সফলা একাদশী ভগবান বিষ্ণুর খুব প্রিয়। হিন্দু ক্যালেন্ডার অনুসারে, পৌষ মাসের কৃষ্ণপক্ষে যে একাদশী আসে তাকে সফলা একাদশী বলা হয়। সফলা একাদশী, এর নাম অনুসারে, সর্বত্র সাফল্য আনয়ন এবং ইচ্ছা পূরণ হয় বলে মনে করা হয়। ৭ জানুয়ারি পালিত হবে বছরের প্রথম একাদশী। এটি সফলা একাদশী নামে পরিচিত। শুভ কার্য সিদ্ধির জন্য এই একাদশী ব্রত পালিত হয়। পাশাপাশি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সাফল্য লাভ করা যায় এই একাদশী ব্রত পালন করলে। পৌষ মাসের প্রথম একাদশী এটি। এই তিথিতে পবিত্র নদীতে স্নান করে বিষ্ণুর পুজো করা হয়। সফলা একাদশীর শুভক্ষণ ও মাহাত্ম্য সম্পর্কে এখানে বিস্তারিত আলোচনা করা হল।
পঞ্জিকা অনুযায়ী ৬ জানুয়ারি (রাত বারোটা বেজে যাওয়ায় ৭ জানুয়ারি তারিখ গণ্য হবে) মাঝরাত ১২টা ৪২ মিনিটে এই একাদশী তিথি শুরু হবে। শেষ হবে ৭ জানুয়ারি (রাত বারোটা বেজে যাওয়ায় ৮ জানুয়ারি তারিখ গণ্য হবে) মাঝরাত ১২টা ৪৬ মিনিটে। উদয়া তিথি অনুযায়ী ৭ জানুয়ারি সফলা একাদশী পালিত হবে।
সফলা একাদশীর মাহাত্ম্য
সফলা একাদশীর (Saphala Ekadasi) শুভক্ষণে বাড়িতে তুলসী গাছ লাগানোর বিশেষ মাহাত্ম্য রয়েছে। এ দিন বাড়ির উত্তর বা পূর্ব অথবা উত্তর-পূর্ব দিকে তুলসী গাছ লাগানো উচিত। এর ফলে ধন-সমৃদ্ধি বৃদ্ধি পায়। সফলা একাদশীতে অনেকে উপবাস করেন। তবে যাঁরা উপবাস করতে পারবেন না, তাঁরা নিয়ম মেনে বিষ্ণুর পুজো করলে সুফল পেতে পারেন। এই তিথিতে বিষ্ণুকে পায়েসের ভোগ নিবেদন করা উচিত। এতে তুলসী পাতা অবশ্যই দেবেন।
কথিত আছে যে, সফলা একাদশী (Saphala Ekadashi) অবশ্যই সেই সমস্ত লোকদের করতে হবে, যারা প্রতিটি কাজে ব্যর্থ হতে থাকে এবং কঠোর পরিশ্রম করেও সফলতা পায় না। কথিত আছে যে সফলা একাদশীর উপবাস পালন করলে ভগবান বিষ্ণু প্রসন্ন হন এবং ভক্তদের মনোবাঞ্ছা পূরণ করেন। তাই সফলা একাদশীর দিন উপবাস এর গুরুত্ব আরও বেড়ে যায়। এ বছর সফলা একাদশী কবে? চলুন জেনে নেওয়া যাক।
সফলা একাদশীর (Spiritual) দিন উপবাস করে জগৎ রক্ষাকর্তা শ্রী হরি বিষ্ণুর আরাধনা করলে মানুষ সৌভাগ্য লাভ করে। এছাড়াও যে ব্যক্তি পূর্ণ ভক্তি ও সত্য চিত্তে ভগবান বিষ্ণুর উপাসনা ও উপবাস করেন, তার সমস্ত কর্ম সফল হয়।
