নবদুর্গার নবম তথা শেষ রূপ হল সিদ্ধিদাত্রী (Devi Siddhidatri)। সিংহবাহিনী দেবীর চার হাতে আশীর্বাদী মুদ্রা। অপরূপ লাবণ্যময়ী চতুর্ভুজা, ত্রিনয়নী, প্রাতঃসূর্যের মত রঞ্জিতা যোগমায়া মাহেশ্বরী ইনি সকল কাজে সিদ্ধি প্ৰদান করেন।
নবরাত্রি উৎসবের নয় দিনে মা জগদম্বাকে নয়টি ভিন্ন রূপে পুজো করা হয়। আজ চৈত্র শুক্লা নবমী। এই দিনে মা সিদ্ধিদাত্রীর পুজো করা হয়। মা সিদ্ধিদাত্রী ভক্তদের সমস্ত ইচ্ছা পূরণ করেন এবং তাদের খ্যাতি, শক্তি এবং সম্পদ দান করেন। পৌরাণিক গ্রন্থে মা সিদ্ধিদাত্রীকে সিদ্ধি ও মোক্ষের দেবী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মা সিদ্ধিদাত্রীর আটটি কৃতিত্ব রয়েছে অণিমা, মহিমা, প্রপ্তি, প্রাকাম্য, গরিমা, লঘিমা, ইশিত্ব এবং বশিত্ব। বিশ্বাস করা হয় মা সিদ্ধিদাত্রীর কৃপায় ভগবান শঙ্করের দেহের অর্ধেক দেবী হয়ে উঠেছিল। এ কারণে তাকে অর্ধনারীশ্বর বিশেষ্যও দেওয়া হয়। শাস্ত্র অনুসারে, শুধুমাত্র মায়ের কৃপাতেই দেব-দেবীরাও সিদ্ধি লাভ করেছিলেন।
ন’দিন ধরে চৈত্র নবরাত্রীতে মা দূর্গার মায়ের ন’টি রূপের পুজা হল। এই ন’দিন আলাদা আলাদা ভাবে ও ভিন্ন ধরনের ভোগ দেওয়া হয়। নবম ও শেষ দিনে এই নবরাত্রিতে পুজো হয় দেবী সিদ্ধিদাত্রীর। আসুন দেখে নেওয়া যাক এই পুজোর মাহাত্ম্য, আচার ও রীতি। নবমীতে দেবী সিদ্ধিদাত্রীর পুজো নবদুর্গার নবম তথা শেষ রূপ হল সিদ্ধিদাত্রী। তিনি নবদুর্গার শেষ ও দেবী দুর্গার নবম শক্তি।
এই দেবী সবধরনের সিদ্ধি দান করে থাকেন। মার্কন্ডেয় পুরাণে আট ধরনের সিদ্ধি তথা অনিমা, মহিমা, গরিমা, লঘিমা, প্রাপ্তি, প্রকাম্য, ইশিত্ব ও বাশিত্বর কথা উল্লেখ রয়েছে। মা সিদ্ধিদাত্রী (Maa Siddhidatri) ভক্ত এবং সাধকদের এই সিদ্ধি প্রদান করেন। মাতার বাহন সিংহ তবে তিনি পদ্মাসনও হন।
মা সিদ্ধিদাত্রী সর্বসিদ্ধিদাত্রী অর্থাৎ তাঁর উপাসনায় সংসারে আসে সুখ এবং সমৃদ্ধি। সবাইকে বরাভয় দেন এই মাতৃকামূর্তি। মায়ের এই রূপ হল শান্ত রূপ। চার হাতের সিদ্ধিদাত্রী মাকে পূজো করলে মায়ের আশীর্বাদে ভক্তদের পুণ্য লাভ হয়।
দেবী ভগবৎ পুরাণে আছে, স্বয়ং মহাদেব দেবী দুর্গাকে সিদ্ধিদাত্রী রূপে পুজো করেছিলেন এবং তার ফলে মহাদেব সকল সিদ্ধি লাভ করেন। সিদ্ধিদাত্রীর আশীর্বাদেই অর্ধনারীশ্বর রূপ লাভ করেন মহাদেব।
সিদ্ধি হল আধ্যাত্মিক ক্ষমতা যা একজন ব্যক্তিকে জীবনের সাধারণ জিনিসের চেয়ে আরও বেশি করে সফল হতে সহায়তা করে। ন’দিন ব্যাপী এই নবরাত্র পূজনের শেষে মহানবমী তিথিতে সিদ্ধি বা সাফল্যলাভ হেতু দেবী সিদ্ধিদাত্রীর আরাধনা করা হয়।
নবরাত্রির (Chaitra Navaratri) নবমীর দিনের পুজো, পুজোর বাকি দিনগুলির চেয়ে পৃথক। কন্যা পূজন বা কঞ্জক পূজা নবমী বা নবরাত্রির মহা নবমীতে করা হয়।
বিভিন্ন শাস্ত্রে বিভিন্ন সিদ্ধির কথা উল্লেখিত আছে। তবে, অষ্টসিদ্ধির মার্কণ্ডেয় পুরাণ অনুসারে, ‘সিদ্ধিদাত্রী’ অষ্টভুজা, ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণের শ্রীকৃষ্ণ জন্ম খণ্ডে ‘সিদ্ধিদাত্রী’ অষ্টাদশভুজা। ‘সিদ্ধিদাত্রী’ চতুর্ভুজা রূপেও দেখা যায়। সেখানে তিনি অর্ধনারীশ্বররূপী। অষ্টসিদ্ধি বা আটটি সিদ্ধি হল- অনিমা, মহিমা, গরিমা, লঘিমা, প্রাপ্তি, প্রকাম্য, ঈশিত্ব ও বশিত্ব। দেবী সিদ্ধিদাত্রী এই সমস্ত সিদ্ধি পরিচালনা করেন এবং যে ব্যক্তি এই দিনে দেবীকে স্মরণ করেন সে এই সমস্ত ক্ষমতা অর্জন করেন। অনেক সাধক আছেন যাঁরা ভগবৎ শক্তির আরাধনা করেন এই সব যোগসিদ্ধির জন্যই। দেবী সন্তুষ্ট হলে সাধক এই সকল সিদ্ধি ও নিধির ধারক হয়ে ওঠেন।
