“যতক্ষন তোমার সঙ্গে বাসনা, ততক্ষণই ভাবনা আর এই ভাবনাই হল তোমার দুঃখ কষ্ট মোহ মায়ার কারণ..”
“আমার ধর্ম ঠিক আর অপরের ধর্ম ভুল এ মত ভালো না বাবা, সবাই ভিন্ন ভিন্ন রাস্তা দিয়েতো এক জনের কাছেই তো যাবে তাই যে নামেই তাকে ডাকো না কেন তাকে মন প্রাণ দিয়ে ভালোবাসো”
— Sri Ramakrishna Paramahamsa
এই দিন রামকৃষ্ণ পরমহংস তাঁর অনুগামীদের কাছে নিজেকে ঈশ্বরের অবতার বলে ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু এই উৎসবের সূচণার গল্পটি একটু অন্য রকম। ১৮৮৬ সালের পয়লা জানুয়ারি সূচনা হয়েছিল এই উৎসবের। বিশেষ এই দিনে ঠাকুরের অনুগামীরা সাক্ষী ছিলেন এক বিরল ঘটনার।
এই দিন রামকৃষ্ণ পরমহংসের (Ramkrishna) গৃহস্থ শিষ্যরাই তাঁর কাছে উপস্থিত ছিলেন। সেই সময় দুরারোগ্য গলার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছিলেন ঠাকুর। তাঁর শারীরিক অবস্থা খুব একটা ভালো ছিল না। উত্তর কলকাতার কাশীপুর অঞ্চলের একটি বাগান বাড়িতে চিকিৎসার সুবিধার জন্য ঠাকুরকে নিয়ে আসা হয়েছিল। পয়লা জানুয়ারি একটু সুস্থ বোধ করায় তিনি বাগানে হাঁটতে বেরিয়েছিলেন। সেখানেই তাঁর বিশেষ অনুগামী নাট্যকার গিরিশচন্দ্র ঘোষকে ঠাকুর জিজ্ঞাসা করেছিলেন, “তোমার কী মনে হয়, আমি কে?” ঠাকুরের এই প্রশ্নে কিছুটা থমকে গিয়ে গিরিশচন্দ্র উত্তর দেন, তিনি বিশ্বাস করেন যে রামকৃষ্ণ পরমহংস “মানবকল্যাণের জন্য মর্ত্যে অবতীর্ণ ঈশ্বরের এক অবতার।”
এই কথা শুনে সেদিন ঠাকুর বলেছিলেন, “আমি আর কী বলব? তোমাদের চৈতন্য হোক।” এরপরেই তিনি সমাধিস্থ হয়ে তাঁর প্রত্যেক শিষ্যকে স্পর্শ করেন। ঠাকুরের অনুগামীদের মতে, তাঁর স্পর্শে সেদিন প্রত্যেকের অদ্ভুত কিছু আধ্যাত্মিক অনুভূতি হয়েছিল। রামকৃষ্ণ পরমহংসের অন্যতম শিষ্য রামচন্দ্র দত্ত ব্যাখ্যা করে বলেছিলেন, সেই দিন রামকৃষ্ণ পরমহংস (Ramkrishna Paramhansa) হিন্দু পুরাণে বর্ণিত কল্পতরুতে পরিণত হয়েছিলেন। তিনিই এই দিনটিকে কল্পতরু দিবস নাম দিয়েছিলেন, যা পরে কল্পতরু উৎসব নামে পরিণত হয়েছিল। এই দিন রামকৃষ্ণ পরমহংসের গৃহস্থ শিষ্যরাই তাঁর কাছে উপস্থিত ছিলেন। তাঁর সন্ন্যাসী শিষ্যেরা সেই দিন তাঁর কাছে ছিলেন না। সেই থেকে এই দিন রামকৃষ্ণ পরমহংসের অনুগামীরা এই উৎসবকে “ঠাকুরের বিশেষ উৎসব”গুলির অন্যতম উৎসব হিসেবে গণ্য করেন। রামকৃষ্ণ মঠের সন্ন্যাসীবৃন্দ ও রামকৃষ্ণ মিশনের গৃহস্থরা এই উৎসব পালন করেন।
বিশ্বব্যাপী বেদান্ত সোসাইটিগুলিতেও এই উৎসব পালিত হয়। বিভিন্ন জায়গায় এই উৎসব পালিত হলেও কাশীপুর (Cossipore) উদ্যান বাটীতে বর্তমানে রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের একটি শাখাকেন্দ্র এই উৎসব মহাসমারোহে পালিত হয়। এখানেই রামকৃষ্ণ পরমহংস জীবনের শেষ দিনগুলি অতিবাহিত করেছিলেন। দক্ষিণেশ্বর (Dakshineswar) কালীবাড়িতেও (Maa Kali) এই উৎসব মহাসমারোহে পালিত হয়। সারা দেশ থেকে রামকৃষ্ণ-অনুগামী তীর্থযাত্রীরা এই দিন দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়িতে পুজো দিতে আসেন। এই বছরও এই উৎসব উপলক্ষে পূর্ব রেল দক্ষিণেশ্বরের তীর্থযাত্রীদের জন্য দুটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করেছেন। এই উৎসবে দরিদ্রদের দাতব্য চিকিৎসা ও কম্বল বিতরণের আয়োজন করা হয়।
(Collected)