সফলা একাদশীর দিন সকালে স্নান (Spirirtuality) ইত্যাদির পর ভগবান বিষ্ণুর ধ্যান করার সময় তাঁকে পঞ্চামৃত দিয়ে স্নান করান। এরপর গঙ্গাজল দিয়ে স্নান করিয়ে ভগবান বিষ্ণুকে কুমকুম-চন্দন লাগান। সফলা একাদশীর ব্রতকথা পাঠ করুন এবং প্রদীপ ও কর্পূর দিয়ে শ্রী হরির আরতি করুন এবং সকলকে প্রসাদ বিতরণ করুন।
যতটা সম্ভব তুলসী মালা দিয়ে ভগবান বিষ্ণুর (Lord Bishnu) পাঁচ অক্ষর মন্ত্র (Vishnu) “ওম নমো ভগবতে বাসুদেবায়” জপ করুন। এর পরে, সন্ধ্যায়, ভগবান বিষ্ণুর মন্দির বা তাঁর মূর্তির সামনে ভজন-কীর্তনের একটি অনুষ্ঠান করুন।
এই একাদশীতে ভগবান বিষ্ণুর সাথে দেবী লক্ষ্মীর (Maa Laxmi) আরাধনা করলে এই জীবনে ধন ও সুখ আসে। এই একাদশীর দ্বারা পরকালেও মানুষ বৈকুন্থে স্থান পায় বলে মনে করা হয়। যারা একাদশীর উপবাস করেন, তাদের এই দিনে ভাত খাওয়া উচিত নয়। একাদশী তিথিতে সারাদিন উপবাস রেখে রাতে জাগ্রত অবস্থায় শ্রী হরি বিষ্ণুকে স্মরণ করতে হবে।
সফলা একাদশীতে পুজোর শুভক্ষণ
পঞ্জিকা অনুযায়ী সফলা একাদশীতে ৭ জানুয়ারি সকাল ৮টা ৩৩ মিনিট থেকে ১২টা ২৭ মিনিটের মধ্যে পুজো করতে পারেন। একাদশী তিথিতে রাত্রি জাগরণের বিশেষ লাভ রয়েছে। ৮ জানুয়ারি ভোর ৬টা ৩৯ মিনিট থেকে ৮টা ৫৯ মিনিটের মধ্যে একাদশী ব্রত পালিত হবে।
সফলা একাদশীতে বাড়ি আনুন এই ৪ জিনিস
শাস্ত্র মতে সফলা একাদশী তিথিতে বাড়িতে কিছু জিনিস নিয়ে এলে সুফল পাওয়া যায়। এগুলি হল–
হাঁস
আর্থিক সমস্যা দূর করার চেষ্টা করলে সফলা একাদশীতে রুপোর হাঁস বাড়ি নিয়ে আসুন। এই তিথিতে যে কোনও সময়ে হাঁস আনতে পারেন। পুজোর স্থান বা লকারে হাঁসটি রাখুন। এই উপায়ে ধীর গতিতে অর্থ বৃদ্ধি নিশ্চিত হবে।
ঘট
বাস্তু দোষে জর্জরিত থাকলে সফলা একাদশী তিথিতে রুপোর কলস বাড়ি আনুন। সমুদ্র মন্থনের সময় অমৃত কলস হাতে নিয়ে উঠে এসেছিলেন ধন্বন্তরী। সফলা একাদশীতে ঘট বা কলস বাড়িতে আনলে বাস্তু দোষ দূর হয়। আর্থিক পরিস্থিতি অনুযায়ী এই তিথিতে কলস আনতে পারেন।
দক্ষিণাবর্তী শঙ্খ
এই শঙ্খ বিষ্ণুর অত্যন্ত প্রিয়। এই শঙ্খ দিয়ে অভিষেক করলে বিষ্ণু শীঘ্র প্রসন্ন হন। তাই এই একাদশী তিথিতে শঙ্খ আনা শুভ।
কচ্ছপ
সামর্থ্য অনুযায়ী রুপোর তৈরি কচ্ছপ বা মাছ বাড়ি আনতে পারেন। শাস্ত্রে বিষ্ণুর মৎস্য ও কচ্ছপ অবতারের বর্ণনা পাওয়া যায়। তাই একাদশী তিথিতে এই দুইয়ের মধ্যে কোনও একটি বাড়ি আনতে পারেন। লকারে এটি রাখুন। এর প্রভাবে ধীরগতিতে ধন বৃদ্ধি হবে।