উপনিষদ বেদের অন্ত – তাই উপনিষদ বেদান্ত নামেও অভিহিত হয়। আমাদের আধ্যাত্মিক জীবনের আদর্শ সুষ্পষ্ট রূপ নিয়েছে উপনিষদে। উপনিষদগুলি হিন্দু ধর্মের দর্শনের মুখ্য গ্রন্থ হিসাবে স্বীকৃত হয়। পুরাকালে ঋষিগণ জীবনের প্রকৃত অর্থ নির্ধারণে উৎসুক হয়ে অরণ্যে বসে ধ্যানের মাধ্যমে যে সব সত্যগুলি উপলব্ধি করেন তাই উপনিষদে স্থান পেয়েছে। উপনিষদের বাণী চিরন্তন, এর আবেদন শ্বাশত। উপনিষদগুলি একাধারে গভীর ধর্মশাস্ত্র ও আধ্যাত্মিক তত্ত্বকথা। এতে অতলস্পর্শী সব আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতার বর্ণনা আছে। সত্যের মর্ম উদঘাটন করেছে উপনিষদের সব দার্শনিক তত্ত্ব।
উপনিষদে আছে অধ্যাত্মজ্ঞান। হিন্দু ধর্ম এই উপনিষদের অধ্যাত্মজ্ঞানের ভিত্তির উপরই প্রতিষ্ঠিত। প্রতি উপনিষদেই বিভিন্ন দেবতার যজ্ঞ-উপাসনা,পূজা ইত্যাদি আলোচিত হয়েছে, কিন্তু শেষে ব্রহ্ম এক ও অদ্বিতীয় বলা হয়েছে। উপনিষদগুলির মূখ্য বিষয়বস্তু এক আর তা হল ‘ব্রহ্মাতম্-ঐক্য-সাক্ষাৎকার-বিষয়’ অর্থাৎ ব্রহ্ম ও আত্মার অর্থাৎ ব্রহ্ম ও জীবের অভিন্নত্ব স্থাপন করা; অর্থাৎ ব্রহ্ম ও জীবাত্মা এক এবং অভিন্ন। ছান্দোগ্য উপনিষদে (৬:৮:৭) বলা হয়েছে ‘তৎ ত্বম্ অসি’ অর্থাৎ তুমি তাই। বৃহদারণ্যক উপনিষদে (১:৪:১০) বলা হয়েছে ‘অহং ব্রহ্মাসি’ অর্থাৎ আমি ব্রহ্ম এবং (২:৫:১৯) ‘অয়ম্ আত্মা ব্রহ্ম’ অর্থাৎ এই আত্মা ব্রহ্ম। তাহলে বাউলেরা যে বলেন নিজের আত্মার মধ্যেই পরম ঈশ্বরের বাস, তা উপনিসদেরই শিক্ষা। ঈশ্বর সাকার হোক আর নিরাকার হোক, আসল কথা ‘জীবে প্রেম।’ জীবে প্রেমই উপনিষদের মর্মবাণী।