পোড়ামা কালীমন্দির পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া জেলার নবদ্বীপ শহরে অবস্থিত একটি প্রাচীন কালী মন্দির। পোড়ামা নবদ্বীপের অধিষ্ঠাত্রী লৌকিক দেবী। এই মন্দিরের পাশেই ভবতারণ শিব এবং ভবতারিনী কালী মন্দির অবস্থিত। নবদ্বীপের গ্রাম্যদেবী পোড়ামা সারাবছর দক্ষিণাকালীর ধ্যানেই পূজিত হন। তবে শুধুমাত্র সরস্বতী পূজার দিন শ্রীপঞ্চমী তিথিতে দেবী নীল সরস্বতী রূপে পূজিত হন। পোড়ামার এই মন্দির প্রাঙ্গনেই নবদ্বীপের পণ্ডিত-বিদ্বজ্জনেরা সংস্কৃতচর্চা, বিতর্কসভার আয়োজন করতেন। পশ্চিমবঙ্গ হেরিটেজ কমিশন ২০১৯ খ্রিস্টাব্দে পোড়ামাতলাকে নবদ্বীপের হেরিটেজ স্থান হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে।
জনশ্রুতি আছে, পঞ্চদশ শতাব্দীতে বাসুদেব সার্বভৌম নামক এক পণ্ডিত নবদ্বীপ শহরের এক বটবৃক্ষতলে দক্ষিণাকালীর ঘট স্থাপন করেন। কোন এক সময়ে বটগাছটি অগ্নিদগ্ধ হলে এই কালী পোড়ামা বা বিদগ্ধজননী নামে জনপ্রিয় হন। অন্য মতে, বাসুদেব সার্বভৌম এর বহু পূর্বে জনৈক রামভদ্র সিদ্ধান্তবাগীশ দক্ষিণাকালীর সাধক ছিলেন। গোপাল মন্ত্রে সিদ্ধ অন্য এক পণ্ডিতের সঙ্গে তার শাস্ত্রীয় বিচার হয়। পরাজিত ব্যক্তি বিজয়ীর মন্ত্রশিষ্য হবেন, উভয়ে এই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলেন। সিদ্ধান্তবাগীশ, পরাজিত হয়ে প্রতিজ্ঞামতো তার ইষ্টমন্ত্র ত্যাগ করতে উদ্যত হলে, ভয়ানক অগ্নিকাণ্ডে তার ইটের বাড়ি ভস্মীভূত হতে থাকে এবং মন্দিরের মধ্যে দেবীর করালমূর্তি তার দর্শনগোচর হয়, দেবীর কোলে গোপাল উপবিষ্ট। মন্ত্রশোধিত জল ছড়িয়ে আগুন নিভলে সাধক নিজে বেঁচে যান এবং তার মন্দিরে দু’খানি মাত্র ইট অবশিষ্ট থাকে।এই ইট দুখানা আজও পোড়া-মার আধার হয়ে রয়েছে এবং তার উপরেই ঘটস্থাপন করে পূজা হয়। ঐতিহাসিক ভোলানাথ চন্দ ১৮৪৫ খ্রিস্টাব্দে পোড়ামাতলার বটগাছটিকে একশো বছরের প্রাচীন বলে নির্দিষ্ট করেছিলেন।