শনি পূজার নিয়ম / শনি পূজার পদ্ধতি / শনি পূজার সময় (Shani puja)
শনিবার সন্ধ্যাকালে ঘরের বাইরে উঠানে এই ব্রত করতে হয়। এখানে সত্যনারায়ণ পূজার মতো সিন্নি দেওয়া হয়ে থাকে। সারাদিন উপবাস করে সন্ধ্যায় পূজা শেষে শনিদেবের পাঁচালী কথা শুনে প্রসাদ গ্রহণ করবেন।
শনি পূজার অঞ্জলি মন্ত্র
ঔঁ সৌরাষ্ট্রং কাশ্যপং শূদ্রং সূর্য্যস্যাং চতুরাঙ্গুলম।
কৃষ্ণং কৃষ্ণাম্বরং গৃধ্রগতং শৌরিং চতুর্ভুজম।
উদ্ববানং শূলং ধনুর্হস্তং সমাহ্নযেৎ ।
যমাধিদৈবতং দেবং প্রজাপতি প্রত্যাধিদৈবতম।
শনি পূজার প্রণাম মন্ত্র (Shani Mantra)
ঔঁ নীলঞ্জয়চযং প্রখ্যং রবিসূতঃ মহাগ্রহম।
ছায়ায়াং গর্ভসম্ভূতং বন্দে ভক্ত্যা শনৈশ্চরম।
শনিদেবের পাঁচালী কথা (Shani Panchali)
শ্রীহরি নামেতে ছিল একটি ব্রাহ্মণ।
করিতে ব্রাহ্মণ সেবা ছিল তার মন ।।
দ্বিজ সেবা করে তার নাহিক দক্ষতা।
ভিক্ষামাত্র ছিল তার কার্য্যের ক্ষমতা ।।
নিত্য ভিক্ষা করি করে উদর পূরণ।
তাহাতেই দ্বিজসেবা হয় অনুক্ষণ ।।
বিনা চিন্তামণি আর কিছু নাই।
কেমনে সে চিন্তামণি চিনিবারে পাই ।।
অন্তরে সদাই সুখী অন্ন নাহি পেটে।
তথাপি কৃষ্ণের নাম ভিজে অকপটে ।।
হেনকালে এক পুত্র ভুমিষ্ট হইল।
হেরিয়া তাহার মুখ বিষাদে ভরিল ।।
হায় রে বিধাতা আজ কি সুখের দিন।
হরিয়ে বিষাদ মন নিজে অতি দীন ।।
যা হয় হউক তবু প্রতিজ্ঞা পালিব।
এইরূপে ভিক্ষা করি কাল কাটাইব ।।
দ্বিজ সেবা করে বিপ্র যাহা ভিক্ষা মেলে।
পুত্রের রাখিল নাম সুমঙ্গল বলে ।।
সুমঙ্গল পুত্র নাম রাখে অমঙ্গলে।
পঞ্চম বৎসরে পুত্রে দিল পাঠশালে ।।
সুমঙ্গল সুধীর বলে স্বে গুন গায়।
অল্প দিনে মধ্যেতে সে শিখে সমুদয় ।।
শাস্ত্রজ্ঞ হইল ক্রমে শাস্ত্র আলোচনে।
পন্ডিত বলিয়া তারে সকলেই মানে ।।
কিন্তু তার কিছুতেই নাহি লয় মতি।
সাদা চিনতে কিসে পাবো কমলার পতি ।।
পিতা মাতা গৃহ আদি সকলি ছাড়িল।
হরি স্মরি নানাদেশ ভ্রমিতে লাগিল ।।
আচম্বিতে এক স্থানে পায় সমাচার।
পিতা মাতা দুইজনে ছেড়েছে সংসার ।।
এ হেন্ দুঃখের কথা যখনি শুনিল।
ধুলাতে পড়িয়া পুত্র কাঁদিতে লাগিল ।।
অতঃপর গয়াক্ষেত্রে করিল গমণ।
বিষ্ণুপদে পিন্ড দিয়া করিল তর্পন ।।
স্থানে স্থানে বিদ্যাভ্যাস করিতে লাগিল।
সকল বিদ্যায় ক্রমে নিপুন হইল ।।
কালেতে সকলি হয় কে করে খন্ডন।
পড়িল শনির দৃষ্টে দ্বিজের নন্দন ।।
শনিতে হরিল মন বুদ্ধি উবে গেল।
ভ্রমিতে ভ্রমিতে দ্বিজ বহুদূরে গেল ।।
যে দশাতে আপনি পড়িয়া ভগবান।
গন্ডকীতে শিলা কাটি পাইলেন ত্রাণ ।।
চতুর্দশ বৎসর যে শিলা কাটি ছিল।
তাহাতেই শালগ্রাম শিলা যে হইল ।।
ইন্দ্র অঙ্গে ভগের যে চিন্হ হয়েছিল।
সেই শনি কোপে পড়ি ভ্রমিতে লাগিল ।।
আচম্বিতে বিদর্ভ নগরে উপস্থিত।
দেখিল সে তথাকার অতীত সুমিত ।।
বিদর্ভের রাজা হয় শ্রীবৎস ভূপতি।
শান্ত দান্ত গুণবন্ত সদা ধর্মে মতি ।।
তাহার সভায় দ্বিজ উপস্থিত হৈল।
দেখিয়া শ্রীবৎস রাজা অভ্যর্থনা কৈল ।।
কোথায় নিবাস তব বল হে সুমতি।
কোন বংশোদ্ভব হও বল হে সম্প্রতি।।
শুনিয়া দ্বিজের পুত্র কহে সমাচার।
সুমঙ্গল নাম ধরি ওহে গুনাধার ।।
অতি দিন দুঃখী নাহি পিতা মাতা।
স্বদেশে বিদেশে আমি যাই যথা তথা ।।
উন্মাদের সম আমি ভ্রমি দেশে দেশে।
জীবন ধারণ করি অতিশয় ক্লেশে ।।
শ্রীবৎস বলেন দ্বিজ চিন্তা পরিহর।
আমার আশ্রয়ে থাকি মোরে কৃপা কর ।।
শাস্ত্রেতে নিপুন তুমি বুঝি অনুমানে।
আমার করহ তুষ্ট বাক্যের সন্ধানে ।।
আমার আছয়ে দুই যুগল নন্দন।
তব স্থানে পড়াইব এই অকিঞ্চন ।।
রাজবাক্যে সুমঙ্গল হইল হৃষ্টমন।
চিনিতে নারিল দ্বিজ শনির ছলন ।।
এইরূপে কিছুদিন হৈল বিগত।
পড়ুয়ার বেশে শনি হৈল উপনীত।
জিজ্ঞাসিল কিবা হেতু তব আগমন।
পরিবারে আইনু আমি তোমা বিদ্যমান ।।
দ্বিজ বলে মহাশয় কর অবস্থান ।
হেথা রহি ইচ্ছাসুখে কর অধ্যয়ন ।।
যত্নের সহিত তোমা পড়াব এখন।
নানা শাস্ত্র তুমি হেথা কর অধ্যয়ন ।।
শুনিয়া বিপ্রের বাক্য সন্তুষ্ট হইল।
তাহার নিকট শনি পিড়িতে লাগিল ।।
ব্যাকরণ স্মৃতি কাব্য সাংখ্য ও দর্শন।
অল্পদিন মধ্যে সব কৈল সমাপন ।।
সমস্ত বিদায় শনি হৈল সুনিপুন ।
বিপ্রবর পরিচয় চাহিল তখন ।।
শনি বলে কিবা দিব নিজ পরিচয়।
শনৈশ্চর নাম মোর সূর্য্যের তনয় ।।
সুমঙ্গল কহে তুমি মান্য দেবতার।
আমার সোভাগ্য দেখা পেয়েছি তোমার ।।
যদি হে প্রসন্ন দেব হইল আমারে।
কিসে মম দুঃখ যাবে বল ত্বরা করে ।।
আমার উপরে আছে তোমার কটাক্ষ।
কিসে যাবে বল দেখি হইয়া স্বপক্ষে ।।
শনি বলে কহি তবে শুন মহাশয়।
মম কপি দশ বর্ষকাল মাত্র রয় ।।
তবে ভোগকাল আর দশদন্ড আছে।
দশ দন্ড যাবে আর না আসিবে কাছে ।।
দশ দন্ড পাবে তুমি অতিশয় কষ্ট।
পশ্চাতে সুখের লেশ ঘুচিবে অরিষ্ট ।।
সপ্ত দিবসে গিয়া ভাগীরথী তীরে।
একমনে এক ধ্যানে ডাক মুরারীরে।।
কোপ হতে পাবে তুমি অবশ্যিই মুক্তি।
কহিলাম সত্য আমি এই স্থির যুক্তি ।।
এত বলি শনিদেব হৈল অন্তর্ধান।
আর না দেখিতে পাইল বিপ্রের সন্তান ।।
শনি আজ্ঞা মত তবে গিয়া গঙ্গাতীরে।
একাসনে দ্বিজবর ভজে মুরারীরে ।।
দশ দন্ড পূর্ন হৈল হেন্ জ্ঞান করি।
উঠিয়া দাঁড়ায় মুখে বলিয়া শ্রীহরি ।।
কিন্তু দশ দন্ড পূর্ন না দেখি তখনে।
নয়ন মুদিয়া পুনঃ ভজে নারায়ণে ।।
সূর্যপুত্র হেরি মনে কোপাবিষ্ট হৈল।
সুমঙ্গলে শাস্তি দিতে মনস্থ করিল
যেই দুই রাজপূত্রে পড়াইত দ্বিজে।
মায়া করি দুই পুত্রে হরি নিল নিজে ।।
নিজ মায়া মন্ত্রে দুই শিশু গড়ি।
বিপ্রের নিকটে লয়ে গেল তড়িঘড়ি ।।
নয়ন মুদিয়া বিপ্র হরি ধ্যান করে।
মায়ামুন্ড ফেলে তার উরুর উপরে ।।
হেথা রাজা স্বপ্ন দেখি পুত্র অমঙ্গল।
ভাগীরথী তীরে গিয়ে উপনীত হল ।।
দেখিয়া বিপ্রের কোলে কাটামুন্ডদ্বয়।
হাহাকার করি রাজা ভূমিতে লুটায় ।।