খবরে আমরাঃ প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু কিংবা ক্রীড়ামন্ত্রী সুভাষ চক্রবর্তী প্রয়াত। সেই আমলে বাংলার রং লাল। কিন্তু এখন সেই জ্যোতি বাবু কিংবা সুভাষ বাবু নেই। রয়েছেন কিছু লালের পরিচিত-অপরিচিত মুখ। বাংলার রং এখন সবুজ। লাল খুঁজতে দুরবীন লাগে। তাই ভোটার ধরতে মারাদোনাই ভরসা। একদা এই মারাদোনাকেই বাংলায় এনে যেমন ভোটার মন জয় করেছিলেন দুই বাংলার কমরেড। প্রাক্তনবাম যুবসমাজের চিরন্তন আইকন চে গুয়েভারা বা ফিদেল কাস্ত্রো বা লৌহমানব জোশেফ স্ট্যালিনের মতো মার্ক্সীয় রাজনীতির যুগপুরুষরা নন। জাতীয় রাজনীতিতে ব্রাত্য হয়ে যাওয়া সিপিএমের বেঁচে ওঠার ভরসা এখন ফুটবল রাজপুত্র দিয়েগো মারাদোনা। আগামী ১২ থেকে ১৫ মে বিধাননগরের EZCC-তে বসছে পার্টির যুব সংগঠনের সর্বভারতীয় সম্মেলন। এই উপলক্ষে বিধাননগরের নামকরণ করা হয়েছে ‘হ্যান্ড অফ গড’-এর নামে।
চে গুয়েভারা, ফিদেল কাস্ত্রো বা স্ট্যালিনদের বাদ দিয়ে বাম যুবদের এই ‘মারাদোনা ভরসা’-য় চর্চা শুরু হয়েছে জোরকদমে। ১৪ বছর আগে ২০০৮ সালে ভোট বৈতরণী পেরোতে রাজকীয় মর্যাদায় মারাদোনাকে নিয়ে এসেছিল বঙ্গ সিপিএম। ফুটবল ঈশ্বরের কাঁধে চেপে ভোট বৈতরণী পার হতে চেয়েছিল। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর সঙ্গে মারাদোনার সাক্ষাৎ করানো হয়েছিল। মারাদোনা ও জ্যোতি বসুর পাশাপাশি বসে থাকা ছবি ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল গোটা বাংলায়। তৎকালীন সিপিএম সাংসদ শমীক লাহিড়ীর উদ্যোগে একটি স্টেডিয়ামে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন ফিদেল কাস্ত্রোর বন্ধু। চে গুয়েভারার ভক্তকে প্রচারে ভোটের ময়দানে নামিয়েও বঙ্গের লাল দুর্গ বাঁচানো যায়নি। গো-হারা হারতে হয়েছিল বামেদের।
সেই ঘটনার প্রায় দেড় দশক পরে ফের মারাদোনা স্মরণে বামেরা। ১২-১৫ মে সল্টলেকের ইজেডসিসিতে হতে চলেছে সিপিএমের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআইয়ের (DYFI) সর্বভারতীয় সম্মেলন। সম্মেলন চলাকালীন সল্টলেকের নামকরণ করা হয়েছে মারাদোনার নামে। শহিদদের উৎসর্গ করা হয়েছে মঞ্চ। কেন এমন চিন্তাভাবনা? স্পষ্ট করেছেন সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক সায়নদীপ মিত্র। তাঁর ব্যাখ্যা, ফুটবলের ঈশ্বর যুব সমাজের ‘আইকন’। আর তিনি যে আদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন, ডিওয়াইএফআই সেই আদর্শে বিশ্বাস করে। রাজনীতির বাইরে থাকা যুবদের আকর্ষণ করতেই এই পরিকল্পনা বলে জানান তিনি।
বাম যুবদের এই পরিকল্পনাকে কটাক্ষ তৃণমূল (TMC) ও বিজেপির (BJP)। তৃণমূলের রাজ্য যুবনেতা দেবাংশু ভট্টাচার্যর মতে, একটা পার্টি দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার প্রমাণ এর থেকে বড় কিছু হয় না। বিশ্ববরেণ্য একজনকে জোর করে টেনে এনে নিজেদের আরও কলঙ্কিত করছে বলে মনে করেন তিনি। বাংলায় অনেক বিশ্ববরেণ্য আইকন রয়েছেন। তাঁদের স্মরণ করতে পারত বলে কটাক্ষ বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের।