আজ জেলায় জেলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মস্তিকপ্রসুত পুজো কার্নিভাল। শনিবার মূল কার্নিভাল হবে কলকাতার রেড রোডে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) রেড রোডের অনুষ্ঠানে থাকছেন। আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে রাজ্যপাল লা গণেশনকে। সুস্থ থাকলে তিনিও উপস্থিত থাকবেন।
কার্নিভালকে কেন্দ্র করে সেজে উঠেছে বর্ধমান শহরও (Burdwan)। প্রাণকেন্দ্র কার্জন গেটে (Curzon Gate) বসেছে সুবিশাল মঞ্চ। সেখানে উপস্থিত থাকবেন জেলার সব বিধায়ক ও মন্ত্রিরা। গড়ে তোলা হয়েছে কড়া পুলিশি নিরাপত্তা। বন্ধ থাকছে যান চলাচল। শহরের জিটি রোডে পুলিশ লাইন থেকে এই কার্নিভালের শুরু। শেষ হবে গোলাপবাগ মোড়ে।
বৃহস্পতিবার প্রস্তুতিপর্ব খতিয়ে দেখতে রেড রোড (Red Road) ঘুরে দেখেন রাজ্যের তথ্যসংস্কৃতি মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন ও দপ্তরের সচিব শান্তনু বসু। পুলিশ ও দমকলের আধিকারিকদের সঙ্গে নিয়ে রেড রোডে বসে বৈঠকও সারেন। এই প্রথম জেলায় জেলায় পুজোর কার্নিভাল অনুষ্ঠান আয়োজিত হতে চলেছে।
তবে হড়পা বানের দুর্ঘটনার জেরে জলপাইগুড়ির কার্নিভাল বাতিল করা হয়েছে। শোকের আবহে, জেলার মানুষের অনুভূতির কথা বিবেচনা করেই এই সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছেন জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু।নবান্ন সূত্রে খবর, ২৫ দফার গাইডলাইন মেনে কার্নিভাল করতে হবে। কীভাবে পরিচালনা করা হবে, কতজন উপস্থিত থাকবে তা নিয়ে বিস্তারিত বলা হয়েছে গাইডলাইনে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই ঘোষণা করেছিলেন এবার ইউনেস্কোর কলকাতার দুর্গা পুজোকে বিশেষ স্বীকৃতির উদযাপনে জেলাতেও হবে পুজোর কার্নিভাল। প্রতিটি জেলায় একইসঙ্গে হবে এই অনুষ্ঠান। যা পরিচালিত হবে নবান্নের দেওয়া পঁচিশ দফার গাইডলাইন মেনে।
গাইডলাইনে বলা হয়েছে:
১) পুজো কমিটিগুলির সঙ্গে কথা বলে কার্নিভালের স্থান নির্বাচন করতে হবে।
২) ইচ্ছুক কমিটিগুলিকে চিহ্নিত করতে বিশ্ব বাংলা শারদ সম্মানের জন্য গঠিত জেলার বিচারকমন্ডলীর মতামত নেওয়া যেতে পারে।
৩) পুজো কমিটিগুলি প্রতিমা বহনের পাশাপাশি কার্নিভালে সংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও করতে পারে।
৪) প্রত্যেকটি পুজো কমিটি মূল মঞ্চের সামনে দু’মিনিটের একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করতে পারবে।
৫) কার্নিভালের জন্য জেলাগুলির গুরুত্বপূর্ণ এলাকা যথাযথ ব্র্যান্ডিং দিয়ে সুসজ্জিত করতে হবে এবং মূল মঞ্চের ব্র্যান্ডিং নবান্নের ঠিক করে দেওয়া নকশা মেনে করতে হবে।
৬) রাস্তার দু’ধারে যাতে সাধারণ মানুষ দাঁড়াতে পারেন বা বসার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
৭) সাধারণ মানুষ যাতে জেলাগুলির বিভিন্ন প্রান্তে এই কার্নিভাল দেখতে পান তার জন্য পর্যাপ্ত এলইডির ব্যবস্থা করতে হবে। কার্নিভালে অংশ নেওয়া পুজোগুলির প্রতিমা কোন কোন ঘাটে বিসর্জন হবে তা আগে স্থির করে নিতে হবে। পাশাপাশি অনুষ্ঠানস্থল নিয়েও গাইডলাইনে একাধিক তথ্য দেওয়া হয়েছে। সবমিলিয়ে এই পঁচিশ দফার গাইডলাইন মেনে জেলাগুলিকে একটি সমন্বয় কমিটি তৈরি করে কার্নিভালকে শান্তিপূর্ণভাবে করার কথা বলা হয়েছে।
প্রস্তুতি চলছে কলকাতাতেও। দু’ বছর বাদে ফের রেড রোডে কার্নিভাল। তার উপর ইউনেস্কোর স্বীকৃতি। স্বভাবতই ধারেভারে এবারের কার্নিভাল বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। শনিবার বিকেলে গোটা দেশের নজর থাকবে রেড রোডে। শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পাওয়া পুজো কমিটিগুলিরও বাড়তি উন্মাদনা। পাড়ায় পাড়ায় দিনরাত এক করে চলছে ট্যাবলো সাজানোর পালা। প্রত্যেকেই আলাদা করে নজর কাড়তে চায়। তবে বিশ্ব বাংলা সম্মান পাওয়া সত্ত্বেও একডালিয়া এভারগ্রিন এবার কার্নিভালে অংশ নিচ্ছে না। প্রয়াত সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের (Subrata Banerjee) প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই এই সিদ্ধান্ত বলে ক্লাবের তরফে জানানো হয়েছে।
পুলিশের ‘ডেয়ার ডেভিল’ বাহিনীর স্টান্ট দিয়ে রেড রোডের অনুষ্ঠান শুরু। তারপর থাকছে ডোনা গঙ্গোপাধ্যায়ের স্কুল ‘দীক্ষামঞ্জরী’র নাচের অনুষ্ঠান। যদিও অসুস্থতার জন্য ডোনার মঞ্চে থাকার সম্ভাবনা ক্ষীণ। নবান্ন (Nabanna) সূত্রের খবর, মোট কুড়ি হাজার কার্ড ছাপা হয়েছে। বিদেশ থেকে প্রচুর মানুষ আসছেন এই কার্নিভাল দেখতে। অতিথিদের দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পর্যটন দপ্তরকে। সব বিদেশি দূতাবাসের আধিকারিকদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। শিল্পপতি ও বনিকসভার প্রতিনিধিদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। জানা গিয়েছে, প্রতিটি পুজো কমিটির জন্য তিন মিনিট করে বরাদ্দ। বিশ্ব বাংলা সম্মানজয়ী ৮৯টি পুজো-সহ প্রায় একশোটি পুজো কমিটি অংশ নেবে কার্নিভালে। ফোর্ট উইলিয়ামের দিক থেকে শোভাযাত্রা শুরু হয়ে পুলিশ মেমোরিয়ালের দিকে শেষ হবে। পুলিশ সূত্রের খবর, প্রতিটি পুজো কমিটি সর্বোচ্চ তিনটি করে ট্যাবলো আনতে পারবে। কোনওটারই উচ্চতা ১৬ ফুটের বেশি হওয়া চলবে না। ট্যাবলো চালক ও গাড়ির যাবতীয় তথ্য থানায় জমা করতে হবে। গাড়ি যাতে যান্ত্রিক ত্রুটিমুক্ত থাকে তা পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিটি পুজো কমিটির সঙ্গে থাকবে একজন করে পুলিশ আধিকারিক।