খবরে আমরাঃ ২০ ঘণ্টাও হয়নি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুই হাজার কুড়ি জন লেডি কনস্টেবল নিয়োগের কথা ঘোষণা করেছেন। তার মধ্যেই এল সুখবর। মহিলা কর্মসংস্থানে ভারত সেরা হল বাংলা। সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকোনমি গত পাঁচ বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে জানিয়ে দিল মহিলা কর্মসংস্থানে দেশের মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে পশ্চিমবঙ্গ। ২০২২ এ জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পশ্চিমবঙ্গে ৪৩.৭১ লক্ষ মহিলার কর্মসংস্থান হয়েছে, যা ২০১৭ সালের জানুয়ারি-এপ্রিলের (৩৩.৬২লক্ষ) থেকে ১০.০৯ লক্ষ বেশি। গত বছরের সেপ্টেম্বর ডিসেম্বরের থেকেও ২০২২ এর জানুয়ারি এপ্রিলে বেশি কর্মসংস্থান হয়েছে। যা পরিস্থিতি তাতে অর্থনীতি মাপকাঠিতে মহিলা কর্মসংস্থানের প্রায় সবকটি বিভাগে শীর্ষে পশ্চিমবঙ্গ। গত পাঁচ বছরের নিরিখে হোক কিংবা গত এক বছরের হিসাবে। তাৎপর্যের বিষয় হল গুজরাটকেও মহিলা কর্মসংস্থানে টেক্কা দিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজ্য। গত পাঁচ বছরের হিসেবে গুজরাতে মহিলা কর্মসংস্থান বেড়েছে ৮.৬৭ লক্ষ। যা বাংলার তুলনায় ১.৪২ লক্ষ কম। তিন নম্বরে রয়েছে তেলেঙ্গানা। এখানে গত পাঁচ বছরের নিরিখে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির হার ২.০২ লক্ষ। গত বছরের সবচেয়ে বেশি রোজগার হারিয়েছে তামিলনাড়ু। তার পরেই রয়েছে মধ্যপ্রদেশ ও কর্ণাটক।
আন্তর্জাতিক সমীক্ষায় আগেই উঠে এসেছিল যে করোনাকালে ভারতে কাজ হারিয়েছেন বহু মানুষ। মহিলাদের অবস্থা সবচেয়ে শোচনীয়। এই সময় বাংলার এই স্বীকৃতি। স্বভাবতই উচ্ছ্বসিত নবান্ন। এক আধিকারিকের পর্যবেক্ষণ, কেন্দ্রীয় রিপোর্ট বলছে, দেশব্যাপী মহিলারা যখন তাদের কর্মক্ষেত্র ছাড়তে শুরু করেছেন সেই সময় মহিলাদের কর্মসংস্থানে দেশের মধ্যে শীর্ষে উঠে এসেছে পশ্চিমবঙ্গ। উপার্জনের নিরিখেও শীর্ষে বঙ্গ। পাঁচ বছরে দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আয় বেড়েছে বাংলার মহিলাদের।
বেকারত্ব নিয়ে দেশের একমাত্র সমীক্ষক সংস্থা সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকোনমি তাদের সাম্প্রতিকতম রিপোর্ট পেশ করেছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে গত পাঁচ বছরে দেশে ১.২৫ কোটি মহিলা কাজ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ২৫ লক্ষ মহিলা চাকরি হারিয়েছেন চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে। তবে সেখানেই দেখা যাচ্ছে, গোটা দেশের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে মহিলাদের কর্মসংস্থান হওয়ার পাশাপাশি তাদের রোজগারও বেড়েছে। এক বছরে দেশের মহিলাদের কর্মসংস্থান বৃদ্ধির যে তালিকা তুলে ধরা হয়েছে সেখানেও প্রথমে বাংলা। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ৪৩.২১ লক্ষ মহিলা কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করেছিলেন, সেখান থেকে ২০২২ সালের জানুয়ারি-এপ্রিল পর্যন্ত সংখ্যাটা পৌঁছেছে ৪৩.৭১ লক্ষ। অর্থাৎ এই এক বছরে রাজ্যে ৫০ হাজার মহিলা কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করেছেন। বাংলার পর এই তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বিহার ও ওড়িশা।
কেন্দ্রের রিপোর্ট অবশ্য গোটা দেশের অর্থনীতির পক্ষেই বেশ বিপজ্জনক। তথ্য বলছে, ২০১৭ জানুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে দেশের মোট ৪০.৮৯ কোটি মানুষ রোজগার পেয়েছিলেন, যার মধ্যে ৩৫.৮১ কোটি পুরুষ এবং ৫.০৮ কোটি মহিলা। ঠিক ৫ বছর পর অর্থাৎ ২০২২ জানুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে তা কমে গিয়ে ৩৯.৯৮ কোটিতে এসে ঠেকেছে। এর মধ্যে পুরুষের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৩৬.১১ কোটি। কিন্তু মহিলাদের সংখ্যা কমে গিয়ে পৌঁছেছে মাত্র ৩.৮৬ কোটি। অর্থাৎ ১.২২ কোটি কম। রিপোর্ট আরও বলছে, গত বছর ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে ৪.১১ কোটি মহিলা কর্মক্ষেত্রে ছিলেন কিন্তু ২০২২ এর এপ্রিল পর্যন্ত প্রায় ২৫ লক্ষ মহিলা তাদের কর্মক্ষেত্র ছেড়েছেন।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বরাবরই মহিলা কর্মসংস্থানের দিকে জোর দিয়েছেন। সামাজিকভাবে মহিলাদের সম্মান বৃদ্ধিতে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের সঙ্গে জুড়ে দিয়েছেন পরিবারের মহিলাদের। মহিলাদের সামাজিক নিরাপত্তা বাড়াতে কন্যাশ্রী, রুপশ্রীর মতো প্রকল্প চালু করেছেন। বিধবা ভাতা পাওয়ার বয়:সীমা কমিয়ে আঠেরো বছর করেছেন। মহিলা পরিচালিত স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সশক্তিকরন করেছেন। সবলা মেলার আয়োজন করেছেন। সব মিলিয়ে মহিলাদের সামাজিক ও আর্থিক সুরক্ষা বাড়ানোর একাধিক উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি । তার জেরেই এই সেরার শিরোপা মিলেছে বলে বিশেষজ্ঞ মহলের অভিমত। উল্লেখ্য এর আগে একশো দিনের কাজ সহ ১৪ টি বিভাগে ভরতসেরা হয়েছে বাংলা। এবার সাফল্য স্বীকৃতি মিলল মহিলা কর্মসংস্থানে।