহার করবেন । ঘটে গোটা ফল হিসাবে কলা দেবেন । এরপর আচমন , বিষ্ণু স্মরণ, আসন শুদ্ধি, সূর্য অর্ঘ, সঙ্কল্প করে গুরুদেব ও পঞ্চ দেবতার পূজা করে মায়ের পূজা করবেন । ধ্যান মন্ত্র প্রনাম মন্ত্র বলবেন । মনের প্রার্থনা মায়ের চরণে জানাবেন। পূজা শেষে মায়ের প্রসাদ গোমাতা কে অল্প দিয়ে নিজে গ্রহণ করবেন ।
এই ভাবে ১৬ শুক্রবার ব্রত করবেন । ভোগে দেবেন ভেজানো ছোলা ও আঁখের গুড়। ইচ্ছা হলে মিষ্ট ফল নিবেদন করতে পারেন । শুক্রবার যিনি ব্রত করবেন সারা দিন উপবাস থাকবেন । দুধ, ছোলা ঘিতে আলু সহিত ভেজে, মিষ্ট ফল, জল গ্রহণ করবেন । অসমর্থ হলে একবেলা উপবাস রেখে অপর বেলা আলু সেদ্ধ, ঘি, আতপ অন্ন গ্রহণ করতে পারেন । ১৬ শুক্রবার ব্রত হলে উদযাপন করবেন । উদযাপনের দিন ৭ টি বালককে ভোজোন করাবেন । খেয়াল রাখবেন সাত বালক যেনো সেই দিন টক বস্তু না খায় । উদযাপনের দিন ১৬ টি নিমকী চিনির রসে ডুবিয়ে মায়ের কাছে উৎসর্গ করবেন। ছানা থেকে তৈরী কোন মিষ্টি মাকে দেবেন না। উদযাপনের দিন মায়ের কাছে একটি নারকেল ফাটিয়ে নারকেলের জল মায়ের চরণে দেবেন । নারকেল মায়ের সামনে ফাটাবেন এক আঘাতে। ফাটানোর সময় মায়ের নামে জয়ধ্বনি দেবেন । এই ভাবে মা সন্তোষীর ব্রত করুন। দেখবেন মায়ের কৃপায় আপনার জীবন সুখে শান্তিতে ভরে যাবে । মায়ের কৃপায় সব অমঙ্গল, দুঃখ, অশান্তি নষ্ট হবে ।

administrator

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *