বেদান্তে বলা হয়েছে ‘আপো নারায়ণ:’- অর্থাৎ জল হলো নারায়ণ। সেই কথা বোঝাতে গিয়ে ঠাকুর রামকৃষ্ণ শিষ্যদের বলেন, জল দিয়ে দেবতার পুজো হয়। সেই জল স্বয়ং দেবতা। আবার সেই জল দিয়েই কাপড় কাঁচা হয়,বাসন মজা হয় – সেই জল কিন্তু দেবতা নয়। আসলে ঠাকুর বলতে চেয়েছেন, স্থান-কালের উপর নির্ভর করে সমস্ত গুন। এটা বোঝাতে গিয়েই তিনি শিষ্যদের এক পাগলা হাতির গল্প শোনান।
তিনি বলেন,”একটা গল্প শোন্। কোন এক বনে একটি সাধু থাকেন। তাঁর অনেকগুলি শিষ্য (Ramkrishna Paramhansa)। তিনি একদিন শিষ্যদের উপদেশ দিলেন যে, সর্বভূতে নারায়ণ আছেন, এইটি জেনে সকলকে নমস্কার করবে। একদিন একটি শিষ্য হোমের জন্য কাঠ আনতে বনে গিছল। এমন সময়ে একটা রব উঠল, ‘কে কোথায় আছ পালাও — একটা পাগলা হাতি যাচ্ছে।’ সবাই পালিয়ে গেল, কিন্তু শিষ্যটি পালাল না! সে জানে যে, হাতিও যে নারায়ণ তবে কেন পালাব? এই বলিয়া দাঁড়িয়ে রইল। নমস্কার করে স্তবস্তুতি করতে লাগল। এদিকে মাহুত চেঁচিয়ে বলছে ‘পালাও, পালাও’; শিষ্যটি তবুও নড়ল না। শেষে হাতিটা শুঁড়ে করে তুলে নিয়ে তাকে একধারে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে চলে গেল। শিষ্য ক্ষতবিক্ষত হয়ে ও অচৈতন্য হয়ে পড়ে রইল। (Spiritual)
এই সংবাদ পেয়ে গুরু ও অন্যান্য শিষ্যেরা (Ramkrishna) তাকে আশ্রমে ধরাধরি করে নিয়ে গেল। আর ঔষধ দিতে লাগল। খানিক্ষণ পরে চেতনা হলে ওকে কেউ জিজ্ঞাসা করলে, ‘তুমি হাতি আসছে শুনেও কেন চলে গেলে না?’ সে বললে, ‘গুরুদেব আমায় বলে দিয়েছিলেন যে, নারায়ণই মানুষ, জীবজন্তু সব হয়েছেন। তাই আমি হাতি নারায়ণ আসছে দেখে সেখান থেকে সরে যাই নাই।’ গুরু তখন বললেন, ‘বাবা, হাতি নারায়ণ আসছিলেন বটে, তা সত্য; কিন্তু বাবা, মাহুত নারায়ণ তো তোমায় সরে যেতে বলেছিল। তুমি সেই নারায়ণের কথা শুনলে না কেন?” সবাই এই গল্প শুনে হেসে ওঠে।
ঠাকুর বলতেন, “সাধু,অসাধু, ভক্ত, অভক্ত — সকলেরই হৃদয়ে নারায়ণ আছেন। কিন্তু অসাধু, অভক্ত, দুষ্ট লোকের সঙ্গে ব্যবহার চলে না। মাখামাখি চলে না। কারও সঙ্গে কেবল মুখের আলাপ পর্যন্ত চলে, আবার কারও সঙ্গে তাও চলে না। ওইরূপ লোকের কাছ থেকে তফাতে থাকতে হয়।