খবরে আমরাঃ উড়িষ্যার প্রধান দেবতা জগন্নাথ দেব। শুধু উড়িষ্যা কেন, গোটা দেশ এমনকী বিদেশের মাটিতেও আজও পূজিত জগন্নাথ দেব। মনে করা হয় তিনিই এ যুগের চলমান জীবন্ত দেবতা। জগন্নাথদেবের রথযাত্রার আগে মঙ্গলবার পূণ্য তিথিতে অনুষ্ঠিত হবে জগন্নাথ দেবের স্নান যাত্রা।
১৪ জুন পালিত হচ্ছে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার স্নানযাত্রা। বলা হয়, এই তিথিতেই মর্ত্যে আবির্ভাব হয়েছিল জগন্নাথদেবের৷ শাস্ত্র অনুসারে জ্যৈষ্ঠমাসের পূর্ণিমা তিথিতে স্বয়ম্ভু মনুর যজ্ঞের প্রভাবে জগন্নাথ আবির্ভূত হয়েছিলেন। তাই এই তিথিকে জগন্নাথদেবের জন্মদিন হিসেবে পালন করার নির্দেশ দেন স্বয়ং মনুই। সেই জন্মদিন উপলক্ষ্যেই এই বিশেষ স্নান উৎসব পালিত হয়ে আসছে। জগন্নাথদেবের স্নানযাত্রার বিশেষ তিথিতে ধুমধাম করে উৎসব পালিত হয় পুরী, মাহেশ, ইস্কনের মন্দিরে। শুরু তাই নয়, যে সমস্ত মন্দিরে ও বনেদি বাড়িতে রথ উৎসব পালন হয়, সেখানেও ঘটা করে পালন করা হয় এই উৎসব। এই উৎসব ঘিরে পুরাণেও রয়েছে নানা কাহিনী। মনে করা হয়, এদিনই জগন্নাথদেবের জন্মদিন।
প্রতি বছর দেবস্নান পূর্ণিমায় এই রীতি পালিত হয়। মহাস্নানের আগে অবধি রত্নবেদীতেই থাকেন জগন্নাথ। প্রথমে জগন্নাথ, তারপর বলরাম, শেষে সুভদ্রাকে পুষ্পাঞ্জলি দেন মন্দিরের সেবায়েতরা। তারপর তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয় স্নানবেদীতে। সেখানে মঙ্গল আরতি ও সূর্যপুজোর পর তিনজনকে মহাস্নানের জন্য প্রস্তুত করা হয়। মন্দিরের দক্ষিণের দরজায় রয়েছে কুয়ো। সেই কুয়ো থেকে তোলা হয় একশো আট ঘটি জল। সেই জলেই স্নান করেন জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা। স্নানের পর জগন্নাথ ও বলরামের হাতিবেশ বা গণেশবেশ হয়ে থাকে। স্বয়ং জগন্নাথদেব মহারাজা ইন্দ্রদ্যুম্নকে নির্দেশ দিয়েছিলেন মহাস্নানের পর তাঁর অঙ্গরাগবিহীন রূপ যেন কেউ না দেখেন। তাই স্নানযাত্রার পর থেকে ১৫ দিন পুরীর মন্দিরের দরজা সাধারণের জন্য বন্ধ থাকে।
কথিত আছে সমস্ত দেবদেবীরা যাতে জগন্নাথের এই স্নানযাত্রা ভালো ভাবে দেখতে পান সেই উদ্দেশ্যে মহারাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন স্নানযাত্রাকালে স্নানবেদীর চারদিকে রত্মশোভিত চাঁদোয়া ও আবরণবস্ত্র দিয়ে আচ্ছাদিত করে দিতেন। পরবর্তীকালে স্নানবেদী জীর্ণ হয়ে পড়লে তা নতুন করে নির্মাণ করেন শ্রীঅনঙ্গভীম দেব।
সুন্দর পট্টবস্ত্র দিয়ে ঢেকে জগন্নাথদেব সহ বলরাম ও সুভদ্রাকে নিয়ে আসা হয় স্নানমঞ্চে। স্নানমঞ্চে নিয়ে আসার সময় চামর ও তালপাতা দিয়ে বাতাস করতে করতে তিন দেবতাকে বাতাস করা হয়। সকলে যাতে স্নানের অনুষ্ঠান দর্শন করতে পারেন সেজন্য পুরী মন্দিরে একটি উঁচু বেদী করা হয়েছে। যাতে পুরীর প্রশস্ত রাজপথ ‘বড়দাণ্ড’ থেকেও সকলে প্রভুর স্নানযাত্রা প্রত্যক্ষ করতে পারেন। অবশেষে মহা সমারোহে ভোরবেলা ব্রহ্মার সঙ্গে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার স্নান সম্পূর্ণ করা হয়।
কথিত আছে এই সময়ে স্নানের পর জগন্নাথদেবের জ্বর হয়। জ্বর সারাতে দয়িতা-পতিরা ওষুধ পথ্য অর্থাৎ মিষ্টি রসের পানা বিশেষ পাচন ও নানা ধরণের মিষ্টান্ন ভোগ দেন। এই সময়ে মন্দিরে জগমোহনের পাশে ‘নিরোধনগৃহে’ অবস্থান করেন জগন্নাথদেব। এরপর যখন নবমূর্তিতে জগন্নাথদেব নানা বেশভূষায় সুসজ্জিত হয়ে দর্শন দেন তখন সেই উৎসবকে বলা হয় নেত্রোৎসব বা নবযৌবন উৎসব।