মহা নবমীর দিন একটি বিশেষ হোম করা হয়। এইসময় সমস্ত দেবদেবীদের উপাসনা করা হয়। দেবীকে সন্তুষ্ট করার জন্য কন্যা পূজনও করা হয়। দেবী তাঁর ভক্তদের অষ্ট সিদ্ধি দান করেন এবং তাঁদের সমস্ত মন্দ দিক থেকে রক্ষা করেন।
মা সিদ্ধিদাত্রীর রূপ
মা সিদ্ধিদাত্রীর রূপ অত্যন্ত কোমল ও আকর্ষণীয়। মা লক্ষ্মীর মতো তার আসনও পদ্ম। তার চারটি বাহু আছে। ডান পাশের উভয় বাহুতে গদা ও চক্র রয়েছে। বাম বাহুতে পদ্মফুল ও শঙ্খ রয়েছে।
উপাসনা পদ্ধতি
আজ নবরাত্রির নবম দিন ৷ এইদিন দেবী দুর্গার বিদায়ের রজনী । এই দিনে খুব ভোরে উঠে স্নান করে দেবী দুর্গার বেদি স্থাপন করতে হবে । তারপর বেদীটি স্থাপন করা হলে তার উপর মা সিদ্ধিদাত্রীর প্রতিমা বা মূর্তি রাখুন । এরপর মা সিদ্ধিদাত্রীকে ফুল অর্পণ করুন । মাকে ডালিম ফল নিবেদন করুন । তারপর নৈবেদ্য । মা সিদ্ধিদাত্রীকে (Maa Siddhidatri Katha ) মিষ্টি, পঞ্চামৃত এবং ঘরে তৈরি খাবার অর্পণ করুন । এই দিনে হোম যজ্ঞও করা হয় । শাস্ত্র মতে এই দিনে কন্যাপূজাও করা হয় । এভাবেই মা খুশি হন (Maa Siddhidatri Bhog Vidhi )৷
স্নান ইত্যাদি থেকে অবসর নেওয়ার পর পরিষ্কার কাপড় পরিধান করুন। এরপর বাড়ির মন্দিরের সামনে কাঠের চৌকিতে মা সিদ্ধিদাত্রীর মূর্তি বা ছবি স্থাপন করুন। বাতি জ্বালান । মাতারাণীর ধ্যান করার সময় তাকে সিঁদুর, গোটা চাল, হলুদ, মেহেন্দি, আবির, ফুল, চুড়ি, লাল চুনরি, সাজসজ্জার উপকরণ উৎসর্গ করুন। মাতা সিদ্ধিদাত্রীকে প্রসাদ, নবরসযুক্ত খাদ্য, নয় প্রকার ফুল ও নয় প্রকার ফল প্রদান করা উত্তম। মা সিদ্ধিদাত্রী মৌসুমি ফল, ছোলা, পুরি, খির, নারকেল, হালুয়া ইত্যাদি খুব পছন্দ করেন। এই জিনিসগুলি মাকে নিবেদন করুন। মেয়েদের পুজো করুন। তাদের ভালবাসা দিয়ে খাওয়ান। তাদের দক্ষিণা প্রদান করুন।
মা সিদ্ধিদাত্রীকে অণিমা, লঘিমা, প্রপ্তি, প্রাকাম্য, মহিমা, ইশিত্বা, বশীত্ব, সর্বকামবসয়িতা, সর্বজনত্ব, দ্বারশ্রবণ, পরকায়প্রবাসনা, বাকা সিদ্ধি, কল্পবৃক্ষ, সৃষ্টি, ধ্বংস শক্তি, অমরত্ব, সর্ব-বিচার, ন্যায়বিচার নামেও আরাধনা করা হয় । পদ্ম ফুলের আসনে বসেন মা সিদ্ধিদাত্রী । মায়ের বাহন সিংহ । বিশ্বাস করা হয় যে মা সিদ্ধিদাত্রীর আরাধনা করলে একজন ব্যক্তির সমস্ত জাগতিক এবং অতীন্দ্রিয় ইচ্ছা পূরণ হয় । মা ভক্তের সব ইচ্ছা পূরণ করেন । অধিকন্তু, যদি কোনও ব্যক্তি আন্তরিক চিত্তে মায়ের আরাধনা করেন, তখন তিনি অণিমা, লাধিমা, প্রপ্তি, প্রকাশ, মহিমা, ঈশিতা, সর্বকামবাসয়িতা, দূর শ্রাবণ, পরকম প্রবেশ, বকসিদ্ধি, অমরত্ব ভবন সিদ্ধি ইত্যাদি (আধ্যাত্মিকতা) ইত্যাদি গুণ লাভ করেন ।
মা সিদ্ধিদাত্রীর মন্ত্র:
या देवी सर्वभूतेषु माँ सिद्धिदात्री रूपेण संस्थिता(ইয়া দেবী সর্বভূতেষু মা সিদ্ধিদাত্রী রূপেন সংস্থিতা)
नमस्तस्यै नमस्तस्यै नमस्तस्यै नमो नम:(নমঃস্থস্যই নমঃস্থস্যৈ নমঃস্থস্যৈ নমো নমঃ)